নতুন রুমে প্রথম প্রথম সব কিছুই পরিপাঠি থাকে। কয়েক সপ্তাহ যেতে না যেতেই সব আগের মতো । এখন যদিও পুরাতন বসের সাথে আড্ডা কম হয়, তবে সেই সময়টা জানালা দিয়ে থাকিয়ে কাভার করে দেই। একদম চোখের সামনে বিরাট জানালা। একটার পর একটা প্লেন ল্যান্ড করছে। দেখতে ভালোই লাগে। তবে বেশিরভাগ সময়ই জানালাটা পর্দা দিয়ে ঢেকে দেই। বারবার ওদিকে চোখ গেলে তো আর কাজ হবে না।
পুরাতন বস মাঝে মাঝে এসে ম্যারাতন আড্ডা দিয়ে যায়। দু'জন তখন টেবিলের উপর পা তুলে আড্ডা। আজকে অবশ্য একটা অফার নিয়ে এসেছিলো। গত বছর দু'জন মিলে একটা সফটওয়্যার তৈরি করেছিলাম। সফটওয়্যারটা এখন সুইজারল্যান্ডে একটা পাওয়ার কোম্পানি ব্যবহার করছে। কিছু ঝামেলা হয়েছে। এখন কাউকে যেতে হবে। আমি বলেছি মাফ করো। আমি এখন আর ঐ প্রজেক্টের আন্ডারে না। এমনিতেই আগামীকাল দুই দিনের জন্য আমাকে অন্য শহরে যেতে হবে। প্রায় ৫ ঘন্টা ড্রাইভ করে যাওয়া। যদিও দু'জন যাচ্ছি। হয়ত আগামী পরশু থেকে এখানে রোযা শুরু হয়ে যাবে। প্রথম রোযাটা না খেয়ে রাখতে হবে। অনেক লম্বা দিন, তার উপর আবার ৫ ঘন্টা যার্নি।
বস পাল্টা প্রশ্ন করে বসে, তাহলে প্লেনে যাচ্ছ না কেনো?
-আমাকে একটা ডিভাইস নিয়ে যেতে হবে। প্লেনে এগুলো ট্রান্সপোর্ট করা ঝামেলা।
দু'জন আরও কিছু খুশগল্প করে কাজে মনোনিবেশ।
এর মধ্যে আগামী মাসের প্রথম দিকে দেশে যাওয়ার চিন্তা। টিকেট কাটবো কাটবো করে সস্তা টিকেট সব উদাও । অনেক কষ্টে টিকেট ম্যানেজ করতে হয়েছে। কতো বছর যে দেশে ঈদ করা হয় না। শপিংয়ের ধারে কাছেও এখন পর্যন্ত আমি নেই। এমনিতেই শপিং করতে গেলে মাথা ধরে এরমধ্যে এবার রোযা। মা সারাক্ষন শপিংয়ের জন্য পেছন পেছন ঘেনঘেন করে। আমি আগের মতোই শেষ সপ্তাহে গিয়ে ২০/২৫ কিলো চকলেট নিয়ে হাটা দিবো । অবশ্য দেশের জনগনেরও ডিমান্ড কম। মা একজনকে জিজ্ঞেস করেছিলেন কি নিয়ে আসবো?
-তোদের ওখানে হাড়ি-পাতিল পরিষ্কারের জন্য যে একটা ফোম পাওয়া যায় ওগুলো নিয়ে আসিস। শুনে মনে বড়ই শান্তি পেলাম। মা কে বল্লাম যতো খুশি ফোম কিনো (হায়রে, গ্রামের শাশ্বত নারীকূল)।
রমযানে কোন পার্টি হবে না বিধায় গত সপ্তাহে টানা তিনটা পার্টি হয়ে গেলো। এখন দেশে যাওয়ার আগে কয়েকটা ইফতার পার্টির দাওয়াত পেলেই হলো । তবে আগের মতো আর খাওয়া হয় না। অনেক বেশি স্বাস্হ্য সচেতন হয়ে গেছি। রাতে সালাদ অথবা একটি মাত্র আপেল খেয়ে ঘুম (ডাক্তারের হুশিয়ারি)।