somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পাহাড়ি পথের ছবি

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৭ রাত ৯:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লোকমান চৌধুরী ছবি আঁকে।
এবার একটা ছবি সে আঁকতে চাইছে একটি পথ নিয়ে।
এ পথের চিন্তাটি তার মাথায় আসে এক রাতে। রঙ্গীন পানি পান করতে করতে। প্রতিদিনই সে একটু আধটু রঙ্গীন পানি পান করে। কিন্তু সেদিন সে খুব বেশী খেয়ে ফেললো। এবার সে চিন্তা কররে। এই টাল মাতাল অবস্থায় তাকে একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে, সে কি করবে, সে কি ছবি আঁকা ছেড়ে দেবে নাকি আবার ফিরে যাবে নিজস্ব ভূবনে। আজকের চিন্তাই সব কিছু। মাতাল অবস্থায় অনেকে চিন্তা করতে পারে না। লোকমান চৌধূরী পারে। মাতাল অবস্থায় তার চোখের সামনে ভেসে ওঠে সেই মেয়েটির মুখ। যে মেয়েটিকে দেখলেই তার ভালো লাগতো। কিন্তু কখনো তাকে বলা হয়নি। এ ধরনের কথা কাউকে না বললে কি হয়? সেই রাতেও ঐ মেয়েটিকেই সে সামনে দেখতে পেলো। কি করবে সে? মেয়েটিকে জিজ্ঞাস করলো সে। মেয়েটি একটু হেসে বললো, আপনার বোধ হয় আকাঁ আঁকিই করা দরকার এবং লোকমান চৌধুরী প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই সিদ্ধান্ত নিলো সে তুলি আর রঙ নিয়েই থাকবে। এবার এমন একটা বিষয় নিয়ে সে আঁকবে যেটি হবে একটা ভালো কাজ। অনেক দিন ধরে তার কোন ভালো কাজ হচ্ছে না। যেগুলো নিতান্তই অর্থ আয়ের জন্য একেছিল সেগুলোও বেচাবিক্রি হচ্ছেনা। এ অবস্থা চলছে গত প্রায় ছয় মাস ধরে। এভাবে তো আর চলতে পারে না। সে চিন্তা করেছিল আর নয়, সে একটা অ্যাড এজেন্সিতে স্ক্রিপ্ট রাইটারের চাকরি নিতে হবে। এ কাজে তার অল্প বিস্তর অভিজ্ঞতা রয়েছে। কিন্তু সে রাতের ভর পেট মদ খাওয়ার পর সিদ্ধান্ত পাল্টে ফেললো। না তাকে থাকতে হবে আসল পথেই। ঠিক তখনি তার মনে এল সে পথ নিয়ে কাজ করবে। এ পথটা তাকে খুঁজে বের করতে হবে। যতদিন লাগার লাগবে। এ ছবিটি সে তিন ভাবে আকবে। একটা পেন্সিল স্কেচ করবে। একটি জল রং আর একটি তেল রঙে। পরদিন গজিয়ে ওঠা দাড়ি গোফ কামিয়ে সে বেরিয়ে পড়লো।


ঢাকা ইন্দিরা রোডের ছোট বাসাটা থেকে বেরুবার আগে কাঠের আলমারির একটা কোণে গুঁজে রাখা হলুদ প্যাকেটটি বের করলো সে। এ প্যাকেট টিতে কত আছে সে জানে না। বছর দেড়েক আগে একটা প্রর্দশনীতে তার দুই বেলা নামের ছবিটি বিক্রি হলো। একজন মাঝ বয়সী ভদ্র লোক তার ঐ ছবিটি কিনে নিলো। একটা প্যাকেট হাতে দিয়ে বললো , রাগ করবেন না। এই প্যাকেটটি এখনই খুলবে না। যখন খুব অর্থ কষ্ঠে পড়বেন তখনই খুলবেন এটি। আমি জানি আটিস্টরা সময়ে থাকে রাজা সময়ে হয়ে যায় ফকির। রোকটি টাকা দিয়ে চলে গেলো। তারপর প্রদর্শনী শেষ হবার পর সে নিয়ে গেলো ছবিটি। লোকমান চৌধুরী কি মনে করে সেই প্যাকেটটি আর খললো না। সে জানে না এর মধ্যে টাকা আছে নাকি শুধুই কাগজ? ঐ প্যাকেট সে রেখে দিয়েছিল। ঐ দিন বের করলো সে প্যাকেটটি। খুললো। এবং সে সত্যিই আশ্চার্য হলো। এর মধ্যে তার ছবির দামের চেয়ে বেশী টাকা রয়েছে। ঐ লোকটিকে সে আর কোন দিন খুঁজে পায়নি। কাউকে না খুঁজলেই পাওয়া যায় কাউকে খুঁজেও পাওয়া যায় না।


ঢাকায় এখন হলুদ আর কালো ট্যাক্সি ভরে গেছে। কিন্তু কোথাও যেতে চাইলে এ সব গাড়ির শতকরা আটানব্বই ভাগ প্রথমেই বলবে যাবে না। তারপর একটু ঠোট মুখ বাঁকা করে বলবে দশ টাকা বেশী দিয়েন। সিএনজি অটোরিক্সাওয়ালারা চাইবে পাঁচ টাকা বেশী। গাজিপুরে যেতে চায় লোকমান। একট কালো ট্রাক্সি নিয়ে সে গেলো ওদিকে। এখানে সে হয়তো পবে এমন একটা পথ যা সে খঁজছে। সে পেলো না। অনেক চিন্তা ভাবনা করে সে রওনা করলো রাঙ্গামাটির দিকে। পাহড়ের পথে পথে সে ঘুরবে। এবার সে হয়তো পাবেই।


ঢাকা থেকে এস আলম নামের একটি সার্ভিসের সরাসরি রাঙ্গামাটি যায় এমন একটি বাসে চেপে বসলো সে। রাতে বাসে চলতে তার ভালো লাগে। কেবল একটি বিষয় তার অপছন্দ, সেটা হলো বিপরিত দিক থেকে আসা গাড়ির হেড লাইটের আলো। চোখে এমন ভাবে এসে লাগে যেনো কেউ শূল বসিয়ে দিল। তাই দেখে শুনে বাসে বসে সে।


ভোর বেলাটায় রাঙ্গামাটিকে অন্য রকম দেখায়। কেমন মায়াবী! সে শহরে থাকবে না। যাবে প্রত্যন্ত এলাকায়। বাসের হেল্পারটির বয়স খুব বেশী না। তাকেই জিজ্ঞাসা করলো সে। হরিণার কথা। একবার কার কাছে যেনো শুনেছিল জায়গাটির নাম। সেখানেই যাবে সে পথের খোঁজে। হেল্পার ছেলেটি বলে দিল কিভাবে যেতে হবে। রাঙ্গামাটিতে কোন রিক্সা নেই। এখানে চলে অটোরিক্সা। একটাতে চেপে বসেলো সে। শেয়ারে। চলে গেলো রিজার্ভ বাজারে। সেখান থেকে একটি লঞ্চে উঠে বসলো সে। কাপ্তাই লেকের পানি কেমন ঘোলা। আকাশেও ঘন ঘোলা মেঘ। এরই ছায়া পড়েছে হয়তো।

‘ভাই জান কোথায যাবেন?’ মুখ ভর্তি পানের পিক ফেলে জিজ্ঞাস করলো একজন। পরণে পাঞ্জাবী। লোকমান উত্তর দিল
‘হরিণা’
‘হরিণা যাবেন কেন, ওখানে বাঙ্গালীরা গেলে বিপদে পড়ে। অন্য কোথাও যান। ধরে নিয়ে যেতে পারে। ’
এ কথা শুনে মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো লোকমানের । লোকটি তার উত্তরের অপেক্ষা করছে।
‘বিপদে পড়তেই যাচ্ছি। যাবেন আমার সাথে?’
এ ধরনের উত্তর শুনে লোকটি অবাক হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে কোন কথা না বলে লঞ্চের অন্য প্রান্তে চলে গেলো। লোকমান বাইরের পৃথিবী দেখছে। মেঘগুলো কেমন চলাচল করছে। এই মেঘ থেকে কখন বৃষ্টি হবে? বৃষ্টি হলে সে একটু ভিজতে চায়। তার পরণের টি শার্ট আর প্যান্ট ভিজলেও কোন অসুবিধা নেই। তার ঠান্ডা লাগবে না। অনেক দিন হলো তার সর্দি লাগে না। সর্দি না লাগাটা কোন রোগ নাকি? ভাবছে সে।

মেঘলা দিনের পাহাড় অন্য যে কোন দিনের চাইতে সুন্দর। দূরে একটা পাহাড়ের উপর বৃষ্টি হচ্ছে। সে দেখতে পাচ্ছে। কেমন অঝোর ধারায় বারিপাত! ঐ পাহাড়ের কাছে যেতে পারলে খুব ভালো হতো। না এখানে এখনি বৃষ্টির কোন সম্ভাবনা নেই। বাতাস বইছে। লঞ্চের ভট ভট শব্দ এখন তার ভালো লাগছে না। কেবিনে গিয়ে খানিকণ ঘুমিয়ে পড়লে ভালো হতো। সে কেবিনে চলে গেলো। ঘুমুনোর চেষ্টা করলো। এবং সে ঘুমিয়েও পড়লো।


হাতের ডিজিটাল ঘড়িটি থেকে পিট পিট আওয়াজ হতেই ঘুম ভেঙ্গে গেলো লোকমানের। তিনটা বাজে। পেট চো চো করছে। লঞ্চের পেটের মধ্যে একটা হোটেল আছে। সেই হোটেলেই ভাত খেয়ে নিল সে। এবার একটা ভেতো ঘুম দিলে মন্দ হয না। সে আবার ঘুমিয়ে পড়লো। সন্ধ্যা নাগাদ একটি জায়গায় এসে লঞ্চ এসে থামলো এবং লোকমান অজানা এক ভূবনে নেমে পড়লো। জানলো এ চায়গার নাম ভূষন ছড়া। এখানে থেকে তাকে ঘন্টা খানিক হাটতে হবে। তার পরেই সে পাবে ছোট হরিণা । লোকজনের কাছ থেকে পথের নির্দেশনা নিয়ে নিল।


হাটছে লোকমান। গুন গুন করে গান গাইছে সে। পাহাড়ী পথে হাটতে গিয়ে সে দেখলো সূর্যের লুকিয়ে যাওয়া। এই ছবিটা আঁকতে পারলে মন্দ হতো না।


রাত বাড়ছে। এভাবে এই পথে রাত পড়বে, লোকমান তা বুঝে ছিল। কিন্তু এর বিকল্প কোন কিছু তার হাতে নেই। রাতের খাবারের জন্য কিছু জিনিস তার ব্যাগে আছে। এ দিয়েই চলবে। তাছাড়া দুই এক রাত না খেলেও তার কোন কিছু আসে যায় না। এ অভ্যাস তার আছে। কিন্তু সে থাকবে কোথায়? পাহাড়ে সন্ধ্যা নামে ঝুপ করে। এই পথে চলা কষ্টকর। এখানে আসার আগে বুদ্ধি করে একটা টর্চ কিনেছিল সে । সেটা জ্বালিয়েই সে হাটছে। চারদিকে ঘুট ঘুট অন্ধকার। পাহাড়ে রাত নামলেই একটা বুনো গন্ধ নামে। সেই গন্ধ সে পাচ্ছে। ঘন্টা খানিক হাটার পর লোকমান চৌধুরী পরিশ্রান্ত হয়ে গেলো। একাকিত্বই হয়তো এ জন্য দায়ী। থাকবার জন্য ধারে পিঠে একটা জায়গা পেলে মন্দ হতো না। একটা ছোট টিলা সামনে পড়েছে। টর্চের আলো ফেলে সে দেখতে পেলো একটা ঘর। কেউ বোধ হয় এখানে থাকে। একটু কসরত করে টিলার গায়ে খাঁজ কাটা পথ দিয়ে উপরে উঠে গেলো সে।

‘কেউ কি আছেন ?’ একবকার দুই বার তিন বার। না কোন বারেই কোন ধরনের কোন শব্দ এলো না। খোদারনাম করে দরজায় ধাক্কা দিল লোকমান। টর্চের আলো ফেলে ঘরের সব কিছু দেখে নিলো। বাঁশের তৈরী এ ঘরটি খুব ছোট। ব্যাগে থাকা একটি মোমবাতি বের করে আগুন ধরিয়ে বুঝলো এ ঘরেই একটি কুপি আছে। সেটা জ্বালালেই হত। এ ঘরে আরও অনেক কিছু আছে। আছে একটি বাঁশের তৈরী মাচাং। যে মাচাংই বিছানা। একটা কাঁথা রয়েছে। ব্যাগ থেকে এটা খাবারের প্যাকেট বের করে খেয়ে নিল। ঘরের এক কোণে রাখা কালো মাটির ভাঁড়ে থাকা পানি খেয়ে কোন কিছু না ভেবেই ঘুমিয়ে পড়লো লোকমান।


পুরো জায়গাটি নির্র্জন। সকাল বেলায় যখন পাক পাখালির শব্দে লোকমানে ঘুম ভাঙ্গলো তখনও এ ঘরের কোন মালিক আসেনি। কাল রাতে বৃষ্টিও হয়েছিল। সকাল বেলা দেখতে পেলো পাহাড়ের হালকা হলুদ ভেজা মাটি। সকাল বেলা কোন খাবার না খেয়েই দুরের পাহাড় দেখতে শুরু করলো সে। এখানেই পায়ে চলা একটি পথ। দুই দিকে পাহাড়। অনেকটা গিরি খাতের মত। এটাকেই জলরঙে আকবে সে। ব্যাগ থেকে বিদেশী ফোল্ডিং ক্যানভাসটি বের করে আকার জন্য তৈরী করলো। কাগজে দুই তিনটা তুলির পোঁচ মারতে হঠাৎ কারো ডাকে মোহ ভঙ্গ হলো তার।
‘কে আপনি। আমার ঘরে কি করছেন? ’
একটি মেয়ের কণ্ঠ পেয়ে আশ্চার্য হলো লোকমান। এখানে একটি মেয়ে! পাহাড়ী মেয়ে। সাধারণ কিন্তু কথা বার্তায় সোজা সাপ্টা।
আমি লোকমান। ছবি আঁকি। কাল রাতে কোথাও থাকার জায়গা না পেয়ে এখানে এসে উঠেছি। আপনি?
আমি শ্যামলী। এটা আমাদের জুম ঘর। এই জমিতে আমরা এবার জুম করবো। তাই জমি তৈরীর কাজ চলছে।
এই পাহাড়ে আর কাউকে সে দেখতে পাচ্ছেনা। সবুজ। ন্যাড়া পাহাড় চারিদিকে । আর কোন কথা না বলে শ্যামলী একটা দা নিয়ে চলে গেলো পাহাড়ে। পথের ছবি আকছে লোকমান। ঢাকা থেকে আসা ফাইন আর্টস-এ মাস্টারর্স করা ছেলে। আর ঐ পাহাড়ী মেয়ে মাটি খুঁড়ছে। ফসল জন্মাবে বলে। .

না পথের ছবি সে আকতে পারেছ না। এই ছবিতে বারবার চলে আসছে মেয়েটি। বিষষটা কেমন যেনো পরিবর্তণ হয়ে যাচ্ছে। না তার চবি হচ্ছে না। মেয়েটি বার কয়েক তাকে দেখলো ঘাড় ফিরিয়ে। সকালে কোন কিছু খায়নি সে। আস্তে আস্তে দুপুর হয়ে যাচ্ছে। খিদে পাচ্ছে।

শ্যামলী গায়ের ঘাম মুছতে মুছতে এ দিকে আসছে। ওকে কেমন সুন্দর লাগছে। মানুষ কাজ করেও এত সুন্দর থাকে ! কাছে এসে মেয়েটি বললো, ‘এখন ভাত রাঁধবো। সঙ্গে শাক। আপনি খাবেন?’
‘না খেয়ে কি উপায় আছে? পেট চো চো করছে।’
এত কম সময়ে এ মেয়েটিকে কেমন আপন মনে হচ্ছে। মেয়েটি আপন করে নিতে পারে। অথচ কথা হয়েছে কয়েকটি মাত্র। এই ঘরে চাল ও থাকে। একট চুলোয় কিছু শুকনো ডাল পালা দিয়ে আগুন ধরালো মেয়েটি। ভাত রান্না হলো কিছুক্ষনের মধ্যেই। শাকও ভাজা হলো।
মেয়েটি খুব ভালো রাঁধতে পারে।
খাওয়ার পর এবার মেয়েটি বললো
‘আপনি কত দিন থাকবেন ?’
‘যতদিনে একটি পথ খুজে না পাই।’
‌'পথ?'
' হ্যা, পথ, ছবির পথ.. মানুষের পথ, পথ ভালোবাসার'
‘আমি যদি আপনাকে পথ দেখাই তাহলে কি চলবে?’
‘কোথায় সে পথ?’
‘একটু দূরে। হেটে যেতে হবে। যাবেন?’
‘যাবো।’ সংক্ষিপ্ত পরিচয়ে কোন মেয়ে এভাবে কাউকে আপন করে নিতে পারে জানা ছিল না। অথচ .....
সুন্দর চেহারার মেয়েটি তাকে শেখালো কিভাবে পাহাড়ী ভেঁজা পথে চলতে হয়। প্রথমে পায়ের বুড়ো আঙ্গুল ঠেসে দিতে হবে কাঁদায়। বুড়ো আঙ্গুল পুরো শরীরের ভার রক্ষা করবে। ভালোই শেখা হলো।


পাহাড়ের উপরের চলে গেছে পথ। দিনের বেলাতেও ঝিঝি পোকা ডাকছে। ভালো লাগছে। পাহাড়ের এ দিকটায় একটা ঢাল। এ ঢালের দিকে উঠতে হলে কষ্ট তো করতেই হবে। প্রথমে মেয়েটি উঠে গেল। কিন্তু এ ঢালু পথে লোকমানের উপর একা উঠা কোন ভাবেই সম্ভব নয়। একটা বুনো গাছ ধরে উঠার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলো সে।

‘আমার হাত ধরুন।’ চমকে উঠলো শ্যামলীর এ আহবান শুনে । বলে কি মেয়েটি তাকে হাত ধরতে বলছে?
এ হাত ধরা ছাড়া ওঠা সম্ভব নয়। যথেষ্ট সঙ্কোচ নিয়ে হাত ধরলো । উষ্ণ হাত। সেই হাত ধরে একটু টান দিতেই উপরে উঠে গেলো লোকমান....

আহা কি সুন্দর দৃশ্য। চারিদিকে পাহাড়। মাঝখান দিয়ে বয়ে যাচ্ছে একটি পথ। শুকনো নদীর মত। আশ্চার্য! সুন্দর! কাগজ পেন্সিল নিয়ে বসলো সে। প্রায় গা ঘেসে বসলো মেয়েটি। সে হয়তো কিছু একটা দেখতে চায়। তার আঁকা চিত্র। আস্তে আস্তে বিকাল হচ্ছে। পটে উঠে আসছে সেই পথ । স্বপ্নের পথ। এ পথের দেখা দিয়েছে একজন। এক পাহাড়ী মেয়ে।

আজ রাতে বাড়ি ফিরবে না শ্যামলী। তাকে আজ থাকতে হবে। কাল অনেক কাজ আছে। লোকমান মেয়ে দেখলে একটু লজ্জা পায়। এখনো পাচ্ছে। তার সবেচেয়ে অস্বস্তির বিষয়টি হচ্ছে এক ঘরে থাকা। এই ঘরে শোয়ার মত একটিই জায়গা। বসে বসে কাটালে কেমন হয়? রাতে আবারো কিছু খেয়ে দেয়ে দুই জন বসে বসে গল্প করলো। জানলো , মেয়েটি তার মা বাবার একমাত্র সন্তান । বাবা আগেই মারা গেছে। সংসার চালাতে হয় তাকেই। পাহড়ের মেয়েরা সমতলের মেয়েদের চেয়ে কাজ করে বেশী। তাই বোধহয় জমিতে তাকেই কাজ করতে স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় পাশ করার পর আর এগুয়নি তার লেখাপড়া। ছোট হরিণার এই জায়গা থেকে আরও প্রায় দুই মাইল দুরে তাদের গাঁ। মাঝে মাঝে রাতে এসে তাকে এখানেই থাকতে হয়।

নানা কথা বার্তার এক সময় মেয়েটি বললো ,‘ আপনি শুয়ে পড়ুন, আমি মেঝেতে শোব। সমস্যা নেই।’ পাহাড়ের মানুষ থাকে নানা সমস্যায়। কিন্তু তাদের কোন সমস্যা চেহারায় ফুটে উঠে না। দিব্যি নাপ্পি দিয়ে ভাত খায়, একটু আধটু দোচোয়ানী টানে, সিগারেট খায়। মাঝে মাঝে সরকারী বাহিনীর লাঠি কপালে জোটে। তাও সূখী তারা!

লোকমান উপরে শোবে না। কিন্তু তাকে শ্যামলীর আদেশ মানতে হলো। কোন মেয়ে হয়তো এই প্রথম তাকে আদেশের সুরে কথা বললো।

মেয়েটি শুয়ে পড়েছে। তার চোখে রাজ্যর ঘুম।
ঘুমুলে কোন মেয়েকে এত সুন্দর দেখায়। তা আগে কোনদিন বুঝেনি লোকমান। কারণ ঘুমুতে যাওয়া কোন তরুনীকে সে দেখেনি। এই ছবি আঁকতে চায় সে। হঠাৎ তার মনে হলো একটু ছুয়ে দেখলে মন্দ হতো না কিন্তু এটা শোভন হবে? শোভন অশোভন বোঝে না পুরুষ। হাতের স্কেচ খাতাটি নিলো সে। নিচে নেমে একটু ছুতে গেলো সে মেয়েটির মুখ.....


৫.
আজকের সকালটা আরও অন্য রকম। ইতিমধ্যে দু দুটি ছবি এক ফেলেছে লোকমান। গত দিনের চেয়ে বেশ ভার মনে হলো শ্যামলীকে। সকালে হাতে একটি তুলি নিয়ে সে লোকমানকে বললো , এটা আমি রেখে দেবো। আপনি এবার চলে যান। পথের ছবিতো আঁকা হয়েছে।

লোকমান ভাবেনি এভাবে তাকে চলে যেতে বলা হবে। সবুজ পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে সে বললো
‘সেই পথ তো তুমি দেখিয়েছো।’
শ্যামলীর চোখে পাহাড়ের ছায়া। বললো, ‘পথটি ভুল ছিল...’

পাহাড়ের সরু পথ আজ বেশী পিচ্ছিল। এ পথে সবাই হাটতে পারে না। পাহাড়ে হাটতে শিখতে হয়। লোকমান চৌধুরী সেই পথে হাটতে শিখেছে.....
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মার্চ, ২০০৯ ভোর ৫:৫৩
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সমাধান দিন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩১




সকালে কন্যা বলল তার কলিগরা ছবি দিচ্ছে রিকশাবিহীন রাস্তায় শিশু আর গার্জেনরা পায়ে হেটে যাচ্ছে । একটু বাদেই আবাসিক মোড় থেকে মিছিলের আওয়াজ । আজ রিকশাযাত্রীদের বেশ দুর্ভোগ পোয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নিছক স্বপ্ন=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৮



©কাজী ফাতেমা ছবি
তারপর তুমি আমি ঘুম থেকে জেগে উঠব
চোখ খুলে স্মিত হাসি তোমার ঠোঁটে
তুমি ভুলেই যাবে পিছনে ফেলে আসা সব গল্প,
সাদা পথে হেঁটে যাব আমরা কত সভ্যতা পিছনে ফেলে
কত সহজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

একদম চুপ. দেশে আওয়ামী উন্নয়ন হচ্ছে তো?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৯



টাকার দাম কমবে যতো ততোই এটিএম বুথে গ্রাহকরা বেশি টাকা তোলার লিমিট পাবে।
এরপর দেখা যাবে দু তিন জন গ্রাহক‍কেই চাহিদা মতো টাকা দিতে গেলে এটিএম খালি। সকলেই লাখ টাকা তুলবে।
তখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে গরু দুধ দেয় সেই গরু লাথি মারলেও ভাল।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১২:১৮


০,০,০,২,৩,৫,১৬, ৭,৮,৮,০,৩,৭,৮ কি ভাবছেন? এগুলো কিসের সংখ্যা জানেন কি? দু:খজনক হলেও সত্য যে, এগুলো আজকে ব্লগে আসা প্রথম পাতার ১৪ টি পোস্টের মন্তব্য। ৮,২৭,৯,১২,২২,৪০,৭১,৭১,১২১,৬৭,৯৪,১৯,৬৮, ৯৫,৯৯ এগুলো বিগত ২৪ ঘণ্টায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×