somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষন এবং কিছু অপ্রাসঙ্গিক বিভ্রান্তি

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৭ সন্ধ্যা ৭:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের রেসকোর্স ময়দানের ভাষণ নিয়ে দেখি কারো কারো মধ্যে কিছুটা বিভ্রান্তি আছে। এবং এই বিভ্রান্তির অনেকটাই ঘিরে আছে তিনি ভাষনের শেষে "জয় বাংলা" এর সাথে "জয় পাকিস্তান" বলেছিলেন কিনা। কিছু পুরনো ব্লগ পড়তে গিয়ে দেখলাম এই ব্লগে এটা নিয়েও অনেক মাতামাতি হয়েছে।

আমি এই ধরনের সস্তা যুক্তি আর তা নিয়ে মাতামাতি করা নিয়ে মাঝে মাঝে অবাক হই যে আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক দেউলিয়াপনা কোন পর্যায়ে পৌছেছে।

আমি যদিও আওয়ামী লীগ করিনা তারপরও একজন সচেতন বাংলাদেশী হিসাবে মনে করি এই বিভ্রান্তি নিরসন হওয়া উচিত। এবং সেজন্যই এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা।

১৯৭১ সালের ৭ ই মার্চ এই দেশটির নাম ছিল পূর্ব-পাকিস্তান আর বঙ্গবন্ধু ছিলেন এই দেশটির অবিসংবাদিত নেতা। ১৯৭০ সালের নির্বাচনের মত নির্বাচনের ফল পৃথিবীর অন্য কোন দেশে হয়েছে বলে আমার জানা নাই। এতটা নিরংকুশ ম্যান্ডেট অন্য কোন দেশের জনগণ তাদের নেতাকে প্রদান করে নাই।

বঙ্গবন্ধু এদেশের মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করেছেন। ১৯৬৬ সালের ৬ দফা থেকে ১৯৭০ সালের নির্বাচনী মেনিফেস্টো সর্বত্র এই ব্যাপারটিকে প্রাধান্য দিয়েছেন।

এখানে বুঝতে হবে বঙ্গবন্ধু কোন গেরিলা নেতা ছিলেন না যে তিনি কথায় কথায় স্বাধীনতার ঘোষণা দিবেন এবং আত্মগোপনে যেয়ে অনুকুল পরিস্থিতি সৃষ্টি হবার আগেই যুদ্ধ শুরু করে পুরো পরিস্থিতি গুলিয়ে ফেলবেন।

বঙ্গবন্ধু ছিলেন একজন রাজনৈতিক নেতা যার হঠাত করেই কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার মত বোকামী করার সুযোগ ছিলনা। তার মেসেজটা ছিল পরিস্কার পশ্চিম পাকিস্তান সরকারকে বৈষম্য দূর করতে হবে এবং সকল ক্ষেত্রে সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বঙ্গবন্ধুতার এই মেসেজটা থেকে কখনো সরে আসেননি।

১৯৭০ এর নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তান বাসী ম্যান্ডেট দিয়েছিল দেশ শাসন করার। আর বঙ্গবন্ধু জানতেন তিনি তার ম্যান্ডেট অনুযায়ী অ-বিভক্ত পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে পারলে তখনকার বিদ্যমান বৈষম্য দূর করা সবচেয়ে সহজ হবে।

তাই তিনি শেষ মূহুর্ত পর্যন্ত শেষ চেষ্টা করেছেন এদেশের মানুষ আওয়ামী লীগ তথা বঙ্গবন্ধুকে যে ম্যান্ডেট দিয়েছে সেটা প্রতিষ্ঠা করার জন্য। কিন্তু এটি পরিস্কার ছিল যে এই দাবী অর্জিত না হলে স্বাধীনতার ডাক দেয়া ছাড়া আর কোন বিকল্প খোলা থাকবেনা।

৭ই মার্চের ভাষনে তিনি তার এই মেসেজটিই দেশবাসী এবং পশ্চিম পাকিস্তানী শাসকদের কাছে তুলে ধরেছেন।
দেশবাসীকে জানিয়েছেন তাদের দেয়া ম্যান্ডেট অনুযায়ী দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য যদি আওয়ামী লীগকে দেশ শাসনের সুযোগ দেয়া না হয় তাহলে আরো বড় সংগ্রাম "মুক্তির সংগ্রামের" জন্য তাদের যার যা কিছু আছে তা নিয়ে প্রস্তত থাকতে হবে।

এর মাধ্যমে তত্কালীন শাসকগোষ্ঠীর কাছেও একই মেসেজ পৌছানো হল। আমাদের অধিকার দাও অথবা স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য প্রস্তত থাকো।

এখন তিনি ভাষনের শেষে "জয় বাংলা" র সাথে "জয় পাকিস্তান" বলেছেন কিনা এটি একটি হাস্যকর ও অপ্রাসঙ্গিক আলোচনা। ভাষনটি ছিল একটি মেসেজ এবং যদি ভাষনের শেষে তিনি কি বললেন তা কোন ভাবেই মুল মেসেজটাকে ক্ষতিগ্রস্থ করেনা।

তিনি "জয় পাকিস্তান" বলেছেন এমন কোন সন্দেহাতীত প্রমাণ নেই। আর যদি তিনি বলেও থাকেন তাহলে আমি বলব তিনি একজন দক্ষ কূটনীতিকের মত কাজ করেছেন।

