somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বর্তমান সংবিধানের ধারায় নির্বাচন সম্ভব কি?

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ ভোর ৬:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে জটিলতা এখনো কাটেনি। সরকার চাচ্ছে বর্তমান সাংবিধানিক ধারায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর পর বর্তমান সংবিধানে যে দিকনির্দেশনা রয়েছে তাতে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিধান রয়েছে এবং অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশের মতো বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের মাধ্যমেই ওই অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হবে। যদিও ওই সরকার গঠনের দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীর। প্রধানমন্ত্রী অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের ব্যাপারে এমন কিছু ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যাতে করে বিরোধী দলের ওই সরকারে সমন্বিত হওয়ার সুযোগ রয়েছে। বিরোধী দল বলছে সংবিধান পুনরায় সংশোধন করে পঞ্চদশ সংশোধনীর পূর্বাবস্থায় ফিরে যেতে। আওয়ামী লীগ এতে রাজি নয়। আওয়ামী লীগের মতে সাংবিধানিক ধারা অব্যাহত রাখার জন্যই মেয়াদকাল শেষে ক্ষমতাসীন সরকার বিশেষ করে সরকার-প্রধান প্রধানমন্ত্রীকেই অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে। অবশ্য প্রধানমন্ত্রী ইচ্ছা করলে অন্তর্বর্তী সরকারকে এমনভাবে ক্ষমতাশূন্য করতে পারেন যে দৈনন্দিন দায়িত্ব নির্বাহ ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকার ও নির্বাচন কমিশন সম্মলিতভাবে দায়িত্ব পালন করবেন। যদিও নির্বাচন কমিশনের ওপর নির্বাচন আনুষ্ঠানের মূল দায়িত্ব রয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, যদি বিরোধী দল অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রীকে মেনে নিতে না চায় তাহলে সরকার প্রধান কে হবেন এবং তার ওপর কী ক্ষমতা অর্পিত হবে? অবশ্য তা সরকার ও বিরোধী দল আলোচনার মাধ্যমেও নির্ধারণ করে নিতে পারেন। এ ব্যাপারে সর্বশেষ আওয়ামী লীগ একটা রূপরেখা দিতে যাচ্ছে। ওই রূপরেখাকে ভিত্তি করে সরকার ও বিরোধী দল সাংবিধানিক ধারায় বিষয়টি মীমাংসা করতে পারেন। বিরোধী দল বলছে সরকার নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার লক্ষ্যেই ১৫তম সংশোধনী করে সংকট সৃষ্টি করেছে। ওই সংশোধনীকে তারা ‘অপ্রয়োজনীয়’ বলে বিবেচনা করছে। কিন্তু আসলে কি তাই? সংসদীয় গণতান্ত্রিক ধারায় পাঁচ বছর একটা নির্বাচিত সংসদ দায়িত্ব পালন করে। তারপর যখন নির্বাচন আসবে তখন ৯০ দিনের জন্য একটা আগন্তুক সরকারকে ডেকে আনা হবে। সে সরকারে যারা থাকবেন তাদের যতোই দলনিরপেক্ষ বলা হোক না কেন অতীতের অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে প্রকৃতার্থে তারা দলনিরপেক্ষ নন। দলনিরপেক্ষ ব্যক্তি প্রয়োজনে যখন বিচার বিভাগের সর্বোচ্চ কর্মকর্তাদের ওপর দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল তখন তারাও দলনিরপেক্ষ হয়ে দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। বাংলাদেশের বাস্তবতা হচ্ছে সমাজের সব শ্রেণীর জনগণ এমনভাবে রাজনৈতিক মেরুকরণ ও আদর্শগত কারণে বিভক্ত যে মুষ্টিমেয় কয়জন যা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য প্রয়োজন তা পাওয়াও দুষ্কর। রাজনীতিবিদরা দলগতভাবে বিভক্ত আছেনই। বিচারপতি, আইনবিদ, শিক্ষক, প্রকৌশলী, কৃষিবিদ, ব্যবসায়ী, কোথাও প্রকৃত দলনিরপেক্ষ কোনো ব্যক্তির সন্ধান পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না। এমন বাস্তবতায় দলনিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হবে কী করে?
