somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নাটক (সম্পূর্ণ)

৩১ শে অক্টোবর, ২০০৭ রাত ১০:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাশেদের ঘর।
সকাল ভোর।
রাশেদ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক।বয়স আনুমানিক পঁয়তাল্লিশ।থাকে ভাইয়ের বাসায়।এই বাসায় থাকে রাশেদের বড় ভাই,ভাবী,ভাতিজা তমাল।রাশেদ বিবাহিত কিন্তু প্রায় বিয়ের সাথে সাথেই স্ত্রীর সাথে ডিভোর্স হয়ে যায়।এখন একাকী জীবন যাপন করছে।অবসর সময়ে গান বাজনা করে সময় কাটায়।
রাশেদ হারমোনিয়াম নিয়ে রেওয়াজ করছে।

রাশেদের ফ্ল্যাটের দরজা।
মিতালী রাশেদদের পাশের ফ্ল্যাটে থাকে।বয়স আনুমানিক আটত্রিশ।একটি এন জি ও তে কাজ করে।থাকে বড় বোনের সাথে।এই বাসায় থাকে মিতালীর বড় বোন,দুলাভাই আর ভাগ্নী লিমা।লিমা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্সের ছাত্রী।মিতালী বিবাহিতা।স্বামীর সাথে যৌতুকের বিষয় নিয়ে ডিভোর্স হয়ে গেছে।জীবনে আর বিয়ে করবেনা সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মিতালী দরজায় দাড়িয়ে কলিং বেল চাপে।সে খুব রেগে আছে।চোখে মুখে ঘূমের রেশ। তমাল দরজা খুলে দেয়।
মিতালী: তোমাদের বাসায় এতো চিৎকার চেচামেচি কিসের?
তমাল: আমার চাচা,প্রতিদিন সকালে গানের রেওয়াজ করেন।
মিতালী: কই আগেতো শুনিনি।
তমাল: তিনি এতোদিন আমাদের সাথে ছিলেন না।গতকাল রাতে এসেছেন।এখন থেকে আমাদের সাথেই থাকবেন।
মিতালী: ও।তো কিছুটা সংযত হয়ে রেওয়াজ করা যায়না।আমার ঘুমটাতো ভাংলো।
তমাল: আমারটাও।
মিতালী: ওনাকে বলো যে ওনার এই মহান সঙ্গীত চর্চার জন্য আমাদের ঘুম নষ্ট হচ্ছে।
তমাল: আপনি একটু বলুননা আন্টি।
মিতালী: আমি?
তমাল: হ্যা আন্টি, আপনিতো সিনিয়র মানুষ।আপনার কথায় হয়তো কাজ হতে পারে।
মিতালী: বলছো?
তমাল: অবশ্যই।
মিতালী: চলো তাহলে।
মিতালী ও তমাল রাশেদের ঘরের দিকে যায়।
রাশেদের ঘর।
সকাল[২নং দৃশের পরবর্তী সময়]
রাশেদ একমনে রেওয়াজ করছে।তমাল ও মিতালী তার ঘরে প্রবেশ করে।তাদেরকে দেখে রাশেদ রেওয়াজ করা থামিয়ে দেয়।তমাল রাশেদ ও মিতালীকে পরিচয় করিয়ে দেয়।
তমাল: আন্টি ইনি আমার ছোট চাচা আর চাচা ইনি হলেন আমাদের পাশের ফ্ল্যাটের আন্টির ছোট বোন।
রাশেদ: আমি রাশেদ।বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াই।
মিতালী: আমার নাম মিতালী।একটা এন জি ও তে কাজ করি।
রাশেদ: ও ভালোই তো।
একটু নিরবতা।কেউ কোন কথা খুজে পায়না।পরে মিতালী কথা বলে।
মিতালী: তমালের কাছে আপনার কথা শুনলাম।আপনি নাকি ভালো গান করেন,তাই দেখা করতে এলাম।ভাবলাম একটা গানও শুনে যবো।
রাশেদ: আরেনা আমি মোটেও ভালো গান করিনা।ওরা বাড়িয়ে বলে।যখন টেলিভিশনের এনলিস্টেড ছিলাম তখন নিয়মিত গাইতাম,এখন মাঝে মাঝে গলাটা একটু পরিস্কার করা আরকি।
মিতালী: এখন টেলিভিশনে গান না?
রাশেদ: না।
মিতালী: কেন?