তিনি তার মেসেজটা পরিস্কারভাবে দেয়ার পরও পাকিস্তানের তত্কালীন শাসকগোষ্ঠীকে কোন সুযোগ দিতে চাননি যাতে কোন ধূঁয়া তুলে পাকিস্তানের শাসন ক্ষমতা যেটি আমাদের প্রাপ‌্য ছিল সেটি দিতে নতুন কোন ষড়যন্ত্র পাতার।

এখন যদি কেউ বলেন তাহলে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা চাননি শাসন ক্ষমতা চেয়েছিলেন তাহলে তাকে বলব যে তত্কালীন নেতৃত্বের দূরদর্শীতা তিনি বুঝতে পারেন নি।

স্বাধীনতা সংগ্রাম অবধারিত ছিল। ১২০০ মাইল ব্যবধানে থেকে একটি দেশের দুটি অংশ একসাথে চলতে পারে না যেখানে পদে পদে বৈষম্য আর বিভেদ ছিল।

সেই সময় বঙ্গবন্ধু যদি শাসন ক্ষমতায় যেতে পারতেন ইতিহাস হয়ত একটু ভিন্নভাবে লেখা হত। তিনি শাসন ক্ষমতায় থেকে এ দেশ থেকে লুটে নিয়ে যাওয়া সম্পদের কিছুটা হলেও ফিরিয়ে আনতে পারতেন। অবহেলিত পূর্ব-পাকিস্তানে সমউন্নয়নের কিছু পদক্ষেপ নিতে পারতেন।

কিন্তু স্বাধীনতা সংগ্রাম অবধারিত ছিল আর সেটি পশ্চম পাকিস্তানের রাজনৈতিকদের মনোভাবেই পরিস্কার ছিল। যেট পূর্বেই বলেছি। স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়ত ১৯৭১ এ না হয়ে আরো ২-৩ বছর পরে হতো। আমরা হয়ত ১৯৭১ এ যে দেশ পেয়েছি তার চেয়ে একটু সমৃদ্ধ দেশ পেতাম।

কিন্তু যা হয়নি সেটা নিয়ে চিন্তা করার কোন সুযোগ নাই। কেন তিনি ভাষণে "জয় বাংলা" বলার সাথে সাথে "জয় পাকিস্তান" (যদি বলে থাকেন) বললেন সেটি বোঝার যাদের ক্ষমতা নেই, সেটি হয় তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক দেউলিয়াপনাকে প্রকাশ করে অথবা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সঠিক ইতিহাস না জানার প্রমান দেয়।

আর যারা স্বাধীনতা সংগ্রামের সরাসরি বিরোধীতা করেছিলেন তাদের উদ্দ্যেশ্যে আমার কিছু বলার নাই। এটি সাধারণ বাংলাদেশীদের বিভ্রান্তি নিরসনের উদ্দেশ্য লেখা।

যে কোন যুক্তিপূর্ণ মন্তব্যকে স্বাগত: জানাই।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৭ সন্ধ্যা ৭:১৫
৪১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মাটির কাছে যেতেই..

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

মাটির কাছে
যেতেই..


ছবি কৃতজ্ঞতাঃ https://pixabay.com/

ঠিক যেন
খা খা রোদ্দুর চারদিকে
চৈত্রের দাবদাহ দাবানলে
জ্বলে জ্বলে অঙ্গার ছাই ভস্ম
গোটা প্রান্তর
বন্ধ স্তব্ধ
পাখিদের আনাগোনাও

স্বপ্নবোনা মন আজ
উদাস মরুভূমি
মরা নদীর মত
স্রোতহীন নিস্তেজ-
আজ আর স্বপ্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাকা ভাংতি করার মেশিন দরকার

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:১০

চলুন আজকে একটা সমস্যার কথা বলি৷ একটা সময় মানুষের মধ্যে আন্তরিকতা ছিল৷ চাইলেই টাকা ভাংতি পাওয়া যেতো৷ এখন কেউ টাকা ভাংতি দিতে চায়না৷ কারো হাতে অনেক খুচরা টাকা দেখছেন৷ তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেলা ব‌য়ে যায়

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩০


সূর্যটা বল‌ছে সকাল
অথছ আমার সন্ধ্যা
টের পেলামনা ক‌বে কখন
ফু‌টে‌ছে রজনীগন্ধ্যা।

বাতা‌সে ক‌বে মি‌লি‌য়ে গে‌ছে
গোলাপ গোলাপ গন্ধ
ছু‌টে‌ছি কেবল ছু‌টে‌ছি কোথায়?
পথ হা‌রি‌য়ে অন্ধ।

সূর্যটা কাল উঠ‌বে আবার
আবা‌রো হ‌বে সকাল
পাকা চু‌ল ধবল সকলি
দেখ‌ছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পর্ণআসক্ত সেকুলার ঢাবি অধ্যাপকের কি আর হিজাব পছন্দ হবে!

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৩ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:২৭



ইন্দোনেশিয়ায় জাকার্তায় অনুষ্ঠিত একটা প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক জিতেছে বাংলাদেশি নারীদের একটা রোবোটিক্স টিম। এই খবর শেয়ার করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপিকা। সেখানে কমেন্ট করে বসেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ২৩ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:১৪


কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়
আমার বাবা-কাকারা সর্বমোট সাত ভাই, আর ফুফু দুইজন। সবমিলিয়ে নয়জন। একজন নাকি জন্মের পর মারা গিয়েছেন। এ কথা বলাই বাহুল্য যে, আমার পিতামহ কামেল লোক ছিলেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×