somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঈদ স্পেশাল প্রেমের গল্প - সে ভালোবাসে, নাকি বাসে না - ইমদাদুল হক মিলন

২১ শে অক্টোবর, ২০০৭ বিকাল ৫:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রেস্টুরেন্টে ঢুকে মম বলল, উহ মাগো, ঘুরতে ঘুরতে টায়ার্ড হয়ে গেছি।

রবি বলল, টায়ার্ড হওয়ার কথা আমার। আমি ড্রাইভ করেছি। তুই তো শুধু বসে থেকেছিস।

কোথায় বসে থাকলাম? তোর বকবকানি শুনেছি না! এত কথা শুনলে কেউ টায়ার্ড না হয়ে পারে! এখন মনের মতো থাই ফুড খেয়ে টায়ার্ডনেস কাটাব। রবি, নো বকবক।

কিন্তু আমার সমস্যা তো মিটছে না।

কী সমস্যা সেটাই তো বলছিস না। শুধু ঘুরে বেড়ালি। এ কথা, সে কথা। আমি এতবার জানতে চাইলাম, তাও বললি না। এখন বল।

দাঁড়া, খেতে খেতে বলি।

রবি ওয়েটারকে ডাকল। কিউজ মি!

মম বিরক্ত হলো। কিউজ মি আবার কী? এক্সকিউজ মি।

পুরোটা বলতে টায়ার্ড লাগছে। এ জন্য সংক্ষেপ।

ওয়েটার সামনে এসে দাঁড়াল। রবি মমর দিকে তাকাল। তাকিয়ে আর চোখ সরায় না।

মম বলল, কী হলো?

তোকে যা লাগছে না! নীল শাড়ি, এত সুন্দর মেকাপ। একদম ঐশ্বরিয়া, একদম।

রবির কথা পাত্তা দিল না মম, ওয়েটার দাঁড়িয়ে আছে। অর্ডার দে।

আমি এসব পারি না। তুই দে।

কী খাবি?

শোন বাবা, তোর জন্মদিন, যা ইচ্ছা অর্ডার দে। নো প্রবলেম।

টাকা-পয়সা আছে, নাকি খাওয়ার পর আমাকে পে করতে হবে?

আমার কাছে না থাকলে তুই করবি! তোর টাকা আর আমার টাকা একই। অর্ডার দে, আমি ওয়াশরুম থেকে আসছি।

ওদের কথাবার্তা শুনে ওয়েটার মুচকি মুচকি হাসছিল। রবি উঠে যেতেই সিরিয়াস মুখ করে মমর দিকে তাকাল, ইয়েস, ম্যাডাম।

মম মেনু ঘাঁটতে ঘাঁটতে কয়েকটা আইটেমের কথা বলল।

খাবার দেখে খুশিই হলো রবি। মজার মুখভঙ্গি করল। অর্ডার তো ভালোই দিয়েছিস। তার মানে বন্ধুর পকেটটা আজ খালি করবি।

মম তার অসাধারণ সুন্দর চোখ তুলে রবির দিকে তাকাল। রবি, আজ আমার জন্মদিন।

সেটা ঠিক আছে। কিন্তু তোকে না বলেছি, এ রকম চোখ করে আমার দিকে তাকাবি না। আমার অসুবিধা হয়।

কী অসুবিধা?

বলব না। খা বাবা, খা। আমিই পে করব।

রবির প্লেটে খাবার তুলে দিল মম। নিজে নিল। খেতে খেতে বলল, কিন্তু সমস্যাটা বলছিস না কেন?

এখন বলতেই হবে। এখন আর না বলে উপায় নেই। ইয়ে মানে, মম, আমি ডট ডট পড়েছি আর কী!

ডট ডট পড়েছিস মানে? ডট ডট পড়া অর্থ কী?

বুঝিসনি?

না।

তোর সমস্যা হচ্ছে তোকে সবকিছু একেবারে পানির মতো পরিষ্কার করে বলতে হয়। ডট ডট মানেটা হচ্ছে ইয়ে আর কি! ইয়ে ...

ইয়ে মানে কী?

ইয়েও বুঝিস না? আরে ইয়ে মানে হচ্ছে ওই ইয়ে আর কি! প্রেম প্রেম। আই অ্যাম ইন লাভ।

মম খুবই খুশি হলো। সুন্দর চোখ আরও সুন্দর হলো তার। মিষ্টি মুখখানি উদ্ভাসিত হয়ে গেল। সত্যি?

