somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পাকিস্তানি দালাল,ভারতীয় দালাল

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৭ ভোর ৫:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[সচরাচর এই ধরণের বিতর্কে জড়াই না,কিন্তু আজকে না লিখে পারলাম না]
পাকিস্তান আর ভারত ২০-২০ বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছে। বাংলাদেশে আনন্দের বন্যা বয়ে যাচ্ছে,কাপ এশিয়াতে থাকবে বলে। বেশ কথা। খেলায় নিজের দেশ না থাকলে কাউকে না কাউকে সমর্থন করে খেলা দেখাই লাগে,সেখানে নিজের সমর্থনের দলটা জিতে গেলে আনন্দ হওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু এই দুই দলের ক্ষেত্রে আনন্দের বহিঃপ্রকাশটা যেন একটু অস্বাভাবিক। ব্লগের ২-১ জন লেখকের লেখার শিরোনাম দেখা যাক। "কংগ্রাচুলেশনস পাকিস্তান"; "এশিয়ার পতাকা এখন ভারতের হাতে"; "আই লাভ ইউ ইন্ডিয়া"; ইত্যাদি। সাথে আছে লাইভ আপডেট,১জনকে দেখা গেলো ৮-১০টা পোস্ট দিয়ে ফেলতে। অন্য দেশ নিয়ে এভাবে লাফানো ঠিক কিনা এ বিষয়ে উপদেশ দিতে গিয়ে বিনা পয়সায় কিছু গালি শোনা লাগলো,রেসিস্ট বললো কেউ,কেউ বললো খেলাই বুঝিনা আমরা,কেউ বললো উগ্র জাতীয়তাবাদী। আধুনিক বিশ্বে অতীত ভুলে উদার হবার উপদেশ শোনা এই প্রথম না,কাজেই গায়ে খুব বেশি জ্বালা ধরেনা এখন। তবে যারা আমাদের এতটা উদার হবার পরামর্শ দিচ্ছেন,তাদের জন্য কয়েকটা কথা। যাদের খেলা,সংস্কৃতি,আচার নিয়ে আমরা এত উদার,আমাদের প্রতি তাদের অতীত বা বর্তমান আচরণ ঠিক কতটা উদার? পাকিস্তানিদের অতীত ভূমিকা নিয়ে বলার কিছু নেই,অনেক বলেও পাকপ্রেমীদের প্রেম ঘুচানো যায়নি,নতুন করে বললে সেটা চলে যাবে এমন আশা করা অন্যায়। বর্তমান ভূমিকাটাই বলি,যে পাকিস্তান মাঝে মাঝে সুযোগ পেলেই আমাদের ভাই দাবী করে,এই ভাইদের ঘাড় থেকে বিহারী শরণার্থীদের বোঝা তারা এখনো নিজেদের ঘাড়ে নেয়নি,শোধ করেনি আমাদের যুদ্ধকালীন ক্ষতিপূরণের হাজার হাজার কোটি টাকাও,আনুষ্ঠানিক ক্ষমাও চায়নি তাদের অতীত কার্যকলাপের জন্য। খেলার ব্যাপারে আসি,এই সেদিনও নিজের দেশের মাটিতে বাংলাদেশকে টেস্ট ম্যাচে হারাতে রশীদ লতিফ যে জোচ্চুরি করেছিল সেটা কারো ভুলে যাবার কথা না। খেলা খেলাই,এই কথা আর যেই হোক,পাকিস্তান বা ভারত স্বীকার করেনা,বাংলাদেশ তাদের কাছে ছোট দেশ,তাদের কাছে হারার জ্বালা সইতে রাজি নয়।
