somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শেরালী তের-মুক্তির মন্দির সোপান তলে-৩

২০ শে অক্টোবর, ২০০৭ দুপুর ২:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জগৎ বাসী একবার আসিয়া
সোনার বাংলা যাও দেখিয়া রে।।
ওরে পাকিস্তানের বর্বর ইয়াহিয়া
মেশিন গান আর বেনেট বুলেট দিয়া
সোনার বাংলা করল শ্বশান রে।।
ভাদ্র মাসের জল ডালিমের রসের মতন। দেখলেই প্রাণ জুড়িয়ে যায়। সে জলে সাধু সওদাগর পানসীতে ভেসে চলে। এমন পানির বহর অনেক বছর হয়নি। না ডুব না সাঁতার। নৌচলাচলের বিশেষ উপযোগী। সে টা শত্রু-মিত্র সবার জন্যই। চাল কুমড়া আর মিষ্টি কুমড়া ছাড়া আছে ঝিঙ্গা, কইঠা, চিচিঙ্গা। বারমাসি ফলের মধ্যে নাড়িকেল, কলা। শেরালীর খাদ্য তালিকায় শুধু শষা। রতনের কবরে গাথা বরই গাছের ডালটা অনুকূল আবহাওয়ায় নতুন কঁচি পাতা মেলছে। কবরের চার কোনায় গুজে রাখা রসুনের কোয়া এখন গাছ হয়েগেছে। করস্থানটা গ্রামের মাঝখানে। একটা অলাদা বাড়ীর মতন। কড়ই, তাল আর কয়েকটা বেন্না গাছ ছায়া দিচ্ছে ঘুমন্ত মানুষ গুলির অদৃশ্য শরীরে। পানির এক হাত উঁচুতে মটকুরার ঝোপের মাথায় চুলের মত বিছিয়ে আছে সর্ণলতা। দু'একটা ঘুঘুর ডাক কবরস্থানের মৌনতায় বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। আমি দুপুরের দিকে প্রায় প্রতিদিন এখানে আসি। কোন কারণ ছাড়াই। মনে মনে বলি রতন তুই বড় হলি কেন! আমার মত ছোট থেকে গেলে তোর এত ঝামেলা হত না। টুপ করে একটা তাল পড়ল পানিতে। রতন ফেললনাতো! আমি সেখানে যেতে যেতে তালটা জল থেকে ভেসে উঠেছে। তালটাকে বুকের নীচে রেখে ক্ষেতের আইলের উপর দিয়ে সাতরে বাড়ি গিয়ে দেখি, হুলুস্থুল কান্ড। ডিঙ্গি নৌকায় সাত আট জন পান্জাবী আর লোকমান রাজাকার। এখন ওরা গ্রামেও টহল দিচ্ছে। এতদিন বাজার আর রাস্তার টহলেই ব্যাস্ত থাকতো। রতনের মৃত্যুর পর এক সপ্তাহ পার হওয়ার আগেই পান্জাবীরা লঞ্চ নিয়ে গ্রামে আসে, মুক্তি ফৌজের খোঁজে। কিন্তু দিনের বেলায় মুক্তি বাহিনী ঘরে বসে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর হাতে ধরা দেয়ার জন্য অপেক্ষা করবে! গাছের ফল, গোয়ালের গরু, এমনকি হাঁস মুরগীও বাদ গেলনা। গোলার ধান সহ সব লঞ্চে তুলে ঘরে আগুন ধরিয়ে দিল। নজরুলের (ছাত্রলীগের ডাকশুর সদস্য) বাপকে চোরের মত পেছনে হাত বেঁধে সঙ্গে নিয়ে গেল। এপাড়ায় জ্বলছে পাঁচটা বাড়ি। টিনের ঘর আগুনে জ্বলার মত শুধু কাঠ। তাই তেমন বেশী আগুন দেখা যাচ্ছেনা। কালো ধোঁয়া নীল আকাশে কাজল পড়াচ্ছে। ধাউ ধাউ করে জ্বলছে এখন ঋষি পাড়া। সবই সনের ঘর। লাল লেলিহান শিখা সূর্যকে হার মানাচ্ছে। হিন্দুদের টিনের ঘর রাজাকারেরা ভাগ বাটোয়ারা করে যে যার বাড়ি নিয়ে গেছে। মায়ের প্রবল আপত্তিতে আমরা টিনের ঘর থেকে বঞ্চিত। তাই হিন্দুদের সনের ঘর গুলিই শুধু জ্বলছে। নজরুলের বাপের লাশ তার পরের দিন বৈশার চরে পাওয়া গেছে। গ্রামের মানুষ ভেবেছিল এই শেষ। পানজাবীরা আর গ্রামে আসবেনা। কিন্তু এখন দেখি এরা আমাদের বাড়ী। বাবাকে ডিওটিতে রেখে রতনের মৃত্যুতে মাকে সমবেদনা জানাতে এসেছে। আমাকে আদর করে একজন কাছে ডাকল। ভয়ে ভয়ে এগিয়ে গেলাম। লোকমান রাজাকার অভয় দিল। মাথায় হাত বুলিয়ে ওরা বিদেয় হল। রতনের মৃত্যুর পর বাবা শুধু দিনেই ডিউটি করে। ঘরের পরিবেশ খুব সান্ত। মনের ভুলে মা আজও রতনের থালায় ভাত দিল। বাবা দেখি তেমন কিছু বলল না। খাওয়ার মাঝখানে মা ডুকরে কেঁদে উঠলেন। এ কান্না কি কোন দিন থামবে! কারই ভাল করে খাওয়া হলনা।
মায়ের গো গো ফুস ফুসানীতে আর দস্তা দস্তিতে ঘুম ভেঙ্গে গেল। কি হল, কি না হল, কিছু বুঝতে পারলাম না। বেশ কয়েক জন ঘর থেকে বের হয়ে গেল। এবার মায়ের চিৎকার কানে এল।
আফনেগ হাতে ধরি, পায়ে পরি আমারে রারী কইরেন না। আমার পোলাডা গেছে, আমার জামাইডারে ছাইরা দেন। খোদার দোয়াই।
বলতে বলতে ঘর থেকে বের হয়ে গেলেন ওদের পেছনে।
কিন্তু এতক্ষনে দ্রুত বৈঠা চালিয়ে ওরা অন্ধকারে মিলিয়ে গেছে। পরসীরা ওদের চলে যাওয়ার পর, নিরাপদ বোধ হাওয়ায় ঘটনা জানতে এসেছে। মুক্তি বাহিনী কেরাম রাজাকারকে ধরে নিয়ে গেছে।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মার্চ, ২০০৮ রাত ৩:৫৬
৪৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সমাধান দিন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩১




