somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধর্মনিরপেক্ষতা কি ধর্মহীনতা?

০৬ ই অক্টোবর, ২০০৭ সকাল ১১:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৯৯১ সালে আমরা তখন তুমুল কনফিউজ্ড কি করবো ঠিক নাই, সদ্য এক বিদ্রোহে জয়ী তরুণ সমাজ...কিন্তু ঠিক একইসাথে টালমাটাল ছিলো সারা পৃথিবী, সোভিয়েত বিপর্যয়ের ধাক্কায় এক অদ্ভুত স্বপ্ন বিপর্যয়ও যেন ঘটছিলো তখন। আমাদের স্বপ্নগুলি কেমন এলোমেলো অবয়বে দৃশ্যমান...সংশয়বাদের উত্থানও ঠিক এমন এক ডেকাডেন্সের কালেই ঘটেছিলো বহুকাল আগে!

ডেকাডেন্সের সময়গুলি যেমন ভয়ঙ্কর তেমন আনন্দেরও...যেকারণে এইসব কালে সব মহারথীরা পৃথিবীতে বাঁচে। ৯১ ছিলো তেমনি এক সময়। দেশে দেশে, দেশ থেকে দেশে তখন আলোচ্য প্রশ্ন ছিলো ভারসাম্য নষ্ট হলে থাকে কী! সোভিয়েত বিপর্যয় অনু দেশগুলোকেও পাল্টে দিচ্ছিলো তার মহা-শুণ্যতায়।

এই ধরণের পরিবর্তনের কালে আসলে প্রধান বিবেচ্য হয়ে উঠে ভবিতব্য। কি হবে? কি হবে? টাইপ আদলে অনেক অদেখা মেটাফিজিক্যাল বিষয়গুলোও তার শক্ত আসন গাড়ে...তারা প্রমাণ করতে চায় অনেক যুক্তিহীনতাকে...তথাকথিত প্র্যাগমাটিজমের ছকে ফেলে। ৯১ সাল, ঠিক এই ভাবেই আমাদের মূল্যবোধ-লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সবকিছুকে কেমন প্রশ্নহীনতার সংকটে ফেলে দিয়েছিলো। আমাদের অনেকেই অচেনা মার্কিনী ছায়ায় নিজেদের শরীরকে দেখার চেষ্টা করছিলো তখন।

ঠিক এমনি এক সময় মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষ শক্তির একাংশের মাথায় এলো এই দেশে ধর্মকে বাদ দিয়ে আসলে মানুষের মন পাওয়া যাবে না। মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণী মতবাদ হিসাবে ধর্মকে কাজে লাগাতে হবে। দেশের অন্যতম বড় বুর্জোয়া শক্তি বাংলাদেশ আওয়ামি লীগই এই এসেসমেন্টের প্রবক্তা সংগঠন। যারা পাইওনিয়ার হিসাবে নিজেদের দলীয় মেনিফেস্টো পাল্টে দিলো রাতারাতি দুইদিনের কাউন্সিলে। আওয়ামি লীগ সরে এলো মুক্তিযুদ্ধের সময়কার চৈতন্য তৈরী করা চেতনার থেকে...একেবারে নতুন উপলব্ধির খোঁজ দিলো তারা পৃথিবীকে - ধর্ম নিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়, এই তাত্ত্বিক অবস্থানের প্রবর্তন হোল।

এরশাদ যে কেন রাষ্ট্র ধর্ম বিষয়টাকে সামনে এনেছিলো সেটা কিন্তু দিবালোকের মতোন স্পষ্ট ছিলো। তার প্রয়োজন ছিলো মূল রাজনৈতিক ক্রাইসিস থেকে সবার দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে, অপ্রয়োজনীয় বিতর্কের সূত্রপাত করা। কারণ এই দেশে তখনো ধর্মনিরপেক্ষ চেতনায়ই বিশ্বাস ছিলো মানুষের। কখনোই শুক্রবারের ছুটির জন্য সাধারন মানুষের কোন ক্ষোভের প্রকাশ দেখা যায়নি তার আগে। কিন্তু এরশাদ সেটাও পাল্টে দিলো!

ধর্মনিরপেক্ষ বলতে আসলে যে কি বোঝায় সেটা নিয়ে যুগে যুগে-কালে কালে বহু বিতর্ক টিকে গেছে...কিন্তু সেই বিতর্কের কোন মীমাংসা আজো হয় নি। সাম্প্রতিক সময়ে আমি অনেকের সাথেই একটা তর্কের প্রয়াশ নিয়েছি, ব্যক্তি কি ধর্ম নিরপেক্ষ হতে পারে কি না। আমার অবস্থান না'এর পক্ষে। আমি একটা ভার্চ্যূয়াল অবস্থানের কথা ভাবতে চেয়েছি, যেখানে ব্যক্তি ধর্ম বিষয়ে তার নিজের অবস্থান নিয়েই আসীন থাকবে...সেটা ধার্মিক হতে পারে, ধর্মের প্রতি উন্নাসিকতা হতে পারে, যেকোন বিপরীত ধর্মের প্রতি সহনশীলতা হতে পারে, কিম্বা হতে পারে ধর্মহীনতা। কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষতা কোন ব্যক্তির অবস্থান হতে পারে না। ধর্মনিরপেক্ষতা কেবলি সাংগঠনিক এক পরিভাষা, যার অস্তিত্ব কোন ব্যক্তিক ডিকশনারীতে বা এনসাইক্লোপেডিয়াতে নাই।

