somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সামাজিক বন্ধন সবচেয়ে দৃঢ় বাংলাদেশীদের; দ্বিতীয় সুদানিদের; সবচেয়ে কম মিসরীদের মধ্যে!

১৯ শে অক্টোবর, ২০০৭ রাত ৯:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


শিরোণামে উল্লেখিত বিষয়ের প্রতিপাদ্যটা গবেষণালব্ধ না হলেও নিছক কল্পনাপ্রসূত নয়; বরং বলা যায় দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতাপ্রসূত। বিভিন্ন ভাবে আমি অসংখ্যবার এই প্রতিপাদ্যের প্রমাণ পেয়েছি। কিন্তু আজ শুধু একটা বিষয়ের কথাই বলব - সেটা হল ঈদের নামায বা জুমার নামাযের পর কুশল বিনিময়ের কথা।

খুব বেশি ছোটকালের কথা বলব না; গত এক যুগের কথাই বলি। গত বারো বছর ধরে কোন ঈদেই আমি ঈদের নামায মিস করিনি। প্রথমে যখন মিসরাতায় ছিলাম, তখন সেখানকার সবচেয়ে বড় মসজিদ জামা'ল আলীতে এবং সিরতে আসার পর থেকে এখানকার একমাত্র ঈদগাহ আল মুতাবা'তে নিয়মিতভাবে ঈদের নামায আদায় করে আসছি।

সঠিকভাবে বলা কঠিন, তবে আনুমানিকভাবে বলা যায় এসব মসজিদে উপস্থিত মুসল্লীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষতো অবশ্যই লিবিয়ান; তারপর সম্ভবত যথাক্রমে মিসর, সুদান, ফিলিস্তিন, জেজায়ের, মাগরিব, ইরাক, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, সিরিয়া, ঘানা, তেশাদ, মৌরিতানিয়া, নাইজার, বসনিয়া, ইন্ডিয়া প্রভৃতি দেশীয়রা।

অন্য সব দেশের মুসল্লীরা সাধারণত ঈদের নামায এবং খুতবা শেষ হওয়ার পর কিছুক্ষণ পরিচিতদের সাথে কুশল বিনিময় করেই বাড়ি ফিরে যায়। ব্যতিক্রম শুধু বাংলাদেশীদের ক্ষেত্রে। মিসরাতা এবং সিরত দুইজায়গাতেই দেখেছি, হোক সেটা জুমার নামায শেষে বা ঈদের নামায শেষে, সব দেশীরা চলে যাওয়ার পরেও আরো অনেকক্ষণ পর্যন্ত বাংলাদেশীরা থেকে যায়। প্রায় সব বাংলাদেশীই তাদের সকল পরিচিতের সাথে কোলাকুলি করতে থাকে এবং বাসায় যাওয়ার আমন্ত্রণ জানাতে থাকে। আর এটা নিছকই লোক দেখানো নয় - তাদের কন্ঠস্বর থেকেই তাদের আন্তরিকতাটুকু টের পাওয়া যায়। প্রায় ঘন্টাব্যাপী কোলাকুলি করার পরে বুক ব্যাথা হয় না, এমন বাংলাদেশী পাওয়া খুবই কঠিন।

যেমন এবারকার ঈদের কথাই ধরা যাক। ঈদের নামাযের পর খুতবা শেষ হয়েছে আটটা বাজে। সাড়ে আটটার দিকে দেখা গেল, ঈদগাহের ব্যবস্থাপনায় যে কয়েকজন লিবিয়ান ছিল তারা, দুইটা পুলিশের পেট্রোল কার আর দূরে একটা অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া আর কেউ উপস্থিত নেই; কিন্তু তখনও প্রায় সব বাংলাদেশীই বহাল তবিয়তে উপস্থিত ছিল। আমরা ঈদগাহ থেকে বাসার দিকে রওনা দেই সোয়া নয়টার দিকে। তখন পুরো ঈদগাহে মানুষ বলতে ছিল শুধুমাত্র ছয়-সাত জন বাংলাদেশী।

আর এই চিত্রতো শুধু এবারের নয়, প্রতিবারের ঈদের। আর শুধু ঈদ কেন, জুমার নামাযের পরেও সবাই চলে যাওয়ার পর, এমনকি মসজিদের শেষ ব্যক্তিটিও চলে যাওয়ার পরেও দেখা যায় কয়েকজন বাংলাদেশী মসজিদের সামনের কোন একটা ছায়ায় দাঁড়িয়ে গল্প-গুজব করছে, কথা-বার্তা বলছে - কাজের কথার চেয়ে অকাজের কথাই বেশি, যার মধ্যে একটা বড় অংশ অবশ্যই বাংলাদেশের এবং সারা বিশ্বের রাজনীতি।

ঈদগাহে বাংলাদেশীদের চেয়ে একটু আগে যারা স্থান ত্যাগ করে, তারা হল সুদানিরা। শুধু ঈদগাহের ক্ষেত্রে নয়, এমনিতেও সুদানিরা বেশ সামাজিক। বাংলাদেশীদের মতোই তারা অতিথি-আপ্যায়নপ্রিয়। প্রায়ই দেখা যায় পুরো পরিবার নিয়ে এক সুদানি আরেক সুদানির বাসায় বেড়াতে গিয়েছে, যেটা বাংলাদেশী ছাড়া এখানে অন্যদেশীদের মধ্যে খুব কমই দেখা যায়।

অপরদিকে মিসরীদের অবস্থান এদিক থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন রকম। ঈদগাহে দেখা যায় অধিকাংশ মিসরীই ঈদের নামায শেষ হওয়ার সাথে সাথেই ঊটে চলে যায়; খুতবা শেষ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করে না।

বাংলাদেশীদের অনেক দিকে অনেক নেগেটিভ পরিচয় আছে। কিন্তু বাংলাদেশীরা যে অন্যান্যদেশীদের তুলনায় অনেক বেশি সামাজিক, অতিথিবত্‍সল, আতিথ্যপরায়ন, সেটা কি খুব বেশি বিদেশী জানে


আরও পড়ুন : প্রতি ঈদে এশীয়রা করে বকাবকি আর আরবীয়রা করে গালাগালি

ঈদ ছড়া - ঈদের চাঁদ

১৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আমার ড্রোন ছবি।

লিখেছেন হাশেম, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩

বৃহত্তর প্যারিস তুষারপাত।

ফ্রান্সের তুলুজ শহরে বাংলাদেশের প্রথম স্থায়ী শহীদ মিনার।

হ্যাসল্ট, বেলজিয়াম।

ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী ফ্রান্সের ফ্রিওল আইল্যান্ড।


রোডেসিয়াম এম রেইন, জার্মানি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতার সুফল কতটুকু পাচ্ছে সাধারণ মানুষ

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:২৮

(১) আমলা /সরকারের কর্মকর্তা, কর্মচারীর সন্তানদের জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাব হতাশাজনক। মুক্তিযুদ্ধের ১৯৭১ সালের রক্ত দেওয়া দেশের এমন কিছু কখনো আশা কি করছে? বঙ্গবন্ধু এমন কিছু কি আশা... ...বাকিটুকু পড়ুন

এলজিবিটি নিয়ে আমার অবস্থান কী!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১০ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৫

অনেকেই আমাকে ট্রান্স জেন্ডার ইস্যু নিয়ে কথা বলতে অনুরোধ করেছেন। এ বিষয়ে একজন সাধারণ মানুষের ভূমিকা কী হওয়া উচিত- সে বিষয়ে মতামত চেয়েছেন। কারণ আমি মধ্যপন্থার মতামত দিয়ে থাকি। এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলমানদের বিভিন্ন রকম ফতোয়া দিতেছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩


আপন খালাতো, মামাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোনের বা ছেলের, মেয়েকে বিবাহ করা যায়, এ সম্পর্কে আমি জানতে ইউটিউবে সার্চ দিলাম, দেখলাম শায়খ আব্দুল্লাহ, তারপর এই মামুনুল হক ( জেল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×