somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উইলিয়াম ডারলিম্পলের দি লাস্ট মোগল থেকে ( পর্ব-৩ )

০২ রা নভেম্বর, ২০০৭ বিকাল ৪:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৯৮৪ সালের ১৬ জানুয়ারি যখন কুয়াশাচ্ছন্ন শীতের রাতে মাত্র ১৮ বছর বয়সে দিল্লিতে পৌছাই তখনই আমি প্রথমেই এর প্রেমে পড়ি। এয়ারপোর্টটিতে তখন শাল আচ্ছাদিত মানুষে পরিপূর্ণ ছিল। আশ্চর্যজনক ঠান্ডা আবহাওয়া ছিল তখন।
ইনডিয়া সম্পর্কে আমি মোটেও কিছু জানতাম না। আমার শৈশব কেটেছে স্কটল্যান্ডের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। এডিনবার্গের দক্ষিণ-পশ্চিমের ফর্থের মোহনার কাছাকাছি থাকতাম শৈশবে। আমার স্কুলের সময়টিতে আমি খুবই ঘুরে বেড়াতাম। সম্ভবত এ কারণেই দিল্লি এবং ইনডিয়া সাধারণভাবে আমার ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। এছাড়া নগরীটিতে কসমোপলিটান টিনএজার বেশি ছিল। শুরু থেকেই নগরীটি আমাকে ব্যাপকভাবে টেনেছিল। আমি চারপাশ দেখে কিছু মাস কাটিয়ে দিয়েছিলাম। গোয়াতে আটকে ছিলাম কিছুদিন। কিন্তু খুব তাড়াতাড়িই দিল্লির ফিরতি পথ ধরতে হয়েছিল আমাকে। সবকিছুর মধ্যে ধ্বংসাবশেষগুলো আমাকে আলাদাভাবে আকৃষ্ট করেছে। মৃদু দীপ্তিমান কংকৃটের নতুন কলোনি গড়ার চেষ্টা বুঝতে পারছিলাম। গির্জার টাওয়ার, পুরনো মসজিদ অথবা প্রাচীন ইসলামিক কলেজ সবকিছুতেই পরিকল্পনাবিদরা অনাকাক্সিক্ষতভাবে প্রবেশ করার চেষ্টা করছিল। নিউ দিল্লি কোনোভাবেই নতুন ছিল না। এর প্রশস্ত এভিনিউয়ের চতুর্দিকে রাজবংশগুলোর সমাধিক্ষেত্র রয়েছে।
বিশেষত জাফরের প্রাসাদ মোগলদের ‘দি রেড ফোর্ট’ আমাকে অতীতের স্মৃতিতে নিয়ে যায়। সেখান থেকেই প্রথম আমি মোগলদের ইতিহাস সম্পর্কে কিছু লেখার চিন্তা করি। আইডিয়াটিই এখন চারখন্ডে ঠাই পাচ্ছে, মোগলদের চার ভলিউম একটি ইতিহাস। আমি আশা করছি এটি শেষ করতে আরো দুই যুগ লেগে যাবে।
প্রায়ই আমি রেড ফোর্ট দেখতে যেতাম। সেখানে একটি বই নিয়ে ঘুমাতাম এবং সারা বিকাল কাটিয়ে দিতাম। ঠান্ডা প্যাভিলিয়নের ম্লান আলোতে বসে থাকতাম। রেড ফোর্ট সবসময়ই আমাকে ব্যথিত করতো। যখন বৃটিশরা ১৮৫৭ সালের পর এটি দখল করে নেয়, তারা জাকমজকপূর্ণ অ্যাপার্টমেন্টগুলো ভেঙে ফেলে। সেই স্থানে তারা কুতসিত কিছু ভবন গড়ে তোলে। কিছু কিছু ব্যারাক গুল্মবিশেষে পরিপূর্ণ হয়ে গিয়েছে।
এখনো এই ধ্বংসপ্রাপ্ত কাজটিকে খেয়ালি এবং সংস্কৃতি বিবর্জিতদের কর্মকা- হিসেবে বিবেচনা করা হয়। গ্রেট ভিক্টোরিয়ান আর্কিটেকচুয়াল হিস্টোরিয়ান জেমস ফার্গুসন কোনো কিছু নিয়েই বিস্তারিত বর্ণনা করেননি। কিন্তু তিনি তার ‘হিস্টোরি অফ ইনডিয়ান আর্কিটেকচার’ এ কিছু ঘটনার রেকর্ড তুলে ধরেছেন। এগুলো ধ্বংস-উন্মাদনার চিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছে। তিনি যা লিখেছেন তা এখনো চিন্তা করা হয়নি। পৃথিবীর জমকালো একটি প্রাসাদের যে কোনো রেকর্ড রক্ষার পরিকল্পনা করতে হবে। তিনি আরো বলেন, আধুনিককালে শুধু পেকিনের সামার প্যালেসের সঙ্গে এ ধ্বংসাবশেষের তুলনা চলে।
হত্যাযজ্ঞের পরও যেসব নগরবাসী বেচে ছিল তারাও আত্মরক্ষার্থে চলে গিয়েছিল দেশের সীমান্ত এলাকায়। দিল্লি হয়ে পড়েছিল শুধু ধ্বংসাবশেষ। যদিও সম্ভ্রান্ত পরিবারটি শান্তিপূর্ণভাবেই আত্মসমর্পণ করে। সম্রাটের ১৬ পুত্রের অধিকাংশকেই বিচার করে ফাসিতে ঝোলানো হয়। এর মধ্যে তিনজনকে নগ্নভাবে গুলি করে মারা হয়।
‘চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে আমি বাড়িটির গুরুত্বপূর্ণ সদস্যদের শেষ করে ফেলি।’ ক্যাপ্টেন উইলিয়াম হডসন পরদিন তার বোনের কাছে চিঠিতে এমনটাই লেখেন। ‘আমি হিংস্র নই তবে আমি মনে হয় ভাগ্যপীড়িতদের পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেয়ার সুযোগ পেয়ে আনন্দিত হয়েছি।’
জাফরকে তার পুরনো প্রাসাদে ট্রায়ালের মুখোমুখি করা হয়। তাকে নির্বাসনের আদেশ দেয়া হয়। ছোট কৃষকের দুই চাকার বলদের গাড়ি চড়ে তাকে প্রিয় দিল্লি ছাড়তে হয়। প্রিয় সব কিছু ছেড়ে ভাঙা হৃদয়ে তাকে চলে যেতে হয়। এই শেষ গ্রেট মোগল ৮৭ বছর বয়সে ১৮৬২ সালের ৭ নভেম্বর শুক্রবার রেঙ্গুনে নির্বাসিত অবস্থাতেই মারা যান।
এটি খুবই অসাধারণ ও ট্র্যাজিক একটি কাহিনী। আমি এ বিষয়ে গবেষণার জন্য গত তিন বছর সময় উৎসর্গ করেছি। জাফরের চিঠি এবং তার কোর্ট রেকর্ডের আর্কাইভ লন্ডন, লাহোর এমনকি রেঙ্গুনেও পাওয়া গেছে। তবুও এখন পর্যন্ত বেশির ভাগ জিনিস দিল্লিতে রয়েছে। দিল্লি ছিল সাবেক মোগল রাজধানী, জাফর এ স্থানটিতে বাস করতেন এবং ভালোবাসতেন এ স্থানটিকে।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা নভেম্বর, ২০০৭ বিকাল ৪:২২
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যাড গাই গুড গাই

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

নেগোশিয়েশনে একটা কৌশল আছে৷ ব্যাড গাই, গুড গাই৷ বিষয়টা কী বিস্তারিত বুঝিয়ে বলছি৷ ধরুন, কোন একজন আসামীকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে৷ পারিপার্শ্বিক অবস্থায় বুঝা যায় তার কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

টান

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২২


কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর
বিচ্যুতি ঠেকা‌তে ছু‌টির পাহাড়
দিগন্ত অদূর, ছ‌বি আঁকা মেঘ
হঠাৎ মৃদু হাওয়া বা‌ড়ে গ‌তি‌বেগ
ভাবনা‌দের ঘুরপাক শূণ্যতা তোমার..
কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর।
:(
হাঁটুজ‌লে ঢেউ এ‌সে ভাসাইল বুক
সদ্যযাত্রা দম্প‌তি... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বল্প আয়ের লক্ষ্যে যে স্কিলগুলো জরুরী

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৯

স্বল্প আয়ের লক্ষ্যে যে স্কিলগুলো জরুরীঃ


১। নিজের সিভি নিজে লেখা শিখবেন। প্রয়োজন অনুযায়ী কাস্টোমাইজ করার অভ্যাস থাকতে হবে। কম্পিউটারের দোকান থেকে সিভি বানাবেন না। তবে চাইলে, প্রফেশনাল সিভি মেকারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৫

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না
অহনা বলেছিল, আমি জানি আমি তোমাকে পেয়েছি সবখানি
আমি তাই নিশ্চিন্তে হারিয়ে যাই যখন যেখানে খুশি

অহনা বলেছিল, যতটা উদাসীন আমাকে দেখো, তার চেয়ে
বহুগুণ উদাসীন আমি
তোমাকে পাওয়ার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিয়াল ফিলিস্তিনীরা লেজ গুটিয়ে রাফা থেকে পালাচ্ছে কেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১১ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



যখন সারা বিশ্বের মানুষ ফিলিস্তিনীদের পক্ষে ফেটে পড়েছে, যখন জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে সাধারণ সদস্য করার জন্য ভোট নিয়েছে, যখন আমেরিকা বলছে যে, ইসরায়েল সাধারণ ফিলিস্তিনীদের হত্যা করার জন্য আমেরিকান-যুদ্ধাস্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×