somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উইলিয়াম ডারলিম্পলের দি লাস্ট মোগল থেকে ( পর্ব-২ )

০১ লা নভেম্বর, ২০০৭ বিকাল ৫:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৭৭৫ সালে জাফর জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তখনো বৃটিশরা ইনডিয়ান সমুদ্রতীরের মধ্যবর্তী অঞ্চলে উপকূলীয় স্থানগুলোতে দৃঢ়ভাবে লেগে থাকার ব্যাপারে খুবই দুর্বল ছিল। জীবদ্দশাতেই জাফর দেখতে পেয়েছিলেন তার সম্পদ ও প্রতিপত্তি অবমাননাকরভাবে তাৎপর্যহীন হয়ে যাচ্ছিল। তখন বৃটিশরা ক্রীতদাসসুলভ ব্যবসায়ী থেকে কঠোরভাবে নিজেদের বৃহত সামরিক শক্তিতে পরিণত করছিল।
জাফর একটু দেরি করেই সিংহাসনে বসেন। পিতার শাসনের পর তিনি তখন মধ্য ষাটে। এরই মধ্যে মোগলদের রাজনৈতিক অবক্ষয় রোধ করা অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি সফলভাবে দিল্লির আশপাশের অঞ্চল শাসনের ক্ষেত্রে মেধার পরিচয় দিয়েছেন। তার বংশের রাজাদের মধ্যে তিনি ছিলেন সবচেয়ে মেধাবী, সহনশীল এবং পছন্দনীয়দের একজন। একজন দক্ষ ক্যালিওগ্রাফার, নামকরা সুফি লেখক ও মিনিয়েচার পেইন্টার ছিলেন তিনি। বাগান করতে পছন্দ করতেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, তিনি খুবই আধ্যাত্মিক কবি ছিলেন। তিনি শুধু উর্দু এবং ফার্সিতেই লিখেননি বরং ব্রজবুলি এবং পাঞ্জাবি ভাষাতেও লিখতেন। তার পৃষ্ঠপোষকতার কারণে আধুনিক ইনডিয়ার ইতিহাসে সাহিত্যের একটি বড় ধরনের বিপ্লব ঘটেছে। একে লিটারারি রেনেসাও বলা যায়। এছাড়া জাফর নিজে খুবই মনোমুগ্ধকর গজল লেখক ছিলেন। তার রাজদরবার গালিব, জাউক-দের মতো ইনডিয়ার সেরা প্রতিভাবান কবিদের সুযোগ করে দিয়েছিল।
বৃটিশরা আস্তে আস্তে সম্রাটের ক্ষমতা কেড়ে নিতে শুরু করলো। কয়েন থেকে তার নাম উঠিয়ে দিল এবং দিল্লি অবরোধ করে রাখলো। অবশেষে তাকে রেড ফোর্ট থেকে সরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করলো। যেহেতু রাজনৈতিক অবস্থা অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে উঠছিল, রাজদরবার তখন ক্রমশ অনাবিল আনন্দের আয়োজন ও অন্যান্য জাকজমক হারাচ্ছিল।
তারপর ১৮৫৭ সালের মে মাসের এক সকালে মেরুত রুড থেকে দিল্লিতে আসে তিনশ বিদ্রোহী সেনা। নগরীতে পাওয়া সব কৃশ্চিয়ান নর-নারী এবং শিশুদের তারা হত্যা করে এবং জাফরকে তাদের নেতা ও সম্রাট হিসেবে ঘোষণা করে। একটি বিদ্রোহের নেতা হওয়ার মতো ক্ষমতা তখন অবশিষ্ট ছিল না জাফরের। তিনি জানতেন বিদ্রোহের শুরু হয়েছে ভাগ্যনির্দিষ্ট দ-প্রাপ্তের মতো। একটি বিশৃঙ্খল এবং অফিসারবিহীন আর্মি নিয়ে বিশ্বের সমকালীন সেরা মিলিটারি শক্তির বিরুদ্ধে বিদ্রোহে লড়তে যাওয়া খুবই কষ্টকর। কোনো বিদেশি আর্মিই বিদ্রোহকে সাপোর্ট করার মতো অবস্থানে ছিল না। এছাড়া তাদের গোলাবারুদের ভান্ডার খুব কম এবং সরবরাহ ছিল স্বল্প।
দিল্লির অবরোধ একে স্টালিনগ্রাদ করে তুলেছিল। দুই শক্তির মধ্যে সংঘটিত হয়েছিল জীবনমৃত্যুর যুদ্ধ। কোনো পক্ষেরই পশ্চাতপসরণের সুযোগ ছিল না। অকল্পনীয় সংখ্যক সৈনিক নিহত হয়েছিল। উভয় পক্ষেরই যোদ্ধারা প্রচুর সংখ্যক শারীরিক এবং মানসিকভাবে দুঃখকষ্ট ভোগ করে। শেষ পর্যন্ত ১৮৫৭ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর বৃটিশ এবং তাদের সমর্থিত করিতকর্মা শিখ এবং পাঠান আর্মিরা নগরী দখল করে নেয়। তারা মোগল রাজধানীতে ব্যাপক হত্যাকা- এবং লুটপাট চালায়। নগরীতে ব্যাপক সংখ্যক লোকের গণহত্যায় শীতল রক্তের স্রোত বয়ে যায়। কুচু সেলান নামে কেবল একটি মহল্লায় প্রায় ১ হাজার ৪০০ দিল্লিবাসীকে হত্যা করা হয়েছিল। আদেশ ছিল প্রতিটি আত্মাকেই গুলি করো। ১৯ বছর বয়সী অধস্তন অফিসার অ্যাডওয়ার্ড ভাইবার্ট তার বক্তব্যে বলেছিলেন, এটি সত্যিকার অর্থে রক্তাক্ত ঘটনা। আমি এখন পর্যন্ত অনেক রক্তক্ষয়ী এবং বীভতস দৃশ্য দেখেছি কিন্তু গতকাল যা দেখেছি তা যেন আর কখনোই না দেখি এমন প্রার্থনা করি। স্বামী এবং সন্তানদের নিষ্ঠুরভাবে খুন হতে দেখে নারীরা চিতকার-চেচামেচি করছিল। সত্যিই এটি বেদনাদায়ক...। ঈশ্বর জানেন আমি কোনো করুণা অনুভব করিনি, কিন্তু কিছু শ্মশ্রুমন্ডিত বৃদ্ধ লোকদের ধরে আনা হলো এবং আমার চোখের সামনেই গুলি করে মারা হলো। তখন আমার খুবই খারাপ লাগছিল। আমি মনে করি যে কোনো মানবীয় সত্তারই এ অবস্থা দেখে একই অনুভূতি হবে।
‘দি লাস্ট মোগল’ বইটি লেখার ব্যাপারটি আমাকে এবং আমার পরিবারকে দিল্লির ইতিহাসের ধূসর আকাশে উড়ে বেড়ানোর সুযোগ করে দিয়েছিল। এটি ছিল আমার প্রিয় একটি নগরীতে যাওয়ার সুযোগ। ২০ বছরের বেশি সময়ব্যাপী আমার কাছে নগরীতে যাওয়ার ব্যাপারটি স্রেফ ধারণার মতো ছিল।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা নভেম্বর, ২০০৭ বিকাল ৫:০৮
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৫

