somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খোকাবাবু চতুর্দশ মূল : আনটোয়ানী ডে সা এক্সউপেরী

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৭ দুপুর ১:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চতুর্দশ
পঞ্চম গ্রহটি ছিল খুবই চমৎকার। সবচেয়ে ছোট। কোন রকমে একটা চেরাগ আর সেটা জ্বালানোর জন্য একটা লোকের যায়গা ছিল এগ্রহে। খোকা কিছুতেই বুঝতে পারল না। কোন বসতি নাই, আকাশের এমন একটা গ্রহে বাতির কি দরকার। অথচ সেটা জ্বালানোর জন্য একটা লোকও রাখা হয়েছে।
হয়ত ভালই হল যদিও লোকটা একটু পাগলা ধরনের। কিন্তু রাজা, যাদুকর, ব্যাবসায়ী এবং মাতাল এদের মত এত পাগল সে নয়। তার কাজটার একটা অর্থ আছে। তার বাতির আলো জগৎ-এ একটা নতুন তারা বা একটা নতুন ফুল ফোটায়। আলোটা নিভিয়ে দিলে তারা বা ফুলটা ঘুমিয়ে যায়। এটা অবশ্যই একটা সুন্দর কাজ। আর সুন্দর বলেই কাজটা খুব প্রয়োজনীয়।
গ্রহে এসেই খোকা লোকটাকে বিণীত ভাবে বলল:
নমস্কার! বাতিটা নেভালেন কেন?
নমস্কার! আমার উপর আদেশ আছে। জানাল লোকটা।
আদেশ মানে কি?
আদেশ? বাতি নেভানোর। শুভ সন্ধ্যা। এই বলে লোকটা আবার বাতি জ্বালাল।
এখন আবার বাতিটা জ্বালালে কেন?
এরকম আদেশই আছে আমার উপর। লোকটা জবাব দিল।
খোকা বলল: বুঝতে পাড়লাম না।
লোকটা বলল এটা বুঝার মত নয়। আদেশ মানে আদেশ। শুভদিন বলে লোকটা বাতিটা আবার নেভাল। আর লাল রং-এর একটা রুমাল দিয়ে কপালের ঘাম মুছল। আমি খুব কঠিন একটা কাজ করছি। কাজটা আগে এত কঠিন ছিলনা। সকালে বাতি নেভাতাম আর রাতে জ্বেলে দিতাম। দিনের বাকি সময়টা আরাম করে, আর রাতটা ঘুমিয়ে কাটাতাম।
তা আদেশটা পাল্টাল কবে থেকে?
আদেশ পাল্টায়নি। এটাইতো দুঃখের ব্যপার। গ্রহটা দিন দিন তার ঘুরার গতি বাড়িয়ে দিয়েছে। আদেশ তো একই আছে। দুঃখ করে লোকটা বলল।
কিন্তু ? খোকা কিছু বলার আগেই লোকটা বলল:
কিন্তু এখন গ্রহটা মিনিটে একবার আন্বিক গতি শেষ করে। এবং আমি বিশ্রামের জন্য এক মিনিট সময়ও পাই না। মিনিটে একবার বাতি জ্বালাই, মিনিটে একবার বাতি নেভাই।
মজার ব্যাপার! তোমার এখানে এক মিনিটে এক দিন।
ব্যাপারটা কোন ভাবেই মজার নয়। এভাবে হিসাব করলে একমাস যাবৎ তোমার সাথে কথা বলছি। বলল লোকটা।
এক মাস! অবাক হল খোকা।
হ্যাঁ, তিরিশ মিনিট তোমার হিসাবে কিন্তু এখানে মিনিটে একদিন, তিরিশ মিনিট মানে তিরিশ দিন। বলেই লোকটা আবার বাতি জ্বালালো।
খোকা লোকটাকে পছন্দ করল। অক্ষরে অক্ষরে আদেশ পালন করে, এমন মানুষ কদিচিৎ মেলে। তার সূর্য্যাস্তের কথা মনে পড়ল। যেগুলি দেখতে চেয়ারটা একটু এগিয়ে নিলেই হত। লোকটাকে সাহায্য কারর ইচ্ছায় খোকা বলল:
যান! আমি তোমাকে সাহায্য করতে পারি, যাতে তুমি একটু বিশ্রাম নিতে পার। অবশ্য যদি তুমি চাও।
আমার সব সময় একটু বিশ্রাম নিতে ইচ্ছে করে। লোকটা জানাল।
বিস্বস্ততা এবং অলসতা একই সাথে সম্ভব। খোকা বলতে লাগল: তোমার গ্রহটি তিন লাফেই ঘুড়ে আসা যায়। তুমি এমন ভাবে যাবে যাতে সব সময় সূর্য্যের আলো তোমার উপর পড়ে। বিশ্রাম নিতে চাওতো ধীরে ধীরে চলো। এবং দিনটি তোমার ইচ্চেমত ধীর্গ হবে।
মজা করনা, আমার জীবনে ঘুমের মত জরুরী প্রয়োজন আর কিছুর নেই।
তাহলে তোমার সমস্যার কোন সমাধান আমার যানা নেই।
সমাধান নেই! শুভ দিন। লোকটা আলোটা আবার নেভাল।
যেতে যেতে খোকা ভাবল: সবাই লোকটাকে গাধা মনে করবে। রাজা, যাদুকর, মাতাল, ব্যাবসায়ী এরা সবাই। আমার কাছে একমাত্র এই বাতি জ্বালানোর লোকটাকেই হাস্যকর মনে হয়নি। করণ: সে নিজেকে নিয়ে নয়, অন্য কারো জন্য ব্যাস্ত।
দীর্ঘ নিস্বাষ ছেড়ে খোকা নিজে নিজে ভাবল: এই একটি মাত্র মানুষ পেলাম, যার সাথে আমার বন্ধুত্ব সম্ভব। কিন্তু তার গ্রহ সত্যিই খুব ছোট। দুজনার জায়গা সেখানে নেই। খোকার অজান্তেই এই গ্রহটির জন্য খুব মায়া হচ্ছিল। বিশেষ করে মাত্র চব্বিশ ঘন্টায় এক হাজার চারশ চল্লিশটা সূর্য্যাস্ত দেখার লোভে।
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×