somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"ইয়াবা" আবিষ্কারের উদ্দেশ্য ছিল ভিন্ন !

০২ রা নভেম্বর, ২০০৭ সন্ধ্যা ৬:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আফসোস! আলফ্রেড নোবেলের। ১৮৯৬ এ মৃত্যুর আগে বলেছিলেন তার আবিস্কার "ডিনামাইট আধুনিক বিজ্ঞানকে কয়েকধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে"। পরবর্তীতে গগণচুম্বি পাহাড় গুড়িয়ে সমতল সড়ক হয়েছে, পৃথিবীর একস্থান থেকে অন্যস্থানের যোগাযোগ দৃঢ় হয়েছে। কিন্তু বাধ সাধল এর একদশক পর। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ডিনামাইট ব্যবহßত হল মানব সমাজ, কৃষ্টি, নিদর্শণ ধ্বংস করতে। এভাবেই শুরু স্রষ্টার সৃষ্টির অপব্যবহারের।

মানব সমাজ ধ্বংসের তাগিদে অন্ধকার কানা গলিতে হারিয়ে যায় মহৎ উদ্দেশ্য। সম্প্রতি বাংলাদেশে ইয়াবা নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে বিশেষজ্ঞ ও অভিভাবকদের। বাংলাদেশে ইয়াবার মূল এত গভীরে ভাবতে পারেনি কেউ। কিন্তু এ ইয়াবা আবিষ্কারের উদ্দেশ্য ছিল ভিন্ন।

১৯১৯ সালে জাপানিরা ওষুধ হিসেবে ইয়াবা তৈরির পরিকল্পনা করে। মূলত জীবন বাঁচানোর লক্ষে তাদের এ আবিস্কার। এর পরবর্তী সময়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন জার্মান প্রেসিডেন্ট এডলফ হিটলার তার মেডিকেল চিফকে আদেশ দিলেন দীর্ঘ সময় ব্যাপি যুদ্ধক্ষেত্রের সেনাদের যাতে কান্তিô না আসে এবং উদ্দীপনায় যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারে বা বিমানের পাইলটের নিদ্রাহীনতা, মনকে উৎফুল, চাঙ্গা রাখার জন্য একটা কিছু আবিস্কার করতে। টানা ৫ মাস পর রসায়নবিদগণ চেষ্টা চালিয়ে তৈরি করলেন অ্যামফিটামিন। এর সঙ্গে একটি মিথাইল গ্রূপ যোগ করে বাড়তি সংশেষের জন্য তৈরি করা হল মিথাইল অ্যামফিটামিন। মিথাইল অ্যামফিটামিন ও ক্যাফেইনের সংমিশ্রনে তৈরি হল ইয়াবা। ব্যাস! হিটলারের উদ্দেশ্য সফল। সেনারা মানসিক শক্তিতে বলিয়ান হল। পরবর্তী সময়ে অন্যান্য দেশের যুদ্ধ ক্ষেত্রে দেশ মাতৃকার স্বার্থে অনেক সেনা প্রধান ইয়াবা ব্যবহার করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইয়াবার প্রভাব এত দূত ছড়িয়ে পড়বে ভাবতে পারেনি কেউ।

১৯৪৫ পরবর্তী সময়ে সাম্রাজ্যবাদীদের হাত থেকে একটির পর একটি উপনিবেশ স্বাধীন হতে থাকে। নিজেদের হতাশা ভুলতে বুর্জোয়া সেনারা ইয়াবার প্রতি ঝুকে পড়ে। ১৯৭০ এ থাইল্যন্ডে ইয়াবা ওষুধ হিসেবে ব্যবহার হত। বিড়ি, সিগারেটের মতোই বিভিন্ন দোকানে ইয়াবা পাওয়া যেত। দূর-দুরান্তের বাস চালকেরা নিদ্রা দূর করার জন্য সবসময় সঙ্গে রাখতেন ইয়াবা। কিন্তু ৩-৪ বছরের মধ্যেই কাল হয়ে দাঁড়ায় এ ওষুধ। থাই সরকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেন। কিন্তু অসাধু ব্যবসায়ীদের হাতে চলে যাওয়ায় তা রোধ সম্ভব হয়নি। বরং গোপনে উচ্চমূল্যে বিক্রি হয়েছে। এরপর ধীরে ধীরে মধ্যপ্রাচ্য ও অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়ে। ২০০৪ সালে প্রেসিডেন্ট থাকসিন সিনাওয়াত্রা ৩ হাজারের বেশি ইয়াবা ব্যবসায়ীদের ক্রসফায়ারের নির্দেশ দেন। বার্মার সীমান্তô ব্যবসায়ীদের সঙ্গে চুটিয়ে চলছিল এ ব্যবসা। ৯০-র দশকের শেষ দিকে থাইল্যান্ডের তরুণ-তরুণীদের মাঝে ইয়াবা সিগারেট বা চুইংগামের মতো সস্তা ছিল।

