somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বর্তমান ধারার শিক্ষক রাজনীতি : মাথা ব্যাথার দাওয়াই কি?

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৭ বিকাল ৫:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এর আগের পোষ্টে বলেছিলাম শিক্ষক রাজনীতি নিয়ে একটি আলাদা পোষ্ট দিবো। কথা রক্ষা করছি।

বর্তমানে শিক্ষক রাজনীতি একটি গরম ইস্যু । বিশেষ করে সাম্প্রতিক বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক আন্দোলনের পর এটি আবার নতুন করে আলোচনার টেবিলে চলে এসেছে।

বর্তমানে প্রচলিত ধারার শিক্ষক রাজনীতিকে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার একটি দুষ্টক্ষত হিসাবে অনেকে মনে করেন। আবার অনেকে এটিকে একেবারেই মানতে চান না। তবে সাধারন জনগনের মনে শিক্ষক রাজনীতির বর্তমান রূপ নিয়ে অ-সন্তোষ আছে সেটা অস্বীকার করার উপায় নেই।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকগণ জাতির সূর্য সন্তান, জাতির বিবেক। তাদের রাজনৈতিক মতাদর্শ থাকবে, তারা এর চর্চা করবেন সেটাই স্বাভাবিক। দেশ ও জাতির বিভিন্ন ক্রান্তিলগ্নে তারা তাদের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা দিয়ে সঠিক পথের সন্ধান দেবেন সেটাই কিন্তু সবাই আশা করে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এর যথেষ্ট নজির আছে যে শিক্ষকগণ মূল্যবান দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো তারা কি রাজনীতি করছেন? তারা কি তাদের প্রাথমিক দায়িত্ব ভুলে শিক্ষা ব্যবস্থাকেই হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছেন?

বলতে দ্বিধা নেই শিক্ষক ও ছাত্র স্বার্থ বিবর্জিত তথা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার সাথে সম্পর্কহীন অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষকদের অংশগ্রহণ শিক্ষক রাজনীতির মূল সুরকেই নষ্ট করেছে। শিক্ষক রাজনীতি এখন জাতীয় রাজনীতির দেউলিয়াপনা থেকে আমাদের দিক নির্দেশনা দেবার পরবর্তে নিজেরাই সেই গড্ডালিকাপ্রবাহে গা ভাসাচ্ছেন।
এর ফলে একাডেমিক কাজে শিক্ষকদের অংশগ্রহণ কমে যাচ্ছে, শিক্ষা ও গবেষণায় সময় দেবার পরিবর্তে রাজনীতি নিয়েই মেতে থাকছেন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষক।

শিক্ষক রাজনীতির টানাপোড়েনে বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থিতিশীলতা এখন একটি স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষকরা তাদের রাজনীতির স্বার্থে ছাত্রদেরও ব্যবহার করছেন। ছাত্র রাজনীতি কেন্দ্রিক অনেক বড় বড় অঘটনের পিছনে কতিপয় শিক্ষকের ব্যক্তি স্বার্থ ভুমিকা রেখেছে এবং এখনো রাখছে।

এ ছাড়াও শিক্ষক রাজনীতির কারণে বেড়েছে শিক্ষাঙ্গনগুলিতে দলীয়করণের প্রবণতা এবং রাজনৈতিক বিবেচনায় শিক্ষক নিয়োগের সংখ্যা যার ফলে দিনে দিনে শিক্ষকদের শ্রেণীগত চরিত্রে পরিবর্তন এসেছে। এখন আর পূর্বের মত শুধুমাত্র শিক্ষাদানে আত্মনিবেদিত এক সমৃদ্ধ শিক্ষকমন্ডলী পাওয়া যাবেনা এর বাইরেও স্বার্থান্বেষী ও দূর্ণীতিপরায়ন শিক্ষকদের একটি বড় গোষ্ঠীর আত্বপ্রকাশ ঘটেছে।

এই গোষ্ঠী দলীয় রাজনীতি করেন তাদের মতাদর্শের রাজনৈতিক সরকারের সময় বিভিন্ন কর্পোরেশনের উচু পদে আসীন হবার জন্য এবং সেই সুবাদে অর্থ সম্পদের মালিক হওয়া।

তবে অস্বীকার করা যাবেনা, শিক্ষকদের অর্থনৈতিক অ-স্বচ্ছলতাও তাদের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ার একটি কারন। একটু ভিন্নভাবে বললে স্বার্থান্বেষী মহল শিক্ষকদের অর্থনৈতিক অ-স্বচ্ছলতার সুযোগ নিয়ে শিক্ষক রাজনীতিকে কলুষিত করছে।

