somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অকল্পনীয় নয় শতভাগ মুক্ত গণমাধ্যম

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৭ রাত ১১:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কোনও এক দৈনিক পত্রিকা অফিসের ডেস্কের গলি ঘুপচি থেকে হুট করে বেরিয়ে এলো আলাদীনের চেরাগ। রিপোর্টার, ফটোগ্রাফার ও সম্পাদক, একসঙ্গে তিনজনেরই নজরে পড়লো। চেরাগের দখল নিয়ে রিপোর্টার ও ফটোগ্রাফারের মধ্যে তুমুল হাতাহাতি শুরু। সম্পাদক নির্বিকার। বেরিয়ে এলো আজ্ঞাবাহী জ্বীন। বেচারা মহাবিব্রত। ঘসাটা কে দিয়েছে বুঝতে পারছে না। আমতা আমতা করে বলল, 'আপনাদের তিনজনেরই একটা করে ইচ্ছে পূরণ করবো'। রিপোর্টার চটজলদি বলল, 'সমুদ্রের ধারে বিশাল কটেজ আর অফুরন্ত টাকা চাই'। ফটোগ্রাফার বলল, 'আমারও হুবহু তাই চাই, মাসের শেষ সপ্তাহে যেন টানাটানিতে পড়তে না হয়'। এসব শুনে সম্পাদকের চোখ তালুতে ওঠার জোগাড়। রিপোর্টার ও ফটোগ্রাফারের দিকে হাত ইশারা করে গম্ভীর কণ্ঠে জ্বীনকে আদেশ দিলেন, 'লাঞ্চের পর আমি দুজনকেই ফেরত চাই, নিউজের ডেডলাইন রাত ১০টা। মনে থাকে যেন!'
নিরস এ কৌতুকের সিরিয়াস অংশটা হলো, রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভের অংশীদার হিসেবে একজন সংবাদকর্মীর নিজস্ব দায়িত্ব পালনে প্রাণান্তকর প্রয়াস একান্ত কাম্য। এই আশা সমাজের। সমাজ কখনও গণমাধ্যমকে ক্লান্ত দেখতে চায় না, আয়েশি দেখতে চায় না। কিন্তু রাষ্ট্রের চাওয়ার সঙ্গে এই চাওয়ার কিঞ্চিত তফাত্ আছে। রাষ্ট্রের অনেক 'সত্য'ই সাংবাদিকতার 'সত্যের' সঙ্গে খাপ খায় না। সাংবাদিকতার শেকড়ের গভীরের শ্লোগান তো একটাই, 'সত্য জানো, সত্য জানাও'। রাষ্ট্রের সঙ্গে সাংবাদিকতার দ্বন্দ্বের সূত্রটা বোধহয় এই 'সত্য' বিচারেই। আর এই দ্বন্দ্বের অপরিহার্য ফল হিসেবেই জেগে ওঠে 'প্রেস ফ্রিডম'-এর দাবি। বাকস্বাধীনতা, সত্য জানা ও জানানোর স্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, অনুসন্ধানের স্বাধীনতা; এসবেরই এক অদ্ভুত ককটেলে তৈরি হয় প্রেস ফ্রিডম। তবে দীর্ঘ অবকাশ কাটাতে দ্বীপে গিয়ে সাংবাদিকরা যে আরামে গা এলিয়ে দেবেন সে স্বাধীনতা বোধহয় পুরোপুরিই উপেক্ষিত। দুর্ভাগ্য না সৌভাগ্য?
এও সত্য যে, এইসব হরেক স্বাধীনতার আড়ালে অন্দরমহলের ব্যাপক 'পরাধীনতা' চাপা পড়ে যায়। বিশেষ কারও বিরুদ্ধে বিশেষ কিছু প্রকাশ না করার পরাধীনতা, কৌশলে 'হিডেন এজেন্ডা' পুরে দেয়া কিংবা লেখার আঙ্গিক পরিবর্তনের বাধ্যবাধকতা। এর মাঝে আবার সময়ের শৃঙ্খলে মগজের ভেতর চলে ইঁদুর দৌড়-Ñখবরটা সবার আগেই জানতে হবে এবং সঠিক জানতে হবে।
এমতাবস্থায় প্রেস ফ্রিডমের সঠিক সংজ্ঞা কী হতে পারে? কে কার স্বাধীনতা পকেটে পুরে রেখেছে? স্বাধীনতাটাই বা কীসের?
চকোলেট চানাচুরের মতো সংবাদও একটা পণ্য। তাই এর একটা 'মালিকপক্ষ' আছে। যার থাকতে পারে বিশেষ সাধ, আহ্লাদ ও বাতিক। বিশেষ বিশেষ সময়ে ঐ মালিকপক্ষের রুচির সাপেক্ষে তৈরি হয় প্রেস ফ্রিডমের নতুন সংজ্ঞা। হারিয়ে যায় নেপথ্যের খবর। তখন প্রয়োজন হয় আরেক টার্মিনোলোজির, তা হচ্ছে 'পাঠকের অধিকার'। কিন্তু প্রেস ফ্রিডমের মতো এ অধিকারটিও স্পষ্ট নয়। এ অধিকারের চর্চায় স্ববিরোধিতার প্রশ্ন আসবেই। কোনটি সংবাদ হবে আর কোনটি হবে না, তা বিচারের দায়িত্ব কোনওকালেই পাঠকের হাতে ছিল না। সুতরাং এ 'স্বাধীনতা'র বাস্তব প্রতিফলন নেই। এমনই এক প্রসঙ্গে ১৯৯৪ সালে নোম চমস্কি একটি বক্তব্য রেখেছিলেন। যার সারকথা ছিল- আধিপত্য বিস্তরকারী মিডিয়া প্রতিষ্ঠান মানেই বড় আকারের ব্যবসা। এগুলো মাত্রাতিরিক্ত ধনীরাই নিয়ন্ত্রণ করে। ব্যবস্থাপনাও তাদের হাতে। তারা প্রতিনিয়তই অন্যান্য মুনাফা-কেন্দ্রিক বড় প্রতিষ্ঠান কিংবা শক্তির চাপের মুখে থাকে। এই ক্ষমতাধর মালিকপক্ষের সঙ্গে দেশের প্রধান কর্পোরেশন, ব্যাংক ও সরকারের স্বার্থগত সম্পর্ক আছে। মোটকথা, পরষ্পরের স্বার্থ ও অর্থনৈতিক চাহিদার খাতিরে সংবাদ জগতের মুঘলদের সঙ্গে তথ্যের উতসের একটি শতভাগ পরস্পর নির্ভরশীল সম্পর্ক তৈরি হয়।
তার মানে, এই মুহূর্তে সংবাদের জন্য আলাদা কোনও বাজার নেই। যে কারণে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে সংবাদপত্রের দাম বাড়ে না। তবে সংখ্যায় কম হলেও ঊনবিংশ শতাব্দির মাঝামাঝি সময়ে সংবাদপত্র স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রতিষ্ঠান হিসেবেই ছিল। তখন সংবাদপত্র বড় পরিসরে কর্পোরেট মালিকানাধীন ছিল না। হন্যে হয়ে ঘুরতে হতো না বিজ্ঞাপনের জন্য।
নোম চমস্কি আশাবাদি, হৃষ্টপুষ্ট কর্পোরেট সংস্কৃতির ভরা মৌসুমেও শতভাগ মুক্ত গণমাধ্যমের টিকে থাকা সম্ভব। প্রয়োজন শুধু এমন এক বৃহত জনগোষ্ঠীর, যারা সবসময় মূল সত্যটা জানতে বদ্ধ পরিকর থাকবে, সংবাদকে স্বয়ংসম্পূর্ণ জেনেই পত্রিকা কিনবে। চমস্কির মতে, কেবল তখুনি প্রেস ফ্রিডমের আসল নির্যাস পাওয়া সম্ভব। তার আগ পর্যন্ত ক্ষমতাধর মহলগুলোর সঙ্গে মিডিয়ার সিম্বায়োটিক সম্পর্ক বজায় রাখার বিকল্প নেই।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার মায়ের চৌহদ্দি