রাশেদ: এমনিতেই,ভালো লাগে না।
তমালের সাথে মিতালীর চোখাচোখি হয়ে যায়।তমাল একটু রহস্যময় হাসি দিয়ে চলে যায়।
মিতালী: ঠিক আছে আপনি রেওয়াজ করুন আরেক দিন এসে আপনার গান শুনব।আমাদের বাসায় আসবেন,চায়ের দাওয়াত রইল।
রাশেদ: আচ্ছা,ধন্যবাদ।
মিতালী চলে যায়।
যে কোন পার্ক।
দিনের বেলা।
কামরান ও কান্তা দুজন মিথ্যা প্রেম করে।দুজন দুজনের সাথে মিথ্যা অভিনয় করে যায়।দুজনই ভাবে দুজনের কাছ থেকে বিভিন্ন রকম সুবিধা আদায় করে সট্কে পড়বে।তারা এধরনের মিথ্যা প্রেম করে অভ্যস্ত।কান্তা থাকে মেয়েদের হোস্টেলে।পড়ে একটি বেসরকারী কলেজে।বাবা মা থাকে ঢাকার বাইরে।কিন্তু সে মিথ্যা কথা বলে যে ঢাকায় তাদের বাড়ি আছে এবং সে একমাত্র মেয়ে বলে বাবা মার সব কিছু সেই পাবে।
অন্যদিকে কামরানের বাবা মাও ঢাকার বাইরে থাকে।সে ঢাকাতে একটা মেসে থাকে।কিন্তু কান্তাকে বলে ঢাকায় তাদের নিজের বাড়ি আছে।সে পড়াশোনা শেষ করে এখন বাবার ব্যবসা দেখাশোনা করছে।মাঝে মাঝে সে কান্তাকে এটা ওটা কিনে দেবে বলে লোভ দেখায়।
কামরান ও কান্তা এখন দুজন বসে আছে পার্কে একটা গাছের নিচে।
কান্তা: এই তুমি আমাকে তোমার বাসায় নিয়ে যাবা কবে?
কামরান: যাব,এই অল্প কিছুদিনের মধ্যেই নিয়ে যাব।আগে মাকে বলি আমাদের ব্যাপারটা।তারপর একদিন নিয়ে যাব।আর কয়দিন পরেতো তোমাকে একেবারে বউ করে সারা জীবনের জন্য আমার ঘরে নিয়ে যাব।
কান্তা: সত্যি!
কামরান: অবশ্যই। (মনে মনে বলবে-সময় হইলে টের পাইবা কই নিয়া যাই)
কান্তা: আমি সেই অপেক্ষাতেই আছি কবে তোমার বউ হব। (মনে মনে বলবে - খাইয়া আর কাজ পাই না তোর মত মদনের বউ হব )
কামরান: শোন আমরা কিন্তু তিন চার মাসের মধ্যেই বিয়ে করতেছি। আমাদের নতুন ফ্ল্যাটটা হইয়া গেলেই বিয়ে ঠিক করে ফেলবো বুঝলা।
কান্তা: তুমি যা বলবে তাই হবে।
কামরান: বিয়ের পরে আমরা নতুন ফ্ল্যাটে উঠে যাব।দুজনে মিলে সংসার সাজাব।শুধু তুমি আর আমি।নতুন ফ্ল্যাটটা কিন্তু আমি তোমার নামে লিখে দেব।(কান্তা কামরানের কাঁধে মাথা দিয়ে কথা শুনছে।চোখে মুখে খুশির ঝিলিক।কামরান মনে মনে বলে - এই কথা আরও কয়জনরে শুনাইছি সেটাত জাননা, ফ্ল্যাট কেনার মতো টাকা থাকলে এই গাছ তলায় বইসা থাকা লাগে)
কান্তা: এতো কিছু দিয়ে আমরা কি করব বলো,আমারতো আর কোন ভাই বোন নাই-বাবার সব কিছুতো আমিই পাব। আচ্ছা তুমি আমাকে খুব ভালোবাস তাইনা?
কামরান: কতটুকু ভালোবাসি তা বলে বুঝাতে পারব না।আচ্ছা জান তুমি আমাকে ভুলে থাকতে পারবা?
কান্তা: প্রথম প্রেম কি ভুলে যাওয়া যায়।(মনে মনে বলবে-সিরিয়ালে তুই কয় নম্বর সেটা আমি নিজেই জানিনা )আচ্ছা আমি তোমার তোমার প্রথম প্রেম না?
কামরান: অবশ্যই।তুমিই আমার জীবনের প্রথম ও শেষ নারী।
কান্তা: (হঠাত কান্তার মোবাইলে কল আসে।কান্তা কল রিসিভ করে)হ্যালো কে চাচা,কেমন আছেন?জি আমি ভাল আছি।জি চাচা আমি দুপুরে আপনাদের সাথে খেতে আসব।আচ্ছা রাখি চাচা,বাই।(মোবাইল রেখে কামরানকে)আমার ছোট চাচা ফোন দিয়েছিল,দুপুরে ওনাদের সাথে খেতে বলছে।চল এখন ওঠি।
কামরান: চল একসাথে কিছুক্ষন যাই।যাওয়ার পথে আমাদের বাড়িটাও তোমাকে চিনাইয়া দেব।
কান্তা: সত্যি!
কামরান: অবশ্যই,তোমার শ্বশুরবাড়ি তুমি চিনে রাখবা না।
দুজন বসা থেকে উঠে পড়ে।
যে কোন আবাসিক এলাকার রাস্তা।
দিন
কামরান ও কান্তা রিক্সায় করে যাচ্ছে।
কামরান: (একটি বাড়ির দিকে দেখিয়ে) এইযে এটা হচ্ছে আমাদের বাড়ি মানে তোমার শ্বশুরবাড়ি।
কান্তা: ওমা কি সুন্দর বাড়ি!
কামরান: ওভাবে তাকিওনা।বাসা থেকে কেউ দেখলে আমার বারোটা বাজবে।
একটি রেস্টুরেন্ট।
দুপুর।
রমিজ ও কান্তা রেস্টুরেন্টে বসে খাচ্ছে। রমিজ কান্তার আরেক প্রেমিক। রমিজ কিছুটা বোকা স্বভাবের।
রমিজ: খাবার কেমন হয়েছে?
কান্তা: ভালই।তবে স্যুপটা বেশী মজা হয়নি।ফ্রাই আর প্রনটা মজা হয়েছে।
রমিজ: তাহলে যেটা ভাল হয়েছে সেটাই খাও।আচ্ছা তুমি তখন ফোনে আমাকে চাচা বলছিলে কেন?
কান্তা: মা সামনে ছিল।
রমিজ: বুঝে ফেলেনিতো?
কান্তা: আরে না,না বুঝার জন্যইতো তখন আপনাকে চাচা বললাম।
রমিজ: যদি এরই মধ্যে আবার তোমার চাচার সাথে যোগাযোগ হয়ে যায়?
কান্তা: হু,না না তা হবেনা কারন মার সাথে চাচা চাচীর সম্পর্ক ভালনা।আচ্ছা ওসব চিন্তা আপনাকে করতে হবে না।খাওয়া শেষ করুন।আমার বাসায় যেতে হবে।
কান্তার হোস্টেল।
রাত।
কান্তা,তার রুমমেট রিপা,মিনু ও জয়া রুমে আছে।কেউ টেবিলে বসে আছে আবার কেউ বিছানায় শুয়ে আছে।কান্তা মোবাইলে কথা বলছে কামরানের সঙ্গে।
কথোপকথনের দৃশ্যে দুজনকেই দেখানো হবে।
কান্তা: হ্যালো কেমন আছো কামু?
কামরান: ভালো আছি।তুমি?
কান্তা: তোমাকে ছাড়া কি ভাল লাগে বল?কি করতেছিলা তুমি?
কামরান: তোমার কথা ভাবতেছি আর ইন্টারনেটে আমাদের আমেরিকান বায়ারের সঙ্গে বিজনেসের ব্যপারে মেইল করতেছি।জানো জান আজকে সারাক্ষন শুধু তোমার কথা মনে পড়ছে।
কান্তা: আমারও একই অবস্থা হইছে।কি যে করি বুঝতেছি না,তুমি তাড়াতাড়ি আমাদের বিয়ের ব্যবস্থা কর।(কথবার্তার মাঝখানে কান্তার মোবাইলে অন্য আরেকটি রিং আসে যা ওয়েটিংয়ে দেখা যায়।কান্তা একবার সামনে এনে দেখে তারপর আবার কানে ফোন ধরে। )কামুজান কালকে ক্লাশ আছে সকালে ওঠতে হবে,এখন রাখি?
