খবরটা আগেই জেনেছিলাম এখানকার আরেক ব্লগারের দৌলতে। ব্লগার ধারাভাষ্য আগেই তার একটি পোস্টে জানিয়েছিল যে "মুক্তান্বেষা" নামে একটি ম্যাগাজিন সম্প্রতি ঢাকায় বেরিয়েছে (আজিজ সুপার মার্কেটে পাওয়া যায়) যাতে সামহোয়্যার ইন এবং সচলায়তনের বেশ কয়েকজন পরিচিত ব্লগারের লেখা আছে। আজ পত্রিকাটি হাতে এল। একটু আগেই পড়া শুরু করলাম। ম্যাগাজিনটা বেশ ভালই। অনেক গুলো ভাল ভাল লেখা আছে এতে। আনোয়ার সাদাত শিমুলের "পাকমন পেয়ার" ছাপার হরফে দেখে সত্যই খুব আনন্দিত হলাম। আবারো পড়লাম। এক কথায় অনবদ্য। লেখার গাঁথুনি, স্টাইল, থিম -সবকিছুই। গল্পটির নীচে আবার সম্পাদকের একটি চিরকূট- "খালেদা-নিজামীর চার বছরের শাসনে শুধু দুর্নীতি আর মৌলবাদী সন্ত্রাস প্রাতিষ্ঠানিক রূপই পায় নি, এর ভয়ঙ্কর প্রভাব আমাদের একশ্রেণীর নতুন প্রজন্মের তরুণতরুণীর ওপরও বর্তেছে। তাদের ইসলাম প্রীতির সাথে সাথে বৃদ্ধি পেয়েছে পাকিস্তান প্রীতিরও। প্রবন্ধকার আমাদের প্রজন্মের একটি অংশের চিন্তা-মানসিকতা তুলে ধরেছেন সুন্দরভাবে - একটু প্রচ্ছন্ন ব্যঙ্গাত্মকভাবে।" মন্তব্য নিষ্প্রয়জন!
মজার ব্যাপার হল, পত্রিকাটিতে এমন কিছু ব্লগারের লেখা আছে যাদের লেখা ব্লগে প্রকাশিত হওয়ায় সামহোয়্যার-ইন এর মডারেটরদের মাথায় আকাশ ভেংগে পড়েছিল। ধর্মানুভূতিতে আঘাত হানার অপরাধে সে সমস্ত ব্লগারদের পোস্ট মুছে দিয়ে, ব্যান করে নানা কীর্তি কাহিনী করে কন্ঠরোধ করতে চেয়েছিলেন ব্লগের হর্তাকর্তারা। ভেবেছিলেন সামহোয়্যার থেকে তাড়িয়ে দিলেই সবকিছু রক্ষা পেয়ে যাবে। যে যুঞ্চিক্ত-এর লেখা নিয়ে এত গোলমাল হল মাস খানেক আগে, সেই যুঞ্চিক্ত-এর লেখা দিব্যি পত্রিকার পাতায় চলে এসেছে। এতে সমাজ ভেংঙ্গেও পড়ল না, উচ্ছন্নেও গেল না। মাঝখান থেকে মডুরামরাই নিজেদের জোকার প্রমাণিত করলেন। শুধু যুঞ্চিক্ত নয়, মুক্তান্বেষায় আছে দীক্ষক দ্রাবিড়ের "মানুষের পয়গম্বর হয়ে ওঠার সুলুক-সন্ধান"-এর মত স্পর্শকাতর প্রবন্ধ। মানুষ তা মনোযোগ দিয়ে পড়ছেও। মানছে কি মানছে না - তা পরের কথা, অন্ততঃ বিপরীত কথাটা শুনবার মত সুযোগ তো পাচ্ছে। গলা টিপে যে চিন্তার স্বাধীনতা রুদ্ধ করা যায় না, তা আবারো প্রমাণিত হল। চিন্তার ঘুনপোকা -সে বড়ই একরোখা; কি বল বাছারা?
