আমার মনে হয় খোকা পংখিরাজে উড়ে এসেছে। আসার দিন সকাল সকাল উঠে তার গ্রহটা ঠিক ঠাক করল। আগ্নেয়গিড়ি গুলো ঝাড়ু দিল। খোকার দুটো আগ্নেয়গিড়ি ছিল। নাস্তা বানানোর জন্য সেগুলি খুব দরকারী জিনিস। একটা নিস্ক্রিয় আগ্নেয়গিড়িও খোকার ছিল। হয়ত কোন দিন কাজে লাগলেও লাগতে পারে, তাই সেটাও ঝাড়ু দিল। জমে উঠা ছাই ঝাড়ু দিয়ে উপর থেকে সরিয়ে রাখলে আগ্নয়গিড়ি গুলি হঠাৎ অগ্নুৎপাত না করে বরং এক বলয়ে জ্বলতে থাকে। খোকার গ্রহে অগ্নুৎপাতটা চূলার আগুনের চেয়ে বেশী গরম হয়না। আমাদের পৃথিবীতে আমরা খুব ক্ষুদ্র বলেই আগ্নেয়গিড়ি গুলি পরিচ্ছন্ন রাখতে পারি না। যার ফলে ভয়ঙ্কর সব অগ্নুৎপাত শিকার হই। আসন্ন বিদায়ের দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে খোকা বটের চাড়া গুলি তুলছে। আর কখনো ফিরে আসবে এমন চিন্তা এখন ওর মাথায় নেই। কিন্তু এসব নিত্যদিনের কাজ গুলি করতে খোকার আনন্দই হল। এবং যখন সে ফুলটি শেষ বারের মত জলসিক্ত করে বেরাটা দিতে যাবে তখন তার খুব কাঁদতে ইচ্ছে করছিল।
এবার তাহলে আমি যাই।
ফুল কিছু বললনা।
আসি, খোকা আবার বলল।
ফুলটা কাশলো। কিন্তু সেটা সর্দি কাশি নয়।
আমি খুব বোকামি করেছি। শেষ পর্যন্ত স্বীকার করল সে। এবং খোকাকে বললো:
আমায় ক্ষমা করো। আর সব সময় সূখী হতে চেষ্টা করো।
কোন প্রকার অভিযোগ না শুনে খোকা একটু অবাক হল। খোকা স্তব্ধ হয়ে বেরায় হেলান দিয়ে দাড়িয়ে রইল। এই সান্ত সৈম্য মূর্তিকে কিছুতেই বুঝতে পারলনা সে।
আমি কিন্তু তোমাকে ভালবাসি, তুমি তা জানন। সেটা আমার ব্যার্থতা। কিন্তু সেটা কোন বড় কথা নয়। তবে তুমিও আমার মতই বোকা ছিলে। সব সময় সূখী হতে চেষ্টা করো। বেরাটার আর প্রোয়োজন নেই।
কিন্তু বাতাস বইছে যে।
ঠান্ডাটা এত লাগেনি, যে... । আমি একটা ফুল তো তাই, রাতের হাওয়াটা আমার ভালই লাগবে।
কিন্তু পশুপাখি তো আসতে পারে?
দু'একটা প্রজাপতির ভার বইতে না পারলে মৌমাছির দেখা পাব কি করে। সেটাও খুব মজার। এ ছাড়া আমাকে আর কে দেখতে আসবে? তুমি তো বহু দূর চলে যাচ্ছ। কিন্তু বড় বড় পশুগুলিকে আমি ভয় পাই না। তাদের জন্য আমার কাঁটাগুলিই যথেষ্ট। এই বলে স্বগর্বে কাঁটা গুলি দেখাল আর বলল:
এত দীর্ঘ করনা বিদায়টা, এতে কষ্ট বারে। স্থির যখন করেই ফেলেছ, তবে যাও।
পাছে বিচ্ছেদের বিরহে তার কান্না খোকার সামনেই ঝড়ে পরে। তাই এত তাড়া। খুব অহংকারী ফুল তো এটা। চলবে...
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৭ সন্ধ্যা ৭:৫০