সত্যি।

হ্যান্ডশেকের ভঙ্গিতে ডান হাত বাড়িয়ে দিল মম। কনগ্রাচুলেশন্স।

রবিও হাত বাড়াল। মমর হাত ধরে বলল, থ্যাংকস।

কিন্তু মেয়েটা কে? কোথায় থাকে? তোর সঙ্গে পরিচয় হলো কবে? আমাকে তো কিছুই বলিসনি?

বলি বলি করেও বলা হচ্ছিল না।

একটা একটা করে বল। নাম কী?

ইয়ে, নাম হচ্ছে অন্তরা। অন্তরা। কয়েক দিন আগে পরিচয় হয়েছে।

দেখতে কেমন?

অসাধারণ সুন্দর। রিয়েলি অসাধারণ। রানী মুখার্জি টাইপ। সিডি কিনতে গিয়েছিলাম রাইফেলস স্কয়ারে। ওখানে পরিচয়।

তোকে পছন্দ করেছে? নাকি ওয়ান সাইডেড?

আরে না, আমাকে খুবই পছন্দ করেছে। ফোনে রোজ তিন-চারবার করে কথা হচ্ছে।

মম খুবই খুশি, রিয়েলি?

রিয়েলি।

আমার খুবই মজা লাগছে। এত দিনে তোর একটা গতি হলো।

কিন্তু সমস্যাটা তো শুনছিস না?

এরপর আর কী সমস্যা?

আমি এখনো তাকে কিছুই বলতে পারিনি।

মানে?

মানে প্রপোজ করা হয়নি। কীভাবে বলব, আমি তোমাকে ভালোবাসি বা ইত্যাদি ইত্যাদি। এসব কীভাবে বলতে হয় জানি না তো! তুই আমাকে হেল্প কর।

আমি কী হেল্প করব?

শিখিয়ে দে, কীভাবে প্রপোজ করতে হয়।

তুই একটা সম্পূর্ণ গাধা। এসব কাউকে শিখিয়ে দিতে হয়? হিন্দি সিনেমায়, আমাদের টিভি নাটকে দেখিস না কীভাবে নায়কেরা প্রপোজ করে?

হিন্দি সিনেমা আমি দেখি না। কোন কোন সিনেমা দেখা যায় বলে দে। আজই দেখে ফেলি। মানে দেখতে শুরু করি।

থাক, এত পরিশ্রমের দরকার নেই। আমিই শিখিয়ে দিচ্ছি।

না না, শুধু শেখালে হবে না। পুরোপুরি একটা রিহার্সেল করাতে হবে। খাওয়া শেষ করে আমাদের ফ্ল্যাটে চল। মা আর বাবা দশ দিনের জন্য গেছে গ্রামের বাড়িতে। বুয়া দুটোকে ছুটি দিয়ে দিয়েছে। ফ্ল্যাটে আমি একদম একা। ওখানে গিয়ে রিহার্সেল করি। কারণ আজই তাকে আমি প্রপোজ করতে চাই। আজ বিকেলেই সে আমাদের ফ্ল্যাটে আসবে।

আচ্ছা, ঠিক আছে। এখন খা। গাধা কোথাকার! একটা মেয়েকে কীভাবে প্রপোজ করতে হয় তাও জানে না।

বাড়িতে ঢুকে গাড়ি পার্ক করে রবি বলল, একটু দাঁড়া, মম। আমি দারোয়ানের সঙ্গে কথা বলে আসি।

দারোয়ানের সঙ্গে আবার কী কথা?

বললাম না ঝুমু আজ বিকেলে আমাদের ফ্ল্যাটে আসবে। আসলে যেন আমাকে ইন্টারকম করে।

মম অবাক, ঝুমু আবার কে?

ওই যে ওই মেয়েটা।

তুই না ওর নাম বললি অন্তরা?

রবি সরল মুখ করে হাসল। ভালো নাম অন্তরা। ডাকনাম হচ্ছে ঝুমু।

ও। আসার আগে তোকে ফোন করবে না?

তা তো করবেই।

তাহলে দারোয়ানের সঙ্গে কথা বলার কী আছে?

