somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিত্য ঈদ পালা-১

১৪ ই অক্টোবর, ২০০৭ ভোর ৪:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ব্যাডায় বিশ ট্যাকা আমার হাতে গুঁইজা দিয়া আর হাত ছাড়তাছে না। আমার মাথায়, পিঠে হাত বুলাইতেছে আর কি জানি কইতেছে; আমার ভাল্লাগতাছে না.. ইশ্ ব্যাডার হাত এতো খরখরা ক্যান? শইল্যে কাঁটা দিতাছে। আমার ভাল্লাগে না। ভিক্ষা করতে ভল্লাগেনা। দশ জনের নয়জন মানুষ ভিক্ষা চাইলে দাঁত মুখ খিঁচায়া তেড়ে আসে য্যান ! মানুয়ের মুখগুলা তহন ডাস্টবিনে খাওন লইয়া মারামারি করা কুততার মুখের মতো লাগে। কেউ কেউ এই ব্যাডার মতো হাতি পাতি করে। কেউ করে ফাইজলামী। আমি মাথা তুলতে পারি না। মুখে কিছু কইতে পারি না । খালি মাথা নিচা কইরা হাত পাতি। ভিক্ষা করনের সময় নিজেরে তেলাপোকা মনে হয়।

ময়নুল না মাইনুল না মইনুল না মনু আমি নিজেই জানি না। সবই ডাকে , আমিও জবাব দেই। বড় অইলে কোন নাম কমু ভাইবা পাই না। তবে আমার পছন্দের নাম অইলো হইলো শাকিল .. নতুন কোন জায়গায় গেলে আমি আমার নাম কই শাকিল।আইজকা ট্রেনে কইরা ঢাকা আইছি । জীবনের পয়লা। বককর কইছে ঈদের আগে ঢাকায় অনেক ট্যাকা কামান যায়। আল্লাগো! কি বড় যায়গা। রাস্তায় কতো বড় বড় গাড়ি। আর কত মানুষ। রাস্তায় যে ডর লাগে! বড় একটা বাসে কইরা বককর লইয়া আইছে একটা মার্কেটে। আমাগো শহরের মার্কেট থাইক্যা অনেক বড় আর সুন্দর। কি সুন্দর ! কি ঝলমইল্যা! মানুষগুলাও আমাগো শহরের মতো না। দেখলে ডর করে আর ওগো পোলাপানগুলারে দেখলে হিংসা লাগে। বড়লোক মাইনষের সুন্দর সুন্দর পোলাপান দেখলে আমার বুকের ভিতরে জ্বলে। হিংসা লাগে।

কাল ঈদ, হের লাইগ্যা দুইদিন আগে থইকাই ইষ্টিশন রোড আর মহাজন পট্টির ভাঙ্গারি দোকান বন্ধ। ভাঙ্গারি আর কাগজ টোকান ও বন্ধ। হিরুইঞ্চি গুলারে ফাঁকি দিয়া ব্রিজে রিক্সা ঠেলাও কঠিন । ধরতে পারলেই মাইর দ্যায় আর সব ট্যাকা লইয়া যায়। ডেইলি বিশ ট্যাকা দিলে আবার কিছু কইব না। কিন্তু ছোট মানুষরে কেউ নিতে চায় না। ডেইলি বিশ ট্যাকা তো কামাই ই অয় না। আমি দিমু কি? তারপরেও ঠেকায় পড়লে রিক্সা ঠেলা যাইতো । কিন্তু কাইল ঈদ। ঈদে মারে দেখুম না?

