অদৃশ্য এক প্রতিযোগিতায় নামি আমরা যার ফলে শারদীয় ভাবগম্ভীর্য নষ্ট হয়। এবারের দুর্গোৎসব একটু ব্যতিক্রমি। শরতের বিদায়ীলগ্নি, পবিত্র ঈদুল ফিতরের শেষে হেমন্তের নবান্নের শুরুতে ঢাকের বাজনা, শঙ্খধ্বনি আর মৃদঙ্গের তালে তালে মা এসেছেন আমাদের ঘরে। শারদীয় পূজা হচ্ছে জীবনের পূজা, ভাবের পূজা, ভবের পূজা, সমন্বয়ের পূজা, অন্তর ও বহিরাঙ্গের মিলনসেতু রচনার পূজা। দীনতা, হীনতা, সংর্কীনতা থেকে মুক্ত হওয়ার ঔদাত্ত আহবানের পূজা।
কিন্তু এই কথাগুলো আমরা ক’জনইবা জানি বা জানান চেষ্টা করি। যার কারণে মা আমাদের মনোমন্দিরে অধিষ্ঠিত হতে পারেননা, বাইরের মন্ডপেই থেকে যান। আমরা কি বছরের একটি দিনও আমাদের গর্ভধারিনী মায়ের কথা চিন্তা করি ? তাঁর শ্রদ্ধার জন্য, তাঁর শান্তির জন্য তাঁকে ভক্তি করি ? আমরা কি ভাবি মংগাপিড়ীত, ক্ষুধার্ত, অধিকার বঞ্চিতদের কথা, আর্ত পিড়ীত দুস্থ দারিদ্রদের কথা, বন্যাপিড়ীত হারজিড়জিড়ে মানুষগুলোর কথা। আজ আমাদের জাতীয় জীবনে অমঙ্গলের বার্তা শুনা যাচ্ছে। আমাদের চারিদিকে আজ গভীর নৈরাশ্যের জমাট বাতাবরণ। সন্ত্রাস, দুর্নীতি, ভ্রষ্টাচার, অন্যায়, অসত্য, অশ্রদ্ধা, দুষ্ড়্গর্ম, অনৈতিকতা আমাদের ঐতিহ্যকে গ্রাস করে চলেছে। এ সমস্ত আজ আমাদের মানবিক মূল্যবোধকে ধ্বংস করে ফেলেছে।
নতুন একটি শতাব্দির সূচনালগ্নে দেশ ও জাতি যখন স্বপ্ন দেখে বিশ্বায়নের তখন সাম্প্রদায়ীকতা, হিংসা-বিদ্বেশ ও অসহিষ্ণুতা আমাদের পথ রুদ্ধ করে দাঁড়ায়। আসুন আমরা সকলে আজ করুনাময়ী মহাশক্তি স্বরুপিনী শ্রী শ্রী জগম্মাতার কাছে প্রার্থনা করি তিনি যেন এ সমাজে জন্ম নেয়া অসুর নামক যে ডেঙ্গু বিস্তৃতি পাচ্ছে-সেগুলোকে দুমড়ে-মুচড়ে-আছড়ে ঝেড়ে ফেলুক অন্ধ কারের মনি কোঠায়। তবে ফিরে আসবে নতুন সকাল আর শান্তির অমীয় ধারা। ধ্বংস হবে কিছু মানবরুপী দানব-দানবী আর অংহকারী-কারিনীদের আস্তানা। নতুন একটি শান্তির পৃথিবী গড়ার স্বপ্ন দেখে আগামী দিন হোক......। এই হোক দূর্গতিনাশিনী মায়ের শ্রী চরণে আমাদের প্রার্থনা।