তবু একটু বলে আসি। তুই দাঁড়া। এক মিনিট।

এক-দেড় মিনিটের মধ্যেই ফিরল রবি। মমকে নিয়ে তাদের ফ্ল্যাটে এল। ফ্ল্যাটে ঢুকে মম কোনো কথা বলল না। কিচেনে ঢুকে দু মগ কফি করল। দু হাতে মগ দুটো ধরে ড্রয়িং রুমে এল। একটা মগ রবির দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, আয় কফি খেতে খেতে তোকে সব শেখাই। নে, ধর।

রবি কফির মগ নিল। চুমুক দেওয়ার আগেই বলল, তাড়াতাড়ি কর, তাড়াতাড়ি। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই কিন্তু এসে পড়বে।

রবির মুখোমুখি বসে কফিতে চুমুক দিল মম। কিন্তু নিজেদের ফ্ল্যাটে ডেকে প্রপোজ করাটা কি ভালো দেখাবে?

রবি এক চুমুক কফি খেল। এটা আমিও ভেবেছি। কিন্তু ও আসতে চাইছে, না করি কী করে। যা ইচ্ছা হোক গিয়ে। আমি আর দেরি করতে পারছি না। আজই যা বলার বলে ফেলব। তুই আমাকে শিখিয়ে দে।

কথাগুলো বলতে হবে খুব সুন্দর করে, বুঝলি?

আচ্ছা, ঠিক আছে। সুন্দর করেই বলব।

গলার আওয়াজ থাকবে স্নিগ্ধ।

স্নিগ্ধ আওয়াজটা কী রকম?

নরম ধরনের আর কি! আর মুখটা সব সময় হাসি-হাসি।

তুই একটু দেখিয়ে দে।

ঠিক আছে। দাঁড়া।

কফির মগ রেখে উঠে দাঁড়াল রবি। মমও তার মগ রাখল। অভিনয় করে দেখাতে লাগল রবি কীভাবে অন্তরাকে প্রপোজ করবে। বলল, অন্তরা তোর ফ্ল্যাটের দরজায় এসে দাঁড়িয়েছে। কলিং বেল বাজাল। তুই দরজা খুলেই বললি, ‘আজকের আগে এত সুন্দর করে কেউ আমাদের কলিং বেল বাজায়নি। তোমার আঙ্গুলের ছোঁয়ায় কলিং বেলের আওয়াজও মিষ্টি হয়ে গেছে।’ কিন্তু গলার স্বর অতি নরম, অতি স্মিগ্ধ। মুখটা হাসি-হাসি।

বুঝলাম। তারপর?

বলবি, ‘ফ্ল্যাটে কেউ নেই। শুধু আমরা দুজন। তুমি কি আমার রুমে গিয়ে বসবে, নাকি ড্রয়িং রুমে? আই মিন, তুমি যেখানে কমফোর্ট ফিল কর।’

আরে, এসব কায়দা আমি জানি। এসব শেখাতে হবে না। আসল কথা বল। প্রেমের কথাটা বলব কী করে?

সেই দিকেই তো যাচ্ছি। ওকে কোথাও বসিয়ে, না না বসাবার দরকার নেই, আগে থেকেই জিনিসটা তোর হাতে রাখবি।

কোন জিনিস?

ফুল, ফুল। একটা টকটকে লাল গোলাপ হাতে ধরে রাখবি। কিন্তু সেই হাতটা রাখবি পেছনে। আচমকা ফুলটা তার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলবি, ‘আমার হৃদয় তোমাকে দিলাম।’

এতেই হয়ে যাবে?

হ্যাঁ। কিন্তু সঙ্গে আর একটা কাজও করতে হবে। অপলক চোখে তার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে।

রবির মুখে করুণ একটা ভঙ্গি ফুটে উঠল। এই একটা সমস্যা হয়ে গেল। আমি অপলক চোখে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারি না। চোখে পলক পড়ে যায়।

মম রেগে গেল। এ জন্যই বলি তুই একটা সম্পূর্ণ গাধা। আয়, একবার প্র্যাকটিস কর। ওই ওখান থেকে একটা ফুল নিয়ে আয়।