থাই সরকার ইয়াবাকে দেশটির উন্নয়নে সবচে বড় বাধা হিসেবে চিহিৃত করেন। ক্রেইজি মেডিসিন হিসেবে দেখেন থাই মনোবিজ্ঞানিরা। এশিয়ার পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ইয়াবা উৎপাদানের জন্য প্রসিদ্ধ।
বাংলাদেশের টেকনাফ বর্ডার দিয়ে মাদক হিসেবে ইয়াবা প্রথম প্রবেশ করে ১৯৯৭ সালে। কিন্তু এর আগে ইয়াবার নানা উপাদানকে প্রাণরাকারী ওষুধ হিসেবে ব্যবহারের পরামর্শ দিতেন ডাক্তার। কিন্তু ২০০১ এ বাংলাদেশের অভিজাত এলাকাগুলোতে ইয়াবা তরুণ-তরুণীদের মানিব্যাগে স্থান করে নেয়। সম্প্রতি ইয়াবার দৌরাত্ম্যে টনক নড়ে প্রশাসনের।
কিন্তু ইয়াবা আবিস্কারের উদ্দেশ্য প্রাণবিধ্বংসী নয়। বরং প্রাণপ্রদায়ী হিসেবে। মানুষের কর্মমতা, সচেতনতা বৃদ্ধি ও দুর্বলতা দূর করার জন্য এটি ব্যবহত হত। অ্যামফিটামিন গ্রুপের এসব ওষুধ ধামন্দা সৃষ্টি করে। যার দরুণ স্থুÿলকায় ব্যক্তিদের স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে ডাক্তার ইয়াবা সেবনের উপদেশ দেন। ইয়াবা সেবনের ফলে দ্রুত রক্ত চলাচল, শ্বাস প্রশ্বাস, অস্বাভাবিক যৌনতা, ক্সুধা মন্দাভাব, স্বাভাবিক চিন্তôালোভ এমনকি মৃত্যু অনিবার্য।

এর সবচে ভয়ংকর দিক হচ্ছে খুব দ্রুত তরুণ সমাজের ওপর প্রভাব বিস্তôার করে। কিন্তু আফিম, গাঁজা, এলকোহল, ফেনসিডিল, মরফিন যেগুলো মাদক হিসেবে পরিচিত সবগুলো জীবন রাকারী ওষুধ তৈরির উপাদান। কিন্তু অসাধু ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্যয় তা ধীরে ধীরে মাদকে রুপ নিয়ে ধ্বংস করছে তরুণ সমাজ।
সাহিত্যিক আবু ইসহাক ‘মহাপতঙ্গ’ তে প্রশ্ন করেছিলেন ‘সভ্যতা ধ্বংসের জন্য এ বিজ্ঞান নাকি সভ্যতা সাজাতে বিজ্ঞান’। তবে আলফ্রেড নোবেলের মানবকল্যাণে ডিনামাইট আবিষ্কারের সিদ্ধান্তô কি ভুল ছিল? তবে এর অপব্যবহারকারীদের দৌরাত্ম্যে চিরকাল হারিয়ে যাবে সৃষ্টির মহান উদ্দেশ্য! না, এ সবুজ পৃথিবী বিনষ্টকারীদের আড়ালে কখনোই মহৎ চিন্তôা, মননশীলতা হারাতে পারেনা। কারণ কুটপ্রৈকৃতির মানুষ সব সময় পরাজিত হয়, অতিতে হয়েছে ভবিষ্যতে হবে। উইকিপিডিয়া,লেখক ট্রান্সাক্রয়েশন এইচ এম বাবু।

১৭টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×