লিখেছেন শাওন আহমাদ, ১২ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৫



আমার মা ভীষণ রকমের বকবকিয়ে ছিলেন। কারণে-অকারণে অনেক কথা বলতেন। যেন মন খুলে কথা বলতে পারলেই তিনি প্রাণে বাঁচতেন। অবশ্য কথা বলার জন্য যুতসই কারণও ছিল ঢের। কে খায়নি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণা!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১৭



নীচে, আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণাকে ( পেশগত দক্ষতা ও আভিজ্ঞতার সারমর্ম ) আমি হুবহু তুলে দিচ্ছি। পড়ে ইহার উপর মন্তব্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

মোজো ইদানীং কম পাওয়া যাচ্ছে কেন?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭


শুনলাম বাজারে নাকি বয়কটিদের প্রিয় মোজোর সাপ্লাই কমে গেছে! কিন্তু কেন? যে হারে আল্লামা পিনাকী ভাট ভাঁওতাবাজিদেরকে টাকা দিয়ে 'কোকের বিকল্প'-এর নামে 'অখাদ্য' খাওয়ানো হচ্ছিলো, আর কোককেই বয়কটের ডাক... ...বাকিটুকু পড়ুন

জমিদার বাড়ি দর্শন : ০০৮ : পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২৪


পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

বিশেষ ঘোষণা : এই পোস্টে ৪৪টি ছবি সংযুক্ত হয়েছে যার অল্প কিছু ছবি আমার বন্ধু ইশ্রাফীল তুলেছে, বাকিগুলি আমার তোলা। ৪৪টি ছবির সাইজ ছোট করে ১৮ মেগাবাইটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×