somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খোকাবাবু একবিংশ মূল : আনটোয়াঁ ঢহ্ সা এক্সউপেরী

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৭ রাত ১২:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এমন সময় একটা শেয়াল এল।
সুপ্রভাত! বলে শেয়ালটা খোকাকে সম্ভাষন করল।
সুপ্রভাত! বলে খোকা ঘুরে ফিরে দেখল। কিন্তু কাউকে দেখতে পেল না।
আমি এখানে এই আপেল গাছটার তলায়।
তুমি খুব সুন্দর। কে তুমি? খোকা যানতে চাইল।
আমি শেয়াল।
আমার সঙ্গে খেলবে? আমার মনটা খুব খারাপ।
আমি তোমার সঙ্গে খেলতে পারব না। এখনো তোমার সাথে আমার বন্ধুত্ব হয়নি।
ওহ! তাইতো! কিছু মনে করনা।
কিছুক্ষন আপন মনে কি যেন ভেবে, খোকা জিজ্ঞেস করল: বন্ধুত্ব মানে কি?
তুমি তো দেখছি ভিনদেশী, এখানে কি করছ?
আমি মানুষ খুজছি। কিন্তু বন্ধু মানে কি?
মানুষ? তাদের অশ্র আছে। এবং সে অশ্র দিয়ে তারা শিকার করে। মানুষ খুব ভয়ংকর। তারা পাখি মারে। এটাই তাদের একমাত্র মজার খেলা। তুমিও পাখি খুজছ? শিকার করার জন্য?
না। আমি খেলার সাথী খুজছি। বন্ধুত্ব মানে কি?
বন্ধুত্ব আজকাল সবাই ভূলে গেছে। বন্ধুত্ব মানে হল বিশ্বাস।
খোকাঃ বিশ্বাস!
নিশ্চই! এখনো তুমি আমার কাছে একটা ছোট বালক। পৃথিবীতে তোমার মত কত ছেলে আছে! তোমাকে আমার কোন প্রয়োজন নেই। আমাকেও তোমার কোন প্রয়োজন নেই। আমি তোমার কাছে একটা শেয়াল। পৃথিবীতে আমার মত সত সহশ্র শেয়াল আছে। যদি তুমি আমাকে বিশ্বাস কর, তবেই আমরা একে অন্যের উপর নির্ভর করতে পারব। আমার কাছে তুমি হবে এজগৎ-তে একমাত্র বন্ধু। তোমার কাছেও আমি হব তাই।
মনে হয় তোমার কথা কিছুটা বুঝতে পারছি। একটা ফুল আছে যে আমাকে বন্ধু ভাবে।
হতেই পারে! পৃথিবীতে কত কিছু ঘটে!
না না, সেটা পৃথিবীতে নয়।
শেয়াল পন্ডিত একটু বিরক্ত ভাবেই বলল: তবে কি ভিন গ্রহে!
হ্যাঁ, খোকা জবাব দিল।
সেখানে শিকারী আছে?
নাতো। খোকা জবাব দিল।
খুব ভাল। সেখানে পাখী আছে?
খোকা বলল: না।
দীর্ঘ নিস্বাষ ছেড়ে শেয়াল বলল: সব কিছু কি আর পাওয়া যায়!
বলতে বলতে নিজের চিন্তায় ফিরে এল শেয়াল। জীবনটা বড্ড এক ঘেয়ে। শিকারের জন্য আমি মোরগ খুজে বেড়াই। আর মানুষ শিকারের জন্য খোজে আমাকে। সব মোরগ একই রকম, মানুষ গুলিও তাই। এসব আর ভাল্লাগেনা।
কিন্তু তুমি যদি আমার বন্ধু হও, তাহলে আমার মনটা আলোকিত হবে। তোমার চলার শব্দেই আমি তোমাকে চিনতে পারব। করণ: তোমার চলার শব্দের মত পৃথিবীতে তখন আর কিছু থাকবে না। অন্য শব্দ গুলি তাড়িয়ে আমাকে গুহায় নিয়ে যায়। তোমার পদ ধ্বনি সংগীতের মূর্ছনার মত, আমাকে অন্ধকার গুহা থেকে আলোর ভূবনে নিয়ে আসবে। দেখ, ঐযে দূরের গম ক্ষেত, সে গুলি আমার মনে কোন স্মৃতি জাগায় না। কারণ: আমি রুটি খাই না। আমার গমের কোন প্রয়োজন নেই। ব্যাপারটা দুঃখের! কিন্তু তোমার চূল গুলি গমের মতই সোনালী। তুমি আমার বন্ধু হলে ব্যাপারটা খুবই আনন্দের হবে। সোনালী গমের ক্ষেত, আমার মনে তোমার স্মৃতি চিরজাগরুক করে রাখবে। এবং ফসলের গায়ে বাতাসের ফিস ফিস চুম্বন, আমাকে শিহরিত করবে।
তার পর অনেকক্ষন নিঃশব্দে নিরবে শেয়ালটা খোকাকে শুধুই দেখল। এক সময় জিজ্ঞেস করল:
তুমি আমার বন্ধু হবে?
