বোন,কেনো ওভাবে মরতে গেছিলে?আত্ত্বহত্যা মহাপাপ জানো না?
-কি করবো তাহলে?অপমান সহ্যকরে বেচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়া অনেক ভালো।
কিন্ত এভাবে তোমরা সবাই যদি আত্ত্বহননের পথ বেছে নাও তাহলে কিভাবে,কে প্রতিবাদ করবে?আজ তুমি মরে গেলে কার কি হতো?তোমার মতো আরো অনেকেই তো এভাবে নীরবে চলে গেছে।তাতে কি হয়েছে?বখাটেদের উৎপাত কমেছে?কয়জন শাস্তি পেয়েছে?তারচেয়ে প্রতিবাদ করো।রেইজ ইওর ভয়েস।
-হুম,আমরা কিছু বলতে যাই,তারপর দেখেন কি হয়?এখনতো রাস্তাঘাটে অপমান করে।এরপর বাড়িতে হামলা করবে,আর না হয় অপহরন করবে,লান্চিত করবে।পত্রিকায় খবর বেরুবে,অমুক গ্রামের অমুককে কিছু সন্ত্রাসী অপহরন করে নিয়ে.....।আর প্রতিবাদ আমরা করবো কেনো?যাদের প্রতিবাদ করার কথা তারা কই?প্রতিবাদ করলেও আমাদেরই দোষ হবে।লোকজন আন্গুল উচিয়ে বলবে,দেখো মেয়েটা কতো পাজি...।
মাথা নিচু করে আছি।কি বলবো বুঝতে পারছি না।মেয়েটির চোখের দিকে তাকাতে পারছি না।মনে হচ্ছে ওর চোখ দিয়ে আগুন বেরুচ্ছে।সেই আগুনে পুড়িয়ে ভষ্ম করে দিতে চায় সারা দুনিয়ার পুরুষ নামক জাতটাকে।নিজেকে পুরুষ হিসেবে ভাবতে লজ্জা করছে।কি গৌরব এই পুরুষত্ত্বে, যদি বিপরীত লিংগের প্রতি সমান শ্রদ্ধাবোধ না থাকলো?কেনো নারীকে মানুষ হিসেবে না ভেবে মেয়ে ভাবি?চোয়াল শক্ত করলাম।মেয়েটিকে বললাম,চলো বোন,তোমার এই ভাই তোমার হয়ে প্রতিবাদ করবে।তোমার থেকেই শুরু হোক প্রতিবাদ,প্রতিরোধ।
বেড়িয়ে পড়লাম আমি।কি করবো কিছুই ঠিক করিনি।মাথায় একটাই চিন্তা,কিছু একটা করতে হবে।কল্পনায় নিজের বোনটির দিকে তাকালাম।কি সুন্দর সরল মুখ।হাসি হাসি মুখ করে গাল ফুলিয়ে বসে আছে।মেলায় যাবে বায়না ধরেছিলো।এখনো নিয়ে যাইনি।তাই খুব রেগে আছে।আমি বাসায় গেলে কিছু বলবে না কিছুক্ষন।কাছেকাছে ঘুরঘুর করবে।যাতে আমি আদর করে ডাকি।যতক্ষন না ডাকবো মুখ কালো করে থাকবে।একবার বুড়ি বলে ডাকলেই সব রাগ মিলিয়ে যাবে।এসে আল্হাদ করে বলবে,মেলায় না নিয়ে গেলে কোনো কথা নাই।আমি যেই রাজি হবো অমনি বলবে,জানি তো তুমি না করতে পারবে না।এমন নিজের কলিজার চেয়েও প্রিয় একটা বোনকে কোন বখাটে যদি লান্চিত করার হুমকি দেয় তখন ভাই হিসেবে আমার কি করা উচিত?এ বোনটির জন্যে মর্টার,কামানের গোলা,একে৪৭ এর নিশানাতে নিজের বুক পেতে দিতে একটুও কি দ্বিধা করবো?আরেকটা স্বাধীনতা যুদ্ধ যদি বেধে যায় তবুও কি আমার মতো ভাইয়েরা হাসতে হাসতে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়তে পারবো না?তাহলে এই মেয়েটির জন্যে কেনো নয়?এওতো কারো না কারো বোন।বা আমিই এখন ওর ভাই।তাহলে ওর জন্য কেনো কিছু করতে পারবো না?
থানায় গেলাম।অফিসার বললো,সুর্নিদিষ্ট প্রমান ছাড়া রিপোর্ট করেও লাভ নাই।আইন প্রমানের উপর নির্ভর করে চলে।তারচেয়ে স্থানীয়ভাবে ব্যপারটি মিটিয়ে ফেলুন।সেটাই দুই পক্ষের জন্য ভালো।বুঝলাম ভুল যায়গায় এসেছি।ইভ টিজিং এর প্রমান দিতে হলেতো আমাকে কান্দে করে ক্যামেরা আর রেকর্ডার নিয়ে ঘুরতে হবে।যখন টিজ করবে তখন ছবি তুলতে হবে।টিজিং এর কথাগুলো রেকর্ড করতে হবে।হায়রে আজব দেশ!
