somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

এরশাদ বাদশা
জীবনের সব রঙিন মূহুর্তগুলো এখন শুধুই দুই এনজেল এর মাঝে সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে। তারা হাসলে আমি হাসি..তাদের বিন্দুমাত্র কষ্টে ভীষন ব্যথিত হই.. ব্যস্ততা যদিও দেয়না অবসর..তবু এক আধ টুকরো অবসরের মুহুর্তগুলো রাঙিয়ে দেয় ওরা দুজন..দে আর মাই ওয়ার্ল্ড..দে আর মাই ডটার..দ

''খুশি''

০৩ রা অক্টোবর, ২০০৭ রাত ৯:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রিয় সুজন, চিঠি লেখা আমার কাছে বোরিং একটা ব্যাপার,কিন্তু যারা চিঠি লেখার পন্থা আবিষ্কার করেছিলেন তারা ঠিকই ধারণা করতে পেরেছিলেন যে,মনের আবেগ প্রকাশের জন্যে চিঠির চেয়ে উত্তম কোনো মাধ্যম আর হতে পারে না।
আজ কিছু কষ্টের কথা বলার জন্যে তোর কাছে লিখছি।
আচ্ছা তোর ‘খুশি’র কথা মনে আছে ? যদি বলিস মনে নেই, তাহলে তোর পাছায় এমন একটা লাথি কষাব যে, পুরো একমাস তোকে শুয়ে-শুয়েই অফিস করতে হবে। আমার নিঃসঙ্গ জীবনে যে আনন্দের বান ডেকে এনেছিলো তার নামÑ খুশি।

আমি সবসময় মনমরা হয়ে থাকতাম দেখে,তুই বলতিস আমাকে বিষণ্ণতায় পেয়ে বসেছে। এমন একটা টনিক দরকার যেটা আমার সকল দুঃখ ভুলিয়ে দেবে। তারপর তুইতো খুশিকে জুটিয়ে দিলি। খুশিকে পেয়ে আসলেই আমার জীবনটা অন্যরকম হয়ে গেলো। যতোক্ষণ অফিসে থাকতাম কাজের মাঝে ডুবে থাকতাম,আর বাসায় এসে ডুবে যেতাম খুশির মাঝে। আমি অফিস থেকে বাসায় এসে দেখতাম খুশি আমার জন্যে দরজায় দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে দেখতেই দৌড়ে এসে আমার গলা জড়িয়ে ধরতো। আমি জানি আদর পাবার জন্যে এরকম করতো ও। আমিও ওকে আদর করতাম,আদরে-আদরে অস্থির করে তুলতাম। শুরু হতো আমাদের খুনসুটি। প্রায় প্রতিদিনই এরকম হতো। আমি ওকে সারারাত গল্প শোনাতাম। ও মগ্ন হয়ে শুনতো, গল্প যখন শেষ পর্যায়ে তখন ও আমার বুকে মাথা রাখতো। কেটে যেতো রাত। পরদিন অফিসে যেতে সমস্যা হতো, কিন্তু আমি কেয়ার করতাম না। এতোটাই প্রিয় ছিলো খুশির সঙ্গ।

ছুটির দিনগুলোতে আমরা বেরিয়ে যেতাম লঙড্রাইভে। খুশিকে পাশে বসিয়ে লঙড্রাইভে যাওয়ার মজাই ছিলো আলাদা । ক্যাসেট প্লেয়ারে সেলিন ডিওনের ‘মাই হার্ট উইল গো অন’ গানটি বাজতো সবসময়। কারণ একমাত্র এই গানটিই খুশি মন দিয়ে শুনতো; তখন ওর পিঙ্গল চোখজোড়া অন্যরকম হয়ে যেতো। যেন সে দূরে কোথাও হারিয়ে যাচ্ছে ! এরকম একটা ভাব দেখা যেতো ওর চেহারায়।
খুশি সমুদ্র তেমন একটা পছন্দ করতো না,তাই ওকে নিয়ে পাহাড়ে চলে যেতাম। ও চঞ্চলা হরিণীর মতো শুধু ছুটে বেড়াতো। প্রতি পূর্ণিমার রাতে খুশিকে নিয়ে আমি বাড়ির সামনের লনে বসে থাকতাম। আমার হাতে থাকতো চায়ের মগ,আর খুশির জন্যে দুধ;Ñও চা পছন্দ করতো না।

