somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আইনস্টাইনের চিন্তাধারা

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০০৭ রাত ৩:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে দুটি নতুন থিওরী স্থান-কাল এবং বাস্তবতা সম্পর্কে মানবজাতির চিন্তাধারা সম্পূর্ণ বদলে দেয়। সত্তর বছরেরও বেশি হয়ে গেল আজও তা অনুধাবনের জন্য অনুশীলন ও চেষ্ঠা চলছে সবকিছুর সমন্বয় করে একটা ঐক্যবদ্ধ তত্ত্ব আবিস্কার করতে। সে তত্ত্ব এমন হবে যে মহাবিশ্বের সবকিছুরই বিবরণ দান করতে পারবে। থিওরী দুটি হল ব্যাপক আপেক্ষিকতাবাদ আর কণাবাদী বলবিদ্যা (general theory of relativity and quantum mechanics) । ব্যাপক আপেক্ষিকতাবাদের পরীক্ষার বিষয় স্থান আর কাল, মহাবিশ্বের পদার্থ এবং শক্তিপ্রভাবে বৃহত্মানে কি করে তারা বেঁকে যায় কিংবা প্যাঁচ খেয়ে যায়। অন্যদিকে কণাবাদী বলবিদ্যা পরীক্ষা করে অতি ক্ষুদ্রমান, যা অনিশ্চয়তা নীতি এর অন-র্ভূক্ত। এই নীতি অনুসারে একটি কণার অবস্থান এবং গতিবেগ একই সময়ে কখনওই নির্ভূলভাবে মাপা যায় না। যত নির্ভূলভাবে একটিকে পরিমাপ করবেন তত কম নির্ভূল হবে অন্যটির পরিমাপ। একটা উপাদান সবসময়ই থাকে- সেটা হল অনিশ্চয়তা বা আপতন(Chance)। ইহা সবসময় ক্ষুদ্রমানে পদার্থের আচরণ মূলগতভাবে প্রভাবিত করে। আইনস্টাইন প্রায় একাই ব্যাপক আপেক্ষিকতাবাদের দায়িত্ব নিয়েছিলেন এবং কণাবাদী বলবিদ্যার বিকাশে তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। শেষোক্ত তত্ত্ব সম্পর্কে তাঁর মনের ভাব প্রকাশ পায় এই কথায়-ঈশ্বরজুয়া খেলেন না। কিন্তু সমস্ত সাক্ষ্য থেকে নির্দেশ পাওয়া যায় ঈশ্বর সংশোধনের অতীত একজন জুয়াড়ি এবং তিনি জুয়ার দান ফেলে থাকেন। সুযোগ পেলেই তিনি জুয়া খেলেন।
এই দুটি থিওরীর পিছনে যে মূলগত চিন্তাধারা আছে আর আইনস্টাইন কেন কণাবাদী বলবিদ্যার ব্যাপারে ভিন্ন মতের ছিলেন। দুটি থিওরীর সমন্বয় করলে যে উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলি ঘটে তার কয়েকটি বিবরণ থেকে নির্দেশ পাওয়া যায় কালের নিজেরও প্রায় দেড় হাজার কোটি বছর আগে একটা শুরু ছিল এবং ভবিষ্যতে কোনও এক সময় এর শেষ হবে। তবুও অন্য এক ধরণের কালে মহাবিশ্বের কোনও শুরু নেই। এর সৃষ্টিও হয়নি, ধ্বংসও হয়নি। এ শুধু অস্তিমান।
জাতীয় বিধিগুলি শুধু একটি দেশেই প্রযোজ্য কিন্তু পদার্থবিদ্যার বিধিগুলি ব্রিটেন, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র কিংবা জাপান সর্বত্র অভিন্ন। এমন কি মঙ্গলগ্রহ কিংবা এ্যান্ড্রোমিডা (Andromeda) নীহিরিকাতে এ বিধি এক। শুধু তাই নয় যে গতিতেই চলমান হোন না কেন- বিধিগুলি একই থাকবে। একটা বুলেট ট্রেনে কিংবা একটা জেট বিমানে এক স্থানে দাঁড়িয়ে আছে এ রকম যে কোনও ব্যক্তি সাপেক্ষ বিধিগুলি একই হবে। আসলে পৃথিবীতে যে স্থিরভাবে দাঁড়িয়ে আছে সেও অবশ্যই সেকেন্ড প্রায় ১৮.৬ মাইল(৩০ কি.মি.) বেগে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে চলমান। সূর্য সেকেন্ডে কয়েকশ কিলোমিটার বেগে ছায়াপথ প্রদক্ষিণ করে চলমান এবং এই রকম অনেক কিছুই। তবুও এই সমস্ত গতিই পদার্থবিদ্যার ক্ষেত্রে কোনও পার্থক্য সৃষ্টি করে না। সমস্ত পর্যবেক্ষক সাপেক্ষেই এগুলি অভিন্ন।
একটি তন্ত্রের দ্রুতির স্বতন্ত্র্য প্রথম আবিস্কার করেন গ্যালিলিও। তিনি কামানের গোলা কিংবা গ্রহগুলির মতো বস্তুপিন্ডের গতির বিধি আবিস্কার করেন। কিন্তু যখন এই দ্রুতির স্বাতন্ত্র্য আলোকের গতির বিধির ক্ষেত্রে প্রসারিত করার চেষ্টা করা হল, তখন একটা সমস্য দেখা দিল। অষ্টাদশ শতাব্দীতে আবিস্কার করা হয়েছিল, আলো উত্স থেকে পর্যবেক্ষকের কাছে তত্ক্ষণাত যায় না। বরং এটা যায় একটা বিশেষ গতিতে। সেকেন্ডে প্রায় এক লক্ষ ছিয়াশি হাজার মাইল (সেকেন্ডে তিন লক্ষ কিলোমিটার) কিন্তু কি সাপেক্ষে এই এই দু্রুতি ? মনে হয়েছিল সমগ্র স্থানে কোনও একটি মাধ্যম থাকা উচিত যার ভিতর দিয়ে আলো গমন করে। এই মাধ্যমের নাম ইথার। ধারণা ছিল আলোতরঙ্গ সেকেন্ডে ১ লক্ষ ৮৬ হাজার মাইল দ্রুতিতে (Speed) ইথারের ভিতর দিয়ে গমন করে। অর্থাত, যে ইথার সাপেক্ষে স্থিরাবস্থায় রয়েছে, সে আলোকের দ্রুতি পরিমাপ করবেন সেকেন্ডে ১ লক্ষ ৮৬ হাজার মাইল। কিন্তু যে পর্যবেক্ষক ইথারের ভিতর দিয়ে চলমান তখন আলোর দ্রুতির পরিবর্তন হওয়া উচিত। কিন্তু ১৮৮৭ সালে মাইকেলসন এবং মর্লি একটি পরীক্ষা করেন, তাতে দেখা গেল আলোর গতি সবসময়ই অভিন্ন। পর্যবেক্ষক যে দ্রুতিতেই চলমান হোন না কেন, আলোর গতি পরিমাপ করলে তিনি সবসময়ই দেখবেন সেটা সেকেন্ডে ১ লক্ষ ৮৬ হাজার মাইল।
এটা কি করে সত্য হতে পারে ? বিভিন্ন দ্রুতিতে চলমান পর্যবেক্ষকরা কিভাবে আলোর গতি পরিমাপ করলে একই ফলাফল পাবেন? উত্তর তাঁরা পাবেন না, যদি স্থান এবং কাল সম্পর্কে স্বাভাবিক চিন্তাধারা সত্য হয়।

সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই নভেম্বর, ২০০৭ রাত ৯:২১
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৫

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না
অহনা বলেছিল, আমি জানি আমি তোমাকে পেয়েছি সবখানি
আমি তাই নিশ্চিন্তে হারিয়ে যাই যখন যেখানে খুশি

অহনা বলেছিল, যতটা উদাসীন আমাকে দেখো, তার চেয়ে
বহুগুণ উদাসীন আমি
তোমাকে পাওয়ার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিয়াল ফিলিস্তিনীরা লেজ গুটিয়ে রাফা থেকে পালাচ্ছে কেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১১ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



যখন সারা বিশ্বের মানুষ ফিলিস্তিনীদের পক্ষে ফেটে পড়েছে, যখন জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে সাধারণ সদস্য করার জন্য ভোট নিয়েছে, যখন আমেরিকা বলছে যে, ইসরায়েল সাধারণ ফিলিস্তিনীদের হত্যা করার জন্য আমেরিকান-যুদ্ধাস্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসানের মা হিজাব করেন নি। এই বেপর্দা নারীকে গাড়ি গিফট করার চেয়ে হিজাব গিফট করা উত্তম।

লিখেছেন লেখার খাতা, ১১ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩


ছবি - সংগৃহীত।


ইফতেখার রাফসান। যিনি রাফসান দ্যা ছোট ভাই নামে পরিচিত। বয়স ২৬ বছর মাত্র। এই ২৬ বছর বয়সী যুবক মা-বাবাকে বিলাসবহুল গাড়ি কিনে দিয়েছে। আমরা যারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ এঁটেল মাটি

লিখেছেন রানার ব্লগ, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৫৬




শাহাবাগের মোড়ে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলাম, মাত্র একটা টিউশানি শেষ করে যেন হাপ ছেড়ে বাঁচলাম । ছাত্র পড়ানো বিশাল এক খাটুনির কাজ । এখন বুঝতে পারি প্রফেসদের এতো তাড়াতাড়ি বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাইলট ফিস না কী পয়জনাস শ্রিম্প?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১২ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:৪০

ছবি সূত্র: গুগল

বড় এবং শক্তিশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পাশে ছোট ও দূর্বল প্রতিবেশী রাষ্ট্র কী আচরণ করবে ? এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধিক্ষেত্রে দুইটা তত্ত্ব আছে৷৷ ছোট প্রতিবেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×