somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খোকাবাবু সপ্তম

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৭ বিকাল ৩:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পঞ্চম দিনের বিষয় হল আবার ভেড়াটা। যা খোকার একান্ত একটা ব্যাক্তিগত ব্যাপার উম্মোচিত করতে সাহায্য করল। কিছুটা আপ্রসংগিক ভাবেই, কোন ভূমিকা না করে, সে আমাকে জিজ্ঞেস করল। যেন দীর্ঘ নিরবতায় পরিপক্ক কোন দুর্ভাবনার ফল কুড়াচ্ছে:
ভেরা যখন সবকিছুই খায়, তখন তো ফুলও খায়।
ভেড়া মুখের সামনে যা পায়, তাই খায়।
যে ফুলে কাঁটা থাকে সে সব ফুলও?
হ্যাঁ, কাটাসুদ্ধু ফুল।
তা হলে কাঁটা রেখে, ফুলের লাভটা হল কি!
আমার তা যানা ছিল না। আমি আমার উড়োজাহাজটার ঝংধরা একটা নাট খোলা নিয়ে ব্যাস্ত ছিলাম। আমি খুব চিন্তিত ছিলাম। কারণ যান্ত্রিক গোলমাল যত সহজে মেরামত করা যাবে বলে ভেবেছিলাম, এখন আর তত সহজ বলে মনে হচ্ছে না। এদিকে জলও ফুড়িয়ে এল।
কাঁটার কাজটা কী, তাহলে?
খোকাবাবু কোন প্রশ্ন একবার করলে, তার উত্তর না পাওয়া অব্দি সান্ত হত না।
আমি আমার ঝংধরা নাট নিয়েই ব্যাস্ত ছিলাম। এবং সোজা বলে দিলাম:
কাঁটার কোন কাজ নেই। ফুলগুলি দুষ্ট বলেই কাঁটা গজায়।
ওহ হু!
ও কছুক্ষন নীরব রইল। কিন্তু তার পর আমাকে খোঁচা মারার অভিযোগ করল।
তোমার কথা আমি একটুও বিস্বাস করি না। ফুলগুলি দুর্বল। যে ভাবে পারে তারা আত্মরক্ষা করে। তারা দুষ্ট নয়। তারা মনে করে, কাঁটা থাকায়, তাদের খুব ভয়ঙ্কর দেখায়।
আমি কোন উত্তর না দিয়ে নিজে নিজেই বললাম:
যদি এই নাটটা না খোলে, তবে একে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে খুলতে হবে।
খোকা আমার ভাবনায় আবার বাধা দিল:
তোমার সত্যিই মনে হয় ফুলের......
না না, আমার মনে হয় না। আমি কোন কিছু না ভেবেই বলেছিলাম। দেখছনা আমি খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে ব্যাস্ত।
খোকার দৃস্টিতে তাচ্ছল্য।
গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার!
ও দেখছিল, কি ভাবে আমি তৈল চটা হাতে, হাতুড়ি নিয়ে, মাথা নীচু করে একটা যন্ত্রের উপড় ঝুকে ছিলাম। যা তার কাছে খুব বিশ্রী মনে হচ্ছিল।
তুমি বড়দের মত কথা বলছ।
আমি লজ্জা পেলাম। কিন্তু ও নির্দয় ভাবে তার সঙ্গে যোগ করল:
তুমি সব কিছু এলোমেলো করে তালগোল পাকিয়ে ফেল।
খোকা রাগে মাথা নাড়ছে, আর তার চুল হাওয়ায উড়ছে।
আমি একটা গ্রহ চিনি, সেখানে লাল মোরগের মত একজন মানুষ থাকে। সেই লোকটা কখনো কোন ফুলের সুবাস পায়নি। কোন তারা দেখেনি। সে কাউকে ভালবাসেনি। যোগ ছারা জীবনে সে আর কিছুই করেনি। দিণ রাত শুধু বলত: আমি একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তি। গর্বে তার বুকটা ফুলে উঠতো। কিন্তু এটা কোন মানুষ নয়। ও হচ্ছে একটা ফেনার মত বস্তু।
একটা কী?
একটা ফেনার মত বস্তু।
রাগে খোকার মুখটা লাল হয়ে গেছে।
হাজার বছর ধরে ফুলেরা কাঁটা গজায়। হাজার বছর ধরে ভেড়াগুলি কাঁটা শুদ্ব ফুল খেয়ে ফেলে। তুমি মনে কর বিষয়টা একেবারেই গুরুত্বহীন, যদি কেউ প্রশ্ন করে, কেন ফুলগুলি এত সাধ্য-সাধনা করে বৃন্তে কাঁটা গজায়, যে কাঁটা কোন কাজে আসেনা। ফুলের সঙ্গে ভেড়ার এই লড়াই গুরুত্বহীন? কোন একজন মোটা মানুষের যোগ বিয়েগের চেয়ে গুরুত্ব হীন? এবং যদি আমার একটা ফুল থাকে, যা পৃথিবীতে শুধু একটিই আছে, আমার ভূবন ছাড়া যা আর কোথাও নেই, এবং যদি একটা ছোট ভেড়া যার কোন বোধ শক্তি নেই, কোন এক সকালে সেই ফুলটা এক কামড়ে বিনাষ করে ফেলে, সেটা কোন গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার নয়?
বলতে বলতে খোকা উত্তেজনায় লাল হয়ে যাচ্ছিল।
যদি কেউ এমন একটি ফুলকে ভালবাসে, যা রাশি রাশি তারকা কুজ্ঞে এখটিই আছে। তবে একবার আকাশের দিকে চোখ মেলে তাকালেই সে সূখী হতে পারে। তার পর খোকা নিজে নিজেই আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল: আমার ফুলটি ঐ ওখানে কোথাও। কিন্তু যদি ভেড়াটা আমার ফুলটা খেয়ে ফেলে! তাহলে আমার সব তারা নিভে যাবে। সেটা কী কোন গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার না?
আর কিছু বলতে পারল না, অধিক শোকে পাথর হয়ে গেল খোকা। রাতের আঁধার নেমে এল ধীরে ধীরে। হাতের যন্ত্রপাতি রেখে দিলাম। হাতুড়ী, নাট-বল্টু, তৃষ্ণা, মৃত্যুর ভয় সব কিছুই আমার কাছে তুচ্ছ মনে হল। একটি তারায়, একটি গ্রহে, আমার ভূবন এই পৃথিবীতে একটি শিশুকে সান্তনা দেওয়াই এখন সব চেয়ে বড় কাজ। আমি তাকে কোলে নিয়ে কানে কানে বললাম:
তুমি যে ফুলটাকে ভালবাস, তার কোন বিপদের আশংকা নেই। আমি ভেড়াটার মূখে একটা ঠুলি এঁকে দেব। ফুলটার চার পাশে বেড়া এঁকে দেব। আমি..... আমি ঠিক বুঝতে পারছিলাম না, আমার কি করা উচিৎ। নিজেকে খুব বোকা লাগছিল। কি ভাবে তার মনের ব্যাথা বুঝব, কি বলে তাকে সান্তনা দেব...... কত অচেনা সেই অচিনপূরী, অশ্রুর দেশ। চলবে...
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোরআন কী পোড়ানো যায়!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

