somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাঙ্গামাটির রঙে চোখ জুড়ানো? (তিন)

১৮ ই অক্টোবর, ২০০৭ দুপুর ২:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কেবল কৈশোরত্তীর্ন তরুন হিসাবে ৯০ দশকের শুরুতে যখন সুবলঙ আসতাম, তার রূপে মোহিত হইয়া একটা পুরা দিন চইলা যাইতো...পাহাড়ী ঝর্ণার অবারিত জলে শরীরের প্রতিটি কনায় শিউরে ওঠা অনুভূতি...চুয়ানির আচ্ছন্নতায় ঠান্ডা জলের বৈপরীত্যে আমরা সন্ধ্যাতক একদম নিজের জগতে থাকতাম। সেই সুবলঙে যাওনের লেইগা ইঞ্জিন চালিত ছাউনি দেওয়া ট্রলার ভাড়া কইরা পারিবারিক(?) আবহে যাত্রা...এক্কেরেই নতুন অভিজ্ঞতা আমার জন্য। কিন্তু ঈষিতা কটেজে চইলা আসছে সকাল সাতটায়! তারপর থেইকা প্রতিমুহুর্তে তাড়া...চলেন! চলেন!

তার তাড়াতেই ৯টার মধ্যে আমরা নৌকায় উইঠা প্রস্তুত। ঈষিতা আবার সাথে কইরা তার খালাতো ভাই হিমেলরে নিয়া আসছে গাইড হিসাবে। ঈষিতার ভাষায় এই ছেলে রাঙ্গামাটির আদ্যোপান্ত চেনে...৫ বছর কাটাইছে মারিশ্যার অরণ্যে...বরকলের প্রত্যেক পাহাড়ে তার পদচিহ্ন আছে...যদিও আমরা একদম পর্যটক প্যাকেজের ফরম্যুলা মাইনাই যাত্রা শুরু করলাম, গাইডের উপস্থিতি এইখানে বাহুল্যমাত্র। একদিনে ৫টা স্পটে প্রয়োজনীয় পদচারণা...

কাপ্তাই হ্রদে এইবার জল তার ইতিহাসের সব অভিজ্ঞতারে নাকচ কইরা ফুইসা উঠছে। নিয়মিত পাহাড়ি বৃষ্টির বাইরেও দিনভর মেঘাচ্ছন্ন আকাশ...তয় লেইকে শীতের পাখি আর সাদা বকের সংখ্যা আগের চাইতে খানিক বেশিই য্যান এইবার। প্রকৃতির সৌন্দর্য্যে রাকেশ তপতী আর মৌসুম স্তব্ধ-বাকরুদ্ধ হইলো খানিক্ষণের জন্য...কেবল ক্যামেরায় ক্লিক! আমি গতোবার আইসা পুরান রাজবাড়ির জাইগা ওঠা ছাদে নামছিলাম, সেই জায়গায় এইবার জাল পাতছে পরিবর্তীত পেশার পাহাড়িরা...কিছু বাঙালীও...এই পেশাগত সহাবস্থানরে একদম সম্প্রীতির নজরে আমি আগেও কখনো দেখি নাই...

জল বাড়নের কারনে নৌকার গতিপথ আগের চেয়ে অনেক সুখকর হইছে বইলা দাবী করলো মাঝি...আমরাও সায় দিলাম তার কথায়। হিমেল জানাইলো এই এলাকায় এখন ছোট পাহাড় বিক্রি হইতেছে ২০/৩০ হাজার টাকায়। সেই ছোটবেলা থেইকাই আমার পাহাড় কেনার শখ। মৌসুম আর আমি আমাগো পরিচয়ের শুরুর দিক থেইকাই দিনরাত পাহাড়ের উপর সাদা লজের স্বপ্ন দেখতাম। পাশে গাছের উপর একটা ঘর...দড়িতে গাথা সিঁড়ি...পাশে পাহাড়ি হ্রদ...হ্রদে বেগুনী নৌকা...