অথচ, মাসুদা ভাট্টির দৃষ্টান্ত থেকেই শিক্ষা নিতে পারতেন মডারেটরেরা। মাসুদা ভাট্টি একসময় ব্লগ করতেন এখানে। একটা উপন্যাস লিখছিলেন ধারাবাহিকভাবে। ব্লগের কর্ণধাররা সেই উপন্যাসের অধ্যায়গুলো 'ডিলিট' করে দিলেন অশ্লীলতার অভিযোগে আর ধর্মানুভুতিতে আঘাত হানার অপরাধে। কি ঠুনকো তাদের অনুভুতি! হাল্কা বাতাসেই ভেঙ্গে পড়ে। ব্লগুরামরা ব্যান করে দিলেও খ্যাতনামা প্রকাশনা সংস্থা আগামী প্রকাশনী এর পরের বছরই উপন্যাসটি প্রকাশ করে দিল "তরবারির ছায়াতলে" নামে। নিমেষেই তা পৌঁছে গেল হাজার হাজার পাঠকের কাছে। কোন উচ্চবাচ্যও হল না, কারো কোন অনুভুতিও ভেঙ্গে পড়ল না। বইটি প্রকাশের পর কেউ লেখকের কূশপুত্তলিকা দাহ করেনি। প্রকাশকের উপর হামলা করেনি। তাতে কি প্রমাণিত হল? প্রমাণিত হল যে, চিন্তার কন্ঠস্বর রোধ করা যায় না। এ নিয়ে শোহেইল মতাহির চৌধুরী "তথ্যপ্রযুক্তির গরুরগাড়ি এবং মাসুদা ভাট্টির তরবারির ছায়াতলে" নামে সুন্দর একটি লেখা লিখেছিলেন। বলেছিলেন, "তাতে শেষ পর্যন্ত ব্লগ কর্তৃপক্ষের সাহিত্য বিচারের অনভিজ্ঞতাই ধরা পড়ে। বাণিজ্য বাঁচাতে তাদের আপোষকামিতা ও মেরুদন্ডহীনতা স্পষ্ট হয়।" কথা ঠিকই। সামহোয়্যার-এর নির্মাতারা হয়ত ভাল প্রোগ্রামার, কিন্তু ভাল সমাজ পর্যবেক্ষক নন, তাদের চিন্তাধারা ঘুরপাক খায় সেই মান্ধাতা চিন্তার মোড়লদের ঢং -এই। শোহেইল ঠিকি বলেন -"তাতে গরুরগাড়িতে হেডলাইট লাগানোর অগ্রগতি অর্জিত হয়। ওয়েবসাইটে 'আল্লার আইন' প্রতিষ্ঠার বোমা বানানোর রেসিপি পাওয়া যায়।"
তরবারির ছায়াতলে যে শিক্ষাটা দিতে দেরী করেছিল আমাদের ব্লগের হর্তাকর্তাদের, এবারে মুক্তান্বেষা এসে তার ষোলকলা পূর্ণ করে দিল। শুধু শিমূল, যুঞ্চিক্ত বা দ্রাবিড় নন, ম্যাগাজিনটিতে আছে প্রঃ রিচার্ড ডকিন্স, ডঃ অজয় রায়, ডঃ শহিদুল ইসলাম, তসলিমা নাসরিন, দ্বিজেন শর্মা, ডঃ জাফর উল্লাহ, নাট্যকার মামুনুর রশীদ, অপার্থিব, অভিজিত রায়, বেলাল বেগ, অনন্ত, আপার্থিব, নাঈম মোহায়মেন, হায়দার আকবর রনো সহ অনেকের-ই খুব ভাল ভাল প্রবন্ধ।
চিন্তার কন্ঠস্বর রোধ না করতে চাইলে ম্যাগাজিনটা পড়তে পারো তোমরা।
Restriction of free thought and free speech is the most dangerous of all subversions.
আলোচিত ব্লগ
=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=
©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন
ফিরে দেখা - ১৩ মে
১৩ মে ২০০৬
দমননীতির অদ্ভুত কৌশল
সরকার নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধী দলের ওপর দমন নীতির আশ্রয় নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দ্রুত বিচার আইন ও পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবহার করে দমন... ...বাকিটুকু পড়ুন
কাঁচা আম পাড়ার অভিযান
গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরের বাড়ীয়া ইউনিয়নের দেউলিয়া গ্রামে আমার প্রায় ৫২ শতাংশ জমি কেনা আছে। সেখানে ছোট একটি ডোবা পুকুর, অল্প কিছু ধানের জমি আর বাকিটা উঁচু ভিটা জমি। বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমরা কেন এমন হলাম না!
জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি
২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন