দু ছেলে বার বার ঘুরে ফিরে কাছে আসছে, বড়টা তাও কিছু বুজে, কিন্তু ছোটটা একদম ছোট মাত্র দু বছর, কিছুক্ষন পর পর ই এসে বাবার কোলে চড়ে বসছে। যত বার ই ওকে কোলে নিচ্ছি ততবারই মনে হচ্ছে এই চাকুরী আর করবনা, তারপরও আমি জানি আমাকে সাগরে যেতে হবে, আমার পরিবারের খাদ্য, বস্ত্র, সুখ, স্বাচ্ছ্যন্দ নিশ্চিত করার জন্য হলেও আমাকে আমার ইচ্ছার বিরুদ্বে যেতে হবে।
ছেলেদের মা প্রায় একযুগ হল আমার সাথে এক সাথে আছে, সব কিছুই জানে তারপরও সে মেনে নিতে পারেনা, দেশের বাইরে যাবার আগে কেমন যেন মুখ ভার থাকে, আমি জানি ওরও আমার মত কষ্ট হয় কিন্তু করার কিছু থাকে না। মাজে মাজে খুব ছোট খাট ব্যাপার নিয়ে হৈচৈ করে আমি জানি কেন করে, আগে বুজতাম না, মনে করতাম অহেতুক বুজি। তাই আমি নিজেই এর সমাধান বের করেছি, আর একটু পর আমি বাসা থেকে বের হয়ে যাব, সন্ধ্যয় বাসায় এসে আমিই ইচ্ছে কৃত ভাবে কোন ছুতো ধরে ওর সাথে ঝগড়া করব, যাতে আমার ওপর কিছুটা রাগ থাকে, বেশি ভালবাসা ভাল না ওকে অনেক বুজানোর চেষ্টা করছি, বুজে না। তাই এই পদ্বতি ধরছি। ঠিক প্লেনে ওঠার আগে বলব “যাই”
ও তখন ঝরঝর করে কেঁদে দেবে, বলবে, “যাই না, বল আসি”।
“অষূধ কিন্তু মনে করে খেয়ে নিও”। কাদতে কাদতে আরো বলবে, নামাজ পরো ঠিক মত।
ছোটটা ঝাপ দিয়ে কোলে উঠবে, আধো আধো বোলে বলবে “বাবা ভোম, বাবা ভোম” ভোম বলতে সে গাড়ী বুজায়।
বড় ছেলে আমার হাত ধরে বলবে “বাবা কতদিন পর তুমি আসবে?”
আমি বলব “বাবা ঠিক ত্রিশ দিন পর আল্লাহ বাচিয়ে রাখলে আমি তোমার কাছে আসব”
মা আসবে ওজু করে আয়তুল কুরশি পরে মাথায় ফু দেবে, সমস্ত বালা মুসিবত থেকে যেন আমি রেহাই পাই।
গাড়ীর কাছে কখনো ইমন, কখনো মিলন, কখনো খালেদ দাঁড়ানো থাকবে। যতই বলি না এয়ারপোর্ট পর্যন্ত যেতে হবে না কিন্তু কে শোনে কার কথা, আমার বন্ধু ভাগ্য চিরদিনই খুব ভাল। আমার সাথে কেউ না কেউ এয়ারপোর্ট পর্যন্ত যাবে।
কার্জন হল ক্যাফেটারিয়ার ম্যানেজার ফারুক ভাই তো নিশ্চয়ই থাকবে আমার সাথে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত ছায়ার মত। সেই কবে ইউনিভার্সিটি ছেড়েছি তাও প্রায় ১৫ বছর। কিন্তু কি এক মায়ায় যেন ফারুক ভাই এখন ও সব সময় যোগাযোগ রক্ষা করে।
এই লেখা লিখতে লিখতে গতকাল বিকাল তিন টায় কুয়ালালামপুর থেকে ফোন আসল, আজকে রাতেই (২৫ তারিখ রাতেই) রওনা দিতে হবে, আমি এখন "মিরি" নামে এর দ্বীপে বসে লিখছি, "মিরি" মালায়শিয়ার সারওয়াকে, আসাধারন সুন্দর, যত সুন্দর ই হোক আমার দু’চোখ ভেঙ্গে ঘুম নামছে, গাড়ীর ড্রাইভার জানালো কাল সকাল (২৭ তারিখ) ৮ টায় হেলিকপ্টার। এক ঘন্টা ২০ মিনিটের হেলিকপ্টার ফ্লাই। তারপর আমার রিগে। তার মানে আগামীকাল ৪ সপ্তাহের জন্য মাটির মায়া ছেড়ে গহীন সমুদ্রে উড়াল দেব।
রিগ কি জিনিস কারো কৌতুহল হলে এখানে দেখতে পারেন।
Click This Link
Click This Link
Click This Link
Click This Link
রিগে যেয়ে আমার প্রিয় সামু বন্ধুদের সাথে আবার যোগাযোগ হবে, আর পারলে আজ সন্ধ্যায় আর একবার ল্যাপ্টপের সামনে বসব।
সবাই যেন ভাল থাকুন।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মার্চ, ২০১৩ সকাল ৭:৪৭