ওগুলো তো তোর জন্মদিনের জন্য কিনে রেখেছি। তাড়াহুড়ো করে চায়নিজ খেতে চলে গেলাম, এ জন্য নেওয়া হয়নি। তোকে দেওয়াও হয়নি।

কোনো অসুবিধা নেই। ওখান থেকে একটা গোলাপ নে। অন্যগুলো বাড়ি যাওয়ার সময় আমি নিয়ে যাব।

আচ্ছা, ঠিক আছে।

রবি একটা লাল গোলাপ নিল।

মম বলল, হাতটা পেছনে লুকা।

ফুল ধরা হাত পেছনে লুকাল রবি।

এবার আমার চোখের দিকে তাকা।

রবি তাকাল।

এবার বল।

মমর চোখের দিকে অপলক চোখে তাকিয়ে ফুল ধরা হাত তার দিকে বাড়িয়ে দিল রবি। সুন্দর উচ্চারণে বলল, আমার হৃদয় তোমাকে দিলাম।

মমর বুকের ভেতর কোথায় যেন কী রকম একটা কাঁপন লাগল এ কথায়। শরীর কী রকম কাঁটা দিল। চোখ বদলে গেল মমর, মুখ বদলে গেল। নিজের অজান্তেই হাত বাড়িয়ে রবির গোলাপ সে নিল। রবির মতো করেই তার চোখের দিকে তাকিয়ে নিজের অজান্তেই যেন বলে ফেলল, আমার হৃদয়ও আজ আমি তোমাকে দিলাম।

মমর কথা বলার ভঙ্গি, তাকিয়ে থাকা, চোখ ও মুখের পরিবর্তন খেয়াল করল রবি। সে একটু থতমত খেল। অন্তরা কি তোর মতো করে বলবে?

মম যেন অন্য এক জগত্‍ থেকে ফিরল। একটু যেন বিব্রত সে। বলল, তা আমি কী করে বলব? তবে অন্তরার জায়গায় আমি হলে এভাবেই বলতাম।

এ সময় রবির মোবাইল বাজল। রবি ব্যস্ত ভঙ্গিতে পকেট থেকে মোবাইল বের করে ধরল, হ্যালো।

তার পরই মুখটা উজ্জ্বল হয়ে গেল তার। ও তুমি? এসে পড়েছ? কোথায়? আরে তাই নাকি? দারোয়ানকে বলা আছে। চলে এসো, চলে এসো।

মোবাইল অফ করে হাসিমুখে মমর দিকে তাকাল রবি। অন্তরা এসে পড়েছে।

মম চিন্তিত হলো। এত তাড়াতাড়ি এসে পড়ল? কিন্তু আমাকে নিয়ে তো একটা ঝামেলা হয়ে যাবে।

কী ঝামেলা?

মেয়েরা খুব ঈর্ষাকাতর হয়। তোর একা ফ্ল্যাটে এভাবে আমাকে দেখলে অন্তরা ভুল বুঝতে পারে। তোদের প্রেম আজই শেষ হয়ে যেতে পারে।

এটা তো আমি ভাবিনি! এখন তাহলে কী হবে?

গেস্টরুম দেখিয়ে মম বলল, আমি ওই রুম ভেতর থেকে বন্ধ করে বসে থাকি। অন্তরা চলে যাওয়ার পর বেরোব।

ঠিক আছে, ঠিক আছে। তুই ওই রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ কর, আর আমি দরজা খুলে অন্তরার জন্য দাঁড়িয়ে থাকি।

ঠিক আছে। তবে আমি যেভাবে বলেছি ঠিক ওভাবে সব করবি। ওকে?

ওকে, ওকে।

দৌড়ে গেস্টরুমে ঢুকল মম। ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে দরজায় কান পেতে দাঁড়িয়ে রইল। সে যেভাবে যা শিখিয়ে দিয়েছে রবি ঠিক সেভাবে সব কথা বলতে পারে কি না জানার আগ্রহ।

রবির উত্সাহী গলা শোনা গেল মিনিটখানেক পর। আরে, এসো এসো। আমি তোমার জন্য দরজা খুলে দাঁড়িয়ে আছি।

তারপর দরজা বন্ধ করার শব্দ পেল মম। নিশ্চয় অন্তরা ভেতরে ঢুকেছে, রবি দরজা বন্ধ করেছে।

আবার রবির গলা শোনা গেল। শোনো অন্তরা, দরজা খুলে রাখা কথাটার অন্য একটা অর্থও আছে।

অন্তরা বলল, কী অর্থ?

আমি তোমার জন্য আমার হৃদয়ের দরজাও খুলে রেখেছি।

অন্তরা মুগ্ধ হলো, তুমি এত সুন্দর করে কথা বলো, শুনলে বুকের ভেতরটা কেমন তোলপাড় করে। হৃদয়ে দোলা লাগে।

হৃদয় শব্দটা শুনলেই হৃদয়ে দোলা লাগে, ঠিক না?

বন্ধঘরের ভেতর মমর চেহারা তখন বদলাতে শুরু করেছে। একেবারেই অন্য রকমের একটা অনুভূতি তার হচ্ছে। অন্তরা মেয়েটার কথা যেন সে সহ্য করতে পারছে না। কী রকম একটা রাগ, কী রকম একটা জেদ, নাকি অচেনা এক ঈর্ষাবোধ নিজের ভেতর জেগে উঠতে দেখছে মম। অস্থির লাগছে তার, খুবই অস্থির এবং দিশেহারা লাগছে।

কেন, এমন হচ্ছে কেন মমর?

বাইরে তখন আবার শোনা গেল রবির গলা। একটু যেন জোরে কথা বলছে রবি। আমার নাম রবিন। কিন্তু এখন আর কেউ রবিন ডাকে না। রবি বলে ডাকে সবাই।

অন্তরা বলল, রবিই সুন্দর। রবির কিরণ। অর্থাত্‍ তোমার কিরণে আমার জীবন উজ্জ্বল হয়ে যাবে।

মম মনে মনে বলল, ইস, রবির কিরণ! জীবন উজ্জ্বল হয়ে যাবে! কোথাকার কে হঠাত্‍ করে এসে জীবন উজ্জ্বল করছে। কী তোর জীবন রে!

রবি বলল, এই গোলাপ তোমাকে দিলাম। এ কোনো গোলাপ নয়, এ আমার হৃদয়। আমার হৃদয় আমি তোমাকে দিলাম। তুমি গ্রহণ করো। আমার হৃদয় তুমি গ্রহণ করো। আর তোমার হৃদয় দাও আমাকে।

এবার আর সহ্য করতে পারল না মম। কোনো কিছুই মাথায় রইল না তার। পাগলের মতো দরজা খুলে ছুটে বেরোল সে। না, রবি, না। আমার ফুল তুই অন্য কাউকে দিতে পারবি না। না। না।

রবি হো হো করে হেসে উঠল।

রবির হাসি পাত্তা দিল না মম। এদিক ওদিক তাকিয়ে বলল, কোথায়? সে কোথায়?

সে মানে? অন্তরা?

হ্যাঁ। কোথায় গেল?

কোথাও যায়নি। কোথাও থেকে আসেওনি। সে আছে আমার অন্তরে।

কী বলছিস তুই? আমি পরিষ্কার তার গলা পেলাম। তোর সঙ্গে এতক্ষণ ধরে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলল।

সেই মিষ্টি গলার কথাটা তুই শুনবি?

কিছুক্ষণ আগে অন্তরা যে ভঙ্গিতে, যে সুরে কথা বলেছে, অবিকল সেই ভঙ্গি, সেই সুরে রবি বলল, আমিই অন্তরা। রবির অন্তরে বাস করি।

অন্য সময় হলে রবির এই মেয়েলি স্বর আর ঢং দেখে হেসে মরে যেত মম। এখন উল্টো অবস্থা হলো তার। কেমন কান্না পেল। কাঁদো-কাঁদো গলায় বলল, ও, তাহলে এসব তোর চালাকি! রবি, রবি, আমি কিছু বুঝতে পারছিলাম না। আমার এমন লাগছিল কেন? এখনই বা এমন লাগছে কেন? আমিই তোকে সব শিখিয়ে দিয়েছি, তারপর তুই যখন ওসব কথা বলছিলি, আমার মনে হচ্ছিল, মনে হচ্ছিল, আমার সম্পদ যেন কেউ ছিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আমি সহ্য করতে পারছিলাম না। কিছুতেই সহ্য করতে পারছিলাম না। আমার এমন হচ্ছিল কেন, রবি?