কামরান: আচ্ছা ঠিক আছে রাখো।
কান্তা: বাই।
কামরান: বাই।
কামরান ফোনের লাইন কাটতেই কান্তার মোবাইলে রিং বেজে ওঠে।কান্তা ফোন রিসিভ করে।
[অপর প্রান্তের রুবেলকেও দেখানো হবে।]
কান্তা: হ্যালো।
রুবেল: কি ব্যাপার এতক্ষন ধইরা রিং দিতেছি।খালি ওয়েটিং দেখা যাইতেছে।
কান্তা: আরে আব্বা রিং দিছিল।পড়াশোনার খোজখবর নিতেছিল।
রুবেল: তোমার আব্বা এতো রাত্রে ফোন করে?
কান্তা: হ্যা রাত্রে না করে উপায় আছে,দিনের বেলা আব্বার সময় কই-যা ব্যস্ততার মধ্যে সময় কাটায়।
রুবেল: ও আচ্ছা। তো আজকে কলেজে আসলা না কেন?
কান্তা: আজকে শরীরটা ভাল লাগতেছিল না,এই জন্য হোস্টেল থেকে আর বাহির হই নাই।রেস্ট করলাম সারাদিন।
রুবেল: সারাদিন রেস্ট করছ না?দুপুরবেলা সায়েম তোমারে রেস্টুরেন্টে দেখল কেমনে আরেকটা পোলার লগে বইসা খাইতেছ।
কান্তা: ও একটু বয়স্ক একটা লোক?সেটাতো আমার ছোট চাচা।বাড়ি থেকে আসছিল,ঢাকা এসে ফোন দিল না গিয়ে পারলাম না।
রুবেল: তোমার চাচা মামা কাকা আর শেষ হয় না।এতো চাচা মামা আসে কোত্থিকা।
কান্তা: দেখ রুবেল আমার সাথে উল্টাপাল্টা কথা বলবা না।
রুবেল: সত্য কথা বললেই উল্টাপাল্টা,তোমারে আমার চেনা হইয়া গেছে।তোমার সাথে আমার আর কোন সম্পর্কের দরকার নাই। কালকে কলেজে আসার সময় আমার টাকাটা নিয়ে আসবা।তিন মাস আগে যে এক হাজার টাকা নিছিলা।মনে আছে নাকি ভুইলা গেছ।
কান্তা মোবাইলের লাইন কেটে দেয়।
রিপা: কি হয়েছে রে কান্তা?
কান্তা: কিছু হয় নাই।
জয়া: কান্তা তোকে একটা কথা বলি এখনও সময় আছে ভাল হয়ে যা।এভাবে মানুষকে ঠকানো ভালো না।একদিন দেখিস সব অন্যায়ের শাস্তি পেতে হবে।
কান্তা: থাক তোর কাছ থেকে আমাকে শিক্ষা নিতে হবেনা।আমি তোর থেকে ভাল বুঝি।
জয়া: ভাল বুঝিস বলেইতো এই অবস্থা।একসঙ্গে এতোজনের সাথে প্রেম করিস।তুই রীতিমতো সবার সাথে ফ্রড করছিস।
কান্তা: তুমি থাকো সতী নারী হয়ে।একজনকে নিয়ে আজীবন পড়ে থাকো।পরকালে পুরস্কৃত হবে।(মিনুর দিকে তাকিয়ে)মিনু জানিস লেটেস্ট যেটা পাইছি একেবারে পুরা মদন।বাপের বড় ছেলে,ধানমন্ডিতে বাড়ি আছে আবার গুলশানে ফ্ল্যাট বানাইতেছে।আমি যে কোন সময় ইচ্ছে করলেই বিয়ে করতে পারি।
মিনু: আমি তোর এইসব বাজে কথা শুনতে চাচ্ছি না কান্তা।কাল আমার মিডটার্ম।
কান্তা: ও আমার কথা শুইনা হিংসা হইতেছে।এই কারনে সবাই মিলে আমার পিছনে লাগছিস।
মিনু: তুই নিজে যেমন সবাইকে তেমনই ভাবছিস।আমরা তোর এইসব নোংরা কার্যকলাপ আসলেই অপছন্দ করি এবং তুই যদি এভাবে চালাতে থাকিস তাহলে বাধ্য হব আমরা তোর নামে কমপ্লেইন করে তোকে হোস্টেল থেকে বের করে দিতে।কারন আমরা কেউই চাইনা তোর জন্য আমরা সবাই ঝামেলায় পড়ি।
কান্তা: থাক তোদেরকে আর কষ্ট করতে হবে না,আমি নিজেই চলে যাব।
কথা শেষ করে কান্তা আবার মোবাইলে ফোন করে।
রাশেদ ও মিতালীদের বাড়ির সামনের রাস্তা।
সকাল।
মিতালী রিকসার জন্য গেটের সামনে দাড়িয়ে আছে।এমন সময় রাশেদও বের হয়।
রাশেদ: আরে কি খবর,অফিসে যাচ্ছেন বুঝি?