সৎ বাপে ঘর থাইকা মাইরা বাইর কইরা দিছে গত কুরবানী ঈদের পরে। সপ্তায় ২০০ টেকা না দিলে ঘরে ঢুকতে দিব না। যে মাইর মারছে! মা রেও মারছে। আমার রাগ লাগছে। আমি ঘর থাইকা বাইর অইয়া আইছি । কিন্তু ঈদেও মারে দেখুম না? বককর শুইনা হাসে। কয়-' আমাগে আবার কিয়ের ঈদ? ঈদ হইলেঅ ভদ্রলোকের।' কিন্তু মা যে ঈদে আমারে আদর কইরা সেমাই খাওয়ায়। গত ঈদে আমারে নতুন শার্ট কিনা দিছিল। মা অনেক কান্দব আমার লাইগা। মার কথা মনে হইলে আমারও খালি কান্দা আসে, খালি কান্দা আসে। বাজারের নাইটগার্ড আহাদ মিয়া কয় ‌‌‌‌'ব্যাডা মাইনষের কান্দন নাই' । কিন্তু মার কথা মনে হইলে বুকের ভিতরে তুফান উঠে। চিল্লাইয়া গড়াগড়ি দিয়া কান্তে ইচ্ছা হয়। ২০০ টেকা লাগবই আমার। আমি মার কাছে যামু। মারে আমি তোমারে দেখতে আমু।

আমি জোর কইরা ব্যাডার হাত থাইকা ছুইট্যা আসি। ব্যাডা চিল্লইয়া উডে-'কই যাস? বিশ ট্যাকা লইয়া ভাগবি নাকি? চোর কেথাকার। দে ঊনিশ টাকা ফেরত দে।'
'ভংতি নাই।'
'তাইলে বিশ ট্যাকা দে'
ব্যাটা আমার হাতে থাকা বিশ টাকার নোটটা ছিনাইয়া নিয়া হাঁটতে থাকে। মার্কেট থেকে কেউ বাইর হইলেই আমার মতো আরো যে পোলাপান আছে ওরা দৌড়াইয়া যায় দেইখা আমিও দৌড়াইয়া গিয়া একটা দলের কাছে যাই কিন্তু অন্য পোলাপানের মতো 'একটা ট্যাকা দেন আপা' , 'একটা ট্যাকা দেন স্যার' আমার গলা দিয়া বাইর হয় না। আমি খালি মাথা নিচা কইরা হাত পাইতা ওদের পিছে পিছে হাঁটতে থাকি। 'যা ফুট এহান থাইক্যা। কেডা শিখাইছে এইসব?' ধমক দিতে দিতে লোকটা গাড়িতে উঠে বসে। মহিলাটা বলে উঠে-'আহা ধমক দিচ্ছ কেন? ছোট একটা ছেলে?' ।
-'আমি ভিক্ষা করা দেখতে পারি না। মাগনা পাইয়া এদের অভ্যাস খারাপ হইতাছে। '
-'ঠিক আছে । আমি মাগনা দিব না। ওকে একটা প্রশ্ন করব। ও জবাবা দেয়ার চেষ্টা করবে। এই চেষ্টা করার বিনিময়ে তুমি ওকে টাকা দাও। সঠিক হলে ১০ টাকা ভুল হলে ৫ টাকা।'
-'কর প্রশ্ন কর'
লোকটা বিরক্ত হয় , কিন্তু বউয়ের কথা মেনে নেয়।
-'আচ্ছা বল্ তো এই শাড়ির দাম কত? ' একটা শড়ি ব্যাগ থেকে বের করে আমাকে দেখায়। কি বলবো আমি? আমার অসহায় লাগে? কত হবে এর দাম?
-'পাঁচশ টেকা।'
-' পাঁচশ টাকা? হি হি, শুনেছ কি বলে? এটার দাম নাকি ৫০০ টাকা। তুই তো ভুল জবাব দিলি , তুই পাবি পাঁচ টাকা। এর দাম হলো বিশ হাজার টাকা।'
বিশ হাজার টেকা। আমার বুক ধক করে উঠে। কত টেকায় বিশ হাজার টেকা হয়? একটা শাড়ির দাম বিশ হাজার টেকা ? বুকের ভিতরে জ্বলতে থাকে

৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×