somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যুদ্ধাপরাধীর বিচার: কিছু খোলামেলা কথা।

০১ লা নভেম্বর, ২০০৭ সকাল ৭:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

৭১ এর যুদ্ধাপরাধীর বিচার নিয়ে যখন আলোচনা তুঙ্গে তখন বিভিন্ন জন জ্ঞানগর্ভ প্রশ্ন করে বিষয়টাকে জটিল করে তুলছে। অন্যদিকে বর্তমান সরকারের ভিতরে থেকেও একদল "মামলা"র ধুয়া তোলে পুরু বিষয়টা বিভ্রান্তিতে টেনে নিচ্ছে।

এই বিষয়ে একটা সাধাসিধা আলোচনার আশায় আজকে লেখা।

প্রথমত একটা বিষয়ে সবাইকে একমত হতে হবে যে - যুদ্ধাপরাধীর সংজ্ঞা, তাদের অস্তিত্ব বা বিচার সংক্রান্ত জামাতের যে কোন ব্যাখ্যা বিবৃতি সরাসরি গারবেজ বীনে চলে যাবে। কারন একজন অপরাধীকে জিজ্ঞাসা করে তার বিচার শুরু করার অর্থই বিচারকে নতজানি করা।

দ্বিতীয় যে বিষয়টা আমাদের কাছে পরিষ্কার থাকা জরুরী - তা হলো বাংলাদেশের জন্ম তারিখ হলো ২৬শে মার্চ ১৯৭১ সালে। সেই দিনের পরে যারা বাংলাদেশের ভু-সীমার ভিতরে দেশের মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে এবং যুদ্ধে সহায়তা করে সবাই বাংলাদেশের শত্রু এবং অপরাধী। যারা একটা দেশকে দখল করে রাখে তারা দখলদার বাহিনী। এরা যুদ্ধাপরাধী এবং তাদের দেশীয় সহযোগীরা সমানভাবে অপরাধী।

উপরের বিষয়টা পরিষ্কার এবং বাংলাদেশের সবাই জানে কারা ২৬শে মার্চ '৭১ থেকে ১৬ই ডিসেম্বর '৭১ পর্যন্ত বাংলাদেশের মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করেছে - সুতরাং তাদের সংজ্ঞা বা পরিচয় নিয়ে কোন বিতর্ক থাকার সুযোগ নেই।

এখন প্রশ্ন আসে তাদের অপরাধ বিচার যোগ্য কিনা?

পৃথিবীর সর্বত্র যুদ্ধাপরাধী এবং দালাল (কোলাবরেটরস) ঘৃনিত। তাদের বিচারের কাহিনী লিখতে গেলে কয়েকশত পাতা লিখতে হবে। সংক্ষেপে এই কথা বলা যায় - যুদ্ধের পর যেই দেশ সাফল্যের সাথে দালালদের নির্মূল করতে পেরেছে - তাদের উন্নয়নের জন্যে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এখনও ইউরোপের দেশগুলোতে ২য় বিশ্বযুদ্ধের দালালদের বিচার করা হচ্ছে। মোদ্দা কথা দালালদের বিষয়ে জিরো টলারেন্স (ZERO TOLARANCE) নীতিই হলো বিজয়কে সংহত করার পূর্ব শর্ত। এমনকি ইরানের মতো দেশেও ইসলামী বিপ্লবের পরপরই কঠিন হস্তে দালাল দমন করা হয়েছে।

তাহলে দালালদের বিচারের বিষয়ে দালাল এবং দালালের দালাল ছাড়া সবাই একমত।

এখন দেখা যাক - বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতে দালালদের বিচার কিভাবে করা হবে।

এখানে কোন ধরনের বিভ্রান্তির অবকাশ নেই - ৭১ এ পাকি সেনাবাহিনী এবং দেশীয় দালালরা যা করেছে তা হলো স্বাধীন বাংলাদেশের জনগনের বিরুদ্ধে অপরাধ। সরকার হলো জনগনের রক্ষক। জনগনের বিরুদ্ধে যে কোন অপরাধের দমন এবং অপরাধীদে বিচারে সন্মুখিন করা সরকারের দায়িত্ব।

উদাহরন হিসাবে দেখি - বাংলা ভাই এবং তারদলের বিরুদ্ধে যতদিন সরকার সক্রিয় না হযেছে - ডজন ডজন মামলা করেও তাদের বিচারের সন্মুখিন করা যায়নি। কখনও কখনও দেখা গেছে তাদের বিরুদ্ধে সুস্পস্ঠ অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা করা হলেও আইনের মারপ্যাচে জামিনে গেছে এবং পুনরায় অপরাধ করেছে।

সুতরাং জেএমবি চাইতে অনেক বেশী সংগঠিত শক্তির বিরুদ্ধে যারা ব্যক্তিগত পর্যায়ে মামলার কথা বলে - এরা হয় নির্বোধ - নয় মতলবাজ।


আরেকটা বিষয় হলো - যুদ্ধাপরাধকে যারা সাধারন অপরাধের মতো বিবেচনা করে ফৌজদারী মামলার কথা বলে তাদের হয় ফৌজদারী মামলা সম্পর্কে ধারনা নেই - নতুবা চালাকি করে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে কথা বলে।

আর একটা উদাহরন হলো - বঙ্গবন্ধ হত্যা মামলা - যা ফৌজদারী আদালতে করার কারনে বিগত সরকার সর্বোচ্চ সুবিধা নিয়েছে। এখনও এই মামলার ভবিষ্যত অনিশ্চিত।

সুতরাং যুদ্ধাপরাধীর বিচারের জন্যে কেবলমাত্র এবং একমাত্র সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে।

কিভাবে সেই কাজ টা করতে পারে সরকার?

