somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমি একজন পিপড়া বলছি-২।

২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ২:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি পিপড়া বলছি। এর আগে তোমাদের সাথে আমাদের মহারানী পিপড়া কথা বলে গেছেন, কিন্তু তোমরা সাধারণ চোখের মানুষরা জানোই না আমাদের ঘর বসতী কেমন! তাই সর্ব ধরমং পরিত্যাজ্য, আমি সরাসরি পিপড়াই কথা বলতে আসলাম। না মহারানী, না রাজকুমারী, না রাজকুমার, না শ্রমিক, না আমাদের সেনাদের থেকে কেউ। যে চোখে তোমরা আমাদের দেখো সেই পিপড়াই সই।



তোমাদের আগেই বলেছি আমাদের প্রায় ১২০০০ প্রজাতি তোমরা মানুষেরা দেখে চিনহিত করে ফেলেছো। এই সবার মাঝে সব থেকে ইতর হলো আর্জেন্টাইন পিপড়া, এরা যে এলাকায় থাকে তাদের সগোত্রীয় ছাড়া আর কাউকে সে এলাকায় সজ্য করে না। তবে জাতিগত ভাবে এরা ফায়ার এন্ট এর শত্রু। এই দুই দল এক হলেই যুদ্ধ শুরু হয়।
মজার কথা হচ্ছে আমাদের পিপড়াদের কামড় খেয়ে প্রতি বছর প্রায় ২০ জন মানুষ তাদের ইহ-লীলা সাঙ্গ করেন। কিন্তু দুষ শুধু আমাদের বিষের না, এলারজি জনিত কারণে বিষক্রিয়া অনেকেই সজ্য করতে না পেরে মারা যায়। তা আমাদের থেকে আরো কয়েক গুন বেশি তো অন্যরাই করে, মৌমাছির কামড় খেয়েই মারা যায় প্রায় ৬০০ লোক। এর মাঝে ১০০ জন শুধু আমেরিকান! সবচাইতে বিষাক্ত কামড় বসায় বুলেট এন্ট, এদের কামড়েই মানুষ মারা যায় বেশি।

প্রতি বছর বিলিয়ন ডলারের ফসল নষ্ট করে লিফ কাটার, অই লেসবিয়ান পিঁপড়েরা তাদের সাথে সঙ্গ দেয় হারভেস্টর। এত ক্ষতি দেখলেও আমরা কিন্তু সাহায্যও করি যথেষ্ট। বীজ ওয়ালা ফসল তো আমাদের কল্যাণেই ফলন বাড়িয়ে দেয় তোমাদের ঘরে। তাছাড়া এই যে সারা বছর মাটি খুড়তে থাকি, মাটির উর্বরা শক্তি ও বাড়ে এই জন্য। মজার কথা হলো এক স্কয়ার মাইল জায়গায় প্রায় ৫০ টন মাঠি এদিক সেদিক করে ফেলি আমরা হর হামেশাই।

আমাদের মারার জন্য তোমরা মানুষেরা নানান তরীকা বের করেছো সব থেকে জগন্য লাগে যখন আমাদের পিছনে এক জাতের মাছি লেলিয়ে দাও। শালার মাছি বাচেই মাত্র একদিন আর অই একদিন এর ভিতরে আমাদের সাথে যুদ্ধ করে নিজেদের ঘর সংসার দেখে, আমাদের সাথে মারামারির মুহূর্তে প্রেম-ভালোবাসা, আদর-সোহাগ ও করে। কি বিতিকিচ্ছিরি কান্ড ভেবে দেখো নিচের দিকে নেমে আমাদের কামড় দিচ্ছে আর উপরে উড়ে উড়ে ওরা আদর সোহাগ করছে! মজার কথা হচ্ছে আমাদের স্বজাতি ফায়ার এন্ট কিন্তু মাইক্রোওয়েভ এর ভিতরের গরমেও অনেক সময় মরে না। সেই জন্য অনেকেই অটাকে তাদের খাবার সংগ্রহের ক্ষেত্র বানিয়ে ফেলে।


এবার তোমরা মানুষ দের কিছু যুক্তি দিয়ে দিই, কি কি করে আমাদের হাত থেকে বাচতে পারো। গ্রাউন্ড কফি, চারকোল, বেবি পাউডার, ট্যালকম পাউডার, ডিস সোপ, ভিনেগার, পেপারমিন্ট, রসুনের পেস্ট, গোল মরিচ, তেজপাতা, টি ট্রি অয়েল এই জিনিষ গুলো প্রজাতি ভেদে আমাদের অনেকেই একদম সজ্য করতে পারে না। তাই এদের ধার দিয়ে ঘেঁসে না। তবে সেটা যেহেতু প্রজাতির উপর নির্ভর করে তাই খুঁজে পাওয়া মুশকিল তোমাদের জন্য আসলে কে ঠিক কাকে ভয় পাচ্ছে। তাছাড়া তোমরা সবাই তো আর আমাদের প্রজাতি ভেদে চেনো না এক নাম পিপড়া বলেই ডাকো! এই জন্যই বলি একটু শিখে নিও!

আমাদের কেউ যদি রাগ করে কামড়ে দেয় তোমাদের তখন, লেমন বাম, শসা, রসুনের পেস্ট, পেয়াজের পেস্ট লাগালে বেশ আরামে থাকতে পারবে।
তাছাড়া যেখানে কামড় দিয়েছে সেখানে ভেজা টি-ব্যাগ রাখলে আরাম বোধ করবে। কেনো সেটা বলি, টি ব্যাগ এ ট্যানিক এসিড থাকে, আর আমরা কামড় দিলে সেখানে ফরমিক এসিড ছুড়ে দেই। ট্যানিক এসিড আর ফরমিক এসিড এক জায়গায় হলে নিউট্রাল হয়ে যায়। তাই যন্ত্রণা কম হয়।
এলোভেরা গাছ টাকে তোমরা মানুষ একটু যত্ন করা শুরু করো। শুধু আমাদের পিপড়াই না যেকোনো পোকা কামড় দিলে, সেখানে এলোভেরা জেল অথবা পাতার রস অথবা পাতার আঠা লাগালে বেশ আরাম বোধ হয়। তাছাড়া জুস বানিয়ে খেয়ে ফেললেও আমাদের দেয়া বিষ এর এফেক্ট কমে যায়।

বায়ো কারবনেট অথবা সোডা অথবা বেকিং পাউডার পানির সাথে মিশিয়ে কামড় দেয়া জায়গায় লাগালেও কাজ হয় ভালোই।
তাছাড়া গরিব মানুষের কথা ভেবে আরেক কথা হলো যেখানেই কামড় খেলে সেখানে কাদা মাঠি লাগিয়ে লেপ দিও তাহলে আর চুলকবে না, ব্যথা বেদনাও কম হবে।

এবার তোমাদের টাস্কিত করে কিছু কথা বলি।
**তোমরা সারা দুনিয়া জুড়ে যত মানুষ আছো, সব মানুষ এক করে ওজন করলে যত ওজন হবে, আমরা সব পিপড়াদের ওজন করলে প্রায় সমান ই হবে, আমাদের তোমাদের ওজন। তোমরা একজন মানুষের বিপরীতে আমরা আছি এক মিলিয়ন।
**দুনিয়ার সব থেকে ছোট পিপড়া ১ মিলিমিটার। মজা হচ্ছে এই পিপড়া অন্য পিপড়াদের মাথার থেকে ছোট। যেখানে কিছু পিপড়ার মাথা ৭ মিলিমিটার। তার মানে এই ছোট পিপড়া অন্য দের মাথার ভিতরেই জায়গা হয়ে যাবে!
**একটা পিপড়ার দুইটা করে স্টমাক। একটাতে সে নিজের জন্য খাবার রাখে, আর আরেকটাতে খাবার রাখে অন্য দের জন্য। যখনই অন্য একটা পিপড়া দুর্বল হয়ে যায় তার পাশের পিপড়ার সাথে মুখে মুখ লাগিয়ে খাবার খেয়ে নেয়।
**এন্টার্কটিকার ঠাণ্ডা ছাড়া আর সারা দুনিয়া জুড়েই আমরা আছি।
** আমাদের মধ্য ফায়ার এন্ট কিন্তু সাতারও জানে। এরা সাতার দেয় বিশেষ ভাবে যখন বন্য হয় বা কোন কারণে পানিতে পড়ে গেলে পুরো কলোনি একসাথে ভেলার মতো ভেসে যায়। রানী, ডিম, লাভ্রাকে বিশেষ অধিকার দিয়ে বাকী সব শ্রমিক একজনের সাথে আরেকজন গায়ের সাথে গা পায়ের সাথে পা মিলিয়ে একেবারে ভেলা বানিয়ে ফেলে। শিফট হিসাব করে করে জায়গা বদল করে। সামনের যারা তারা পা পানিতে ফেলে ফেলে নৌকার মতো ভাসিয়ে নিয়ে যায়। আর যখন শক্ত কিছুতে ঠেকে তখন সবাই মিলে উঠে যায় সেখানে ভেলা ভেঙ্গে দিয়ে।
**আমাদের মোটামোটি সবাই অন্ধ। অথবা খুব কম দেখি কিন্তু আমাদের শক্তিশালী এন্টেনা থাকায় অন্ধত্ব বোধ করি না।




এবার একটা অতি মজার কথা বলি। আমরা পিঁপড়েরা কিন্তু ঘুমাই, তবে তোমাদের মতো করে না। আমাদের ঘুম এপিসোড হিসাবে। দারাও উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দিই, আমাদের মধ্য ফায়ার এন্ট যারা তাদের শ্রমিকরা এক দিনে ২৫৩ এপিসোড ঘুমায়। এক এপিসোড মানে হলো প্রায় ১.১মিনিট তার মানে সারাদিনে ৪.৮ ঘন্তার মতো ঘুম। আবার রানী যারা তারা ঘুমায় ৯৩ এপিসোড। কিন্তু রানীর এপিসোড আবার রাজকীয় এক এপিসোড মানে ৬ মিনিট। তারমানে তারা ৯.৪ ঘণ্টা ঘুমায় একদিনে। আমাদের মাঝে কেউ কেউ দিনে কাজ করে বেশি কেউ কেউ আবার রাতে। মানে নিশাচর আরকি।

আমাদের পিপড়া দের নিয়ে তোমরা মানুষেরা প্রচুর বই লিখেছো, তাছাড়া কজন মানুষ আমাদের নিয়ে অনেক গবেষণা করে গেছেন আর এখনো করছেন অবিরত। আমাদের নিয়ে বানানো হয়েছে বেশ কয়টা নাম করা এনিমেশন ফিল্ম নাম বলি, দেখো দেখেছো কিনা? না দেখলে দেখে ফেলো-**** A Bugs life , Antz, The Ant Buly, Empire of the Ants***** ।
আমাদের নিয়ে আছে ভিডিও গেইমস যেমন ****Ant Nation, The Ant Buly, Antz Extrime Racng , Sim Ant****
.
তোমাদের খাবার হিসাবেও আমরা কিন্তু বেশ নাম কামিয়েছি। ম্যক্সিকানরা তো পিপড়া দিয়ে এক্সামোলস(Escamoles) নামের ডিস মোটামোটি বেশ ভালোই জমিয়েছে। অয়েবার এন্ট (weaver ant) সালাদে আমাদের ডেলে দিয়ে নাম দিয়েছো ইয়াম(yum)। নুকু হলো পাতা কাঠা পিপড়ার রানীদের নাম, কচ কচ করে কাচা কাচা তোমাদের মাঝে অনেকেই চিবিয়ে খায়!
>>>>>>হয়তো চলবে..............
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্যামুয়েল ব্যাকেট এর ‘এন্ডগেম’ | Endgame By Samuel Beckett নিয়ে বাংলা ভাষায় আলোচনা

লিখেছেন জাহিদ অনিক, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৮



এন্ডগেম/ইন্ডগেইম/এন্ডগেইম- যে নামেই ডাকা হোক না কেনও, মূলত একটাই নাটক স্যামুয়েল ব্যাকেটের Endgame. একদম আক্ষরিক অনুবাদ করলে বাংলা অর্থ হয়- শেষ খেলা। এটি একটা এক অঙ্কের নাটক; অর্থাৎ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রায় ১০ বছর পর হাতে নিলাম কলম

লিখেছেন হিমচরি, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১

জুলাই ২০১৪ সালে লাস্ট ব্লগ লিখেছিলাম!
প্রায় ১০ বছর পর আজ আপনাদের মাঝে আবার যোগ দিলাম। খুব মিস করেছি, এই সামুকে!! ইতিমধ্যে অনেক চড়াই উৎরায় পার হয়েছে! আশা করি, সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যাঙ দমনের নেপথ্যে এবং রাষ্ট্রীয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের সমন্বয়

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৭


ব্যাঙ দমনের বাংলায় একটা ইতিহাস আছে,খুবই মর্মান্তিক। বাংলাদেশে বহুজাতিক কোম্পানির কোন সার কেনা হতো না। প্রাচীন সনাতনী কৃষি পদ্ধতিতেই ভাটি বাংলা ফসল উৎপাদন করতো। পশ্চিমবঙ্গ কালক্রমে ব্রিটিশদের তথা এ অঞ্চলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পজ থেকে প্লে : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

লিখেছেন বন্ধু শুভ, ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:১৫


.
একটা বালক সর্বদা স্বপ্ন দেখতো সুন্দর একটা পৃথিবীর। একজন মানুষের জন্য একটা পৃথিবী কতটুকু? উত্তর হচ্ছে পুরো পৃথিবী; কিন্তু যতটা জুড়ে তার সরব উপস্থিতি ততটা- নির্দিষ্ট করে বললে। তো, বালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামে ভুল থাকলে মেজাজ ঠিক থাকে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৫


বেইলি রোডে এক রেস্তোরাঁয় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে একজন একটা পোস্ট দিয়েছিলেন; পোস্টের শিরোনামঃ চুরান্ত অব্যবস্থাপনার কারনে সৃষ্ট অগ্নিকান্ডকে দূর্ঘটনা বলা যায় না। ভালোভাবে দেখুন চারটা বানান ভুল। যিনি পোস্ট দিয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×