হয়তো বিএনপি কয়জনের নাম বলবেন। বাস্তবে দেখা যাবে তলে তলে তারা ঘোর বিএনপি। আওয়ামী লীগের ব্যাপারে একই কথা। সুতরাং দলনিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি যখন উঠেছিল এবং পরবর্তীতে সাংবিধানিকভাবে কার্যকর করা হয়েছিল এবং কার্যক্ষেত্রে দেখা গেলোÑ কোনো না কোনোভাবে নির্বাচন হলো। সংসদ ও সরকার গঠিত হলো বিরোধী দলও চিহ্নিত হলো; কিন্তু কেউ, বিশেষ করে যারা পরাজিত হলেন তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে তখন সঠিক পদ্ধতি হিসেবে মেনে নিতে পারেননি- এর বহু উদাহরণ রয়েছে। যদি ধরে নেয়া হয় তত্ত্বাবধায়ক মন্দের ভালো, তাহলে এমন অস্থিতিশীল বাস্তবতাকে দীর্ঘদিনের জন্য মেনে নেয়া সম্ভব কি?
বিগত নির্বাচনে মহাজোট সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে অত্যন্ত সচেতনভাবে গণতন্ত্রকে সুসংহত করবার প্রয়োজনে স্বচ্ছভাবে নির্বাচন করার চেষ্টা করেছে। বিভিন্ন পর্যায়ে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার নির্বাচনে ৬৫ হাজারের মতো প্রতিনিধি নির্বাচিত হাওয়ায় প্রকৃত বিরোধী দল থেকে তেমন কোনো প্রতিবাদ ওঠেনি। বরং তারা নির্বাচনের রায়কে মেনে নিয়েছেন। সর্বশেষ সিটি নির্বাচনে তারা ব্যাপকভাবে বিজয়ী হয়েছেন। আওয়ামী লীগের বাঘা বাঘা প্রার্থী স্ব স্ব এলাকায় আসাধারণ উন্নয়ন তৎপরতা অব্যাহত রাখার পরও বিজয়ী হতে পারেননি। বিরোধী দল বলছে, এটা স্থানীয় নির্বাচন এই নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হয় না, এ কারণেই নাকি সরকার ছাড় দিয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে সরকারি দল একটা সাধারণ নির্বাচনে যেভাবে অংশগ্রহণের প্রয়োজন তার সব কিছু করে এবং সিনিয়র নেতারা মাঠে নেমেও বিজয়ী হতে পারেনি নির্বাচনে। বিরোধী দল থেকে নির্বাচনের পূর্বেই বলা হয়েছিল এবং বাস্তবেও দেখা গেছে একটা জাতীয় নির্বাচনে জয়লাভ করতে হলে যা যা করা প্রয়োজন সরকারি দল থেকে তাই করা হয়েছিল। তারপরও বিজয় অর্জন করা সম্ভব হয়নি। কারণ নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সরকার বিন্দুমাত্র হস্তক্ষেপ করেনি। ঠিক এই রূপ বাস্তবতার অভিজ্ঞতার আলোকেই ক্ষমতাসীন দল মনে করছে যে, নির্বাচন কমিশনকে সঠিকভাবে শক্তিশালী করে নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে সরকার বিরত থাকলে অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব। সে কারণে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রবর্তনের প্রয়োজন পড়ে না। নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করে নির্বাচনের ব্যাপারে সরকারি হস্তক্ষেপ বন্ধ করা গেলে নির্বাচন অবাধ হবে। বর্তমান সংবিধানেই তার নির্দেশ আছে। এ ব্যাপারে সাংবিধানিক বিশেষজ্ঞরাই পরামর্শ দেবেন। সরকার ও বিরোধী দলের উচিত এসব বিষয়ে সমাধানে আসা। তাহলেই কেবল বর্তমান সংকটের সমাধান হতে পারে। বিরোধী দল হয়তো হিসাব করে থাকবে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রশ্নে সরকারকে দিয়ে সংবিধানের পুনঃসংশোধন করাতে পারলেই বিরোধী দলের প্রার্থীদের বিজয় অর্জিত হবে। তখন পঞ্চদশ সংশোধনীর সমস্ত দায় দায়িত্ব সরকারের ওপর চাপিয়ে দেবেন এবং নির্বাচনে বিজয়ের ক্ষেত্রে যে ম্যালাফাইড ইনটেনশন ছিল তা দেশব্যাপী প্রচার শুরু করবেন। তাহলে জনগণের মনের ওপর এমন একটা ধারণা হবে যে সরকার তো নির্বাচনে কারচুপি করার জন্যই সংবিধান সংশোধন করেছিল।