যদি সরকার যুদ্ধাপরাধীর বিচার করতে চায় - তাহলে তাদেরকে :

১) সুস্পষ্ট ঘোষনা দিতে হবে যে সরকার যুদ্ধাপরাধীর বিচার শুরু করতে যাচ্ছে। নীতিগত অবস্থান পরিষ্কার না করা পর্যন্ত কোন বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহন যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে চরে যাবার সম্ভাবনা থাকে।

২) একটা ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিশন গঠন করা জরুরী। কারন ৩৭ বছরে অনেক প্রমান আর স্বাক্ষী হারিয়ে গেছে। কমিশন প্রাথমিক শুনানির পর সরকারকে সুনির্দিষ্ট মামলা করা এবং অধিকতর তদন্ত করার সুপারিশ করবে।

৩) ১৯৭৫ সালে চালু ট্রাইবুনাল গুলো পূর্নজীবিত করা এবং সেই সময়ে চালু মামলাগুলো শুরু করার নির্দেশ দেবে সরকার।

৪) ট্রাইবুন্যাল গুলোকে আধুনিকায়ন এবং দ্রুত পরিচালনা করার জন্যে প্রয়োজনীয় লোকবল, অর্থবল এবং আইনগত সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।

এইগুলো করার পরই নিশ্চিত হবে সরকার প্রকৃতপক্ষে যুদ্ধাপরাধীর বিচারের বিষয়ে আন্তরিক।

সরকারে ইচ্ছা অনিচ্ছা বিষয়ক একটা জ্বলজ্যান্ত উদাহরন আমাদের সামনে আছে। আজ ১লা নভেম্বর। শুরু হলো স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা। ৩৭ বছর আগে সংবিধানে নিম্চিত করার পরও মামলা করে ১৯ বছর অপেক্ষা করে আজ বিচার বিভাগ স্বাধীন হলো। যদি এই সরকারও আগের সরকারগুলোর মতো বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেই বসে থাকলে যে আজও বিচারের বানী নিভৃত কাঁদতো, তা কি আর বলার অপেক্ষা রাখে।

সর্বশেষ কথা হলো - কোন চমকদার কথায় বিভ্রান্ত হয়ে ঐক্যবদ্ধ ভাবে এগুতে হবে।

সক্রিয় সমর্থন থাকলো সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের প্রতি!
২৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

টুইস্টেড মাইন্ড অফ আ সিরিয়াল কিলারঃ কবি কালিদাস স্পেশাল

লিখেছেন এইচ তালুকদার, ২৭ শে মে, ২০২৪ রাত ১:১৩



সিরিয়াল কিলারদের নিয়ে আমার আগ্রহ শুরু হয় এই ব্লগেরই একজন অসাধারন ব্লগার ''ডক্টর এক্স'' এর লেখা পড়তে যেয়ে। বাংলা ভাষায় সাইকোলজির দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সেলফ হেল্প ধরনের অসাধারন কিছু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিলিস্তিনে কী শান্তি সম্ভব!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৭ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:২১

এক.
প্রতিদিন ঘুমানোর আগে আলজাজিরা দেখি৷ গাজার যুদ্ধ দেখি৷ রক্ত দেখি৷ লাল লাল৷ ছোপ ছোপ৷ সদ্য জন্মানো শিশুর৷ নারীর৷ কিশোর কিশোরীর৷ বৃদ্ধের৷ সারি সারি লাশ৷ সাদা কাফনে মোড়ানো৷ ভবনে চাপা পড়া৷... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রাকৃতিক দূর্যোগে আপনার অভিজ্ঞতা কেমন?

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫

আমার জীবনে আমি সরাসরি প্রাকৃতিক দূর্যোগের ভেতরে পড়েছি বলে আমার মনে পড়ে না । ২০১৯ সালের ঘটনা। ঘূর্ণিঝড়ের নাম সেবার ছিল সম্ভবত বুলবুল ! সেটা যখন আসছিল তখন আমি ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

উপকূলের ভাই-বোনদের প্রতি গভীর সমবেদনা

লিখেছেন বিষাদ সময়, ২৭ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৭




আমরা ঢাকার পাকা দালানে বসে যখন আয়েস করে চায়ে চুমুক দিয়ে বৃষ্টি বিলাসে বিভোর, ঠিক সেই সময় আমাদের উপকূেলের ভাই-বোনেরা হয়তো কেউ স্বজন, কেউ ঘর, কেউ ফসল, কেউবা গবাদী... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা: অশ্লীলতা কি পোশাক দিয়ে নির্ধারণ করা উচিৎ নাকি মানসিকতা ও চরিত্র দিয়ে?

লিখেছেন লেখার খাতা, ২৭ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫২


ছবিটি -ফেসবুক থেকে সংগৃহীত।

কহিনুরের, ফ্লোরা ওরিয়েন্টাল বিউটি সোপ।১৯৭৮ সালের বিজ্ঞাপন। ছবিটি ফেসবুকে পেয়েছি। ব্লগার সোনাগাজী, ব্লগার কামাল ১৮ সহ যারা মুরুব্বি ব্লগার রয়েছেন তারা হয়তো এই বিজ্ঞাপনটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×