-অবশ্যই। নিজ হাতে গলা টিপে খুন করেছ; আবার একথা বল। এজন্যই তো তুমি দ্বিধা।
-খুব ভালো; তুমি সত্য। কিন্তু তুমি তো জয়ী হতে পারলে না।
জবাবে স্মিত হাসল সত্য।
হঠাৎ ভয় কথায় যোগ দিতে এল। সে-ও মনেরই আরেকটা অংশ। দ্বিধা আর সত্যের মত।
বলল-দেখ সত্য খুনটা যে হল তাতে শুধু যে আমাদের দুজনার দোষ তা কিন্তু নয়। আমাদেরও কিছু যুক্তি আছে।
-মিথ্যে বল না। তোমার ঐ যুক্তির মা হল ভয়। তুমি ’ও’কে ভয় পেতে বলেই যুক্তি দাঁড় করিয়েছ; দ্বিধাকে দলে টেনেছ। অথচ প্রচার করেছ তুমি দ্বিধাহীনভাবে খুন করেছ। একটু থেমে সত্য আবারও গর্জে উঠল। আর কতদিন ভয় হয়ে থাকবে? নিজেকে বাঁচাতে যুক্তির মুখোশ কতদিন পরবে তুমি?
একটু ভয় পেয়ে গেল দ্বিধা। চুপচাপ মিলিয়ে গেল সে।
ভয় বলল-দেখ সত্য ’ও’কে আমি কখনই বুঝতাম না। তাই ’ও’র জবাবও দেই নি। দিলে প্রতারণা হত।
-হুঁহ। ’ও’ কে বোঝেনা এমন একটা হৃদয় মনও সারা পৃথিবীতে নেই। ’ও’কে ভাষায় প্রকাশ করে যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করবার প্রয়োজন হয় না। সমগ্র সত্তার অণু পরমাণু ’ও’কে অনুভব করতে পারে। জবাব দিয়ে চলে গেল সত্য, পড়ে রইল দ্বিধা।
অস্থির হয়ে পাশ ফিরে শুলাম। মনটাতে তোলপাড় চলছে। বুকের ঠিক গভীরে-একেবারে মাঝখানটায় যেন একটু শূন্যতা। পাশ বালিশটা আঁকড়ে ধরলাম; তাতেও যদি শূন্যতা একটু কাটে।
আমি খুব ভয় পেয়েছি। ’ও’ ফিরে এসেছে। আমি ’ও’কে হাত নেড়ে বিদায় জানালাম। সেই হাত নাড়ার অর্থ ’না’। কিন্তু আমার হাত দুটো ভীষণ বিব্রতকরার মত কাঁপছে। একটা অবলম্বন খুঁজল আমার হাত দুটো -আঁকড়ে ধরার জন্য। পেয়েছি। আমি আমার সমস্ত শক্তি দিয়ে জাপটে ধরলাম অবলম্বনটি। সে শক্তি দিতে গিয়ে আমার মস্তিষ্ক কান্ত হয়ে পড়ল। চোখ খুললাম আমি। ’ও’ চলে গেছে।
ভয় বলল-কাজটা ভুল হয়নি।
দ্বিধা দ্বিধা প্রকাশ করল-কিন্তু এটা যদি আমার দ্বিতীয় খুন হয়ে থাকে? আমি কি তবে ভুল কাজে সাহায্য করলাম তোমাকে?
সত্যের কন্ঠ শোনা গেল-হ্যাঁ। তোমরা এমনভাবে ’ও’র গলা জাপটে ধরেছিলে যে ’ও’ মারা গেছে।
দ্বিধা অবাক হল-সেটা তো ছিল অবলম্বন।
সত্য বলল-’ও’ Ñই হল অবলম্বন।
সত্য আর দ্বিধা মন খারাপ করে মিলিয়ে গেল মনের মাঝে।
ভয় একা একা রইল। বলল-’ও’ হল ’ভালবাসা’। ’ও’ হল ’মরীচিকা’। প্রতিরোধ না করলে চলবে কেন। আবার এলে আবার বধ করব।বলে কালো হাত দুটো প্রসারিত করল সে। আবারও ’ও’ আসছে যে।
১৬.৯.’০৭
রাত ১১:৩৫