অফিস থেকে বের হয়েই গাড়ী,তারপর সোজা বাসা।
অফিস বারান্দায় জীর্নশীর্ন একটি মেয়ে ফুলের মালা বিক্রী করে।বয়স বড়জোর এগার,বার। সাথে আরো কয়েকজন। নাম না জানা এ মেয়েটি একেবারে নাছোড়বান্দা।প্রতিদিন আমার গাড়ী পর্যন্ত আসে,কাকুতি মিনতি করে,ব্যর্থ হয়ে ফিরে যায়।
আমি দেখেও না দেখার ভান করি।আমার পাষান হৃদয় গলেনা।
মেয়েটির সাথে আরো যারা বিক্রি করে তারা এতো অনুনয়,বিনয় করেনা। আর এ মেয়েটি গাড়ি নাচলা পর্যন্ত আটার মতো লেগে থাকে।
দুমাসের কাজ শেষ করে আমি দেশে এসেছি। ছুটি শেষে আবার নিজডেরায় প্রত্যাবর্তন।
অফিস শেষ করে ফিরে দেখি-সেই ছেলেমেয়েরা ফুলের পসরা নিয়ে বসে আছে।বাকিরা একবার,দু বার জিজ্ঞেস করলো ফুল কেনার জন্য।কিন্তু মেয়েটির কোনো নড়ন চড়ন নেই।কেমন যেন অবহেলা। পুরো সপ্তাহটাই এভাবে গেলো। ভাবলাম ,হয়তোবা পারসোনালিটি গ্রু করেছে।
এবার আমার কৌতুহল হলো । কথা বলার লোভ সামলাতে পারলামনা। কাছে গিয়ে বললাম-আচ্ছা বোন- বলতো ,তুমি আর আমার কাছে আগের মতো ফুল বিক্রির চেষ্টা করোনা। কী ব্যাপার।
মেয়েটি কেমন যেন উদাস।অনেক পীড়াপিড়িতে বললো-
গত ছ মাস যাবত আমার বড় ভাইয়ের ক্যান্সার।বাবা অনেক আগেই আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। মা সারাভোর ফুলের মালা বানান,আর আমি তা বিক্রি করে ভাইয়ের ক্যান্সারের চিকিতসার
টাকা জমাই। আমাদের বড় বেশী টাকার দরকার ছিলো।
আমি বললাম , ছিলো মানে কি বোন।এখন বুঝি আর দরকার নেই।
মেয়েটে এবার কাঁদতে কাঁদতে বললো -আছে,তবে এতো বেশীর আর দরকার নেই। আমার সেই ভাই -গত সপ্তাহে মারা গেছেন। তুমি এখন চাইলে আমি তোমাকে ফ্রীই ফুলের মালা দিতে পারি।
কেউ নিলে ভালো,আর যদি সব বিক্রি নাও হয়,তাও ভালো।আমি বাড়ি ফিরার পথে সব ভাইয়ের কবরে রেখে দিই।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই অক্টোবর, ২০০৭ রাত ১২:৪২