মিতালী: হ্যা,অনেকক্ষন যাবৎ দাড়িয়ে আছি-কোন রিকসা পাচ্ছি না।
রাস্তায় একটি রিকসা দেখা যায়,রাশেদ হাত উচিয়ে রিকসাটিকে ডাকলে রিকসাটি আসে।
রাশেদ: আপনি এটাতে করে চলে যান,আমি দেখি আরেকটা পাই কিনা।
মিতালী: আপনি কোনদিকে যাবেন?আমি বাস স্ট্যান্ডের দিকে যাব।
রাশেদ: আমিও ওদিকেই যাব।
মিতালী: আপত্তি না থাকলে আমার সাথে আসতে পারেন।
রাশেদ: না না আপত্তি কিসের।
রাশেদ ও মিতালী রিকসায় ওঠে যায়।রিকসা চলতে থাকে।
রাশেদ ও মিতালীদের বাড়ির ছাদ।
বিকাল।
মিতালী আকাশের দিকে তাকিয়ে দাড়িয়ে আছে।তার হাতে চায়ের কাপ।রাশেদও তার পাশে এসে দাড়ায়।
রাশেদ: কি খবর কেমন আছেন ?
মিতালী: ভালো। আপনি ?
রাশেদ: আছি ভালোই।পৃথিবীতে বাঁচতে গেলে ভালো থাকতে হয়।আর ভালো না থাকলেও ভালো থাকার অভিনয়টুকু অন্তত করতে হয়।
মিতালী : হঠাৎ একথা কেন বললেন?
রাশেদ : এমনি,কোন কারন নেই।
মিতালী : ও তাই,আচ্ছা আপনি কোন সাবজেক্ট পড়ান ?
রাশেদ : ফিলসফি।
মিতালী : মজার সাবজেক্ট,ডিগ্রীতে আমার ছিল।আমি চা খাচ্ছি আপনি কি খাবেন?খেলে এনে দিতে পারি।
রাশেদ : ধন্যবাদ আমি চা খাব না,আপনি খান।
মিতালী : আপনার স্ত্রী কি এখানেই থাকেন?
রাশেদ : আমার স্ত্রী নেই।
মিতালী : বিয়ে করেননি?
রাশেদ : করেছিলাম,টেকেনি।
মিতালী : সরি আমি মনে হয় আপনার পার্সোনাল বিষয়ে ইন্টারফেয়ার করে ফেললাম।
রাশেদ : না না এতে পার্সোনালের কি আছে,বিয়ে করেছিলাম বউয়ের সাথে এ্যাডজাস্ট হয়নি ব্যস বউ চলে গেছে।আর যে বিষয় নিয়ে আমার সাথে তার এ্যাডজাসমেন্টে প্রবলেমটা হয়েছিল তাতে আমার মনে হয় না যে আমার কোন অপরাধ ছিল।তাই তেমন কোন অপরাধবোধও আমার নেই।
মিতালী : যদি কিছু মনে না করেন বিষয়টা কি ছিল জানতে পারি কি?
রাশেদ : আমার অর্থনৈতিক অবস্থায় তার আপত্তি ছিল।শিক্ষকতার পয়সায় তার হচ্ছিল না।তাই সংসারটাও করা হলোনা।আচ্ছা থাক আমার কথা এবার আপনার কথা বলুন।আপনার হাজব্যান্ড কি করে?
মিতালী : তার সাথে আমার ডিভোর্স হয়ে গেছে।
রাশেদ : ও।
কিছু সময় নিরবতা।
মিতালী : এই পৃথিবীতে মানুষের অনেক চাহিদা তাই না?
রাশেদ : হয়তো।
মিতালী : মানুষের প্রয়োজনের বাহিরে চাওয়াটাই মনে হয় লোভ।আর এই লোভ যখন চরম আকার ধারন করে,সীমা লঙ্ঘন করে তখন মানুষের ধ্বংস অনিবার্য।যুগে যুগে পৃথিবীতে এমনটাই ঘটে এসেছে ।তারপরও মানুষ বুঝতে চায় না।আমার স্বামীর কোন অভাব ছিল না।ঢাকাতে বাড়ি ছিল,ভালো ব্যবসা করতো।বিয়ের মাস ছয়েক পরে হঠাৎ করেই সে আমাকে বলল তার ব্যবসা বাড়ানোর জন্য টাকা প্রয়োজন-আমি যেন তাকে আমার বাবার বাড়ি থেকে টাকা নিয়ে দেই।প্রথম দিকে স্বাভাবিকভাবেই বলতো,পরের দিকে রীতিমতো মা ছেলে মিলে আমাকে নির্যাতন করতো।আমি আর দশটা বাঙালী মেয়ের মতো মেনে নেইনি।চলে এসেছি-নিজেই ডিভোর্স করেছি।
রাশেদ : খুব ভালো করেছেন।নিজের মতো করে বাঁচার মধ্যেও একটা আনন্দ আছে।এই যে আমি মহা আনন্দে দিন কাটাচ্ছি,কোন ঝামেলা নেই চিন্তা নেই ভালোই লাগে।আচ্ছা আপনি কি আমাকে একদিন একটু সময় দিতে পারবেন ?আমার কিছু কেনাকাটা ছিল,আপনাদের ঢাকা শহরতো আমি তেমন একটা চিনি না,সেদিন আপনার সঙ্গে বাস স্ট্যান্ড পর্যন্ত গিয়ে মনে হলো আপনি এই শহরের অনেক কিছুই চেনেন।
মিতালী : কবে যাবেন?
রাশেদ : আপনার যেদিন সময় হয়।
মিতালী : তাহলে কাল চলুন,আমার অফিস শেষ হবে চারটায়,আপনি সাড়ে চারটার মধ্যে নিউ মার্কেটের এক নাম্বার গেটে চলে আসুন।
রাশেদ : ঠিক আছে ততক্ষনে আমারও ক্লাশ শেষ যাবে।
যে কোন মার্কেট।
পরদিন বিকাল।
রাশেদ ও মিতালী মার্কেটে কেনাকাটা করছে। দুয়েকটি দোকানে কেনাকাটার দৃশ্য দেখানো যেতে পারে।
যে কোন রাস্তা।
মিতালী রিকসায় বসে থাকে,রাশেদ একটি দোকান থেকে আইসক্রিম কিনে এনে মিতালীকে দেয়।রিকসা চলতে শুরু করে।
তমালের ঘর।
রাত।
তমাল তার ঘরের বিছানায় আধশোয়া হয়ে বই পড়ছে।রাশেদ ঘরে প্রবেশ করে।
রাশেদ : কিরে কেমন আছিস?
তমাল : ভালো আছি ছোট চাচা,তুমি কেমন আছো?
রাশেদ : ভালোই।আচ্ছা শোন তোর সাথে কিছু কনফিডেন্সিয়াল কথা আছে।তুইতো এখন এ্যাডাল্ট-তোর সাথে সব কিছুই শেয়ার করা যায়।কি বলিস?
তমাল : কিছু বলবে?
রাশেদ : হ্যা,কথাগুলো খুব মনোযোগ সহকারে শুনবি।আর ব্যাপারটাকে অন্যভাবে নিস্না।মানে ব্যাপারটা আমার কাছে খুব সিরিয়াস,অবশ্য বেশী সিরিয়াসও না-তারপরও আমি তোর সাথে একটু সিরিয়াসলি আলাপ করতে চাই।
তমাল : ঠিক আছে বলো।
রাশেদ : হ্যা শুরু করা যাক-সিরিয়াসলি কিন্তু বুঝলি।
তমাল : আচ্ছা সিরিয়াসলি এখন বলো।
রাশেদ : হ্যা ব্যাপারটা হলো তোর কাছে ওই ভদ্রমহিলাকে কেমন লাগে?
তমাল : কোন ভদ্রমহিলাকে?
রাশেদ : আরে পাশের বাসার ওই যে মিতালী না কি যেন নাম।
তমাল : ভালোইতো।
রাশেদ : ভালো মানে কেমন ভালো?
তমাল : ভালো মানে সবদিক দিয়েইতো ভালো।ভদ্্র,শিক্ষিত,ভালো ফ্যামিলি।
রাশেদ : আমিওতো তাই বলি।
তমাল : হঠাৎ মিতালী আন্টির ব্যাপারে এতো খবর নিচ্ছ যে?
রাশেদ : না হয়েছে কি আমার কিছু জরুরি জিনিসপত্র কেনার
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×