গত দু’দিন আগে খুশির সাথে আমার একটু মনোমালিন্য হয়েছিলো। তুইতো জানিস,রাশেদ আমার জন্য একটা ক্রিস্টাল অ্যাশট্রে পাঠিয়েছিলো সিঙ্গাপুর থেকে। আমাদের পাগলা রাশেদের কথা মনে আছেতো তোর ? ঐযে, খুব কবিতা লিখতো। তুইতো সবই ভুলে যাস, যদি ভুলে গিয়ে থাকিস একটা ঘটনার কথা বলি, তাহলে নিশ্চয়ই মনে পড়বে।
তুই,আমি এবং রাশেদ যখন কলেজে পড়তাম, তখনকার কথা। এক পূর্ণিমায় আমরা গিয়েছিলাম ফটিকছড়ির জঙ্গলে,ওখানকার অবস্থা তখন মোটেও সুবিধের ছিলো না। তবু আমরা ওটাকেই সিলেক্ট করেছিলাম অ্যাডভেঞ্চারের নেশায়। তো ভরা পূর্ণিমায় চাঁদ যখন মস্ত থালার মত মাথার উপর আমরা তখন একটু-একটু করে গিলতে শুরু করেছি।
মনে পড়ে, রাশেদকে আমরা কিছুতেই খাওয়াতে পারছিলাম না, ও গিয়েছিলো আসলে পূর্ণিমা নিয়ে কবিতা লিখবে বলে। তো একঘন্টার মতো আমরা ওকে সাধার পর ও একটু মুখে দিয়েছিলো, বলেছিলো আর খাবে না। তারপর আমরা ওকে একরকম জোর করেই দু’তিন ঢোক খাইয়েছিলাম। এরপর আর সাধতে হলো না, ও নিজেই খেতে লাগলো। আমরা তখন মদের নেশায় চুর ! আমি বললাম,‘একটা ঘন্টা শালাকে সাধতে হলো, ওর একটা শাস্তি পাওনা হয়েছে।’ তুইও সায় দিলি।
তারপর তোর মাথায় এলো সেই অসাধারণ আইডিয়া ! একটা মদের বোতল হাতে নিয়ে তুই ঝোপের আড়ালে গেলি। প্রস্রাব করে চলে এলি। কর্মটা বাইরে না সেরে সেরেছিলি বোতলের ভেতর। তারপর ওই বোতল খাওয়ালি রাশেদকে। এক-আধঢোক খাওয়ার পর রাশেদ বললো,‘একটা অন্যরকম গন্ধ যেন পাচ্ছি,বাওয়া ?’ তুই তখন ওকে বলেছিলি,‘এতোক্ষণ তুই মদ খেয়েছিস,এখন মদ তোকে খাচ্ছে,তাই একটু অন্যরকম গন্ধ লাগছে।’

পরদিন সকালে যখন এ কথা বলাবলি করে হাসিতে লুটোপুটি খাচ্ছিলাম,ও তখন বমি করছিলো। তারপর কোনো কথা না বলে সোজা চলে আসে চিটাগাং।
এরপর দীর্ঘদিন আমাদের সাথে সম্পর্ক রাখেনি রাশেদ। তারপর একদিন হুট করে রাশেদের একটা চিঠি পেলাম, সিঙ্গাপুর থেকে, সাথে এই অ্যাশট্রে। চিঠিতে কী লেখা ছিলো জানিস? ‘দিনকাল কেমন কাটছে?’ ব্যস এই ক’টা শব্দ। কোনো সম্বোধন বা বাড়তি কিছু ছিলো না।
ওর পাঠানো সেই অ্যাশট্রেটা ভেঙে ফেলেছিলো খুশি। ইচ্ছে করে অবশ্য নয়। ঘটনা হয়েছিলো একটা ইঁদুরকে নিয়ে। খুলেই বলি তোকে। খুশি ইঁদুর সহ্য করতে পারতো না। হয়েছিলো কি, সেদিন রূমের মধ্যে ইঁদুর দেখে ও দৌড় দিয়েছিলো। আর ওর পায়ের সাথে বাড়ি খেয়ে টেবিল থেকে অ্যাশট্রেটা পড়ে গিয়ে ভেঙে গিয়েছিলো।
হঠাৎ করেই আমার মেজাজটা বিগড়ে গেল।Ñখুব বকাবকি করলাম ওকে। ভীষণ মন খারাপ করেছিলো ও। অফিসে গিয়ে চিন্তা করতে লাগলাম, সামান্য একটা অ্যাশট্রের জন্যে ওর সাথে এমন বিহেভ করা মোটেও উচিৎ হয়নি আমার।
খারাপ লাগতে লাগলো।
তাড়াহুড়ো করে অফিস থেকে ফিরলাম। গাড়ি থেকে নেমে দরজার দিকে তাকাতেই বরফের মতো জমে গেলাম; খুশি নেই ! রোজ দরজায় দাঁড়িয়ে আমার জন্যে অপেক্ষা করে খুশি, কিন্তু আজ দরজা হাট করে খোলা!Ñখুশি নেই ! বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলো। তাড়াতাড়ি ভেতরে গিয়ে খুঁজলাম ওকে। নেই ! কোথাও নেই!
বুঝলাম অভিমান করেছে ও। সামান্য একটা অ্যাশট্রের জন্যে ওকে গালাগালি করেছি,আহাম্মক বলে গালি দিলাম নিজেকে। অ্যাশট্রেটা একটা জড় পদার্থ, কিন্তু খুশিতো তা নয়। ওরতো মন আছে। আর মনে আঘাত পেয়েছে বলেই ও আমাকে ছেড়ে চলে গেছে।
নাওয়া-খাওয়া মাথায় উঠলো। খুশির ভাবনায় অস্থির হয়ে উঠলাম। না জানি কোথায় আছে বেচারি। দু’দিন আমি শান্তিতে ঘুমাতে পারি নি। কেন যেন মনে হচ্ছে খুশি আর ফিরে আসবে না। কারণ আমি জানি খুশির আত্মসম্মানবোধ অত্যন্ত প্রবল। ও মানুষ নয়, তবুও মানুষের মতোই ওর বিচার-বুদ্ধি।

দোস্ত্,আমার কষ্টের কথা তোকে জানালাম। কারণ, গেল জানুয়ারিতে তোর বাড়ির মাদি বেড়ালটা দুটো বাচ্চা প্রসব করেছিলো। তার মধ্যে মাদি বাচ্চাটা আমাকে দিয়ে বলেছিলিÑ‘নে দোস্ত, একে বাড়িতে নিয়ে যা। খুব ভালো বিড়াল(!!!!)
সেই থেকেইতো খুশি আমার সাথে ছিলো। কিন্তু আজ ও আমাকে ছেড়ে চলে গেছে !
দোয়া কর যেন খুশি ফিরে আসে। খুশি... আমার খুশি...
ইতি,
তোর আসিফ

*****

সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মে, ২০১০ রাত ১:১৮
৪৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×