চলে এলাম থানা থেকে।
বিষয়টি এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিদের জানালাম।বুঝালাম অনেক কিছু।ওনারা অনেক আশ্বাস দিলে।নির্দিষ্ট দিনে বিচার ডাকলেন।কিন্ত একি!বিচারের নামে যা শুরু হলো তাকে প্রহসন ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না।তথাকথিত মান্যগন্য ব্যক্তিগন এমন সব তির্যক উক্তি আর কুরুচিপুর্ন মন্তব্য করা শুরু করলো যে তাতে মেয়েটি এবং আমি বিব্রতবোধ করতে লাগলাম।ওখানে টিকে থাকাই দায় হলো।সবাই উল্টো মেয়েটিকে দোষারোপ করতে লাগলো।মেয়েটির নাকি চালচলন ভালো না।কেউ একজন বললো,অমন বেপর্দা কইরা বাইর হইলে পোলাপানেরতো মাথা খারাপ হইবোই।অবাক হলাম।বখাটেগুলোর কোন দোষ ই নাই?যাদের কারনে মেয়েটি আত্ত্বহত্যা পর্যন্ত করতে গিয়েছিলো ওরা সবাই ধোয়া তুলসী পাতা?সেলুকাস!চলে আসলাম ওমন বিচারের তোয়াক্কা না করে।শুধু বলে আসলাম,আজ এই মেয়েটির সাথে যেমনটি হয়েছে তা কাল যে আপনাদের ঘরের মা,মেয়ে,বোনের সাথে হবে না তা কেউ ভাইবেন না।পিছন থেকে বলতে শুনলাম,দেখছেন কতো বড়ো বেয়াদপ আজকালকার পোলাপান।মুরব্বী মানে না।কেউ একজন বললো,আরে ওই তো এখন ঐ মাইয়ার আশিক.....।
রাস্তায় এসে মেয়েটিকে বললাম বোন,শুধু বেচে থেকো।শতো কষ্ট স্বীকার করে বেচে থাকাই জীবনের ধর্ম।জীবন মানেই ঘাত প্রতিঘাত,আশা নিরাশার দোলা।বাসায় চলে এলাম।আমার বুড়িটা সামনে।কিছু বলতে পারলাম না।ঘরে এসে বালিশে মুখ লুকালাম।
এর পরের ঘটনাতো আরো করুন।মেয়েটি এখন ঘর থেকেই বের হতে পারে না।আর সেই সাথে বখাটেদের টিজিংএ যোগহয়েছে নতুন মাত্রা।এখন আমিও রাস্তায় বেরুলে সবাই টিপ্পনি কাটে।সামনে পিছনে আড়ালে আবডালে নানা কটুক্তি করে বলে,ঐ দেখ আশিক যায়,নতুন মজনু ইত্যাদি ইত্যাদি।এখন তো দেখছি আমিই ঈভ টিজিং এর স্বীকার।বেপারটি একসময় আমার বাসা পর্যন্ত জেনে গেলো।মা বাবা সবাই বিষয়টা নিয়ে চিন্তিত।মা তো সেইদিন বলেই বসলো কেনো এই উটকো ঝামেলায় জরাতে গেলাম।মাকে কি করে বুঝাই,মাগো,ওই মেয়েটাতো আমার বুড়ির মতোই।ওর চোখে আমি বুড়ির ছায়া দেখেছি ।কি করে শান্ত থাকি যখন দেখবো আমার বুড়িটা আর আগের মতো হাসে না,আমাকে আদর করে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় না।বড় হয়ে ও কি কি হবে এই স্বপ্ন দেখে না।এই ভাইকে ছেড়ে কোথাও যাবে না এমন অভিমানী কথা বলে না।পারি না তো মা যখন দেখি আমারই বোন তার নিজের ঘরেই বন্দী।তাকে একটা নিরাপদ পরিবেশ দিতে পারি না।হাজারো বোনদের দিতে পারি না একটা নিরাপদ পরিবার,সমাজ,রাষ্ট্র।কেনো আজ দেখতে হচ্ছে ফুলের মতো ওই মেয়েটিকে,যে নিজের বাড়িতে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।প্রতিটি মুহুর্তে তাকে কেনো ভয়ে থাকতে হচ্ছে,এই বুঝি কেউ এসে বাড়িতে হামলা করলো অথবা জানালা দিয়ে এসিড নিক্ষেপ করলো।দিতে পারআর ভাবতে পারলাম না।বুড়িকে ডেকে আনলাম।বললাম,বুড়িরে তুই আমার পাশে বসে থাক।আমার জীবন থাকতে তোর গায়ে কাউকে আচর বসাতে দিবো না।সব বুলেট,দা,ছুরি সব আমার বুকে আগে লাগবে।বুড়ি ফ্যাল ফ্যাল করে আমার মুখের দিকে চেয়ে থাকলো.....।
কবে আমরা আমাদের মা,বোন,মেয়েদের নিরাপদ পরিবেশ দিতে পারবো?আর কবে?কারা দেবে এই নিরাপত্তা,কারা করবে এসব অন্যায়ের প্রতিবাদ?প্রতিটি ঘরথেকে এর প্রতিবাদের শুরু হওয়া উচিত।শুধু বখাটে নয়,অন্যায়কারী,অপরাধী,সন্ত্রাসী,দুর্নীতিবাজদের পারিবারিকভাবে বয়কট করা উচিত।কারন পরিবার হলো মানুষের মনুষত্ত্ববোধ শিক্ষার আদর্শ স্থান।আপনি মা,বাবা,ভাই বোন,সন্তান যাই হোন আপনার পরিবারে কেউ অন্যয় করলে তাকে সবাই মিলে বয়কট,ঘৃনা করলে সে আর অন্যায় করার সাহস পাবে না।সুন্দর আগামীর আশায়...
কিছু ঘটনার ছায়া অবলম্বনে।
সর্বস্বত্ত মেধালালন(তাসমান)
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৭ ভোর ৬:৫৬