আমি বেশ কয়েকজন আরবীভাষী সহপাঠি পেয়েছি । তাদের মধ্যে দু'এক জন আবার নাস্তিক। একজনের সাথে কোরআন নিয়ে কথা হয়েছিল। সে আমাকে জানালো, কোরআনে অনেক ভুল আছে। তাকে বললাম, দেখাও কোথায় কোথায় ভুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেঞ্চুরী’তম

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


লাকী দার ৫০তম জন্মদিনের লাল গোপালের শুভেচ্ছা

দক্ষিণা জানালাটা খুলে গেছে আজ
৫০তম বছর উকি ঝুকি, যাকে বলে
হাফ সেঞ্চুরি-হাফ সেঞ্চুরি;
রোজ বট ছায়া তলে বসে থাকতাম
আর ভিন্ন বাতাসের গন্ধ
নাকের এক স্বাদে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভণ্ড মুসলমান

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৬

ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?

মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসবে তুমি কবে ?

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪২



আজি আমার আঙিনায়
তোমার দেখা নাই,
কোথায় তোমায় পাই?
বিশ্ব বিবেকের কাছে
প্রশ্ন রেখে যাই।
তুমি থাকো যে দূরে
আমার স্পর্শের বাহিরে,
আমি থাকিগো অপেক্ষায়।
আসবে যে তুমি কবে ?
কবে হবেগো ঠাঁই আমার ?
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×