খোকা বলল:
আমি তোমার বন্ধু হতে চাই। কিন্তু আমার সময় খুব অল্প। নতুন নতুন খেলা সেখার জন্য আমাকে সঙ্গীর সন্ধানে যেতে হবে।
মানুষ চিনতে কিংবা বুঝতে পারে শুধু সেসব জিনিস যেগুলির প্রতি মানুষের বন্ধুত্ব হয়। কিন্তু কোন কিছুর প্রতি বন্ধুত্ব করার সময় মানুষের নেই। সব কিছুই বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। কিন্তু বন্ধু বাজারে কিনতে পাওয়া যায় না। সে জন্য মানুষের বন্ধুও নেই। যদি তুমি কোন বন্ধু পেতে চাও, তবে আমাকে বন্ধুর মযার্দা দাও।
তার জন্য আমাকে কি করতে হবে? খোকা যানতে চাইল।
তোমাকে খুব ধৌর্য্য ধরতে হবে।
আমার কাছ থেকে একটু দূরে গিয়ে বস। আমি আড়চোখে তোমাকে দেখব, আর তুমি চুপটি করে বসে থাকবে। কথা হল ভূলের ঝর্নাতলা। দিনে দিনে একটু একটু করে কাছে আসতে থাকবে।
পরের দিন সকালে খোকা আবার এল।
গতকাল যে সময় এসেছিলে, আজকেও যদি সে সময়ে আসতে তাহলে খুব ভাল হত। ধর তুমি চারটায় আসবে, তাহলে আমি তিনটা থেকেই আনন্দিত হতে পারতাম। তোমার আসার সময় যত ঘনিয়ে আসবে আমার আনন্দ তত বাড়তে থাকবে। চারটায় আমি খুব আনন্দিত হব এবং সুখের মুল্য বুঝতে শিখব। যদি তুমি যখন তখন আস, তবে আমার হৃদয় তার জন্য প্রস্তুত হবে কখন? তার জন্য চাই নির্দৃষ্ট উৎসব।
খোকা জিজ্ঞেস করল: উৎসব মানে কি?
সেটাও আজকাল লোকে ভূলে গেছে। উৎসব হল এমন একটা ব্যাপার, যা একটা দিন বা ক্ষনকে অন্য একটা দিন বা ক্ষন থেকে আলাদা করে। যেমন ধর: আমাকে যারা শিকার করতে আসে তারা বৃহস্পতি বার পাড়ার মেয়েদের সাথে নৃত্যক্যালিতে মেতে থাকে। আর আমি নিশ্চিন্তে আঙ্গুর বাগানে বেড়াতে যাই। যদি শিকারীরা যখন তখন মেয়েদের সাথে নৃত্যক্যালি করত, তাহলে আমি কখনই পেট ভরে আঙ্গুর খেতে পারতাম না।
এভাবে খোকার সাথে শেয়ালটির বন্ধুত্ব হল। কিন্তু বিদায়ের সময় ঘনিয়ে আসায়, শেয়ালটির কান্না পেল। সে বলল;
আহ্! আমার কান্না পাচ্ছে।
খোকা বলল: সেটা তোমার দোষ। আমি তোমাকে দুঃখ দিতে চাইনি। তুমিই চেয়েছ যেন আমরা একে অন্যের বন্ধু হই।
হ্যাঁ, তাই। শেয়ালটি বলল।
কিন্তু এখন তুমি কাঁদছ। আমাদের বন্ধুত্বে তোমার কোন লাভ হয়নি! বলল খোকা।
শেয়ালটি বলল: হয়েছে। আমি গমের সোনালী রূপ দেখেছি। তার পর বলল:
ফুল বাগানটা আবার দেখে আস। তার পর বুঝবে, তোমার ফুলটি সত্যি এজগৎ-তে এক এবং অদ্বিতীয়। ফিরে এসে তুমি আমাকে বিদায় যানাবে আর আমি তোমাকে একটা গোপন কথা বলল।