তবে বাংলাদেশে আওয়ামিরা এই উদ্ভট টার্মিনোলজীতে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চাইলেও, এর কনসেপচ্যূয়াল শুরুটাও এই ভারত উপমহাদেশেই, নেহরু সাহেব এক উদ্ভট কৌশলগত অবস্থান নিয়ে আসলে রাষ্ট্রের ধর্মগত অবস্থানকে চাঙা করে দিয়ে গিয়েছেন গত শতাব্দির মাঝামাঝিতে। রাষ্ট্র ধর্ম নিরপেক্ষ বলতে তিনি সকল ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল আর পৃষ্ঠপোষক হিসাবে থাকবে এরকম এক ধোয়াটে ধারণার প্রবর্তন করেছিলেন এই অঞ্চলে বৃটিশদের কবল থেকে স্বাধীনতা অর্জনের পর পরই।

কিন্তু বাস্তবতাটা আসলে কি?

আমরা নিরপেক্ষ ব্যক্তি খুঁজি, সেটা কিসের প্রেক্ষিতে? সেই প্রেক্ষিত তৈরী হয় যখন সেই ব্যক্তি কোন প্রাতিষ্ঠানিক দায়িত্ব পালনে থাকেন তখন নিজের প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়ে তিনি নিরপেক্ষ হ'ন। ব্যক্তির একটা ধর্মীয় বোধ থাকতেই পারে...তারপরও তিনি অন্য ধর্মের প্রতি সহনশীল...তার মানে এই না যে সে ধর্ম নিরপেক্ষ হয়ে গেলো, একটা রাষ্ট্র যখন ধর্ম নিরপেক্ষ হয় তখন সেই ধার্মিক ব্যক্তি তার সহনশীলতারে এক্সিকিউট করে রাষ্ট্রীয় ধর্মনিরপেক্ষতাকে শ্রদ্ধা জানায়। ধর্মের প্রতি সহনশীলতা কখনোই ধর্মনিরপেক্ষতা হয় না, ব্যক্তি সাপেক্ষে নিরপেক্ষতার সাথে অবশ্যই ধর্মহীনতার যোগ আছে...রাষ্ট্র যখন ধর্মনিরপেক্ষতা ধারণ করে, তখন তার মানে এই যে রাষ্ট্রীয় ভাবে সে কোন ধর্মকেই লালন করবে না।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই অক্টোবর, ২০০৭ রাত ৯:৫০
২৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সচীবদের সম্পর্কে এখন কিছুটা ধারণা পাচ্ছেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ২০ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৭



সামুর ব্লগারদের মাঝে ১ জন সচীব আছেন,(বর্তমানে কর্তব্যরত ) তিনি বর্তমানে লিখছেন; আধামৃত সামুতে তিনি বেশ পাঠক পচ্ছেন; উৎসাহের ব্যাপার! এরচেয়ে আরো উৎসাহের ব্যাপার যে, তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোথাও ছিলো না কেউ ....

লিখেছেন আহমেদ জী এস, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:১৯




কখনো কোথাও ছিলো না কেউ
না ছিলো উত্তরে, না দক্ষিনে
শুধু তুমি নক্ষত্র হয়ে ছিলে উর্দ্ধাকাশে।

আকাশে আর কোন নক্ষত্র ছিলো না
খাল-বিল-পুকুরে আকাশের ছবি ছিলো না
বাতাসে কারো গন্ধ ছিলোনা
ছিলোনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

নারীবাদ, ইসলাম এবং আইয়ামে জাহেলিয়া: ঐতিহাসিক ও আধুনিক প্রেক্ষাপট

লিখেছেন মি. বিকেল, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৪



আইয়ামে জাহিলিয়াত (আরবি: ‏جَاهِلِيَّة‎) একটি ইসলামিক ধারণা যা ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর আবির্ভাবের পূর্ববর্তী আরবের যুগকে বোঝায়। ঐতিহাসিকদের মতে, এই সময়কাল ৬ষ্ঠ থেকে ৭ম শতাব্দী পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

#প্রিয়তম কী লিখি তোমায়

লিখেছেন নীল মনি, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৭:৫১


আমাদের শহর ছিল।
সে শহর ঘিরে গড়ে উঠেছিল অলৌকিক সংসার।
তুমি রোজ তাঁকে যে গল্প শোনাতে সেখানে ভিড় জমাতো বেলা বোস, বনলতা কিংবা রোদ্দুর নামের সেই মেয়েটি!
সে কেবল অভিমানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। VF 3 Mini: মাত্র 60 মিনিটে 27 হাজার বুকিং!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২১ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:০৪



আমার ব্যাক্তিগত গাড়ি নেই কিন্তু কর্মসূত্রে বেঞ্জ , ক্যাডিলাক ইত্যাদি ব্যাবহার করার সুযোগ পেয়েছি । তাতেই আমার সুখ । আজ এই গাড়িটির ছবি দেখেই ভাল লাগলো তাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×