এই দুটি থিওরীর পিছনে যে মূলগত চিন্তাধারা আছে আর আইনস্টাইন কেন কণাবাদী বলবিদ্যার ব্যাপারে ভিন্ন মতের ছিলেন। দুটি থিওরীর সমন্বয় করলে যে উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলি ঘটে তার কয়েকটি বিবরণ থেকে নির্দেশ পাওয়া যায় কালের নিজেরও প্রায় দেড় হাজার কোটি বছর আগে একটা শুরু ছিল এবং ভবিষ্যতে কোনও এক সময় এর শেষ হবে। তবুও অন্য এক ধরণের কালে মহাবিশ্বের কোনও শুরু নেই। এর সৃষ্টিও হয়নি, ধ্বংসও হয়নি। এ শুধু অস্তিমান।
জাতীয় বিধিগুলি শুধু একটি দেশেই প্রযোজ্য কিন্তু পদার্থবিদ্যার বিধিগুলি ব্রিটেন, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র কিংবা জাপান সর্বত্র অভিন্ন। এমন কি মঙ্গলগ্রহ কিংবা এ্যান্ড্রোমিডা (Andromeda) নীহিরিকাতে এ বিধি এক। শুধু তাই নয় যে গতিতেই চলমান হোন না কেন- বিধিগুলি একই থাকবে। একটা বুলেট ট্রেনে কিংবা একটা জেট বিমানে এক স্থানে দাঁড়িয়ে আছে এ রকম যে কোনও ব্যক্তি সাপেক্ষ বিধিগুলি একই হবে। আসলে পৃথিবীতে যে স্থিরভাবে দাঁড়িয়ে আছে সেও অবশ্যই সেকেন্ড প্রায় ১৮.৬ মাইল(৩০ কি.মি.) বেগে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে চলমান। সূর্য সেকেন্ডে কয়েকশ কিলোমিটার বেগে ছায়াপথ প্রদক্ষিণ করে চলমান এবং এই রকম অনেক কিছুই। তবুও এই সমস্ত গতিই পদার্থবিদ্যার ক্ষেত্রে কোনও পার্থক্য সৃষ্টি করে না। সমস্ত পর্যবেক্ষক সাপেক্ষেই এগুলি অভিন্ন।
একটি তন্ত্রের দ্রুতির স্বতন্ত্র্য প্রথম আবিস্কার করেন গ্যালিলিও। তিনি কামানের গোলা কিংবা গ্রহগুলির মতো বস্তুপিন্ডের গতির বিধি আবিস্কার করেন। কিন্তু যখন এই দ্রুতির স্বাতন্ত্র্য আলোকের গতির বিধির ক্ষেত্রে প্রসারিত করার চেষ্টা করা হল, তখন একটা সমস্য দেখা দিল। অষ্টাদশ শতাব্দীতে আবিস্কার করা হয়েছিল, আলো উত্স থেকে পর্যবেক্ষকের কাছে তত্ক্ষণাত যায় না। বরং এটা যায় একটা বিশেষ গতিতে। সেকেন্ডে প্রায় এক লক্ষ ছিয়াশি হাজার মাইল (সেকেন্ডে তিন লক্ষ কিলোমিটার) কিন্তু কি সাপেক্ষে এই এই দু্রুতি ? মনে হয়েছিল সমগ্র স্থানে কোনও একটি মাধ্যম থাকা উচিত যার ভিতর দিয়ে আলো গমন করে। এই মাধ্যমের নাম ইথার। ধারণা ছিল আলোতরঙ্গ সেকেন্ডে ১ লক্ষ ৮৬ হাজার মাইল দ্রুতিতে (Speed) ইথারের ভিতর দিয়ে গমন করে। অর্থাত, যে ইথার সাপেক্ষে স্থিরাবস্থায় রয়েছে, সে আলোকের দ্রুতি পরিমাপ করবেন সেকেন্ডে ১ লক্ষ ৮৬ হাজার মাইল। কিন্তু যে পর্যবেক্ষক ইথারের ভিতর দিয়ে চলমান তখন আলোর দ্রুতির পরিবর্তন হওয়া উচিত। কিন্তু ১৮৮৭ সালে মাইকেলসন এবং মর্লি একটি পরীক্ষা করেন, তাতে দেখা গেল আলোর গতি সবসময়ই অভিন্ন। পর্যবেক্ষক যে দ্রুতিতেই চলমান হোন না কেন, আলোর গতি পরিমাপ করলে তিনি সবসময়ই দেখবেন সেটা সেকেন্ডে ১ লক্ষ ৮৬ হাজার মাইল।
এটা কি করে সত্য হতে পারে ? বিভিন্ন দ্রুতিতে চলমান পর্যবেক্ষকরা কিভাবে আলোর গতি পরিমাপ করলে একই ফলাফল পাবেন? উত্তর তাঁরা পাবেন না, যদি স্থান এবং কাল সম্পর্কে স্বাভাবিক চিন্তাধারা সত্য হয়।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই নভেম্বর, ২০০৭ রাত ৯:২১