somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কা'বা শরীফে জুমার খুতবায় রাসূল (সা.) এর প্রতি অসম্মানের প্রতিবাদ

১২ ই অক্টোবর, ২০০৭ রাত ৯:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

খতীবঃ আব্দুর রহমান আস্-সুদাইস

ডেনমার্কের পত্রিকায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ব্যঙ্গ কার্টুন প্রকাশের প্রতিবাদে সারাবিশ্বে প্রতিবাদের ঝড় উঠে। বিশ্বের বিবেকবান মানুষ ও মুসলমানদের ঐ পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণে কা'বা শরীফের ইমাম সাহেব খুতবায় দিকনির্দেশনামূলক আহ্বান নিম্নরূপ:

মুসলিম ভ্রাতৃবৃন্দ !
ইতিহাসের পাতা পর্যবেক্ষণ করলে সভ্যতার উত্থান-পতন দেখতে পাবেন। আরো দেখতে পাবেন নানা জাতি, নানা গোত্র আঁধারে হারিয়ে গেছে। কিন্তু এর মধ্যে একটি আলোকরশ্মি ঝলমল করে জ্বলছে এবং একটি মাত্র নূর আকাশের নক্ষত্রকেও হার মানাচ্ছে। সে নূর হচ্ছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনীত বিশ্বজনীন বার্তা। অতন্ত্য দুঃখজনক হলেও সত্য যে, ডেনমার্কের 'জিরাগুস পোস্টেন' নামক দৈনিকে গত সেপ্টেম্বর মাসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বারটি ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ করে। যার ফলে মুসলিম বিশ্ব আজ ক্ষোভে ফুঁসছে।

প্রতিটি মুসলমানের নিকট রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মর্যাদা কতটুকু তা নিম্নের একটি বিশুদ্ধ ঘটনা থেকে প্রতীয়মান হয়। রাসূলের ইসলাম প্রচারের প্রাথমিক যুগের তত্কালীন কাফির নেতা আবু সুফিয়ান যায়িদ ইবনে দাছিনা নামক সাহাবীকে মৃত্যুর কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে পরীক্ষমূলকভাবে তাকে বলল : তোমার স্থানে মুহাম্মদকে হত্যা করে তোমাকে যদি মুক্তি দেয়া হয় তবে তুমি কি খুশী হবে? উত্তরে প্রিয় সাহাবী নির্ভয়ে বললেন : "আল্লাহর কসম, আমার প্রিয় নবীর মৃত্যু তো দূরের কথা, আমার মুক্তিপণ হিসেবে তাঁর গায়ে একটি কাঁটা বিদ্ধ হবে তা আমি কখনো সহ্য করতে পারবো না।" তখন আবু সুফিয়ান অবাক হয়ে চিত্কার করে বলল : আল্লাহর কসম, মুহাম্মদের প্রতি তাঁর সাহাবীদের ভালোবাসার মত গভীর ভালোবাসা আমি আর কোথাও দেখিনি। ঐ সাহাবী ত্যাগের যে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পেরেছিলেন, তা কেবলমাত্র নবীর প্রতি তাঁদের অগাধ ভালবাসা এবং তাঁর আলোকিত জীবনের ছায়ায় তাঁদের জীবন আলোকিত ও পূতপবিত্র হয়ে যাওয়ার কারণেই এমন নজীর স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

নবীপ্রেমিক ভ্রাতৃবৃন্দ !
ইসলামের আকাশে আজ নতুন করে কালো মেঘের ঘনঘটা। ইতিহাসের কঠিনতম পরিস্থিতি অতিবাহিত করছে মুসলিম উম্মাহ। রুচিহীন নীচু মানসিকতার একটি দল বিশ্ব মানবতার মুক্তিদূত যাঁকে মহান আল্লাহ দোজাহানের জন্য রহমত স্বরূপ প্রেরণ করেছেন সে প্রিয় নবীর ইজ্জত নিয়ে ছিনিমিনি খেলা শুরু করেছে। বাকস্বাধীনতার নামে তাঁর প্রতি আক্রমনাত্বক ও বিদ্রূপাত্বক কার্টুন ছবি পত্রিকায় ছাপিয়ে তাঁর সম্মানহানির চেষ্টা করে যাচ্ছে।

হে বিবেকসম্পন্ন মানবজাতি !
জেনে রাখুন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন সাধারণ মানুষ নন যে কোন কিছু রটালেই তা সাব্যস্ত হয়ে যাবে। তিনি তো সেই সংরক্ষিত ব্যক্তিত্ব যার ব্যাপারে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেনঃ "আপনার সাথে যেই শত্রুতা পোষণ করে সে নিঃসন্দেহে নির্বংশ।" তিসি আরো বলেন : "আর যারা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে কষ্ট দেয় তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি।" সুতরাং তাদের এসব অন্যায় আচরণে সম্মানিত নবীন কোন ক্ষতি তো হবেই না, বরং তাদের ক্ষতি যে অবধারিত তার ঘোষণা আল্লাহ নিজেই দিয়েছেন। তিনি বলেনঃ "যদি তোমরা তাকে সাহায্য না কর তবে আল্লাহ তাকে সাহায্য করবেন।" তিনি আরো ইরশাদ করেন : "হে আমার প্রিয় নবী !" "আমি আপনার সাথে বিদ্রূপকারীদের শাস্তি দেয়ার দায়িত্ব নিয়েছি।"

মুসলিম ভ্রাতৃবৃন্দ !
আমরা ইসলামের দাবীদার। সম্মানিত নবীজির প্রিয় উম্মত হয়ে কিভাবে চুপ করে বসে থাকতে পারি, আর কিভাবেই বা মুক্তির আশা করতে পারি? তাঁর প্রতি ভালবাসার দাবী হচ্ছে তার সহযোগীতায় একটুখানি কষ্টএ সহ্য করতে প্রস্তুত নই? এ সঙ্কটাপন্ন পরিস্থিতিতে আপনি প্রিয় নবীজির জন্য কি করেছেন? কি দায়িত্ব ছিল আপনার? কিছু নীচু মনের অধিকারী অনাচারী আমাদের বার বার শোকাহত করছে।

হে বিশ্ব বিবেক !
তোমরা কি মনে কর বাকস্বাধীনতা কাকে বলে আমরা তা ভুলে গেছি ! আর তোমরা মহান আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত রাসূলগণের মর্যাদা সম্বণিত আইনের পরিচয় দাও? কেননা তোমরা মনে কর আমরা তা জানি না। ইসলাম ও মুসলমানদের সম্মানহানি এবং তাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার সময়ই কি শুধু বাকস্বাধীনতার দোহাই লাগে? কোথায় আজ আন্তর্জাতিক নীতিমালা? কোথায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো? আর কোথায় গেল বিশ্ব বিবেক? পান থেকে চুন খসলেই যাদের মানবাধিকার প্রীতি উথলে উঠে ! কোথায় আজ তাদের হস্তক্ষেপ? এ মহা অপরাধের বিরুদ্ধে কি তাদের কোন কিছুই করার নেই?

হে বিশ্ব নেতৃত্ব
আজ মুসলিম বিশ্বের সর্বত্র প্রতিটি মুসলমান এ ঘৃণ্য অপরাধের কঠোর নিন্দা জানাচ্ছে। শত ধিক্কার দিচ্ছে সেসব নরকীটদের যারা আসমানী বার্তাবাহক আল্লাহ প্রেরিত একজন রাসূলকে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করছে। সাথে সাথে বিশ্বমুসলিমের কিবলা, প্রিয় নবীজির জন্মভূমি এবং ইসলামের আগমনস্থল পবিত্র কা'বা শরীফের মিম্বর থেকে সমগ্র মুসলিম উম্মাহর পক্ষ থেকে ঐসব বিদ্রূপকারী এবং যারা ঐসব ছবির প্রনমুদ্রণ করেছে তাদের কঠোরতম শাস্তির জোর দাবী জানাচ্ছি।
বিবেকবান মাত্রই উপলব্ধি করতে পারে যে, এ জাতীয় নৈতিকতা বিরোধী কর্মকান্ড যা দেড়শ কোটিরও বেশী মুসলমানের অনুভূতিকে আহত করেছে তা পরমতসহিষ্ণুতা, বিভিন্ন ধর্মের সহাবস্থান, বিভিন্ন সভ্যতার মাঝে গঠনমূলক আলোচনা-সমালোচনা এবং বিশ্বময় শান্তি প্রতিষ্ঠার দাবিকে নিঃসন্দেহে বাধাগ্রস্থ করবে। তাই আপনার যদি সত্যিই মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় আন্তরিক হয়ে থাকেন, সত্যিই যদি শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের দাবিদার হয়ে থাকেন তবে আন্তর্জাতিক নীতিমালা ও মানবাধিকার বিষয়ক আইন-কানুন বাস্তবায়ন করুন। মানবতার সাথে ন্যায়সঙ্গত ও মানবিক আচরণ করুন। অন্যায় ও একচোখা নীতি ত্যাগ করুন। তবেই অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা থেকে নিরাপদ থাকবেন। আর মনে রাখবেন মুসলমানদের প্রাণের এ দাবিকে যারা অবজ্ঞা করে সেসব বিশ্বনেতৃবৃন্দ তাদের ধর্মীয় ও মানবিক আমানতের খিয়ানত করছেন। তারা ইসলামের কোন ক্ষতি পারবে না। আল্লাহর রাসূলেরও কোন ক্ষতি করতে পারবে না। কেননা মহান আল্লাহ নিজেই ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি অবধারিত করে রেখেছেন তিনি এবং আমার রাসূলগণ অবশ্যই বিজয়ী হবেন।
এ ঘটনা দ্বারা এ কথা স্পষ্ট যে, কারা সন্ত্রাসবাদের উসকানি দেয়, কারা বর্ণবাদ, উগ্রবাদ এবং জাতিগত দ্বন্দ্ব উসকে দেয় এবং সভ্যতার সংঘর্ষকে অনিবার্য করে তোলে।
তারিখঃ ২৪শে মুহররম ১৪২৭ হিজরী

অনুবাদ করেছেনঃ ড. মুহাম্মদ ওয়ালি উল্লাহ
২৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×