somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চ্যানেলগুলোর নিউজ প্রেজেন্টেশনে বাণিজ্যিকায়ন

৩০ শে অক্টোবর, ২০০৭ বিকাল ৩:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এখন সকালে ঘুম থেকে উঠেই নিউজপেপারে চোখ না বোলালেও চলে। কারণ নিউজপেপারের হেডিংয়ের সম্ভাব্য নিউজটি অনেকেই আগেভাগে জেনে যান দেশীয় চ্যানেলগুলোর কল্যাণে। নিউজপেপার সারা দিনের খবরগুলো পরের দিন উপস্থাপন করে।

অন্যদিকে চ্যানেলগুলো তাদের রিপোর্টারদের দিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে যে কোনো নিউজ প্রেজেন্টেশনে সক্ষম। ইদানীংকালে তো যে কোনো স্থানে বড় কোনো ঘটনা ঘটলে সরাসরি বা লাইভ দেখানোর সুযোগ থাকায় নিউজপেপারের সঙ্গে সঙ্গে টিভি চ্যানেলগুলোর নিউজের বেশ কদর বেড়েছে। অথচ পাবলিক জনপ্রিয়তাকে যখন পজিটিভভাবে না নিয়ে বাণিজ্যিকীকরণ করার চেষ্টা করা হয় তখনই সাধারণ দর্শক হন ক্ষুব্ধ, বিরক্ত।

পাবলিক জনপ্রিয়তাকে আমলে নিয়ে চ্যানেলগুলো যখন তাদের নিউজের সময় বাড়িয়ে দেয়, নিউজ চালাকালে বিজ্ঞাপনের সংখ্যা ও রেট দুটোই বাড়িয়ে দেয় তখন প্রশ্ন ওঠাটা স্বাভাবিক যে, তারা কি আসলে দর্শকদের চাহিদার প্রতি খেয়াল রাখছে, না নিজেদের বাণিজ্যিক অবস্থার উন্নয়ন নিয়ে ভাবছে।

ঘণ্টায় ঘণ্টায় একই নিউজের পুনরাবৃত্তি ঘটানোর তেমন কোনো দরকার আছে বলে মনে হয় না। কারণ নিউজ প্রেজেন্টেশন ছাড়াও ফিলার হিসেবে একটু পর পরই তো চ্যানেলগুলো টপ নিউজগুলো টিভি পর্দায় রানিং হিসেবে দেখাচ্ছে। আর একই নিউজ প্রেজেন্টেশনের ফাকেও এতো এতো বিজ্ঞাপন উপস্থাপন করা হয়, যা দেখে সাধারণ দর্শকরা হন বিরক্ত।

ফলে রিমোটে তারা অন্য চ্যানেলের বোতাম টেপেন। একটু পর যখন আবার সেই চ্যানেলে ফিরে আসেন হয়তো দেখেন কোনো নিউজ মিস হয়ে গেছে বা তখনো বিজ্ঞাপনের চাপে নিউজ শুরুই হয়নি। বারবার বিরতি নিয়ে নিউজের এ কেমন ধরনের প্রেজেন্টেশন তা আসলেই বোধগম্য হয় না কারোরই। হয়তো নির্দিষ্ট কোনো চ্যানেলের নিউজ দেখার পর বিরক্ত হয়েও দর্শকরা সেই চ্যানেলটি দেখা বাদ দিয়ে কম বিজ্ঞাপন ও নিউজের কনটিনিউয়াসের প্রতি কমিটেড কোনো চ্যানেলের প্রতি ঝুকে পড়েন।

চ্যানেলগুলোর হর্তাকর্তারাও যে এটি বোঝেন না বা জানেন না এমনটি নয়। বরং এ ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক দৃষ্টিভঙ্গিই তাদের কাছে থাকে মুখ্য। বিজ্ঞাপনের জোয়ারে অনুষ্ঠানকে আবদ্ধ করবেন না, এমন ঘোষণা দিয়ে প্রায় সব চ্যানেল যাত্রা শুরু করলেও পরে তারা নিজেরাই আসলে হয়ে যান বিজ্ঞাপনের জালে বন্দি।

অথচ নিউজের প্রতিটি অংশই এখন বিজ্ঞাপনের কাছে বিক্রীত!
সংবাদ শিরোনাম, খেলার সংবাদ, সাংস্কৃতিক সংবাদসহ সবকিছুর আগে এখন থাকে বিজ্ঞাপনদাতার নাম। অথচ সাধারণ দর্শকরা নিউজটুকু জানতে চান। নিউজের মাঝে বিজ্ঞাপনের প্রচার তারা শুনতে চান না। কিন্তু চ্যানেলের কর্তাবাবুরা মনে হয় পণ করেই বসেছেন যে, দর্শকদের বিজ্ঞাপনের প্রচার শুনিয়েই ছাড়বেন!

ফলে পুরো বিষয়টা মিলিয়ে যা হচ্ছে তা হলো জগাখিচুরি! কারণ বিজ্ঞাপনদাতারাও বেশ ভালোভাবেই জানেন, মূলত চ্যানেলগুলোর নিউজ প্রেজেন্টেশনের সময়েই সবচেয়ে বেশি দর্শক টিভির সামনে থাকেন। আর সব বয়সীকেই এ সময় একত্রে পাওয়া সম্ভব।

তাই তারা জোর দেন চ্যানেলগুলো যাতে তাদের বিজ্ঞাপনটি নিউজ প্রেজেন্টেশনের সময়ই বেশি করে সম্প্রচার করে। ফলে চ্যানেলের পরিচালকরাও দর বাড়িয়ে অন্যান্য টিভি প্রোগ্রামের বদলে নিউজকেই বানিয়ে ফেলছেন প্রোগ্রাম। কারণ, নিউজের বাণিজ্যিকায়নের লাভ যে অনেক বেশি!

অথচ নিউজের ফাকে ফাকে সাধারণ দর্শকদের নানা ধরনের সচেতনতামূলক বিজ্ঞাপন দ্বারা উদ্বুদ্ধ করা যেতো। যেমন, এইডস, যক্ষ্মা, কুষ্ঠসহ অন্যান্য রোগের সচেতনতামূলক বিজ্ঞাপন। এছাড়া জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, পরিবেশ দূষণমুক্তসহ নানা ধরনের সচেতনতামূলক বিজ্ঞাপন নিউজ প্রেজেন্টেশনের ফাকে ফাকে প্রচার করলে চ্যানেলগুলোর হয়তো বাণিজ্যিক লাভ কম হবে, কিন্তু পাবলিকের কাছে তা বেশ জনপ্রিয়তা পাবে।

তাছাড়া সামাজিক পদক্ষেপ হিসেবে শুধু ব্যক্তিবিশেষকে সাহায্য-সহযোগিতা বা শীতবস্ত্র বিতরণ করলেই সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে মুক্ত হওয়া যায় না। এর জন্য প্রয়োজন উদার দৃষ্টিতে গণমাধ্যমের সাহায্যে মানুষকে সচেতন করা। এতে নিজেদের সামান্য ক্ষতি (!) হলেও সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানো সম্ভব।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জানুয়ারি, ২০০৮ রাত ৮:৫৩
২৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×