কিন্তু এতো রোমান্টিকতা আসলে সয় না জীবনে...সেই কথায় পরে আসি...দেড় ঘন্টার মাথায় আমরা সুবলঙে পৌছানোর পর দেখলাম গতোবছরের চাইতে খানিকটা স্বাস্থবান হইছে ঝর্না...তয় পুরানা স্মৃতির চক্করে আমার ইথিওপিয়ান বাঘের কথাই মনে পড়লো। রাঙ্গামাটি জেলার ডিসি সাহেবের করুনায়(?) রঙ্গম গাছ আর গাঁদা ফুলে ছাইয়া গেছে সুবলঙের বিস্তৃত প্রান্তর। না বাঙালী-না পাহাড়ি একটা অবয়ব দিয়া তিনি সাজাইতে চেষ্টা করছেন সরকারী টাকায় আর ব্যক্তিগত উদ্যোগে। বিদেশেও এই ধরণের ট্যুরিস্ট স্পট গুলি সংরক্ষিত হয় বইলা জানি, এনভায়রনমেন্টাল আর্কিটেকচারে আমাগো এক বড় ভাই পড়ালেখাও করছিলেন...পেবলো ভাইয়ের তৈরী করা একটা কাঠামোয় সেন্ট মার্টিনে আমরা গিয়া এক সপ্তাহ কাটাইছিলাম...তিনি দেখাইছিলেন কিভাবে প্রকৃতিরে তার নিজস্ব কাঠামোতেই উত্তরাধুনিক সৌকর্য্যে নিয়া আসা সম্ভব।

তয় এই ট্রিপে আমরা প্রথম ধাক্কা খাইলাম প্রবল শব্দে ধাইয়া আসা একটা মিলিটারী স্পিডবোটের আগমনে। ঠকাস ঠকাস কইরা তিনজন জলপাই গানম্যান নামলেন...তাগো পেছনে একজন সিনিয়র অফিসার, ক্যামোফ্লেজ লাইফ জ্যাকেট পরিহিত দুই শিশু কন্যা। তারা সুবলঙ ঝর্ণারে পেছনে রাইখা কয়েকটা স্থিরচিত্র তুলনের ফাকে আমরা নাইমা আসলাম ঘাটের চা-বিড়ির দোকানের সামনে। একজন মিলিটারী গানম্যান আগাইয়া আইসা আমাগো জেরা শুরু করলো,"কোত্থেইকা আসছেন...ক্যানো আসছেন" এই টাইপ প্রশ্নে। আমাগো জবাব শুননের পর রীতিমতো চমকাইয়া দেওয়া প্রশ্ন তার,"আপনারা যে এইখানে আসছেন...সিকিউরিটি দিচ্ছে কে?" আমি আগাইয়া গিয়া তারে কইলাম,"ভাই আমাগো সিকিউরিটির প্রয়োজন নাই...আমরা মাঝেমাঝেই এইখানে আসি বেড়াইতে।" গানম্যানের পরবর্তী বাক্য শুইনা রীতিমতো হাসি পাইলো...তিনি জানান দিলেন, "স্যারের মেয়েদের এই ভ্রমণের জন্য আমরা তিন জায়গায় সিকিউরিটি চৌকী বসাইয়া আসছি।" তার দম্ভ ভালো না লাগলেও কিছু করনের নাই...তারা আবার ঠকাস ঠকাস শব্দে স্পিডবোটে উইঠা রওনা দিলো।

তাগো যাওয়ার সময় লিংকিন পার্কের গান বাঁজাইয়া আরেকটা বোট আইসা ভিড়লো ঘাটে। একদল পাহাড়ি কিশোর নাইমা আসলো...তাগো মুখে চুয়ানির গন্ধ আমারে মনে পড়াইলো সেই সময়ের কথা! ঘাটের টিকেটের টাকা দিয়া ছেলেগুলি তর তরাইয়া উইঠা গেলো ঝর্ণার কাছাকাছি...আমরা উদ্যোগী হইলাম ফিরা যাইতে।

বাকী স্পটগুলিতে যাওয়ার পথে দেখি জলপাই মামুগো তিনটা স্পিডবোট সুবলঙ পানে ধায়...পাহাড়ি কিশোরেরাও তাগো জন্য হুমকী স্বরূপ...মনে হইলো ফিরা যাই...কিন্তু মধ্যবিত্ত প্রাণে পলায়নপরতা আছে...
১৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

---অভিনন্দন চট্টগ্রামের বাবর আলী পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয়ী---

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫৫





পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছেন বাবর আলী। আজ বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৮টায় এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন তিনি।

রোববার বেসক্যাম্প টিমের বরাতে এ তথ্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×