ভারতের কথায় আসা যাক এবার। খেলা নিয়েই থাকি আজকে। বাংলাদেশের পূর্ণাঙ্গ সফরের ব্যাপারে বিসিসিআইয়ের চরম নাক উঁচু মনোভাবের কথা কি ভারতপ্রেমীরা এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলেন? নাকি এক গালে চড় খেয়ে আরেক গাল পেতে দেয়াটাই নীতি? ভারত কিন্তু সেই নীতি মানেনা,প্রমাণ চাই কারো? মন্দিরা বেদী আর ইএসপিএনের ভাড়াটে কমেন্টেটরদের বিষোদ্গারের কথাও কি কারো মনে নেই নাকি? খেলা তো খেলাই,ভারত তো বাংলাদেশের কাছে ১টা খেলাই হারলো,কিন্তু তারপর ১টা আন্তর্জাতিক টিভি চ্যানেলে বাংলাদেশের কৃতিত্বকে খাটো করার যে প্রাণপণ ভারতীয় প্রয়াস,সেটা দেখার পরও শুধু এশিয়ান দল বলে উদারতা দেখিয়ে ভারতকে সমর্থন দেয়ার উদারতা আমার নেই বলেই আমি গর্বিত। বাকি বিশ্বকাপটাতেও ভারতীয়দের ঐ জ্বালা মেটেনি,বাংলাদেশের প্রতিটা খেলাতে এরা বাংলাদেশকে হেয় করার চেষ্টা করেছে,এই সংকীর্ণমনাদের প্রতিটা কথার জন্য এই জীবনে মনে হয়না ঐ দলকে ক্ষমা করতে পারবো।
যাই হোক,ভারত বা পাকিস্তানের দোষ গাওয়া এই লেখার উদ্দেশ্য না,উদ্দেশ্যটা ছিলো,আমাদের ঠিক কতটা বাংলাদেশি হওয়া উচিত,বা সম্ভব,সেটা একটু বোঝার চেষ্টা করা। আন্তর্জাতিকতা দোষের কিছু না,কিন্তু সেটা নিজের জাতিসত্বাকে খাটো করে নয়,অথচ আমাদের ভারত বা পাকপ্রেম সেটাই মাঝে মাঝে ভাবতে বাধ্য করে। একটু দেখা যাক এই দুই দেশের জাতীয়তাবাদ কোন পর্যায়ে। আমাদের মেয়েরা "আফ্রিদি ম্যারি মি" প্ল্যাকার্ড নিয়ে স্টেডিয়ামে দাঁড়িয়ে থাকে,কোন পাকিস্তানি মেয়েকে দেখলাম না "মাশরাফি ম্যারি মি" সাইনবোর্ড নিয়ে ঘুরতে। আমাদের ঘরে পোস্টার থাকে যুবরাজ আর শচীনের,কোন ভারতীয়র ঘরে কি আশরাফুল বা তামিমের পোস্টার থাকে? হিন্দি সিরিয়াল না দেখলে অনেকের ঘুম হয়না,বাংলাদেশের নাটক কয়জন ভারতীয় দেখে? পাকিস্তানি সেমাই না হলে আমাদের ঈদ হয়না,বাংলাদেশের সেমাই কয়টা পাকিস্তানির ঘরে যায়? আমাদের স্যাটেলাইট চ্যানেলের ভারতে প্রবেশাধিকার নেই,ভারতের টিভি চ্যানেলের বন্যা এই দেশে। উদারনীতি কাদের সাথে দেখাবো? ১৯৪৭ এর পর থেকে ভারতীয়রা কোন বিদেশি পণ্য ব্যবহার করেনি,প্রশংসনীয় দেশপ্রেম। ফলাফল,এখন ভারতীয়দের বাজার অন্য দেশ,কিন্তু ভারতের বাজার তাদের নিজেদেরই দখলে। অথচ পাক-ভারতের পণ্যে বাংলাদেশের বাজার সয়লাব। উদারনীতির ফলাফল? ভারতীয় সংস্কৃতি যেখানে ইংরেজের সংস্কৃতিকেই দখল করে ফেলতে যাচ্ছে,আমাদের ঘরে ঘরে তখন হিন্দি সিনেমার রাজত্ব,শিশুর মুখে এখন ভারতীয় সিরিয়ালের বুলি। এই না হলে আর দেশপ্রেম আর বাংলাদেশি উদারতা!
কথায় কথায় অনেকদূর চলে এসেছি,শেষ করা দরকার। একটা প্রশ্ন দিয়েই শেষ করি,ভারত-পাকিস্তানের অনেক কিছুই তো আমাদের ভালো লাগে,ভারতের নায়িকা ভালো লাগে,পাকিস্তানের সুদর্শন খেলোয়াড়দের ভালো লাগে,হিন্দি গান আমাদের পছন্দ,উর্দু গজলও পছন্দ,তো,ভারতীয় আর পাকিস্তানিদের আন্তরিক দেশপ্রেম আর জাতীয়তাবাদটাও আমাদের পছন্দের তালিকায় একটু রাখা যায়না আর সেটাকে অনুসরণ করা যায়না? নাকি ব্যাধিই সংক্রামক,স্বাস্থ্য নয়?
৩৭টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×