somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শেরালী এগার-মুক্তির মন্দির সোপান তলে-১

১৭ ই অক্টোবর, ২০০৭ বিকাল ৪:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মুক্তির মন্দির সোপান তলে
চৈত্রের খরতাপে প্রকৃতির রং ধূষর মলিন। শীত বসন্ত পিছনে ফেলে বৈশাখের আশায় গ্রীষ্মের মরন কামড় সয়ে নিচ্ছে ধরণী। কাল বৈশাখীর প্রলয় নাচন না হলে এ খরার তাড়না থেকে মুক্তির ঊপায় কী!
কালসাপের ফনার মত বন্দুক উঁচু করে আসছে হায়েনার দল। তাদের পূঁজো দিতে রাজাকার দাঁড়িয়ে গেছে সারি সারি। সঙ্গতি সম্পন্ন হিন্দুরা প্রাণ নিয়ে পালিয়েছে। সহায় সম্বলহীন হিন্দুরা করজোরে দাঁড়িয়ে আছে শিকারী বিড়ালের সামনে ইঁদুরের মত। ধর্ম তুমি এত নির্মম কেন! কোথায় তোমার শান্তির বাণী?
কেরামত মাওলা খুব সুযোগ সন্ধানী মানুষ। বড় ছেলে রতনকে নিয়ে, ভিড়ে গেছে রাজাকারদের কাতারে। আটা, তেল, নুন কোন কিছুর অভাব নেই শেরালীর ঘরে। এমনকি মিষ্টি লবনও আছে। ডান্ডি কাঠ দেখিয়ে কেরামত মাওলা বেতনের টাকা আর রেশনের মাল আনছে ঘরে। চমৎকার মানিয়েছে খাকী পোশাক রতনের গায়ে। কে বলবে এ ছেলের জন্ম বাঙ্গালির ঘরে! হ্যায়, বলা রপ্ত করে নিয়েছে মাত্র কয়েক দিনে। কাঁধের রাইফেলের বেয়নেটটা উঁকি দিচ্ছে মাথার উপর সাপের জিহ্বার মত। শহরেই হানাদার হায়েনার হত্যাযজ্ঞ চরম প্রকৃতির। তার আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার আশায়, অনেক চাকুরীজিবী পালিয়ে এসেছে গ্রামে। কিন্তু ইতিমধ্যে ওরা গ্রামকেও গ্রাস করেছে। তৈরী হয়েছে শান্তি কমিটি। পালা করে রাজাকার শান্তি কমিটির সদস্য আর পাক হানাদাররা রাতের বেলায় রেল সড়কের পুল পাহারা দেয়। মুসলীম লিগ, জামাতে ইসলামী কাঁধে কাঁধ, হাতে হাত রেখে স্থানীয় মুসলিম লীগের মেম্বার, চ্যেয়ারম্যানদের সহযোগীতায়, সনাক্ত করছে আওয়ামী লীগ কারী, মুক্তি বাহিনীতে যোগদেয়া পরিবার গুলির তালিকা।
বোয়ালমারী বাজারে আজ হাটের দিন। রাজাকার, তাদের সাথী সংগঠন জামাতে ইসলামী, মুলিম লীগ, আর পাকিস্তানী প্রভুরা মিলে হিন্দুদের সব দোকানপাটের মাল নিজেদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা করে নিচ্ছে। দোকানীদের হাত এবং চোঁখ বেঁধে ধরে নিয়ে গেল ব্রীজের উপর। খালি দোকানে আগুন দেয়া হল। বাজারটা জ্বলছে ধাউ ধাউ করে। সব হিন্দুদের এক সারিতে দাঁড় করিয়ে গুলি করা হল। পাখির ঝাকের মত মানুষ ছুটে পালাচ্ছে প্রাণ ভয়ে, যে যেদিকে পারছে। আগুনের লেলিহান শিখা আর রাইফেলের প্রাণসংহারী হুংকারে আকাশ ফেটে চৌচির। নাপিত আবুকর সারির একদম শেষ ব্যাক্তি, রাইফেলের মেগাজিন খালি। লোকমান রাজাকার মেগাজিনে গুলি ভরছে। খুনের নেশায় রাজাকার লোকমান এতই মত্ত যে, ইতিমধ্যে আবুকরকে খুন না করার পাক কমান্ডারের ইঙ্গিত বুঝতেই পারেনি। রাইফেল কাক করে চোখ বাঁধা আবুকরের বুকে তাক করেছে, ট্রিগারে আঙ্গুল, এমন সময় মেম্বার মতি ডাক্তারের ধমকে অতি ধীরে নামাল বন্দুক। আবুকর দ্বিতীয় জীবন পেল, এক ভয়ংকর শাস্তির।
এই বিভীসিকায় আক্রান্ত হল রমিজ রাজাকার। রাতের অন্ধকারে পালিয়ে গেল হাতের ষ্টেনগান নিয়ে অজানায়। হয়তঃ এবার মোহমুক্তি ঘটেছে তার। ঘোর অন্ধকার। জোনাকীর আলোই একমাত্র আগুনের চিহ্ন এই তমসার গায়। পুলে পাহারায় পাকিস্তানীরা জোনাকী দেখলে মনে করে মুক্তি ফৌজ বিড়িতে টান দিচ্ছি প্রতিশোধের নেশায়। ছোড় গুলি জোনাকীর গায়। লক্ষ্য যত অভ্রষ্টই হোকনা কেন, গুলি কি আর লাগে জোনাকীর আলোয়! লক্ষ্যভ্রষ্ট গুলী বিঁধে স্তন্য পান রত অবুঝ শিশুর বুকে। এদের বর্বরতায় শিশুরাও প্রাণ হারায়। বুকে ডিনামাইট। মাথায় কচূড়ীপানার টুপি। আমনের ক্ষেতের আইল ভেসে যাওয়ার পথ। না ডুব না সাঁতার। দূর থেকে ফাটানোর বারুদের দড়ি, নাটাই থেকে ছাড়ছে একজন। একি ওদের প্রাণপন! মাঝে মাঝে রাজাকারদের শক্তিশালী টর্চলাইটের আলো এসে কচূড়ীপানায় চমকে দিচ্ছে। কিন্তু স্থির থাকতে হবে এ যাত্রায়। ক্ষেতের ভেতর ঢুকলে বিপদ কম,কিন্তু ধানের পাতা নড়লে গর্জে উঠবে রাজাকারের রাইফেল। পৌঁছে গেছে পুলের নীচে, পাহারারত রাজাকারের চোখকে ফাঁকি দিয়ে। পুলের পাঁকা পিলারে বেঁধে ফেলেছে ডিনামাইট। ডানের পিলারে একটা, তার পর বায়ে এক খুটি বাদ দিয়ে আরেকটা। এবার বারুদের রশিটা দুটো ডিনামাইটে যুক্ত করতে হবে। তার পর পলায়ন। এবার ডুব দিয়ে, নাটাই হাতে অপেক্ষারত সহযোদ্ধার পাশে। গ্রেনেট ছুড়ে দিল, অন্যদিকে, রাজাকাররা গুলি ছোড়ুক অন্ধকারে। অগ্নি সংযোগ বারুদের দড়িতে। ভেঙ্গে যাক হানাদারদের যোগাযোগের সব মাধ্যম, এই ব্রীজটার মতন।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মার্চ, ২০০৮ রাত ৩:৫০
৫৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সমাধান দিন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩১




সকালে কন্যা বলল তার কলিগরা ছবি দিচ্ছে রিকশাবিহীন রাস্তায় শিশু আর গার্জেনরা পায়ে হেটে যাচ্ছে । একটু বাদেই আবাসিক মোড় থেকে মিছিলের আওয়াজ । আজ রিকশাযাত্রীদের বেশ দুর্ভোগ পোয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নিছক স্বপ্ন=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৮



©কাজী ফাতেমা ছবি
তারপর তুমি আমি ঘুম থেকে জেগে উঠব
চোখ খুলে স্মিত হাসি তোমার ঠোঁটে
তুমি ভুলেই যাবে পিছনে ফেলে আসা সব গল্প,
সাদা পথে হেঁটে যাব আমরা কত সভ্যতা পিছনে ফেলে
কত সহজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

একদম চুপ. দেশে আওয়ামী উন্নয়ন হচ্ছে তো?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৯



টাকার দাম কমবে যতো ততোই এটিএম বুথে গ্রাহকরা বেশি টাকা তোলার লিমিট পাবে।
এরপর দেখা যাবে দু তিন জন গ্রাহক‍কেই চাহিদা মতো টাকা দিতে গেলে এটিএম খালি। সকলেই লাখ টাকা তুলবে।
তখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে গরু দুধ দেয় সেই গরু লাথি মারলেও ভাল।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১২:১৮


০,০,০,২,৩,৫,১৬, ৭,৮,৮,০,৩,৭,৮ কি ভাবছেন? এগুলো কিসের সংখ্যা জানেন কি? দু:খজনক হলেও সত্য যে, এগুলো আজকে ব্লগে আসা প্রথম পাতার ১৪ টি পোস্টের মন্তব্য। ৮,২৭,৯,১২,২২,৪০,৭১,৭১,১২১,৬৭,৯৪,১৯,৬৮, ৯৫,৯৯ এগুলো বিগত ২৪ ঘণ্টায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×