সকালে কন্যা বলল তার কলিগরা ছবি দিচ্ছে রিকশাবিহীন রাস্তায় শিশু আর গার্জেনরা পায়ে হেটে যাচ্ছে । একটু বাদেই আবাসিক মোড় থেকে মিছিলের আওয়াজ । আজ রিকশাযাত্রীদের বেশ দুর্ভোগ পোয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নিছক স্বপ্ন=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৮



©কাজী ফাতেমা ছবি
তারপর তুমি আমি ঘুম থেকে জেগে উঠব
চোখ খুলে স্মিত হাসি তোমার ঠোঁটে
তুমি ভুলেই যাবে পিছনে ফেলে আসা সব গল্প,
সাদা পথে হেঁটে যাব আমরা কত সভ্যতা পিছনে ফেলে
কত সহজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

একদম চুপ. দেশে আওয়ামী উন্নয়ন হচ্ছে তো?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৯



টাকার দাম কমবে যতো ততোই এটিএম বুথে গ্রাহকরা বেশি টাকা তোলার লিমিট পাবে।
এরপর দেখা যাবে দু তিন জন গ্রাহক‍কেই চাহিদা মতো টাকা দিতে গেলে এটিএম খালি। সকলেই লাখ টাকা তুলবে।
তখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে গরু দুধ দেয় সেই গরু লাথি মারলেও ভাল।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১২:১৮


০,০,০,২,৩,৫,১৬, ৭,৮,৮,০,৩,৭,৮ কি ভাবছেন? এগুলো কিসের সংখ্যা জানেন কি? দু:খজনক হলেও সত্য যে, এগুলো আজকে ব্লগে আসা প্রথম পাতার ১৪ টি পোস্টের মন্তব্য। ৮,২৭,৯,১২,২২,৪০,৭১,৭১,১২১,৬৭,৯৪,১৯,৬৮, ৯৫,৯৯ এগুলো বিগত ২৪ ঘণ্টায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×