somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মনের মানুষ মনের মাঝে করো অন্বেষণ

১৭ ই অক্টোবর, ২০০৭ বিকাল ৪:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথমেই একটি বিষয় পরিস্কার করতে চাই, বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায় শক্তিরূপিনী যে দুর্গার পূজো করেন তা কিন্তু ধর্মের অংশ নয়- দুর্গোৎসব বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সংস্কৃতির একটি অনুষঙ্গ। সুতরাং ধর্মের সাথে একে গুলিয়ে ফেললে চলবে না।
ধর্ম একটি বৃহৎ বিষয়। সমগ্র মানব জাতির কল্যাণ,অকল্যাণ ধর্মের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত হয়ে আছে। মানবজাতির ইতিহাসের প্রারম্ভিক সময় থেকেই ধর্মের অস্তিত্ব বর্তমান। প্রস্তর যুগ কিংবা নিরক্ষর যুগ থেকে শুরু করে হরপ্পা অথবা মোহেনজোদারো সময়কালের পুরাকীর্তিসমূহের নিদর্শন একই কথা ঘোষনা করে। সভ্যতা বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে ধর্মীয় ভাবধারার যে রূপান্তর লক্ষ্য করা গেছে তা অবশ্যি সভ্য মানুষের অবদান।

পৃথিবীর এমন কোনো জাতি নেই যাদের কোনো ধর্ম নেই। জন্তুদশা থেকে মানবদশা প্রাপ্তির পর যখন আদিম সমাজভুক্ত মানুষের মধ্যে ন্যায়-অন্যায় বোধ জন্মগ্রহন করলো তখন থেকেই ধর্মের উৎপত্তি। এই ন্যায় বোধের সঙ্গে যুক্ত ছিল সাধারন বুদ্ধি ও জ্ঞান। সেন্স এবং সায়েন্স
সাধারন বুদ্ধিএবং জ্ঞানের সমন্বয় সাধনে তারা কোনটা ভালো এবং কোনটা মন্দ,তা বিচার করতে শিখলো। ভালোটা গ্রহন এবং মন্দটা বর্জনের রীতিই ধর্মের প্রাথমিক পর্ব। অতঃপর এর সঙ্গে ধীরে ধীর যুক্ত হলো অতিপ্রকৃত- বিষয়বস্তু,বিশ্বস,কার্যাবলী,রীতিনীতি ইত্যাদি। অবশ্য এসব কিছুর অন্তরালেই ক্রিয়াশীল ছিল তাদের ধারণাসজ্ঞাত জ্ঞান-বিজ্ঞান। প্রগৈতিহাসিক মানুষের কাছে গোটা প্রকৃতিই প্রতিভাত হয়েছে বিশাল এক প্রশ্নরূপে। বিশ্বব্রক্ষান্ডের সৃষ্টি-গোটা প্রকৃতির অবস্থান কী করে সম্ভব? নিশ্চয় এর অন্তরালে কোনো অলৌকিক শক্তি ক্রিয়া করছে যা মানুষের শক্তির ঊর্ধ্বে। এই বিশ্বাস বোধই আদিম মানুষকে অহরহ বিব্রত করেছে এবং সেসব চিন্তার ফলশ্রুতিই ধর্মের আবিষ্ড়্গার। বাস্তব এবং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকেই তাদের এই বোধের উন্মেষ।

বাস্তব ও ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা দিয়ে প্রকৃতিকে উপলব্ধি করতে গিয়ে তারা ভেবেছে চন্দ্র-সূর্য, গ্রহ-তারা,নদী-নালা,পাহার-পর্বত,গাছপালা,বন-জঙ্গল,জন্তু-জানোয়ার,এককথায় বিশ্বক্ষান্ডের সবকিছুর অন্তরালে এমন একটি অদৃশ্য শক্তি ক্রিয়াশীল-যার ফলে সবকিছু সজীব,প্রনবন্ত। তা না হলে গ্রহ-নক্ষত্র চনমনে থাকতো না,নদী-সমুদ্র তাদের গতি হারাতো,বন-জঙ্গলের সজীবতা বিনষ্ট হতো-ইত্যকার অনেক কিছু।
আদিম সমাজ জীবনসংগ্রমে টিকে থাকতে গিয়ে যখন দেখেছে যে প্রকৃতির অন্তরালে অদৃশ্য শক্তির কাছে তারা বড় অসহায় তখনই তারা হাত বাড়িয়েছে অদৃশ্য শক্তির কাছে। কেননা জন্ম-মৃত্যু, রোগ-জরা, ভয়ভীতি ইত্যাদি তাদের আয়ত্বের বাইরে এবং নিশ্চয় এসব অদৃশ্য শক্তি দ্বারা পরিচালিত। তাই সেই অদৃশ্য শক্তির অন্বেষণ করতে গিয়ে গোটা প্রকৃতিই তাদের পুজোর উপজীব্য হয়ে উঠেছে। অদৃশ্য জগতের এই যে অলৌকিক শক্তি- এর মধ্যে ভাল-মন্দ দুটো ধারাই ক্রিয়াশীল। মন্দটাও যাতে মানব জীবনে অমঙ্গলের সূচনা করতে না পারে তার জন্য যে প্রয়াস তার মধ্যে ‘প্রার্থনা’ এবং ‘উৎসর্গ’ নিহিত।