রবি গম্ভীর গলায় বলল, এটাই আমি চেয়েছি। মম, অন্তরা বা ঝুমু বলে কাউকে আমি চিনি না।

সত্যি?

সত্যি। আমি চিনি তোকে। আমি চাই তোকে। আর কাউকে না, কাউকে না।

মমর চোখে-মুখে তখন আশ্চর্য এক ঘোর লেগেছে। কণ্ঠে লেগেছে অচেনা এক মাদকতা। রবির মতো করেই সে বলল, আমিও, আমিও তোকে চাই। শুধু তোকে, শুধু তোকে। তোকে ছাড়া আর কাউকে আমি ভাবতে পারি না। কাউকে না।

কিন্তু এত দিন আমরা কেউ কাউকে বলিনি কেন?

কী জানি। আজকের আগে এই অনুভূতিই আমার হয়নি।

সত্যিকার প্রেম কখনো কখনো এইভাবে চাপা পড়ে থাকে। তাকে তুলে আনতে হয়। আমি এই তোলার কাজটা আজ করেছি।

এত দিন করিসনি কেন? আরও আগে করিসনি কেন?

অনেক আগে থেকেই প্ল্যান করে রেখেছি, তোর জন্নদিনে এভাবে তোকে আমি জাগিয়ে তুলব।

কিন্তু অন্তরা যে ফোন করল?

অন্তরা না, ওটা আমাদের দারোয়ান।

কী?

হ্যাঁ। দারোয়ানকে বলেছিলাম, সে যেন আমার মোবাইলে একটা ফোন করে। একদম সাজানো নাটক। ওই যে তোকে দাঁড়াতে বলে আমি দারোয়ানের কাছে গেলাম না!

মম কাতর, অসহায় গলায় বলল, এখন কী হবে, রবি?

কী হবে মানে? আজ থেকে আমাদের নতুন পরিচয়। প্রেমিক-প্রেমিকা। কদিন পর আমি হচ্ছি বর, তুই হচ্ছিস কনে। বছর দেড়েক পর তুই হচ্ছিস মা, আমি হচ্ছি বাবা।

রবিকে আলতো করে একটা ধাক্কা দিল মম। যাহ্।

একটু থেমে বলল, এই, আমার কেমন যেন লজ্জা লাগছে। রবি, আমি তোর দিকে তাকাতে পারছি না। একদম তাকাতে পারছি না।

রবি দুহাতে মমর মুখটা তুলে ধরল। আমিও পারছি না। তবু জোর করে তাকাচ্ছি। শোন, আজ সকালে তোর জন্য ফুল কিনতে গিয়ে একটা ফুলের পাপড়ি ছিঁড়েছি আর বলেছি, সে ভালোবাসে, নাকি বাসে না! প্রথমে একবার ইংরেজিতে বলেছি, শি লাভস মি, শি লাভস মি নট। ইংরেজিটা বলতে ভাল্লাগছিল না। বাংলায় বলতে গিয়ে দেখি, বাহ্, বেশ জমে গেল। ‘সে ভালোবাসে’ কথাটায় এসে পাপড়ি শেষ হলো। তখন থেকেই জানি তুইও আমাকে ভালোবাসিস। তোর মুখ থেকে কথাটা শোনার জন্য এত কিছু। নারী চরিত্রে অভিনয়ও করতে হলো।

দুহাতে রবির গলা জড়িয়ে ধরে মম বলল, ভালোবাসা প্রমাণের জন্য ফুলের পাপড়ি ছেঁড়াছেঁড়ি করে তো মেয়েরা।

মমর গ্রীবার কাছে মুখ রেখে রবি বলল, ছেলেরাও করে।

সৌজন্যে - প্রথম আলো


# আপনি সম্ভবত এই পোস্টগুলোও পছন্দ করবেন -
সায়েন্স ফিকশন - অক্টোপাসের চোখ - মুহম্মদ জাফর ইকবাল
সায়েন্স ফিকশন - একটি মৃত্যুদণ্ড - মুহম্মদ জাফর ইকবাল
ময়ূরাক্ষীর তীরে প্রথম হিমু - হুমায়ূন আহমেদ
টুয়েন্টি টুয়েন্টি - আনিসুল হক
গল্প - ইফতার - প্রণব ভট্ট
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×