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি বিএনপির জন্য একটা নির্বাচনী কৌশলও বটে। তারা ভালো করেই জানে সরকার তাদের ওই দাবি মেনে নেবে না। যদিও এখন বলা হচ্ছে তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বাইরে কোনো নির্বাচন করবেন না। নির্বাচনী মাঠের অভিজ্ঞতা কিন্তু ভিন্ন। সম্প্রতি যারা অত্যন্ত তৎপর রয়েছেন তারা শুধু আওয়ামী লীগের প্রার্থী নন। সব দলের প্রার্থী রয়েছেন। তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। তারা নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী। এমনকি বিএনপিরও অনেক প্রার্থী নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অবতীর্ণ হয়েছেন। ‘আপোসহীন’ নেত্রী বলে পরিচিত বেগম জিয়াকে এবার আবশ্যই আপোস করতে হবে। বাইর থেকে এ পর্যন্ত যারা মধ্যস্থতা করছেন তাদের কেউ বোধ হয় বলেননি যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার মেনে নিয়েই এই সমস্যার সমধান করতে হবে। তারা যে সংলাপের কথা বলেছেন, তা হলো গণতান্ত্রিক মতে ও পথে সমঝোতা। সাংবিধানিক মতে ও পথে মতপার্থক্য থাকতে পারে না। শুধু আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এক বাংলাদেশী বিশেষ কেন্দ্র খুলে সকলের সঙ্গে আলোচনা করে বলা শুরু করেছেন, তত্ত্বাধায়কই নাকি একমাত্র সমাধান। অন্তর্জাতিক ওই ব্যক্তিত্ব যিনি বাংলাদেশের সঙ্গে কোনোভাবেই সংশ্লিষ্ট নন।
হঠাৎ করে তিনি বিরোধী দলের পক্ষ হয়ে কেন যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সমাধান দিলেন তা গণতান্ত্রিক কোনো ব্যক্তির কাছে বোধগম্য নয়। একজন নোবেল লরেট আন্তর্জাতিকভাবে সম্মানিত ব্যক্তি, সকলের কাছে সম্মানিত ব্যক্তি। নোবেল পাওয়ার পর পরই জাতীয় রাজনীতিতে তার আকস্মিক এবং যে গতিতে তিনি ঢুকেছিলেন একইভাবে তার মতো ব্যক্তি বেরিয়ে আসা অনেককেই তাৎক্ষণিকভাবে হতাশ করে। আমাকেও এ ব্যাপারে সংবাদপত্রে কিছু লিখতে হয়েছিল। তখন তার সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করা সমীচীন বলে মনে হয়নি। আর এখন তার অবস্থান দুর্বোধ্য বলে মনে হচ্ছে না। তিনি কি জাতীয় স্বার্থে কাজ করছেন, না মহল বিশেষ দ্বারা প্ররোচিত হয়েছেন? জাতির বিবেক বলে যদি কেউ নিজেকে মনে করেন, তাহলে তার জন্য তাকে যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। পৃথিবীর অনেক দেশে নোবেল প্রাপ্তির পেছনে যে রাজনীতিই কার্যত ভূমিকা পালন করেÑ তা আজ আর গোপন নয়।
রাত ১২টার পর বিভিন্ন টেলিভিশনের টকশোতে নির্বাচন সম্পর্কে যে সকল প্রস্তাব হাজির করা হচ্ছে তার সবটাই যে অগ্রহণযোগ্য তা নয়। কোনো কোনো আলোচক সচেতনভাবে সংকটের প্রকৃতি উপলব্ধি করে সাংবিধানিক ধারাসমূহ সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করে এমন পথ বাতিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছেন যে, বর্তমান সংশোধিত সংবিধানের ধারায় সংকট সমাধান সম্ভব। পুনরায় সংবিধান সংশোধনের কোনো প্রয়োজন নেই। দুপক্ষ যদি তাদের মতামত গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় নেন তাহলে বর্তমান সংকট সমাধান অসম্ভব নয়।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে জটিলতা এখনো কাটেনি। সরকার চাচ্ছে বর্তমান সাংবিধানিক ধারায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর পর বর্তমান সংবিধানে যে দিকনির্দেশনা রয়েছে তাতে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিধান রয়েছে এবং অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশের মতো বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের মাধ্যমেই ওই অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হবে। যদিও ওই সরকার গঠনের দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীর। প্রধানমন্ত্রী অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের ব্যাপারে এমন কিছু ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যাতে করে বিরোধী দলের ওই সরকারে সমন্বিত হওয়ার সুযোগ রয়েছে। বিরোধী দল বলছে সংবিধান পুনরায় সংশোধন করে পঞ্চদশ সংশোধনীর পূর্বাবস্থায় ফিরে যেতে। আওয়ামী লীগ এতে রাজি নয়। আওয়ামী লীগের মতে সাংবিধানিক ধারা অব্যাহত রাখার জন্যই মেয়াদকাল শেষে ক্ষমতাসীন সরকার বিশেষ করে সরকার-প্রধান প্রধানমন্ত্রীকেই অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে। অবশ্য প্রধানমন্ত্রী ইচ্ছা করলে অন্তর্বর্তী সরকারকে এমনভাবে ক্ষমতাশূন্য করতে পারেন যে দৈনন্দিন দায়িত্ব নির্বাহ ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকার ও নির্বাচন কমিশন সম্মলিতভাবে দায়িত্ব পালন করবেন। যদিও নির্বাচন কমিশনের ওপর নির্বাচন আনুষ্ঠানের মূল দায়িত্ব রয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, যদি বিরোধী দল অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রীকে মেনে নিতে না চায় তাহলে সরকার প্রধান কে হবেন এবং তার ওপর কী ক্ষমতা অর্পিত হবে? অবশ্য তা সরকার ও বিরোধী দল আলোচনার মাধ্যমেও নির্ধারণ করে নিতে পারেন। এ ব্যাপারে সর্বশেষ আওয়ামী লীগ একটা রূপরেখা দিতে যাচ্ছে। ওই রূপরেখাকে ভিত্তি করে সরকার ও বিরোধী দল সাংবিধানিক ধারায় বিষয়টি মীমাংসা করতে পারেন। বিরোধী দল বলছে সরকার নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার লক্ষ্যেই ১৫তম সংশোধনী করে সংকট সৃষ্টি করেছে। ওই সংশোধনীকে তারা ‘অপ্রয়োজনীয়’ বলে বিবেচনা করছে। কিন্তু আসলে কি তাই? সংসদীয় গণতান্ত্রিক ধারায় পাঁচ বছর একটা নির্বাচিত সংসদ দায়িত্ব পালন করে। তারপর যখন নির্বাচন আসবে তখন ৯০ দিনের জন্য একটা আগন্তুক সরকারকে ডেকে আনা হবে। সে সরকারে যারা থাকবেন তাদের যতোই দলনিরপেক্ষ বলা হোক না কেন অতীতের অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে প্রকৃতার্থে তারা দলনিরপেক্ষ নন। দলনিরপেক্ষ ব্যক্তি প্রয়োজনে যখন বিচার বিভাগের সর্বোচ্চ কর্মকর্তাদের ওপর দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল তখন তারাও দলনিরপেক্ষ হয়ে দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। বাংলাদেশের বাস্তবতা হচ্ছে সমাজের সব শ্রেণীর জনগণ এমনভাবে রাজনৈতিক মেরুকরণ ও আদর্শগত কারণে বিভক্ত যে মুষ্টিমেয় কয়জন যা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য প্রয়োজন তা পাওয়াও দুষ্কর। রাজনীতিবিদরা দলগতভাবে বিভক্ত আছেনই। বিচারপতি, আইনবিদ, শিক্ষক, প্রকৌশলী, কৃষিবিদ, ব্যবসায়ী, কোথাও প্রকৃত দলনিরপেক্ষ কোনো ব্যক্তির সন্ধান পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না। এমন বাস্তবতায় দলনিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হবে কী করে?
হয়তো বিএনপি কয়জনের নাম বলবেন। বাস্তবে দেখা যাবে তলে তলে তারা ঘোর বিএনপি। আওয়ামী লীগের ব্যাপারে একই কথা। সুতরাং দলনিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি যখন উঠেছিল এবং পরবর্তীতে সাংবিধানিকভাবে কার্যকর করা হয়েছিল এবং কার্যক্ষেত্রে দেখা গেলোÑ কোনো না কোনোভাবে নির্বাচন হলো। সংসদ ও সরকার গঠিত হলো বিরোধী দলও চিহ্নিত হলো; কিন্তু কেউ, বিশেষ করে যারা পরাজিত হলেন তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে তখন সঠিক পদ্ধতি হিসেবে মেনে নিতে পারেননি- এর বহু উদাহরণ রয়েছে। যদি ধরে নেয়া হয় তত্ত্বাবধায়ক মন্দের ভালো, তাহলে এমন অস্থিতিশীল বাস্তবতাকে দীর্ঘদিনের জন্য মেনে নেয়া সম্ভব কি?
বিগত নির্বাচনে মহাজোট সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে অত্যন্ত সচেতনভাবে গণতন্ত্রকে সুসংহত করবার প্রয়োজনে স্বচ্ছভাবে নির্বাচন করার চেষ্টা করেছে। বিভিন্ন পর্যায়ে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার নির্বাচনে ৬৫ হাজারের মতো প্রতিনিধি নির্বাচিত হাওয়ায় প্রকৃত বিরোধী দল থেকে তেমন কোনো প্রতিবাদ ওঠেনি। বরং তারা নির্বাচনের রায়কে মেনে নিয়েছেন। সর্বশেষ সিটি নির্বাচনে তারা ব্যাপকভাবে বিজয়ী হয়েছেন। আওয়ামী লীগের বাঘা বাঘা প্রার্থী স্ব স্ব এলাকায় আসাধারণ উন্নয়ন তৎপরতা অব্যাহত রাখার পরও বিজয়ী হতে পারেননি। বিরোধী দল বলছে, এটা স্থানীয় নির্বাচন এই নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হয় না, এ কারণেই নাকি সরকার ছাড় দিয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে সরকারি দল একটা সাধারণ নির্বাচনে যেভাবে অংশগ্রহণের প্রয়োজন তার সব কিছু করে এবং সিনিয়র নেতারা মাঠে নেমেও বিজয়ী হতে পারেনি নির্বাচনে। বিরোধী দল থেকে নির্বাচনের পূর্বেই বলা হয়েছিল এবং বাস্তবেও দেখা গেছে একটা জাতীয় নির্বাচনে জয়লাভ করতে হলে যা যা করা প্রয়োজন সরকারি দল থেকে তাই করা হয়েছিল। তারপরও বিজয় অর্জন করা সম্ভব হয়নি। কারণ নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সরকার বিন্দুমাত্র হস্তক্ষেপ করেনি। ঠিক এই রূপ বাস্তবতার অভিজ্ঞতার আলোকেই ক্ষমতাসীন দল মনে করছে যে, নির্বাচন কমিশনকে সঠিকভাবে শক্তিশালী করে নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে সরকার বিরত থাকলে অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব। সে কারণে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রবর্তনের প্রয়োজন পড়ে না। নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করে নির্বাচনের ব্যাপারে সরকারি হস্তক্ষেপ বন্ধ করা গেলে নির্বাচন অবাধ হবে। বর্তমান সংবিধানেই তার নির্দেশ আছে। এ ব্যাপারে সাংবিধানিক বিশেষজ্ঞরাই পরামর্শ দেবেন। সরকার ও বিরোধী দলের উচিত এসব বিষয়ে সমাধানে আসা। তাহলেই কেবল বর্তমান সংকটের সমাধান হতে পারে। বিরোধী দল হয়তো হিসাব করে থাকবে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রশ্নে সরকারকে দিয়ে সংবিধানের পুনঃসংশোধন করাতে পারলেই বিরোধী দলের প্রার্থীদের বিজয় অর্জিত হবে। তখন পঞ্চদশ সংশোধনীর সমস্ত দায় দায়িত্ব সরকারের ওপর চাপিয়ে দেবেন এবং নির্বাচনে বিজয়ের ক্ষেত্রে যে ম্যালাফাইড ইনটেনশন ছিল তা দেশব্যাপী প্রচার শুরু করবেন। তাহলে জনগণের মনের ওপর এমন একটা ধারণা হবে যে সরকার তো নির্বাচনে কারচুপি করার জন্যই সংবিধান সংশোধন করেছিল।