খোকা আবার ফুল বাগানে গেল। গিয়ে বলল:
তোমরা আমার ফুলটির মত নও। তোমাদের কেউ ভালবাসে নাই, তোমরাও কাউকে ভালবাস নাই। তোমাদের কোন মূল্য নেই। বন্ধুত্ব হওয়ার আগে শেয়ালটি যেমন যেকোন একটা শেয়াল ছিল, তোমরাও তেমন। কিন্তু এখন শেয়ালটি আমার বন্ধু। এবিশ্বে সে এখন আমার জন্য এক এবং অদ্বিতীয়।
ফুল গুলি লজ্জায় নুয়ে পড়ল।
খোকা বলল তোমরা সুন্দর কিন্তু শূন্য। তোমাদের জন্য কেউ প্রানপনে কিছু করবে না, নিশ্চই! আসা যাওয়ার পথের ধারে তোমাদের দেখে, যে কেউ মনে করতে পারে, তোমরা দেখতে আমার ফুলটির মতই। কিন্তু তোমাদের সবার চেয়ে সে শ্রেষ্ঠ। কারণ: ভালবেসে আমি তার গোড়ায় জল দিয়েছি। সে একমাত্র ফুল যাকে আমি শীতের ঠান্ডায় উষ্নতা দিয়েছি। সে একমাত্র ফুল যাকে আমি ঝড়ের কবল থেকে রক্ষা করেছি। সে একমাত্র ফুল আমি যার পোকা মাকড় তারিয়েছি (দু'একটা প্রজাপতি ছাড়া)। সে একমাত্র ফুল যাকে আমি অভিযোগ বা অনুরোধ করতে শুনেছি। মাঝে মাঝে তাকে চুপ করে অপেক্ষাও করতে দেখেছি। কারন সে ছিল আমার ফুল।
খোকা শেয়ালের কাছে ফিরে এল।
বিদায় বন্ধু! বলল খোকা।
বিদায় বন্ধু! বলে শেয়াল বলল:
গোপন কথাটি শুনে যাও: কথাটি খুবই সহজ।
মানুষ শুধু হৃদয় দিয়েই ভাল দেখতে পায়। গুরুত্বপূর্ণ জিনিস গুলি চোখ দিয়ে দেখা যায় না।
খোকা মনে রাখার জন্য বলল: মানুষ কেবল হৃদয় দিয়েই দেখতে পায়।
তুমি ফুলটির সঙ্গে যে সময়টুকু কাটিয়েছ, সে সময়টুকুই তোমার ফুলটিকে অনণ্যা করেছে।
যে সময়টুকু... খোকা পূনরাবৃত্তি করল, যাতে ভূলে না যায়।
কাঁদতে কাঁদতে খোকা ঘাসের উপর বসে পড়ল।
এই সত্যটি লোকে আজকাল ভূলে গেছে। তাই বলে তুমিও তা ভূলে যেও না। যত দিন বেঁচে থাকবে, ফুলটির কথা মনে রাখবে। শেয়াল কথা শেষ করল।
পাছে ভূলে যায়, তাই খোকা মনে মনে বলল:
আমার ফুলটির দায়ীত্ব, আমারই।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৭ রাত ২:১০
১৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যমদূতের চিঠি তোমার চিঠি!!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:০৮

যমদূতের চিঠি আসে ধাপে ধাপে
চোখের আলো ঝাপসাতে
দাঁতের মাড়ি আলগাতে
মানুষের কী তা বুঝে আসে?
চিরকাল থাকার জায়গা
পৃথিবী নয়,
মৃত্যুর আলামত আসতে থাকে
বয়স বাড়ার সাথে সাথে
স্বাভাবিক মৃত্যু যদি নসিব... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×