somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সিরিয়া যুদ্ধের ভেতরের খবর!!

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গোটা বিশ্বের আসল কুতুব হল দুই গ্রুপ ব্যবসায়ী। এক গ্রুপ অস্ত্রের ব্যবসা করেন। অন্যগ্রুপ করেন তেল ব্যবসা। এই দুই গ্রুপের ওঠাবসা, খাওয়া-দাওয়া, ভাজন-ভোজন, গর্দন-মর্দন, তর্জন-গর্জন, অর্জন-বর্জন সব সময় একসাথে হয়। তারা একই টেবিলে বসে রাতের আঁধারে মদ ভাগাভাগি করে। বিলাসী বাংলোয় বসে নারী ভাগাভাগি করে। আর সমুদ্রবিলাসে বসে জুয়া খেলে। গোটা বিশ্ব এদের হাতের মুঠোয়। এদের এক গ্রুপ হল মোসাদ। আরেক গ্রুপ হল সৌহাদ। মোসাদ-সৌহাদ ভারী গলায় গলায় খাতির। প্রচন্ড প্রতাপশালী হওয়ায় বিশ্বের তাবদ বড় বড় শক্তিধর রাষ্ট্র এদের তোয়াজ করেই চলেন। সেখানে অবশ্য অর্থের লেনদেন এবং স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি থাকে। পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি তেলের অস্তিত্ব রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে। তাই দুর্ভাগ্যবসত এই দেশগুলোই এদের জুয়ার কারবারে প্রধান লক্ষ্যবস্তু। কোনো অজুহাত দিয়ে যুদ্ধ বাধিয়ে দিতে পারলেই অস্ত্র যেমন বিক্রি হবে, তেমনি তেলের খনির দখলও নেওয়া যাবে। এই জুয়া খেলা জায়েজ করতেই ইসরাইল নামে একটি বিতর্কিত রাষ্ট্রের অস্তিত্ব রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যে। আয়তনে এটি যতোই ছোট হোক, শক্তি আর হুংকারে এটি অনেক বড় শক্তিধর। বিশ্বের মহা শক্তিধর খোদ আমেরিকাই এই ইসরাইলের পরামর্শ আর বুদ্ধিতে চলে। ইসরাইল যদি বলে এখন রাত। আমেরিকা চোখ বন্ধ করেই বলবে, হ্যা এখন রাত। ইসরাইল যদি বলে এখন বসন্ত। আমেরিকা এক পায়ে দাঁড়িয়ে হাই ছেড়ে বলবে, হ্যা এখন বসন্ত। আমেরিকার যে কোনো প্রেসিডেন্টকে পর্যন্ত ইসরাইলের নির্মিত বিশেষ ধরনের ইহুদি টুপি পড়ে নির্বাচনে জেতার পর শপথ নিতে হয়। নাসার সব বড় বড় বিজ্ঞানী ইসরাইলের ইহুদি। গোটা আমেরিকার ওঠাবসা ইসরাইলের পরামর্শ-নির্দেশ আর দিক নির্দেশনায়। তো শিবের গীত না গেয়ে চলুন আসল আলোচনায় যাওয়া যাক।
তেলব্যবসায়ী মহামতি কাতারের ইচ্ছে হল, কাতার থেকে পারস্য উপসাগর দিয়ে তুরস্কে একটি তেল-গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণ করা। এই তেল-গ্যাস পাইপলাইনের যাতায়ত পথেই সিরিয়ার অবস্থান। সিরিয়াকে রাজী না করিয়ে কাতার সাহেব তুরস্কের সঙ্গে এই তেল-গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণ করতে পারবে না। আসাদ সাহেব রাজী নয়। তো, কি করা, কি করা? আসাদ সাহেবের ঘাড় মটকে দিয়ে সিরিয়ায় একটি পুতুল সরকার বসাতে পারলেই কাজটা সহজ হয়ে যাবে। কে পারবে সেই দায়িত্ব নিতে? অবশ্যই কাতারের দোস্ত মহান আমেরিকা সেই কাজটি খুব দক্ষতার সঙ্গেই পারার কথা! এর আগে ইরাক থেকে, লিবিয়া থেকে, ইয়েমেন থেকে মিশর থেকে কিভাবে শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে তেল-গ্যাস দখল করা সম্ভব, তা আমেরিকা প্রমাণ করেছে। সো, আর দেরি কেনো? ধরো এবার সিরিয়াকে। আসাদ সাহেবের ঘাড় মটকে দাও।
আসাদ সাহেব আবার রাশিয়ার বন্ধু। মিলিটারি থেকে শুরু করে আসাদ সাহেবের সকল পাওয়ার প্লাট দেখভাল করে রাশিয়া। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সাহেব আবার আসাদ সাহেবের দীর্ঘদিনের দোস্ত। এর আগে আসাদের বাবা হাফিজ আল আসাদও পুতিনের ভালো বন্ধু ছিল। পুতিন তখন রাশিয়ার প্রধান গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবি'র প্রধান। তো, বন্ধু'র বিপদে বন্ধু এগিয়ে আসবে এটাই স্বাভাবিক। মাঝখানে অস্ত্র আর তেল ব্যবসার কারবার তো থাকলোই।
সৌদি-আরব হল আমেরিকার একটি পাচাটা দালাল। ইসরাইলের ইন্ধনে সৌদি-আরব সবচেয়ে বেশি আগ্রহী আসাদের ঘাড় মটকানোর ব্যাপারে। যে কারণে, সৌদি-আরবের গোয়েন্দা শাখার প্রধান প্রিন্স বান্দার বিন সুলতান গোপনে সিরিয়ার বিদ্রোহীগোষ্ঠিকে অস্ত্র-অর্থ-গোলাবারুদ দিয়ে শুরু থেকেই সমর্থণ করে আসছিল। সিরিয়ার বিদ্রোহীদের কাছে রাসায়নিক অস্ত্রের চালান সরবরাহ করেছে এই সৌদি প্রিন্স বান্দার বিন সুলতান। অসাবধনতাবসত সেই রাসায়নিক অস্ত্রের গোপন পরীক্ষার সময় সিরিয়ায় অনেক বেসামরিক মানুষ মারা যায়। সঙ্গে সঙ্গে এটাকেই ঢাল হিসেবে আসাদের বিরুদ্ধে অজুহাত হিসেবে প্রমাণে লেগে যায় সৌদি-আরব। দোস্ত আমেরিকাকে পায় পাশে। আমেরিকা আবার ফ্রান্সকে উসকে দেয় ভালো অস্ত্র ব্যবসার একটা লোভ দেখিয়ে। আমেরিকা-ফ্রান্স-সৌদি-আরব-বৃটেন-কাতার-তুরস্ক-ইসরাইল দলবেধে বলতে শুরু করলো- আসাদের সেনাবাহিনী বিদ্রোহী সিরিয়ানদের উপর রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহার করে নিরীহ সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে। অতএব, আসাদকে শক্তি প্রয়োগ করেই উৎখাত করা হবে।
কিন্তু আমেরিকা-ইসরাইলের সেই ইচ্ছায় বাধ সাধলেন পুতিন। পুতিন আসাদের পুরানো বন্ধু। বন্ধু'র বিপদে পাশে দাঁড়িয়েছেন। সেই সঙ্গে শত্রুর শত্রু হল মিত্র থিওরিতে ইরান ও হিযবুল্লাহও আসাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। সৌদি প্রিন্স বান্দার বিন সুলতান স্বয়ং পুতিন সাহেবকে এই বলে হুমকি দিয়েছেন যে, আগামী বছর (২০১৪ সালে) রাশিয়ার সোচিতে যে শীতকালীন বিশ্ব অলিম্পিক হবে সেখানে চেচেন বিদ্রোহীদের দিয়ে হামলা চালোনো হবে, যদি না রাশিয়া সিরিয়ার সাথে বন্ধুত্ব থেকে সরে না দাঁড়ায়। আর একটা প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন সৌদি গোয়েন্দা প্রধান প্রিন্স বান্দার বিন সুলতান, সেটি হল, যদি রাশিয়া সৌদি-আরবের কথা রাখে, তাহলে শীতকালীন অলিম্পিক নিরাপদে হবে এবং আসাদের পতনের পর সিরিয়ায় অবস্থিত রাশিয়ার নৌঘাটি'র নিরাপত্তাও তারা দেখবে।
সৌদি-নাবালক প্রিন্স বান্দার বিন সুলতানের কথা শুনে পুতিন সাহেব মুচকি হাসলেন। ইরানের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানী'র সঙ্গে আগামীকাল ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৩ তারিখে কিরঘিস্তানে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া সাংহাই কো-অপারেশান অর্গানাইজেশানের বার্ষিক সম্মলনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন আলাদা বৈঠক করবেন। উদ্দেশ্য, ২০১০ সালে ইসরাইল ও আমেরিকার চাপে রাশিয়া ইরানের কাছে যে এস-৩০০ এয়ার ডিফেন্স মিসাইল বিক্রি করা বন্ধ রেখেছিল, সেটি এখন বিক্রি করবে। আর তেহরানে নতুন আরেকটি পারমানবিক চুল্লী স্থাপনে রাশিয়া সহযোগিতা করবে। মধ্যপ্রাচ্যে রাশিয়াও সেই সুযোগে মিত্রদের সঙ্গে শক্তি বাড়ানোর খেলায় মেতে উঠেছে। সো, ওবামা-কেরি-বান্দার বিন সুলতানদের হুংকারে আসাদের আপাতত কিছুই না হবার আলামত প্রায় চূড়ান্ত। মাঝখান দিয়ে সিরিয়া যুদ্ধের শান্তিপূর্ণ সমাধানে নজির হিসেবে পুতিনের ক্যারিশমায় এ বছরের নোবেল শান্তি পদকের হাতছানি এখন এডওয়ার্ড স্নোডেন আর ইউকিলিক্স-খ্যাত জুলিয়ান এসেঙ্গাকে ছাড়িয়ে পুতিনের দিকেই ধাবিত হচ্ছে।
তাই বলে কি অস্ত্র আর তেল ব্যবসা থেমে থাকবে? মোটেই না। মোসাদ আর সৌহাদ সাহেবরা নতুন ফন্দি নিশ্চয়ই বের করবেন। ১৯৯০ সালে স্বৈরাচার এরশাদের পতনের পর থেকে বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার পেছনের সবচেয়ে বড় কারণ হল, বাংলাদেশে ব্যাপক গ্যাস, তেল এবং কয়লার অস্থিত্বের সন্ধান পাওয়া। বাংলাদেশের এই তেল-গ্যাস-কয়লার গন্ধে আমেরিকার ঘুম তো হারাম হয়ে গেছে। তাই সে কোনো না কোনো অজুহাতে বাংলাদেশে একটি অস্থিতিশীল সরকার কায়েম করাতে তারা বদ্ধপরিকর। আর আমাদের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি আমেরিকার সেই ফাঁদে পা দিয়ে ক্ষমতার পাল্টাপাল্টি করছে। ক্ষমতার আসল চাবি ওই মোসাদ আর সৌহাদ দুই বিগ জায়ান্টের হাতেই। সো, সাধু সাবধান।।
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যমদূতের চিঠি তোমার চিঠি!!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:০৮

যমদূতের চিঠি আসে ধাপে ধাপে
চোখের আলো ঝাপসাতে
দাঁতের মাড়ি আলগাতে
মানুষের কী তা বুঝে আসে?
চিরকাল থাকার জায়গা
পৃথিবী নয়,
মৃত্যুর আলামত আসতে থাকে
বয়স বাড়ার সাথে সাথে
স্বাভাবিক মৃত্যু যদি নসিব... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×