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি বিএনপির জন্য একটা নির্বাচনী কৌশলও বটে। তারা ভালো করেই জানে সরকার তাদের ওই দাবি মেনে নেবে না। যদিও এখন বলা হচ্ছে তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বাইরে কোনো নির্বাচন করবেন না। নির্বাচনী মাঠের অভিজ্ঞতা কিন্তু ভিন্ন। সম্প্রতি যারা অত্যন্ত তৎপর রয়েছেন তারা শুধু আওয়ামী লীগের প্রার্থী নন। সব দলের প্রার্থী রয়েছেন। তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। তারা নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী। এমনকি বিএনপিরও অনেক প্রার্থী নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অবতীর্ণ হয়েছেন। ‘আপোসহীন’ নেত্রী বলে পরিচিত বেগম জিয়াকে এবার আবশ্যই আপোস করতে হবে। বাইর থেকে এ পর্যন্ত যারা মধ্যস্থতা করছেন তাদের কেউ বোধ হয় বলেননি যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার মেনে নিয়েই এই সমস্যার সমধান করতে হবে। তারা যে সংলাপের কথা বলেছেন, তা হলো গণতান্ত্রিক মতে ও পথে সমঝোতা। সাংবিধানিক মতে ও পথে মতপার্থক্য থাকতে পারে না। শুধু আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এক বাংলাদেশী বিশেষ কেন্দ্র খুলে সকলের সঙ্গে আলোচনা করে বলা শুরু করেছেন, তত্ত্বাধায়কই নাকি একমাত্র সমাধান। অন্তর্জাতিক ওই ব্যক্তিত্ব যিনি বাংলাদেশের সঙ্গে কোনোভাবেই সংশ্লিষ্ট নন।
হঠাৎ করে তিনি বিরোধী দলের পক্ষ হয়ে কেন যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সমাধান দিলেন তা গণতান্ত্রিক কোনো ব্যক্তির কাছে বোধগম্য নয়। একজন নোবেল লরেট আন্তর্জাতিকভাবে সম্মানিত ব্যক্তি, সকলের কাছে সম্মানিত ব্যক্তি। নোবেল পাওয়ার পর পরই জাতীয় রাজনীতিতে তার আকস্মিক এবং যে গতিতে তিনি ঢুকেছিলেন একইভাবে তার মতো ব্যক্তি বেরিয়ে আসা অনেককেই তাৎক্ষণিকভাবে হতাশ করে। আমাকেও এ ব্যাপারে সংবাদপত্রে কিছু লিখতে হয়েছিল। তখন তার সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করা সমীচীন বলে মনে হয়নি। আর এখন তার অবস্থান দুর্বোধ্য বলে মনে হচ্ছে না। তিনি কি জাতীয় স্বার্থে কাজ করছেন, না মহল বিশেষ দ্বারা প্ররোচিত হয়েছেন? জাতির বিবেক বলে যদি কেউ নিজেকে মনে করেন, তাহলে তার জন্য তাকে যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। পৃথিবীর অনেক দেশে নোবেল প্রাপ্তির পেছনে যে রাজনীতিই কার্যত ভূমিকা পালন করেÑ তা আজ আর গোপন নয়।
রাত ১২টার পর বিভিন্ন টেলিভিশনের টকশোতে নির্বাচন সম্পর্কে যে সকল প্রস্তাব হাজির করা হচ্ছে তার সবটাই যে অগ্রহণযোগ্য তা নয়। কোনো কোনো আলোচক সচেতনভাবে সংকটের প্রকৃতি উপলব্ধি করে সাংবিধানিক ধারাসমূহ সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করে এমন পথ বাতিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছেন যে, বর্তমান সংশোধিত সংবিধানের ধারায় সংকট সমাধান সম্ভব। পুনরায় সংবিধান সংশোধনের কোনো প্রয়োজন নেই। দুপক্ষ যদি তাদের মতামত গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় নেন তাহলে বর্তমান সংকট সমাধান অসম্ভব নয়। সুত্র
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কাঁচা আম পাড়ার অভিযান

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২



গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরের বাড়ীয়া ইউনিয়নের দেউলিয়া গ্রামে আমার প্রায় ৫২ শতাংশ জমি কেনা আছে। সেখানে ছোট একটি ডোবা পুকুর, অল্প কিছু ধানের জমি আর বাকিটা উঁচু ভিটা জমি। বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×