সমুদ্রের সূর্য অস্ত বেলায় হঠাৎ করে শ্রাবণের দেখা হয়ে গেলো মেঘের সাথে। বালুকাতটে পাশাপাশি দুজন হেঁটে যাচ্ছে দিগন্তের দিকে। শ্রাবণ বলছে ---
আজ থেকে বহু বছর আগের কথা। তখন ক্লাস সেভেন এ পড়ি মাত্র। খুব ক্রিকেট খেলা দেখতে পসণ্দ করতাম। তখনও বাংলাদেশ ক্রিকেট দুনিয়ায় পা রাখেনি। শুধু মোহামেডান- আবাহনী খেলা ছিল জমজমাট পূর্ণ। মাঝে মাঝে ভারত- পাকিস্তান এর খেলা দেখা তো বিটিভি তে।
ঠিক পাশের বাসায় থাকতো সেই মেয়ে টি । দেখতে গোলগাল মিষ্টি। আমার সাথে পড়তো । আমরা একসাথে আড্ডা দিতাম, গল্প করতাম । আর বিকেল বেলায় ছাদে উঠতাম ঠিক এক টাইম এ। তখন তো আর মোবাইল ছিল না। রাত্রি বেলায় কারেন্ট চলে গেলে বারান্দায় এসে গল্প করতাম। মাঝে মাঝে কোনও দুপুরে বৃষ্টি হলে, দুজন মিলে কাক ভিজার মতো ভিজতাম। আমি আবার ঘুড়ি উড়াতে খুব পসন্দ করতাম । বিকেল বেলায় আমি যখন ঘুড়ি উড়াতাম, সে আমার খুব কাছ থেকে ঘুড়ি উড়ান দেখতে। আমার কাছ থেকে আবার সে ঘুড়ি উড়ানো শিখেছিল। লাল ঘুড়ি খুব পসন্দ করত । তাই আমি সব সময় লাল ঘুড়ি উরাতাম। একসাথে খেলা দেখতাম। সে আবার টেন্ডুল্কার এর অন্ধ ভক্ত ছিল। আজো আমার মনে পড়ে খেলা দেখার সময়ের তার উত্থাস আর আনন্দ । খুব ভালো কেটেছিল সেই দিন গুলো। ভালবাসার স্পন্দনে স্পন্দিত হচ্ছিল এই হৃদয় । একদিন তাই খুব সাহস করে একটি চিরকুট এ লিখে আনলাম । সেই হারানো সৃতি মাখা চিরকুটের লেখা টি ছিল এই রকম--
"আজ পূর্ণিমার চাঁদের আলোয়
মিশে আছো বর্ণিল আবছায়
তোমাকে দেখে উদাসী মন
মানছেনা যে একটু ক্ষণ
য়নেক বার বলতে ইচ্ছে করে
ভালবাসি, ভালবাসি শুধু তোমায়
লাজুক মনটিকে বোঝাতে পারছিনা
বারিপাতের সময় মনে পড়ে আমার
সিগ্ধ সুন্দর মুখ খানি তোমার "
ওটা ছিল শেষ বারের মতো দেখা । এরপর কি কারনে যেন আমার খুব লজ্জা লেগে ছিল ওর সাথে দেখা করতে । কিন্তু ও আমাকে দেখে কেমন যেন একটি মুচকি আর দুষ্ট হাসি দিতো। শুধু তখন হতো চোখাচোখি । আর কথা হয়নি কখনো । হঠাৎ একদিন পাশের বাসার সেই মেয়েটি চলে গেলো । শুনলাম ওর বাবার নাকি পোস্টিং হইছে। কিন্তু কখনো জানতে পারিনি , বুঝতেও পারিনি। তাই তো আজো মাঝে মাঝে মনে হয়, সেই মেয়েটি আমাকে ভালবেসেছিল কিনা আমি জানি না
আর মেঘ অপলক চেয়ে থাকল ।