আমাদের বাসার কাজের ছেলের নাম হল সাব্বির।তার বয়স ১২-১৩ হতে পারে(আনুমানিক)।আজকে সারা দিন সে একটা শাস্তি ভোগ করছে।শাস্তি দিচ্ছেন আমার আম্মু।তার শাস্তি হল আজকের সারা দিনের খাওয়া বন্ধ।তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অত্যন্ত গুরুতর।বোঝা যাচ্ছে না,শাস্তি ভোগ করার পর তার চাকরি থাকে কি না।আপনারা নিশ্চয়ই ভাবছেন তার অপরাধটা কি।তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগটা আমি আপনাদের কাছে বলছি।তবে তার আগে কয়েকটা কথা বলতেই যে হয়।সাব্বির যখন আমাদের বাসায় আসে ,তা প্রায় ২ বছর আগের কথা।তখন সে একেবারে হাবা গোবা টাইপের একটা ছেলে ছিল। কিছুই বুঝতো না।একটা কথা ৩ বার বললে তার মাথায় কথা ঢুকতো।তার এই অবস্থা দেখে আমার প্রিয় বড় আপু ঠিক করলেন যে তাকে মানুষ বানাবেন।আমি আপুর পরিকল্পনা শুনলাম।আপু নাকি সাব্বিরকে লেখা পড়া শিখাবে।আমরা হায় হায় করতে লাগলাম। শুনেছি গাধা পিটিয়ে মানুষ করা যায়।তবে ওকে যে লেখা পড়া শিখানো যাবে না এ বিষয়ে কারও কোন সন্দেহ নাই।প্রায়ই দেখি আপু ওকে পড়াচ্ছে।আম্মু আপুকে বলে "কি যে পাগলামো করিস।" আপুও নাছোড়বান্দা।ওকে অক্ষর জ্ঞান সমপন্ন করবেই।এর মাঝে আপুর বি্যে হয়ে গেল।আপু চলে গেল আমেরিকাতে।যাওয়ার আগে তার ছোট ভাই মানে আমাকে সাব্বিরের পড়ালেখা শিখানোর মত গুরু দায়িতব দিয়ে গেল।যাই হোক অনেক কষ্টে আমি ওকে লিখতে শিখালাম।কয়েক দিন আগে আমি সাব্বিরকে সারটিফিকেট দিয়ে দিলাম।ওকে বললাম আজ থেকে তুই শিক্ষিত।সে তো নাচতে নাচতে বাসার সবাইকে বলে বেড়াচ্ছে আমারে ছুডু(ছোট ) বাই সারটিফিক দিছে।আইজ থিকা আমি আর অশিক্ষত না।আমার বাবাকে সে বলছে খালু মাই নেম ইজ সাব্বির।বাবা বেশ অবাক হল।পরে আমি বাবাকে সব কিছু ব্যাখ্যা করলাম।উল্লেখ্য আমি তাকে এই একটা মাত্র ইংরেজি sentence শিখিয়ে ছিলাম। এখন সে দাবি করছে সে ইংরেজি ও জানে।এবার সাব্বিরের বিরুদ্ধে আনিত আভিযোগটা বলি।সে গত কাল আমাদের পাশের বাসার কাজের মেয়েকে একটা চিঠি দিয়েছে।ঐ মেয়েটি লেখাপড়া জানে না।ভালবাসার উত্তেজনার বশে সাব্বির কথাটা ভুলেই গিয়েছিল।তাই চিঠিটি কাজের মেয়ে পড়তে পারে নি।সে পাশের বাসার আন্টিকে চিঠিটা দেখিয়েছে। আন্টি তো তেলে-বেগুনে জলে উঠল।চিঠিটা নিয়ে একে বারে আমাদের বাসায় উপস্থিত।আন্টি আমার আম্মু কে বলছে, দেখেন ভাবি আপনার বাসার কাজের ছেলেটা আমার কাজের মেয়েকে কি চিঠি দিয়েছে। কি সব অবস্থা আপনি বলেন তো।আম্মুর কাছ থেকে চিঠিটা নিয়ে আমিও পড়লাম।
জানের রুকছানা,
তুমী কেমুন আচ?তমার লাইগা এই পরানডা কেমুন জানি করে।তমারে যে কত বার কতাটা কইতে চাই।কিন্তু পারিনা।আইজ বিকালে তুমি ছাদে আইবা।তমার লগে আমার অনেইক কতা আছে।তুমার হাসি চান্দেরতেও ছুনদর। তমারে ছারা আমার চৌখ আন্দা।দিনে রাইতে ত মার কতাই ভাবি হুদা(শুধু)।তুমী কি আমার কতা ভাব।কাইল রাইতে তমারে খোয়াব(সপ্ন) দেকচি।দেকলাম আমি ছালমান সা আর তুমী ছাবনুর।বিকালে ছাদে আইবা।খোয়াবের বাকিডা তমারে কমু।খোয়াবটা দেইখা বহুত মজা পাইচি। তুমি হুনলে(শুনলে) তুমিও মজা পাইবা।
ইতি
সাব্বির
চিঠিটা পড়ে আম্মু চোখ কপালে তুলে সাব্বিরকে বলল এইটা তুই লিখছিস?সে হ্যা সূচক মাথা নাড়ে। আম্মু আমাকে বলল ইমির তুই ওকে জোরে একটা থাপ্পর দে তো।আমি আবার কাউকে থাপ্পর দিতে পারি না।আমি কাউকে ধমক ও ঠিক ভাবে দিতে পারি না।আমি আম্মুকে বললাম ওকে থাপ্পর দিলে শুধু হবে না। আজকে ও সারাদিন এক হাজার বার লিখবে "আমি আর জীবনেও চিঠি লিখব না।" না হলে আবার আম্মুর রাগটা আমার উপর প্রয়োগ হতে পারে।
সাব্বির খাতায় লিখছে।বুঝতে পারছি না সে কি চাকরি বাঁচাতে পারবে?
ইমির
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০০৭ বিকাল ৩:৩৩