এটা এক ধরনের সংস্ড়্গার। আর সংষ্কার থেকে এর উদভব বলে এ হলো সংস্কৃতি। বৃহদারণ্যকে আছে -
অথ যোহন্যাং দেবতাম উপাস্তে / অন্যোহসৌ অন্যোহহম অস্মীতি / ন স বেদ, যথা পশুরেবং স দেবানাম ।
যে মানুষ অন্য দেবতাকে উপাসনা করে, সে দেবতা অন্য আর আমি অন্য- এমন কথা ভাবে, সে তো দেবতাদের পশুর মতোই। অর্থাৎ সেই দেবতার কল্পনা মানুষকে আপনার বাইরে বন্দি করে রাখে, তখন মানুষ আপন দেবতার দ্বারাই আপন আত্মা হতে নির্বাসিত-অপমানিত। প্রত্যেক মানুষের মাঝে যে মহান আত্মা বাস করেন- যিনি জরা-মৃত্যু-শোক-ক্ষুধা- তৃষ্ণার অতীত-যিনি সত্যকাম, সত্যসংকল্প-তাঁকে অন্বেষণ করতে হবে। তাঁকে জানতে হবে।

"মনের মানুষ মনের মাঝে কর অন্বেষণ"। -এই যে তাঁকে সন্ধান করা তাঁকে জানা, এতো বাইরে জানা নয়, এতো বাইরে পাওয়া নয়। এ যে আপন অন্তরে আপনি হওয়ার দ্বারা জানা,আপনি হওয়ার দ্বারা পাওয়া। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করে নেয়া প্রয়োজন, ‘আত্মা’ বলতে আমি মানুষের ভেতরে থাকা বিশেষ কোন বস্তুকে নির্দেশ করছিনা-যা মৃত্যুর পর বায়ুমন্ডলে মিশে যায় বলে কথিত আছে। এর কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। আমি এখানে ‘আত্মা’ বলতে প্রত্যেক মুনুষের অভ্যন্তরে যে আরেকটা মানুষ বাস করে সেই ভেতরের মানুষটিকে নির্দেশ করছি। সহজ কথায় বলতে পারি ‘আমার ভেতরের আমি’। প্রতিxিট মানুষের ভেতরেই সেই ‘আমি’ বসবাস করে। আত্মার বিশালতার উপলব্ধি একমাত্র মানুষের পক্ষেই সাধ্য। কেননা মানুষের জন্য তাই পরম সত্য।

বিরাটত্ব বিশুদ্ধ জ্ঞানে, বিশুদ্ধ প্রেমে, বিশুদ্ধ কর্মে বাইরে দেবতাকে রেখে স্তবে-অনুষ্ঠানে, পুজো-আচারে, শাস্ত্র পাঠে উপাসনা করা সহজ। কিন্তু আপন চিন্তায়-আপন কর্মে পরম মানবকে উপলব্ধি ও স্বীকার করাই হচ্ছে সবচেয়ে কঠিন সাধনা।
"মনের মানুষ মনের মাঝে কর অন্বেষন"সেই মনের মানুষ সকল মনের মানুষ। আপন মনের মধ্যে তাঁকে দেখতে পেলে সকলের মধ্যেই তাকে পাওয়া যায়। আর মানুষের মাঝে তাঁর সন্ধান করাই মানুষের প্রকৃত ধর্ম।
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজকের ব্লগার ভাবনা: ব্লগাররা বিষয়টি কোন দৃষ্টিকোন থেকে দেখছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪১


ছবি- আমার তুলা।
বেলা ১২ টার দিকে ঘর থেক বের হলাম। রাস্তায় খুব বেশি যে জ্যাম তা নয়। যে রোডে ড্রাইভ করছিলাম সেটি অনেকটা ফাঁকা। কিন্তু গাড়ির সংখ্যা খুব কম।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাপ, ইদুর ও প্রণোদনার গল্প

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৪

বৃটিশ আমলের ঘটনা। দিল্লীতে একবার ব্যাপকভাবে গোখরা সাপের উৎপাত বেড়ে যায়। বৃটিশরা বিষধর এই সাপকে খুব ভয় পেতো। তখনকার দিনে চিকিৎসা ছিলনা। কামড়ালেই নির্ঘাৎ মৃত্যূ। বৃটিশ সরকার এই বিষধর সাপ... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের সংগ্রামী জনতার স্লুইস গেট আক্রমণ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২১


(ছবির লাল দাগ দেয়া জায়গাটিতে গর্ত করা হয়েছিল)

শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

২৩শে এপ্রিল পাক সেনারা ফুলছড়ি থানা দখল করে। পাক সেনা এলাকায় প্রবেশ করায় মানুষের মধ্যে ভীতিভাব চলে আসে। কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাড়ির কাছে আরশিনগর

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫০


বাড়ির কাছে আরশিনগর
শিল্পকলা একাডেমির আশেপাশেই হবে চ্যানেলটার অফিস। কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করল মৃণাল। কিন্তু খুঁজে পাচ্ছে না সে। এক-দু'জনকে জিগ্যেসও করল বটে, কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারছে না।

কিছুদূর এগোনোর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×