somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জাপানিজ ফিকশনের পপ মাস্টার হারুকি মুরাকামি ( পর্ব-২ )

৩১ শে অক্টোবর, ২০০৭ সন্ধ্যা ৭:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৯৬৩ সালে ১৪ বছর বয়সে মুরাকামির জীবনে বড় ধরনের একটি পরিবর্তন ঘটে যায়। তিনি আর্ট ব্লাকি এবং জাজ ম্যাসেঞ্জারের একটি কনসার্টে অংশগ্রহণ করেন। সে রাতেই মিউজিকের প্রতি তীব্র মোহ জন্ম নেয় তার মধ্যে। তারপর থেকেই মুরাকামি একনিষ্ঠ জাজ শ্রোতা। জাজে তিনি এতোটাই জড়িয়ে পড়েন যে, এটি তার প্রফেশনাল জীবনে প্রভাব ফেলে। ১৯৭১ সালে তিনি ইয়োকো তাকাহাশিকে বিয়ে করেন। দু’জনেই ওয়াসেদা ইউনিভার্সিটিতে পড়া বাদ দেন। পড়ার বদলে টোকিওতে একটি জাজ কাব খোলার জন্য উঠেপড়ে লাগেন। অবশেষে সফলও হন। এ জন্য তাদের খুবই কষ্ট করতে হতো। মুরাকামি নিজে ডিশ পরিষ্কার করেছেন, রেকর্ড পরিবর্তন করে দিতেন এমনকি মিউজিশিয়ান বুক করাও তার কাজ ছিল। এক সময় তার ব্যবসায় মন্দাভাব দেখা যায়। তিনি আবার পড়াশোনা শুরু করেন। ১৯৭৫ সালে মুরাকামি ডিগ্রি পান।
ঔপন্যাসিক হিসেবে তার উত্থানকে মুরাকামি নিজে তাতপর্যপূর্ণ অভিজ্ঞতা হিসেবে ভাবেন। ১৯৭৭ সালে টোকিওর জিংগু স্টেডিয়ামে বসে প্রিয় বাস্কেটবল টিম ইয়াকুট সোয়ালোর খেলা দেখছিলেন। ডেভ হিল্টনের একটি ডাবল হিট দেখে মজে যান মুরাকামি। ২৮ বছরের মুরাকামি তার প্রথম উপন্যাস লেখায় উদ্বুদ্ধ হন। তার প্রথম উপন্যাসের নাম হেয়ার দি ওয়াইন্ড সিং। এটি ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে সুখের অভিজ্ঞতাÑ বলেন হারুকি মুরাকামি। তার এই সুখীসত্তার পূর্ণতা পায় এক দশক পর নরওয়েজিয়ান উড-এর প্রকাশনার মাধ্যমে। এর আগে তার আরো কিছু বই প্রকাশিত হয়েছে কিন্তু তিনি তেমন আলোচিত হননি।
নরওয়েজিয়ান উড বইটির প্রকাশ ছিল বিস্ময়কর। আগামীর প্রজন্মকে নিয়ে লেখা উপন্যাসটি আলো ফেলেছিল একটি কলেজ ডরমিটরিতে। আগে লেখা তার যে কোনো কাজ থেকে এটি অধিক সুপাঠ্য ছিল। এর ফলেই ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় উপন্যাসটি। শুধু বইটির জাপানিজ ভার্সন প্রায় চার মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়। তার জীবনের পরবর্তী ১০ বছর তিনি নিজেকে আরো অভিজ্ঞ করার লক্ষ্যে গ্রীস, ইটালি এবং আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে ঘুরে বেড়িয়েছেন। এ সময়ে তিনি লিখেছেন, পড়েছেন এবং শিক্ষকতা করেছেন। কোবেতে ভূমিকম্পের পর ১৯৯৫ সালে তিনি জাপানে ফিরে আসেন। সেই ভূমিকম্পে মুরাকামির বাবার বাড়িটি ধ্বংস হয়। সে সম্বন্ধে তিনি বলেন, আমি জানি না, এটি ভালো না খারাপ হয়েছিল। কিন্তু শুধু জানি, সবকিছুই পরিবর্তিত হয়ে গেছে। এটি আমার জন্য একটি টার্নিং পয়েন্ট ছিল। আমি বুঝতে পেরেছি, সমাজের জন্য আমার আত্মত্যাগ করার আছে।
লেখকরা মাঝেমধ্যে নিজের দেশেই তেমন সম্মান পান না। মুরাকামির ক্ষেত্রে তেমনটিই ঘটেছে। বাণিজ্যিকভাবে তিনি খুবই সফল। কিন্তু জাপানে সিরিয়াস সাহিত্য ও আপামর জনসাধারণের জন্য ফিকশনের মধ্যে বেশ পার্থক্য করা হয়। টোকিও ইউনিভার্সিটির লিটারেচারের প্রফেসর মিতসুইয়োমি নুমানো বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, যদি একজন লেখক হাই কোয়ালিটির লিটারেচার তৈরি করতে চান তাহলে তার বই তেমন বিক্রি হয় না। মুরাকামি মূলত সমাজের সাধারণ মানুষকে লক্ষ্য করে লিখেছেন। তার উপন্যাস কাফকা অন দি শোর তাকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। ২০০৩ সালে তিনি উপন্যাসটি লেখা শুরু করেন। খুব রুটিন মেপে উপন্যাস লেখেন তিনি। প্রতিদিন ভোর ৪টায় ঘুম থেকে উঠতেন। তার পরের পাচ ঘণ্টা কি-বোর্ডে চেপে লিখতেন কাফকা অন দি শোর-এর পান্ডুলিপি। গত সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত হয়েছে উপন্যাসটি। রিলিজের দিন থেকেই এটি জাপানের বেস্টসেলার লিস্টের শীর্ষে স্থান করে নিয়েছে।
এর কারণ হিসেবে মুরাকামি তার লেখার সহজ পদ্ধতি ও বোধগম্য স্টাইলটিকেই গণ্য করেন। তার কাজগুলো সাধারণ পাঠকের এন্টারটেইনমেন্টের বিষয়টি লক্ষ্য করেছে। মুরাকামি বলেন, অনেক পাঠকই আমার বই তিনবার এমনকি চারবারও পড়েন। কারণ আমার উপন্যাসগুলো সহজপাঠ্য। কিন্তু গল্পগুলো বোঝা খুব একটা সহজ নয়। এ ওয়াইল্ড শিপ চেজ এবং দি ওয়াইল্ড আপ বার্ড ক্রনিকল উপন্যাস দুটিতে মুরাকামি কমপ্লেক্স হিমু নিয়ে পরীক্ষা করেছেন। এতে রয়েছে বিংশ শতাব্দীর প্রথম অর্ধেক সময়ে জাপানের উপনিবেশবাদের বিষয়টি। তিনি ব্যতিক্রমী কিছু চরিত্র একেছেন। যেগুলো আশা এবং নিরাশা নিয়ে তাদের জীবনকে পুনর্গঠন করতে সংগ্রাম করে যায়। সাহিত্য কি খুবই উচ্চমানের নাকি আপামর জনগণের জন্যÑ এ বিষয়ে মুরাকামি বলেন, কিছু লোক ভাবে লিটারেচার হচ্ছে উচ্চমার্গীয় কালচার এবং এর কেবল ক্ষুদ্র রিডারশিপ থাকা উচিত। আমি কখনোই এমনটা মনে করি না।
বর্তমানে মুরাকামি টোকিওর কাছাকাছি মোটেসান্ডোর একটি অ্যাপার্টমেন্টে থেকে পুরোদমে তার লেখালেখির কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এখনো তিনি জিন্স এবং ক্যাজুয়াল শার্ট পরতে পছন্দ করেন। এছাড়া খুবই ধরাবাধা জীবনযাপন করেন তিনি। প্রতিদিন ১০ কিলোমিটার হাটেন, নিয়ম মেনে খাবার-দাবার গ্রহণ করেন, আগে আগে ঘুমাতে যান এবং সূর্যোদয়ের আগেই লেখালেখির কাজ শুরু করেন। মিজুমারু আইজাই নামে একজন লেখক এবং ইলাস্ট্রেটর মুরাকামিকে তিন দশক ধরে চেনেন। তিনি বলেন, মুরাকামি তার জীবনের শুরু থেকেই একই নিয়মনীতি মেনে চলছেন।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে অক্টোবর, ২০০৭ সন্ধ্যা ৭:৪৭
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×