somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শেরালী সাত-আষ্ট ঠেং ষোল হাটু

১০ ই অক্টোবর, ২০০৭ ভোর ৪:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আষ্ট ঠেং ষোল হাটু
নাম তার নিমাই টাঠু
শুকনায় পাতিয়া জাল
মাছ খায় চির কাল।

লাঠিম, ডাংগুটি আর মেয়েদের মত ষোলকৌট্টা খেলতে খেলতে হাত পা জমে গেছে। হয়ত সে কারণেই করিমের প্রস্তাবে আমিও ফজলুর মত খুসীই হলাম। কাঁচা জিংলার (বাঁশের ডালা) ছিপ নিয়ে বর্শি বাইতে যাব। করিমের বাবাও বালির নাওয়ে গেছে। তাই ওদের কোষা নৌকার একছত্র অধিপতি এখন সে একাই। জল স্ফটিকের মত স্বচ্ছ। দু একটা কাটাইরা বা দারকিলা মাছ ছাড়া অন্য মাছের দেখা পাওয়ার সম্ভবনা নেই। তাই কাটাইরা মাছের উপয়োগী বর্শীই সাথে নিলাম।
মাকড়শা একটা পূন্যবান প্রানী। কথিত আছে যে, দ্বীনের নবি মোস্তফায় মক্কা ছেড়ে মদিনায় পালিয়ে যাওয়ার সময় ভোর হয়ে যাওয়াতে একটা গুহায় আস্রয় নেন। মাকড়শা সে গুহার মুখটায় জাল বুনে। কবুতর সে জালে ডিম পাড়ে। কাফেররা মনে করল এখানে অনেক দিন কোন মানুষ ঢুকে নাই। এভাবে মাকর্শা নবির জীবন রক্ষা করে। তাই এ প্রাণী পূন্যবান এবং অনেক গুনে গুনী। পানির উপর সচ্ছন্দে চলাফেরা করতে পারে। কিন্তু তার একটা বিপদ হল যে, সে পানির উপর দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় খাদ্য হিসাবে কাটাইরা মাছের পেটে চলে যেতে পারে। কাটাইরা মাছগুলো মাকড়শার লোভেই মাছরাংগার ভয়কে উপেক্ষা করে পানির এত উপরে ভেসে বেড়ায়। আমরা ধানের ডগা থেকে মাকড়শা ধরে বর্শিতে গেথে পানির উপর ভাসিয়ে রাখি। মাছগুলো জিবীত মাকড়শা মনে করে সেটা গিলে। ব্যাস টান দিয়ে নৌকায়। কিন্তু কাটাইরা মাছের ঠোট খুব নরম। তাই খুব আস্তে টান দিতে হয়। আর কান্চা বাঁশের চিকন নরম ছিপ না হলে, ঠোট বর্শিতে গেথে থাকে মাছ জলেই সাতার কাটে। করিম ফজলু পটাপট মাছ তুলছে নোকায়। কিন্তু আমি শুধু ঠোট পাচ্ছি। একটা মাছও ধরতে পাড়লাম না। ক্রমাগত ব্যার্থতায় অধৈর্য্য হয়ে নৌকা থেকে লাফিয়ে ওদের একটু ক্ষ্যাপালাম আর একটু সাতার কাটলাম। জল এখন এত বেশী নয়। তবে ঠিকমত দাড়াতে পাড়িনা। খুব লম্বা হয়ে দ্বাড়ালে কোন রকমে নাকটা পানির উপরে থাকে। ওরা আবার মাছ ধরায় মনোযোগ দিল। আমি ধানের ফাঁকে বেড়ে উঠা দুএকটা শালুক পাতা দেখে ডুবদিয়ে শালুক তোলার চেষ্টা করলাম। ভাল করে জলের উপর এখনো সব কটি পাতা জাগেনি। শালুক হবে কিভাবে। একটা মটরশুটির মত শালুক পেলাম। দাঁত দিয়ে ছাল সরিয়ে মুখে পূড়লাম। অসম্ভব তেতো। আষারের শেষে কার্তিকের শুরুতে গোল আলুর মত হবে একেকটা শালুক। সিদ্ধ করে ছিললে মনে হয় সোনার ডিম। মুখে পুড়লে চিনিছাড়া সন্দেশ। জিবে পানি এসে গেল। ভাবতে ভাবতেই। শাপলার কুড়িগুলো এখনো পদ্ম পাতায় পরিনত হয়নি। অদ্ভূত ভাবে শাপলা, পাতার সাথেই মূল থেকে অঙ্কূরিত হয়। পানি খুব স্বচ্ছ বলে দেখতে পেলাম। সাবধানে একটা শাপলা মূল থেকে ছেড়লাম। খুব কঁচি বলে খশা না ছাড়িয়েই মূখে পুড়লাম। এর স্বাদ শাপলার মতই। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার মত সবুজ ধানের পাতা। জলের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়ে এতদিন পরে একটু স্থির হয়েছে। তাতেই হাল্কা সবুজ কঁচি রংটা ঘন সবুজে পরিনত হয়েছে। ওৎ পেতে বসে আছে ঘন ঝাপড়ির ধনচে গাছে কাল বক আর ডাহুক। মাকড়শার লোভে মাছগুলো পানির উপরে অনেক সময় লাফদেয়, টুক করে গিলে ফেলে ডাহুক না হয় বক। বড় শান্ত মনে হয় ঐ জীবনের গতি বেগ। এ কূল ভেঙ্গে ও কূল গড়তে গিয়ে আপন খেয়ালে প্রকৃতি সৃষ্টি করেছে এই সাত মৌজার বিল। এ দিকটায় চড় পরতে পরতে আর ও দিকটা ভাংতে ভাংতে অনেক ভাংগা গড়ার ফল এ বিল। যদিও এটা আসলে চড় কিন্তু লোকে বলে বিল। তাতে চড় দখলের রক্তাত অধ্যায় কি আর ঘোচে! এর দখল নিয়ে যত রক্ত ঝরেছে, তাতে এবিল ভরে যেত। দারগা, থানা, পুলিশ, কোর্ট ,কাচারি কিছুতেই যখন কার দখল নিশ্চিৎ করতে পারেনি তখন সবাই একমত হল। চর সাত মৌজার সব পরিবারে সমান করে ভাগ করে দেওয়া হবে। কিন্তু অনেক মানুষ বলি হওয়ার পরে।
ক্রমশ....
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মার্চ, ২০০৮ রাত ৩:৪৫
৪৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×