somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খোকাবাবু চতুর্বিংশ মূল : আন্তোঁয়া দ্যোঁ সা এক্সউপেরী

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৭ রাত ১১:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমার উড়োজাহাজটির যান্ত্রিক ত্রুটি জনিত কারণে এই মরুভূমিতে আমার আজ অষ্টম দিন। খোকার বড়ি বেচার গল্প শুনতে শুনতে বোতলের শেষ জলটুকু পান করলাম। আর বললাম:
হুম! তোমার অভিজ্ঞতা মজার বটে। কিন্তু আমার যন্ত্রটি এখনো মেরামত হয়নি। এদিকে পানীয় জলও শেষ। খুবই তৃপ্ত হতাম যদি পায়চারী করতে করতে এই মরুতে একটা কুয়োর সন্ধান মিলত।
খোকা: শেয়াল বন্ধুটা বলছিল...
দুষ্ট কোথাকার! এখন শেয়াল পন্ডিতের কথা রাখ।
খোকা: কেন?
কারণ তৃষ্ণায় আমরা অচিরেই মরব।
কিন্তু খোকা আমার কথা বুঝলনা। বলল:
একজন বন্ধু পাওয়া খুবই ভাগ্যের ব্যাপার, যদি তার জন্য প্রাণও দিতে হয়। সে দিক থেকে আমি খুব ভাগ্যবান কারণ: একটা শেয়ালকে বন্ধু হিসাবে পেয়েছিলাম।
খোকা আসন্ন বিপদের কথা বুঝতেই পারছেনা। আমার মনে হয়, তার কোন ক্ষুধা তৃষ্ণা নাই। এতটুকু আলোই তার বেঁচে থাকার জন্য যথেষ্ট।
কিন্তু আমার দিকে তাকিয়ে মনে হয় আমার চিন্তাটা সে ধরতে পেরেছে।

খোকা: তেষ্টা আমারও পেয়েছে। চল কুয়োর সন্ধানে বেড়িয়ে পরি।
আমি নিরাশার আলস্যে মগ্ন। দিগন্ত বিস্তৃত বালুকাময় মরুর বুকে জলের কুয়ো খুজতে যাওয়ার কোন মানে আছে? বসে থেকেই বা লাভ কি! তাই হাঁটতে শুরু করলাম।
নিরবে ঘন্টার পর ঘন্টা হাটছি। দিনের শেষে রাতের অন্ধকার চরা চর কালো চাঁদরে ঢেকে দিল। আকাশে তারারা ঝলমল করে জ্বলছে। যেন কোন স্বপ্ন পূরী। তৃষ্ণার জ্বালায় আমার একটু জ্বর এল। আর খোকার কথা গুলো মনে দোল খাচ্ছিল।
তোমারও তেষ্টা পেয়ছে? জিজ্ঞেস করলাম।
আমার কথার কোন জবাব না দিয়ে সে খুব সহজ ভাবে বলল:
জল হৃদয়কে প্রসারিত করে।
বুঝতে পারলামনা তবুও চুপ করেই রইলাম। কারণ খোকাকে প্রশ্ন করা উচিৎ নয় সেটা ভাল করেই জানতাম।
ক্লান্তিতে খোকা বসে পরল। আমিও তার পাশে বসলাম। তার পর কিছুক্ষন চুপ করে থেকে খোকাই বলল:
তারাগুলি খুব সুন্দর, তার কারণ: তারা এমন একটি ফুলের কথা মনে করিয়ে দেয়, যা দেখা যায় না।
হ্যাঁ নিশ্চই! বলে নিরবে চাঁদের আলোয় ঝলমলে বালির ঢেউ গুলি দেখতে লাগলাম। খোকা বলল:
মরুভূমি খুব সুন্দর।
সত্যিই। আমি মরুভূমি খুব পছন্দ করি। একটা বালির ঢিবিতে বসলে, যতদূর দৃষ্টি যায় কিছুই দেখার নেই। কোন কিছুর সারাশব্দ নেই। সেটাই যেন কিছু বলা, কিছু শোনা কিছু দেখা। যা আর কোথাও নেই।
খোকা বলল: মরুর সৌন্দর্য্যের কারণ হচ্ছে সে তার বুকে কোথাও একটা কুয়ো লুকিয়ে রাখে।
কি আশ্চর্য্য! বালির ঝিকিমিকি টা যেন কিছুটা বোধগম্য হয়ে এল। ছোট বেলায় আমরা যখন একটা পুড়োনো বাড়িতে থাকতাম, লোকে বলত, সে বাড়িটাতে নাকি কোথাও একটা গুপ্তধন লুক্কায়িত ছিল। যার সন্ধান কেউ যানতো না, হয়ত কেউ কখনো খুজেও দেখেনি। হৃদয়ের গভীরে একটা গুপ্তধন ধারণ করে আছে বলেই হয়ত আমাদের বাড়িটা এত মূল্যবান মনে হত।
ঠিক তাই, খোকাকে বললাম: আমাদের পুড়োনো বাড়িটা, আকাশের তারা অথবা এই মরুভূমি যাই বলো, এদের সৌন্দর্য্যের মূল কারণ হচ্ছে, এদের চোখ দিয়ে দেখা যায় না।
খোকা বলল: আমার শুনতে ভাল লাগছে। তুমি আমার শেয়াল বন্ধুটির সঙ্গে একমত পোষণ করছ।
খোকাটা কখন ঘুমিয়ে পরেছে! উদ্বেলিত হৃদয়ে তাকে কোলে নিয়ে ফিরছিলাম। মনে হচ্ছিল অতি অল্পেই আঘাত পেতে পারে এমন একটা শিশুকে আগলে রাখছি। এর চেয়ে ক্ষন ভঙ্গুর পৃথিবীতে আর আছে বলে ভাবতে পারলাম না। চাঁদের আলোতে তার নিষ্পাপ মুখ, বন্ধ চোখ আর হাওয়ায় উড়ানো চুল গুলি দেখে মনে হল, যা দেখছি তা শুধু একটা খাঁচা। ভেতরের আসল মানুষটা চোখ দিয়ে দেখা যায় না।
তার অর্ধ উম্মুক্ত মুখ এমন ভাবে ঠোট গুলো মেলে রেখেছে, যেন সে তৃপ্তিতে হাসছে। আমর কাছে এই ঘুমন্ত খোকাকে এত ভাল লাগার কারণ মনে হয় তার প্রিয় ফুলটি। ফুলটির প্রতি তার বিশ্বস্ত প্রেম, তাকে এত উজ্জীবিত রাখে, যেন সব সময় একটি প্রদীপের আলোয় তার মুখ উদ্ভাসিত থাকে। এমনকি যখন সে ঘুমোয় তখনো সেই দীপ্তি ম্লান হয় না। এখন তাকে আরো ক্ষণভঙ্গুর মনে হয়। আলো দেয় যে বাতি তাকে অতি সন্তর্পনে রক্ষা করতে হয়। কারণ সামান্য হাওয়ার ঝাপটায় তারা নিভে যেতে পারে।

এভাবে যেতে যেতে রাত্রির অন্ধকার ভেদ করে ভোরের সূর্য্য যখন চরাচর আলোর পরশে উদ্ভাসিত করছিল, তখনই কুয়োটা চোখে পরল।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৭ রাত ১:৩২
৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×