somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্মৃতি পর্বে আজ থেকে ১২ বছর আগের সেই শবে-বরাত'এর স্মৃতি ! শবে-বরাত এখনও আসে কিন্তু ফেলে আসা সেই দিনের মুহূর্তগুলো আর ফিরেনা ............

১০ ই অক্টোবর, ২০০৭ রাত ১২:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



স্মৃতি রোমন্থন ! স্মৃতিকে আকড়ে ধরে বেঁচে থাকার মত সেরকম কিছু নয় বরঞ্চ স্মৃতির অনুসন্ধানে কিছু ফেলে আসা অতীতের সময়, পরিমন্ডল এবং পারিপাশ্বিকতার আবহে যে ত্রে তৈরী হয় তা পুনারায় মনসপটে ভেসে উঠে স্মৃতিকে পুনারুজ্বীবিত করে। তেমনই কিছু ঘটনা, যা আজ থেকে ফেলে আসা ১২ বছর পূর্বের। সে সময়ে ৮ম শ্রেণীতে পড়ুয়া উচ্ছল বালক ছিলাম, কেমন ছিল সেদিনকার শবে-কদরের রাত আমাদের মত অন্য সকলের এই একই বয়সের, সে স্মৃতিগুলোকেই লেখার চেষ্টা করেছি এই পোষ্টে .............

আগেই বলেছি তখন কাস ৮-৯ এর যুগ, উচ্ছল, প্রাণচাঞ্চলতার কোনটারই ঘাটতি ছিলনা, আর ছিলনা বলেই নামের আগে বা পড়ে অঘোষিত 'চঞ্চল' শব্দটি সংযুক্ত হয়েছিল, কিছু বিষয়ে যেমন সিরিয়াস ছিলাম তেমনি হেয়ালীপনারও অভাবের কমতি ছিলনা। এই যেমন শবে-কদরের রাত, সে সময়ে যে দিন এই রাত্রের আয়োজন প্রাইভেট টিউটর, কাস থেকে ফিরেই একটি বাড়তি প্রস্তুতি থাকত, সূর্যস্ত হবার সাথে সাথে একটি বিশেষ দোআ পড়তাম, সেই দোআর অনেক ফজীলত ছিল, সমস্ত পাপগুলোকে মুছে ফেলার প্রত্যয়ে সেই সূর্যাস্তের সময় গোসল করতাম, যদি শীতকাল হয়েছে তো কোন বারণই বিরত করতে পারতনা, আমি ঠিকই ওই ঠান্ডায় গোসল করতাম। অত:পর মাগরিব নামাজ পড়েই পরিপাটি পাজামা পাঞ্জাবী পড়ে এশা ও পরবর্তী এবাদতের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণের পর্ব। বাবার সাথেই মসজিদে একই সাথে গেলেও বাবা ঠিকই প্রথম সারিতে অবস্থান নিলেও আমাদের অবস্থান থাকত মসজিদের সবার শেষের সারি। একে একে এলাকার সমবয়সী সবাই যখন এসে পড়ত তখন হুজুরের বয়ানের চেয়ে জটলা হয়ে থাকা আমাদের বয়ানের সাউন্ড থাকত বেশী, কেউ একজন হুংকার দিলে এই নিকের জন্য চুপ, তারপর আবার যেই সেরকমটাই শুরু। বয়ান শেষে যখন জিকির শুরু হত তখন আর এক কাহিনী কে কত জোড়ে চিতকার করে জিকির করতে পারে সে প্রতিযোগিতা, তাতে আমাদের সকলের সমস্বর চিতকারে মসজিদের আশেপাশের এলাকা প্রায় কিছুটা হলেও প্রকম্পিত হত, শেষে মোনাযাত যখন হুজুর এক পর্যায়ে কাদতেন তখন শুরু হত আমাদের কান্না, একেক জনের একের স্টাইল, বাবা-মা মারলে যেভাবে কাদে সেরকম, কেউ কিছু হারিয়ে ফেললে যেরকম কাঁদা, গলা ফাটিয়ে কাঁদা, এই কাঁদছি আবার সেই সােিথ হাসি সামলাতে না পেরে হাসাহাসিও চলছে। মিলাদ-মাহফিল তাবারক বিতরণের পালা, কোন রকম এক মসজিদ থেকে তাবারক নিয়ে দৌড় দিয়ে অন্য মসজিদ এভাবে যতগুলো পারা যায়, তারপর জমিয়ে বাড়ীতে ফেলা, এই তাবারক জমাতেই মজা কিন্তু খাওয়াটা মুখ্য ছিলনা।

রাতের খাবার খেয়ে বাড়ী থেকে বের হতাম রাতের এবাদতের উদ্দেশ্যে, মনে আছে তখন শীতকাল ছিল, মসজিদে থাকার উদ্দেশ্যে যারা এসেছিলাম তাদের কেউ কেউ কাথা, বালিশ, লেপ, কম্বলও পর্যন্ত নিয়ে এসেছিল, এবাদত না ঘুমের জন্য এসেছিল সেটাই বোঝা দায় ! যাই হোক কোনমতে ১২ রাকাত নামাজ পড়ে পরিচিত এলাকা পুন:ভ্রমনে বের হতাম, এ কথা সে কথা, কোথাও গিয়ে একটু বসা, তারপর আবার হাটা শেষে যখন ঘুমে চোখদুটো কান্ত তখন মসজিদে ফিরে যেদিকটা অন্ধকার থাকত সেদিকে বিছানগুলো লাগিয়ে কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়তাম দেখা যেত যেখানে ৩জনও শোয়া যাবেনা সেই জায়গায় ১০-১১ জন চাপাচাপি, গুতোগুতি করে শুতাম। সারারাতের এবাদত এভাবেই শুয়ে শুয়ে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে পার করে দিয়ে যখন সেহেরীর সময় হয়ে যেত হুজুর সবাইকে ডেকে ডেকে বাড়ীতে পাঠিয়ে দিতেন, কয়েকজনের ঘুম এতই ঘন ছিল কোলে করে তুলে নিয়ে বাড়ীতে দিয়ে আসতে হত, তারপর সেহেরী শেষ করে ফজরের নামাজটা মসজিদে পড়ে বাড়ী ফিরে এমন ঘুম দিতাম পুরো দিনতো দিন, সন্ধ্যা গড়িয়ে আবার রাতের ঘুমের প্রস্তুতির সময় উঠতাম।

এই হল সেই সময়ের স্মৃতি, সেই শবে-বরাত এখনও আসে, এখনও পালিত হয়, তবে ফেলে আসা সেই ১২ বছর আগের মত নয়, নেই সে সময়ের বন্ধুরা, সেই বয়সের উচ্ছলতা। কত কিছু হারিয়ে আবার কত নতুন কিছু অর্জনের এই যে পরিবর্তন সেখানেই স্মৃতি মধুর, স্মরনীয় যা ভুলবার নয়। যা নিয়ে যায় পার্থক্য বর্তমান থেকে সে সময়ের মুহূর্তগুলোকে বারবার মনে করিয়ে দেয়।
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

সম্পর্ক

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২


আমারা সম্পর্কে বাঁচি সম্পর্কে জড়িয়ে জীবন কে সুখ বা দুঃখে বিলীন করি । সম্পর্ক আছে বলে জীবনে এত গল্প সৃষ্টি হয় । কিন্তু
কিছু সম্পর্কে আপনি থাকতে চাইলেও থাকতে পারবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×