মন্ত্রীত্ব পাওয়ার পর জামাতে ইসলামী প্রথমেই বাঙালীদের ‘পাকিস্থানী মুসলমান’ বানানোর পদক্ষেপ নিয়েছিলো। শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর জন্যে এরা নতুন শিক্ষানীতি প্রনয়ন শুরু করে। এর ভিত্তি হিসাবে জামাতে নেতা গোলাম আযমের দৃষ্টিভঙ্গীকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছিলো।
আজাদী দিবসে গোলাম আযম দু:খ করে বলেছিল - “গত ২৪ বছর যাবত পাকিস্থানের আদর্শের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে। তাই আজ ঘরে ঘরে পাকিস্থানের শত্রু সৃস্টি হয়েছে। এরা পাকিস্থানের পহেলা নম্বরের শত্রু ভারতকে বন্ধু মনে করে”।
এই জন্যে সে শিক্ষা ব্যবস্থাকে দায়ী করে বলে - “যারা পাকিস্থানের জন্ম নিয়ে দুশমন হয়েছে তাদের দোষ দেওয়া যায় না। বর্তমান শিক্ষা ও রাষ্ট্র ব্যবস্থাকেই এই জন্যে দায়ী করতে হবে। কারন পাকিস্থানকে যারা ভালোবাসে তাদেরকে তৈরী হওয়ার সুযোগ দিলে তারা দেশের জন্যে জান কোরবান করতো”। (দৈনিক পাকিস্থান, ১৬ আগস্ট ১৯৭১)
সেই বক্তব্য অনুসরন করে জামাতের মন্ত্রী আব্বাস আলি খান বলে - “শিক্ষার প্রশ্নটি যদি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া না হয় তবে যুব সমাজ অন্ধকারাচ্ছন্নই থেকে যাবে এবং তাদের লক্ষ্যস্থল পাকিস্থানের আদর্শ থেকে তারা বহু দুরে সরে থাকবে। ইসলামী অনুপ্রেরনামূলক শিক্ষা ছাড়া আমরা আমাদের ছেলেমেয়েদেরকে পাকিস্থানের পটভূমিকা সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে পারবো না”।
আব্বাস আলি আরো বলে - “ এ ব্যবস্থা অত্যন্ত ক্ষতিকর, এ ব্যবস্থা পরিত্যাজ্য”
( পাক সমাচার, ১লা অক্টোবর ১৯৭১)
দৈনিক ইত্তেফাক ১০ ই নভেম্বরের সংখ্যা থেকে জানা যায় - আব্বাস আলি খান ১ম থেকে দ্বাদশ শ্রেনী পর্যন্ত শিক্ষা পাঠ্যক্রমকে ঢেলে সাজানোর লক্ষ্যে ২০ সদস্যের একটা কমিটি করেছিল।
এর পরই পরিস্থিতি চলে যায় এদের নিয়ন্ত্রনের বাইরে। ঢাকা শহরে মুক্তিবাহিনীর কার্যক্রম শুরু হলে যখন মালেক মন্ত্রী সভার অন্যান্য সদস্যরা নিজেদের জীবন বাচানোর তাগিদে পালাচ্ছিলো। তখন জামাতের সৃষ্ট আল-বদর বাহিনী গোপনে তাদের কার্যক্রম সংগঠিত করে এবং শেষ আক্রমন হিসাবে মীরপুরে নিয়ে বুদ্ধিজীবিদের হত্যা করে। এটা ছিল জামাতের বাঙালী জাতিসত্তা বিনাশের সর্বশেষ এবং সবচেয়ে ভয়াবহ পদক্ষেপ।
( এই পর্ব শেষ)
ফিরে দেখা ৭১: মুক্তিযুদ্ধকালীন জামাতের রাজনৈতিক ভুমিকা (৩): জামাতের মন্ত্রীদের বাঙালী জাতিসত্তা বিনাশের উদ্যোগ।
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
আজকের ব্লগার ভাবনা: ব্লগাররা বিষয়টি কোন দৃষ্টিকোন থেকে দেখছেন?
ছবি- আমার তুলা।
বেলা ১২ টার দিকে ঘর থেক বের হলাম। রাস্তায় খুব বেশি যে জ্যাম তা নয়। যে রোডে ড্রাইভ করছিলাম সেটি অনেকটা ফাঁকা। কিন্তু গাড়ির সংখ্যা খুব কম।... ...বাকিটুকু পড়ুন
সাপ, ইদুর ও প্রণোদনার গল্প
বৃটিশ আমলের ঘটনা। দিল্লীতে একবার ব্যাপকভাবে গোখরা সাপের উৎপাত বেড়ে যায়। বৃটিশরা বিষধর এই সাপকে খুব ভয় পেতো। তখনকার দিনে চিকিৎসা ছিলনা। কামড়ালেই নির্ঘাৎ মৃত্যূ। বৃটিশ সরকার এই বিষধর সাপ... ...বাকিটুকু পড়ুন
একাত্তরের সংগ্রামী জনতার স্লুইস গেট আক্রমণ
(ছবির লাল দাগ দেয়া জায়গাটিতে গর্ত করা হয়েছিল)
শহীদুল ইসলাম প্রামানিক
২৩শে এপ্রিল পাক সেনারা ফুলছড়ি থানা দখল করে। পাক সেনা এলাকায় প্রবেশ করায় মানুষের মধ্যে ভীতিভাব চলে আসে। কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন
বাড়ির কাছে আরশিনগর
বাড়ির কাছে আরশিনগর
শিল্পকলা একাডেমির আশেপাশেই হবে চ্যানেলটার অফিস। কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করল মৃণাল। কিন্তু খুঁজে পাচ্ছে না সে। এক-দু'জনকে জিগ্যেসও করল বটে, কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারছে না।
কিছুদূর এগোনোর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমি ভালো আছি
প্রিয় ব্লগার,
আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন