*** মানুষ দুনিয়ায় সীমিত সময়ের জন্য আসে, তারপর এখান থেকে চিরবিদায় নিয়ে চলে যায়। কিন্তু কোথায় যায়? এ দুনিয়ায় কৃত ভালো-মন্দ কাজের প্রতিদান পাওয়ার জন্যই প্রত্যেককে মৃত্যুর পরপারের জীবনে চলে যেতে হয়। সেখানে আর কোন কাজ করার সুযোগ থাকে না। সেখানে শুধু হিসাব ও প্রতিদান।
এদিকে অনেকেরই প্রথম জীবনটা আল্লাহ্র দ্বীনের জন্য কাজে লাগেনি। অনেকে আবার প্রথম জীবনে দ্বীনের বহু কাজ ও খেদমত করার পর শেষকালে দ্বীনের পথে থাকতে পারে না। এই উভয় প্রকার লোকের জন্য জীবনের শেষকালে দ্বীনের কাজে মগ্ন থাকা ছাড়া মুক্তির কোন পথ নেই। তাছাড়া সকলেরই তো জীবনের সময় চলে যাচ্ছে এবং বিদায়ের সময় ঘনিয়ে আসছে। কাজেই এ সময় যথাসাধ্য সত্কাজে মগ্ন থাকা একান্ত কর্তব্য। নবী (স.) তাঁর জীবনের শেষকালে বেশী বেশী ইবাদত করে কাটিয়েছেন। যার শেষ ভালো তার সব ভালো। এ কারণেই আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (স.) এ সময় বিশেষভাবে আখেরাতের জন্য বেশী বেশী উত্তম কাজের মাধ্যমে প্রস্তুত হতে উত্সাহ দিয়েছেন।
_________
"... (আল্লাহ তায়ালা বলবেন,) আমি কি তোমাদের দুনিয়ায় এক দীর্ঘ জীবন দান করিনি? সাবধান হতে চাইলে কেউ কি সাবধান হতে পারতো না? (তাছাড়া) তোমাদের কাছে তো সতর্ককারী (নবী)-ও এসেছিলো; ..."
(সূরা ফাতেরঃ আয়াত ৩৭)
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) ও বিশেষজ্ঞ আলেমগণ বলেনঃ 'আমি কি তোমাদের দুনিয়ায় এক দীর্ঘ জীবন' এ বাক্যটিতে ষাট বছর বয়সের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। এই মতের সমর্থন পরবর্তী হাদীসেও পাওয়া যায়। এ ব্যাপারে কেউ কেউ আঠার বছরের কথাও বলেছেন। ইমাম হাসান, ইমাম কাল্বী ও মাসরূক (র.) চল্লিশ বছরের ব্যাপারে একমত হয়েছেন। ইবনে আব্বাস (রা.)-র দ্বিতীয় একটি বক্তব্যও এই চল্লিশ বছরের সমর্থনে পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে মদীনাবাসীদের একটি আমল উদ্ধৃত করা হয়েছে যে, তাদের কেউ চল্লিশ বছরে পৌঁছে গেলে সে নিজের সময়কে ইবাদতের জন্য নির্দিষ্ট করে নিত। আবার কেউ কেউ এর অর্থ করেছেন নিছক বালেগ হওয়া।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ যে ব্যক্তির মৃত্যুকে পিছিয়ে দেন তার বয়সের ৬০ বছর পর্যন্ত তার ওজর কবুল করতে থাকেন। (বুখারী)
ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, উমার (রা.) আমাকে বদরের যুদ্ধে যোগদানকারী বিশিষ্ট ব্যক্তিগণের সাথে মজলিসে বসাতেন। তাতে তাদের কেউ কেউ এটা একটু অপছন্দ করে বলেন, এ ছেলেটি আমাদের সাথে কেন মজলিসে বসে? আমাদেরও তো তার মত ছেলেপেলে আছে। উমার (রা.) বললেন, এ ছেলেটি কোথাকার (অর্থাৎ নবী পরিবারের) তা তোমরা জান। একদিন তিনি আমাকে তাদের সাথে ডেকে আনলেন। আমার ধারণা হল, নিশ্চয়ই সেদিন তাদেরকে বিষয়টা বুঝিয়ে দেয়ার জন্যই তিনি আমাকে ডেকে এনেছেন। তিনি বললেন, "ইযা জাআ নাসরুল্লাহ"-এর সম্পর্কে তোমাদের বক্তব্য কি? কেউ উত্তরে বললেন, আল্লাহ যেহেতু আমাদেরকে সাহায্য করেছেন এবং বিজয় দান করেছেন, কাজেই তাঁর প্রশংসা করা এবং তার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করার জন্য আমাদেরকে হুকুম দেয়া হয়েছে। আর কেউ শুধু চুপ থাকলেন, কিছুই বললেন না। তারপর তিনি আমাকে বললেন, হে ইবনে আব্বাস ! তুমিও কি এরূপ কথাই বল? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, তুমি কি বল? আমি বললাম, এটার অর্থ হচ্ছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইন্তিকাল, যা আল্লাহ তাঁকে জানিয়ে দিয়েছেন। অর্থাৎ আল্লাহ এরূপ বলেছেন যে, যেহেতু আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় এসে গেছে এবং সেটা তোমার ইন্তিকালের লক্ষণ, কাজেই তুমি তোমার রবের প্রশংসা কর এবং তাঁর নিকট ক্ষমা চাও। তিনি তওবা কবুলকারী। এরপর উমার (রা.) বলেন, এ ব্যাপারে তুমি যা বলছ সেটা ছাড়া আমি আর কিছু জানি না। (বুখারী)
আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মহান আল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর তাঁর ইন্তিকালের কাছাকাছি সময় থেকে তাঁর ইন্তিকালের পূর্ব পর্যন্ত একাধারে পূর্বের চেয়ে বেশী ওহী নাযিল করেছেন। (বুখারী ও মুসলিম)
জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রত্যেক বান্দাকে ঐ অবস্থায় পুনর্জীবিত করা হবে যে অবস্থায় সে মারা গেছে। (মুসলিম)
আইশা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, "ইযা জাআ নাসরুল্লাহে ওয়াল ফাতহু" সূরা নাযিল হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি নামাযেই "সুবহানাকা রব্বানা ওয়া বিহামদিকা আল্লাহুম্মাগফিরলী" অবশ্যই বলতেন (বুখারী ও মুসলিম)
জীবনের শেষভাগে বেশী বেশী উত্তম কাজ করার প্রতি উত্সাহদানে কোরআন ও হাদীসের শিক্ষা
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
১০টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা
২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন
যেভাবে শরণার্থীরা একটি দেশের মালিক হয়ে গেলো!
এবার একটি সেমিনারে প্রথমবারের মতো একজন জর্ডানির সাথে পরিচয় হয়। রাসেম আল-গুল। ঘনকালো মাথার চুল, বলিষ্ট দেহ, উজ্জ্বল বর্ণ, দাড়ি-গোঁফ সবই আছে। না খাটো, না লম্বা। বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্রতিটি সেশন... ...বাকিটুকু পড়ুন
নিউ ইয়র্কের পথে.... ২
Almost at half distance, on flight CX830.
পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১
হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন
সামুতে আপনার হিট কত?
প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন
ল অব অ্যাট্রাকশন
জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন