somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাংবাদিকতায় কার্টুন

০৩ রা নভেম্বর, ২০০৭ রাত ৮:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যা সহজে লেখা যায় না, যার গুরুত্ব লিখে বোঝানো সম্ভব নয়, তার জন্য আছে ফটোগ্রাফি। ছবি এক সঙ্গে অনেক কথা বলে। কিন্তু এমন কিছু বিষয় আছে যা ছবি-লেখা কিছুতেই বাঁধা যায় না। লিখে হয়তো কিছুটা আভাস দেয়া যায়, তদুপরি অলিখিত সেন্সর নীতিমালায় ছেঁটে দিতে অনেক সিরিয়াস অংশ। আর তখুনি বীরদর্পে এগিয়ে আসে কার্টুন-ক্যারিকেচার। তুলির দু'চার আঁচড়েই এক লাফে বের হয় থলের বেড়াল।

মূলত সংবাদপত্রের হাত ধরেই পূর্ণতা পেয়েছে কার্টুন। বিশেষ করে ঊনবিংশ শতকের পত্রিকাগুলোয় সম্পাদকীয় কার্টুন ছিল বাধ্যতামূলক। শুধু এই এডিটোরিয়াল কার্টুনকে ভর করেই সেই সময় অনেকগুলো পত্রিকাগুলো প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছিল। ইয়েলো জার্নালিজমের সূত্রপাতও এমনই এক কার্টুনের হাত ধরে। তাই সাংবাদিকতার সঙ্গে কার্টুনের সম্পর্কটা কখনই ফিকে ছিল না, এখনও নয়।

১৮৪৩ সালে ইংল্যান্ডে হাউস অফ পার্লামেন্টকে সাজাতে আয়োজন করা হয়েছিল এক চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার। পাঞ্চ নামের ম্যাগাজিনটি তখন ভালই চলছিল। পার্লামেন্টের এ প্রতিযোগিতাকে ব্যাঙ্গ করার সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইছিল না ম্যাগাজিনটি। কিন্তু যু্ত্সই কিছু লিখতে পারছিল না কেউ। ডাক পড়লো আঁকিয়েদের। ওরাই ভেবেচিন্তে একপ্রস্থ ব্যাঙ্গচিত্র তৈরি করে ফেলল। যে ব্যাঙ্গচিত্র একই সঙ্গে কাভার করলো প্রতিযোগিতার বিষয় ও পার্লামেন্টের ভেতরকার মহারথীদের কীর্তি। সংবাদ উপকরণ হিসেবে ওটাই প্রথম সার্থক কার্টুন।

অবশ্য ষোড়শ শতকে জার্মানিতে প্রথম রাজনৈতিক কার্টুন আঁকা হয়েছিল। রাজনৈতিক ব্যর্থতার সঙ্গে সেই কার্টুনগুলোতে থাকতো সমাজ সংস্কারের বিভিন্ন ইস্যু। তবে সংবাদমাধ্যমে রাজনৈতিক কার্টুন জনপ্রিয় হয়ে ওঠে আঠারো শতকের দিকে। রাজনৈতিক ব্যাঙ্গচিত্রে হোগার্থ, রোল্যান্ডসন ও গিলারি ছিলেন ব্রিটিশ পথিকৃত্। অন্যদিকে ফরাসি ক্যারিকেচারে পথ দেখিয়েছিলেন ডমিয়ে নামের এক শিল্পী।
ঊনবিংশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে আমেরিকান সংবাদপত্রে কার্টুন নিয়মিত হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তখন খেলাধূলা ও কৌতুক করতেও কার্টুন আঁকা হতো। তবে পাঠকদের ওপর রাজনৈতিক কার্টুনের প্রভাব ছিল অন্যরকম। ১৮৭১ থেকে ১৮৭৩-এ যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে বেশ ভাল ফেলেছে এডিটোরিয়াল কার্টুন। সাপ্তাহিক হার্পার-এ প্রকাশিত টমাস নাস্টের কার্টুনের কারণে শেষতক জেলে যেতে হয়েছিল বেশ ক'জন রাঘব বোয়ালকে। অথচ ওদেরই নির্বাচনে জেতার কথা ছিল।

প্রথম রঙিন কার্টুনটি প্রকাশিত নিউইয়র্ক ওয়ার্ল্ড পত্রিকায়। ১৮৯৬ সালে ইয়েলো কিড টাইটেলে সেই সিরিজ কার্টুন এঁকেছিলেন আর এফ আউটকাল্ট। ওটা ছিল পুরোদস্তুর অরাজনৈতিক কার্টুন।

কার্টুন যে বিপ্লবেরও হাতিয়ার হতে পারে তার জন্য বেশি দূরে যেতে হবে না। আমাদের দেশেই আছে স্পষ্ট নজির। কামরুল হাসানের আঁকা ইয়াহিয়া খানের ব্যাঙ্গচিত্রটি সংবাদপত্রের সীমানা পেরিয়ে স্থান করে নিয়েছিল পোস্টারে, দেয়ালে দেয়ালে।

হালের বিদেশি কার্টুনিস্টদের মধ্যে সেরা অবস্থানে আছেন ক্লে বেনেথ ও ডেরিল ক্যাজল। পলিটিক্যাল কার্টুনস ডট কম-এ নিয়মিত আঁকছেন। মার্কিন রাজনীতি থেকে আন্তর্জাতিক সকল ইস্যুতেই তাদের তুলি সোচ্চার। আর আমাদের কার্টুনকে যারা ক্রমশ চূড়ায় পৌঁছে দিয়েছেন তাদের মধ্যে অনন্যরা হলেন রফিকুন নবী, আহসান হাবীব, শিশির ভট্টাচার্জ। রফিকুন নবীর অনবদ্য সৃষ্টি হচ্ছে 'টোকাই'। ঐ টোকাইয়ের ক্যাপশন কার্টুনই বাংলাদেশের দৈনিকগুলোর কমিক স্ট্রিপের পথ প্রদর্শক। অন্যদিকে 'উন্মাদ' সম্পাদক আহসান হাবীব কার্টুন না আঁকলে হিউমার-কার্টুন অপরিচিতই থেকে যেত। অন্যদিকে শিশির ভট্টাচার্জ তো দেশের কার্টুনকে সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মহলে দারুণভাবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। তার রাজনৈতিক কার্টুনগুলো নিঃসন্দেহে বিশ্বসেরাদের সঙ্গে কাঁধ মিলিয়ে টেক্কা দেয়ার যোগ্যতা রাখে। বাংলাদেশের পত্রিকায় সম্পাদকীয় কার্টুনেরও অগ্রদূত তিনি।

সুতরাং সাংবাদিকতার পাঠে কার্টুনের শক্তিকে উপেক্ষা করার উপায় নেই। যেখানে প্রেস ফ্রিডম নেই, সেখানেও অনেক কিছু নীরবে বুঝিয়ে দিতে পারে এই কার্টুন। তাই কলমের পাশাপাশি মাঝে মাঝে তুলি নিয়ে দৌড়ঝাঁপ করাটা খুব একটা অনুচিত হবে না।
১৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯



একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×