somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বায়োগ্রাফি : বুকার বিজয়ী লেখিকা কিরণ দেশাই

২৯ শে অক্টোবর, ২০০৭ দুপুর ১:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কিরণ দেশাইয়ের প্রথম উপন্যাস হোলা বালু ইন দি গোয়াভা অরচার্ড প্রকাশিত হয় ১৯৯৮ সালে। দীর্ঘ আট বছর বিরতিতে প্রকাশিত হয় তার দ্বিতীয় উপন্যাস। আর দ্বিতীয় উপন্যাস দিয়েই বাজিমাত করেছেন কিরণ দেশাই। জিতে নিয়েছেন ম্যান বুকার প্রাইজ ২০০৬। তার মা অনিতা দেশাই বেশ কয়েকবার বুকার পুরস্কারের জন্য শর্টলিস্টে মনোনীত হয়েছিলেন। কিন্তু পুরস্কার জিততে পারেননি একবারও। তার মেয়ে দ্বিতীয় উপন্যাসেই জিতে নিয়েছেন সম্মানজনক এ পুরস্কার। মেয়ের সাফল্যে দারুণ খুশি অনিতা দেশাই। ইনডিয়ার প্রত্যন্ত একটি অঞ্চলে বাস করেন তিনি। তাই মেয়ের সাফল্যের খবর বেশ দেরিতেই পৌছেছিল তার কাছে। প্রতিক্রিয়ায় অনিতা দেশাই বলেন, তার সাফল্যে মা হিসেবে আমি গর্ববোধ করছি। সত্যিই তার জন্য এটি অনন্য পাওয়া।
কিরণ দেশাই অনিতা দেশাইয়ের চার সন্তানের একজন। ১৯৭১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ইনডিয়ার নিউ দিল্লিতে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার শৈশব কাটে ইনডিয়ায়। তখন তিনি দিল্লি এবং হিমালয়ের পাশের কলিম্পং স্কুলে পড়াশোনা করেন। ১৪ বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে ইংল্যান্ডে পাড়ি জমান কিরণ দেশাই। কিন্তু সেখানেও স্থির হয়নি তার জীবন। মাত্র এক বছর পরই তার পরিবার চলে যায় আমেরিকায়। সেখানে ম্যাসাচুসেটস স্টেটের স্কুলে পড়াশোনা শুরু করেন তিনি। তারপর বেনিনটন কলেজ ও পরে তিনি আমেরিকার কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে কৃয়েটিভ রাইটিং বিষয়ে পড়াশোনা করেন। সেই সময়েই লেখালেখির দিকে বেশি ঝুকে পড়েন তিনি। প্রথম উপন্যাস লেখার জন্য দু’বছরের শিক্ষাবিরতি নেন। ১৯৯৮ সালে প্রকাশিত হয় তার প্রথম উপন্যাস। এটি লিখতে তার সময় লেগেছিল চার বছর। এ উপন্যাসটি বেশ সাড়া ফেলে। লেখক সালমান রুশদি উপন্যাসটির বেশ প্রশংসা করেন। সোসাইটি অফ ইউনাইটেড স্টেট থেকে সেরা নতুন উপন্যাস হিসেবে এটি বিটি ট্রাস্ক অ্যাওয়ার্ড লাভ করে। প্রথম উপন্যাস হোলা বালু ইন দি গোয়াভা অরচার্ড সম্বন্ধে কিরণ দেশাই বলেন, আমি মনে করি আমার বইটি ইনডিয়ার জীবনের ভালোবাসা নিয়ে পরিপূর্ণ ছিল। আমি লিখতে কতোটা ভালোবাসি সেই উপলব্ধির সুখবোধ থেকেই বইটি লিখেছিলাম।
তবে সাহিত্য জগতে কিরণ দেশাই মনোযোগে আসেন ১৯৭৭ সালে। নিউ ইয়র্কার অ্যান্ড ইন মিরর ওয়ার্ক অ্যান অ্যানথলজি অফ ফিফটি ইয়ার্স অফ ইনডিয়ান রাইটিং নামে একটি লেখা প্রকাশ করেন তিনি। এটি লেখক সালমান রুশদি সম্পাদনা করেছিলেন।
দীর্ঘ আট বছর পর কিরণ দেশাইয়ের দ্বিতীয় উপন্যাস ‘দি ইনহেরিটেন্স অফ লস প্রকাশিত হয়। এটি সাহিত্য জগতে কিরণ দেশাইয়ের পরিচিতি অনেক বাড়িয়ে দেয়। উপন্যাসটির নানা চরিত্র এবং নিজের ব্যক্তিগত জীবন সম্বন্ধে কিরণ দেশাই বলেন, আমার গল্পের চরিত্রগুলো আক্ষরিক অর্থে ফিকশনাল। তবে এ ভ্রমণ (তার নানা বাংলাদেশ থেকে শরণার্থী হয়েছিলেন) এবং এর পাশাপাশি আমার নিজস্ব পর্যবেক্ষণকে আমি কাজে লাগিয়েছি। পূর্ব ও পশ্চিমের মেলবন্ধনের ভ্রমণ বিষয়টি এখানে গুরুত্বপূর্ণ। বিষয়টির তাৎপর্য আমি অনুভব করার চেষ্টা করেছি। দুর্ঘটনাবিহীন একটি পার্টিকুলার লাইফ আমি বয়ে চলেছি। এটিই আমার ইনহেরিটেন্স।
কিরণ দেশাইয়ের উপন্যাসগুলোতে ইনডিয়ান ল্যান্ডস্কেপ বেশ পরিষ্কার হয়ে উঠেছে। তবে এটি সম্পূর্ণ ভিন্ন আঙ্গিকে উঠে এসেছে। কিরণ নিজে তার জেনারেশনের সঙ্গে সমান্তরাল আরো অনেক জেনারেশনকে পর্যবেক্ষণ করেছেন। এ অভিজ্ঞতাগুলো তিনি তুলে এনেছেন তার উপন্যাসে। কিরণ দেশাইয়ের বর্তমান লক্ষ্য হচ্ছে লেখালেখি পুরোদমে চালিয়ে যাওয়া। গরিব একটি দেশ থেকে লোক নিয়ে ধনী কোনো দেশে স্থানান্তরিত করলে কি ঘটবে। দুই বিশ্বের পরিবর্তনের বিষয়গুলোর সঙ্গে ব্যক্তিগত চিন্তা-চেতনার সামঞ্জস্যতার বিষয়টি কেমন করে ঘটবে - এ বিষয়গুলো নিয়ে লিখতে চান কিরণ দেশাই। তবে তার লেখায় ভারতীয় উপমহাদেশের আবহ উঠে এসেছে বারবার।
৩৫ বছর বয়সী লেখিকা কিরণ দেশাই বর্তমানে ব্রুকলিনে বসবাস করছেন। তবে ইনডিয়ার সঙ্গে তার আত্মার টান বেশ। প্রতি বছরই বেশ কয়েকবার ইনডিয়ায় ভ্রমণ করতে আসেন তিনি। কিরণ দেশাই তার ইনডিয়ার জীবন সম্বন্ধে বলেন, আমি যখন শৈশবে ইনডিয়ায় বেড়ে উঠি তখন আমার কাছে মনে হতো চারপাশের জীবন বুঝি কখনোই পরিবর্তন হবে না। তবে এখন অনুভব করি বিশ্ব কতো দ্রুত পরিবর্তিত হয়।
লেখালেখিতে আরো বেশি সময় দিতে চান কিরণ দেশাই। সাহিত্য জগতে আসার পেছনে মা অনিতা দেশাইয়ের উৎসাহ পেয়েছেন অনেক। ম্যান বুকার পুরস্কার ২০০৬ পাওয়ার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী পরিচিত সাহিত্যিক হয়ে উঠেছেন কিরণ দেশাই।
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×