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না
অহনা বলেছিল, আমি জানি আমি তোমাকে পেয়েছি সবখানি
আমি তাই নিশ্চিন্তে হারিয়ে যাই যখন যেখানে খুশি

অহনা বলেছিল, যতটা উদাসীন আমাকে দেখো, তার চেয়ে
বহুগুণ উদাসীন আমি
তোমাকে পাওয়ার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিয়াল ফিলিস্তিনীরা লেজ গুটিয়ে রাফা থেকে পালাচ্ছে কেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১১ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



যখন সারা বিশ্বের মানুষ ফিলিস্তিনীদের পক্ষে ফেটে পড়েছে, যখন জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে সাধারণ সদস্য করার জন্য ভোট নিয়েছে, যখন আমেরিকা বলছে যে, ইসরায়েল সাধারণ ফিলিস্তিনীদের হত্যা করার জন্য আমেরিকান-যুদ্ধাস্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসানের মা হিজাব করেন নি। এই বেপর্দা নারীকে গাড়ি গিফট করার চেয়ে হিজাব গিফট করা উত্তম।

লিখেছেন লেখার খাতা, ১১ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩


ছবি - সংগৃহীত।


ইফতেখার রাফসান। যিনি রাফসান দ্যা ছোট ভাই নামে পরিচিত। বয়স ২৬ বছর মাত্র। এই ২৬ বছর বয়সী যুবক মা-বাবাকে বিলাসবহুল গাড়ি কিনে দিয়েছে। আমরা যারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ এঁটেল মাটি

লিখেছেন রানার ব্লগ, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৫৬




শাহাবাগের মোড়ে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলাম, মাত্র একটা টিউশানি শেষ করে যেন হাপ ছেড়ে বাঁচলাম । ছাত্র পড়ানো বিশাল এক খাটুনির কাজ । এখন বুঝতে পারি প্রফেসদের এতো তাড়াতাড়ি বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাইলট ফিস না কী পয়জনাস শ্রিম্প?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১২ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:৪০

ছবি সূত্র: গুগল

বড় এবং শক্তিশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পাশে ছোট ও দূর্বল প্রতিবেশী রাষ্ট্র কী আচরণ করবে ? এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধিক্ষেত্রে দুইটা তত্ত্ব আছে৷৷ ছোট প্রতিবেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×