somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির শিক্ষার মান : সমস্যা ও উত্তরণের উপায়। পর্ব- ৮; পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান উন্নয়নে করণীয় - ২

০৭ ই অক্টোবর, ২০০৭ সন্ধ্যা ৭:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বেশ কিছুটা বিরতি দিয়ে আবার লিখছি। এর আগের পর্বগুলিতে যারা আলোচনায় অংশ নিয়েছেন তাদের ধন্যবাদ। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান উন্নয়নে গত পর্বে দুটি প্রস্তাব রেখেছিলাম। আজ আরো দুটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করছি।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান উন্নয়নে করণীয় - ২
--------------------------------------------------
৩ # টিউশন ফি বৃদ্ধি
বর্তমান নামমাত্র টিউশন ফি এর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা লাভের ট্রাডিশন পরিবর্তন করে টিউশন ফি বৃদ্ধি করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। সস্তায় নিম্নমানের শিক্ষা দেবার পরিবর্তে টিউশন ফি বৃদ্ধি করে গবেষণাধর্মী উচ্চমানের শিক্ষাদান দেশের সার্বিক উন্নয়নে অনেক বেশী প্রয়োজনীয়। সরকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে গবেষনা ও উচ্চমানের শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো তৈরীর জন্য দরকারি তহবিল দিতে সক্ষম নয় তাই টিউশন ফি বৃদ্ধি করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে নিজস্ব তহবিল গড়ে তুলতে হবে।

এই বর্ধিত তহবিল বিশ্ববিদ্যালয়গুলি গুণগত মানসম্পন্ন পরিকাঠামো তৈরী ও গবেষণা উপযোগী গবেষণাগার প্রতিষ্ঠার কাজে ব্যয় করবে। এর ফলে উন্নত বিশ্বের সাথে তুলনীয় শিক্ষাদানের মত সুযোগ সুবিধা সৃষ্টি হবে এবং শিক্ষার মানের যে বিস্তর ফারাক তা কমে আসবে।

প্রস্তাবটি বিতর্কিত কোন সন্দেহ নাই এবং সুষ্ঠু পরিকল্পনা ছাড়া এর বাস্তবায়ন করা ক্ষতিকর হতে পারে। বিশেষ করে বর্তমানেই যেখানে সামাজিক ও আর্থিক অবস্থান উচ্চশিক্ষার সুযোগ এর ক্ষেত্রে যথেষ্ট ভূমিকা রাখছে। আমি এখন এই বর্ধিত টিউশন ফি এর ব্যাপারটি কিভাবে কাজ করবে সেটি ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছি, আশা করি তারপর প্রস্তাবটি গ্রহণযোগ্য মনে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলির rank এর ভিত্তিতে টিউশন ফি ঠিক করবে যেটি ন্যূনতম ২৫,০০০ টাকা প্রতি শিক্ষাবছর থেকে সর্বোচ্চ ৫০,০০০ টাকা এর মধ্যে হবে। কোন ছাত্র ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে সুযোগ পাওয়া মাত্রই ব্যাংক থেকে তার টিউশন ফি এর সমপরিমান অর্থ শিক্ষাঋণ হিসাবে পাওয়ার জন্য কোয়ালিফাই করবে। এটি ছাত্রদের জন্য ঐচ্ছিক থাকবে, যারা অবস্থাসম্পন্ন তারা নিজেদের অর্থে টিউশন ফি দিলেও অপেক্ষাকৃত নিম্নআয়ের পরিবারের ছাত্ররা শিক্ষাঋণ এর মাধ্যমে টিউশন ফি পরিশোধ করবে।

এই শিক্ষাঋণ সুদবিহীন হবে বা নামমাত্র সুদে ছাত্রদের দেওয়া হবে এবং তারা শিক্ষাজীবন শেষ করার পরবর্তী ১০ বছরের মধ্যে এটি কিস্তিতে শোধ করবে। সরকারকে এ ব্যাপারে ব্যাংকগুলিকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে হবে বা প্রয়োজনে শিক্ষাঋণ এর জন্য পৃথক ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তবে প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়ন করা গেলে দেশে ব্যবসা করা বিদেশী ব্যাংকগুলি এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারবে।

এর ফলে সামাজিক বা আর্থিক অবস্থান উচ্চশিক্ষায় অন্তরায় হতে পারবেনা কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলি স্বনির্ভর হয়ে শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারবে। সেই পদক্ষেপগুলি কি কি হবে তা পরবর্তী পর্বগুলিতে আলোচনা করব কিন্তু প্রয়োজনীয় অর্থশক্তি ছাড়া কোন পদক্ষেপই বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়।

৪ # বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে উদ্যোগী হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও রিসার্চ অর্গানাইজেশনের সাথে কোলাবরেশন করতে হবে। এর মাধ্যমে নিয়মিত শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও গবেষক বিনিময় প্রক্রিয়া চালু করতে হবে। প্রাথমিকভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে অনুকরণ করে, সার্ক দেশসমূহের মধ্যে এটি চালু করা যেতে পারে।

এ ছাড়াও Undergraduate লেভেলে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ২-৩ মাসের জন্য শিক্ষার্থী বিনিময় কার্যক্রম চালু করতে হবে। এর ফলে শিক্ষার্থীগণ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা অভিজ্ঞতা লাভ করবে যা তাদের শিক্ষায় বৈচিত্র আনবে এবং পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে খাপ খাওয়াতে সাহায্য করবে। উদাহরনস্বরূপ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র ২-৩ মাসের জন্য সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষালাভ করবেন। এক্ষেত্রে হোষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় তার থাকার ব্যবস্থা করবে বিভিন্ন ছাত্রবাসে।

(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই অক্টোবর, ২০০৭ সন্ধ্যা ৭:৩০
৫৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কাঁচা আম পাড়ার অভিযান

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২



গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরের বাড়ীয়া ইউনিয়নের দেউলিয়া গ্রামে আমার প্রায় ৫২ শতাংশ জমি কেনা আছে। সেখানে ছোট একটি ডোবা পুকুর, অল্প কিছু ধানের জমি আর বাকিটা উঁচু ভিটা জমি। বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×