এটি বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, উন্নত বিশ্বের যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে এই ধারার শিক্ষক রাজনীতির উপস্থিতি নেই। শিক্ষা ও গবেষণায় ব্যস্ত শিক্ষকমন্ডলী এই ধরণের রাজনীতির কথা কল্পনাও করতে পারেন না।

এখন এ থেকে উত্তরনের উপায় কি? শিক্ষক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা? সে তো মাথাব্যাথা দুর করতে মাথা কেটে ফেলা হল। মুক্তবুদ্ধির চর্চা যদি সেটা সত্যিকারের চর্চা হয়, তবে তার প্রয়োজন আছে।

এ ক্ষেত্রে আমার সু-নির্দিষ্ট দুইটি প্রস্তাব আছে-

১। সিনেট, সিন্ডিকেট প্রভৃতি বিশ্ববিদ্যালয় নীতি নির্ধারণী কমিটি গঠনে গঠনে নির্বাচন পদ্ধতি বাতিল করতে হবে। উন্নত বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মত একাডেমিক (শিক্ষা ও গবেষণা) পারফর্মেন্স এর মাধ্যমে যোগ্যতা সম্পন্ন শিক্ষককে এসব কমিটিতে অন্তর্ভূক্ত করতে হবে।
একই ভাবে ভাইস চ্যান্সেলর নিয়োগেও নির্বাচন প্রথা বাতিল করতে হবে। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদদের সমন্বয়ে গটিত একটি জাতীয় কমিটি বিভিন্ন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি নিয়োগ করবেন।

২। শিক্ষকদের সম্মানজনক জীবন যাপনের জন্য পর্যাপ্ত বেতন ভাতা দিতে হবে। অর্থনৈতিক ভাবে স্বচ্ছল একচন শিক্ষক শিক্ষা ও গবেষণাকে প্রাধান্য দিবেন এবং তাদেরকে রাজনীতির ঘুটি হিসাবে ব্যবহার করা সম্ভব হবেনা।

এই দুটি কাজ করা গেলে শিক্ষক রাজনীতি নিষিদ্ধ করার মত চরমপন্থা অবলম্বন করতে হবেনা। শিক্ষক রাজনীতি তখন সুষ্ঠু পথে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করবে।

আপনাদের মতামতের অপেক্ষায় থাকলাম।
১২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বর্গের নন্দনকাননের শ্বেতশুভ্র ফুল কুর্চি

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ২২ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:১৭


কুর্চি
অন্যান্য ও আঞ্চলিক নাম : কুরচি, কুড়চী, কূটজ, কোটী, ইন্দ্রযব, ইন্দ্রজৌ, বৎসক, বৃক্ষক, কলিঙ্গ, প্রাবৃষ্য, শক্রিভুরুহ, শত্রুপাদপ, সংগ্রাহী, পান্ডুরদ্রুম, মহাগন্ধ, মল্লিকাপুষ্প, গিরিমল্লিকা।
Common Name : Bitter Oleander, Easter Tree, Connessi Bark,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচলের (সচলায়তন ব্লগ ) অচল হয়ে যাওয়াটই স্বাভাবিক

লিখেছেন সোনাগাজী, ২২ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬



যেকোন ব্লগ বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবর, একটি ভয়ংকর খারাপ খবর; ইহা দেশের লেখকদের অদক্ষতা, অপ্রয়োজনীয় ও নীচু মানের লেখার সরাসরি প্রমাণ।

সচল নাকি অচল হয়ে গেছে; এতে সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

হরিপ্রভা তাকেদা! প্রায় ভুলে যাওয়া এক অভিযাত্রীর নাম।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২২ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৩


১৯৪৩ সাল, চলছে মানব সভ্যতার ইতিহাসের ভয়াবহ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। টোকিও শহর নিস্তব্ধ। যে কোন সময়ে বিমান আক্রমনের সাইরেন, বোমা হামলা। তার মাঝে মাথায় হেলমেট সহ এক বাঙালী... ...বাকিটুকু পড়ুন

তুমি বললে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ২২ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৭

তুমি বললে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

খুব তৃষ্ণার্ত, তুমি তৃষ্ণা মিটালে
খুব ক্ষুধার্ত, তুমি খাইয়ে দিলে।
শ্রমে ক্লান্ত, ঘর্মাক্ত দেহে তুমি
ঠান্ডা জলে মুছে দিলে, ঊর্মি
বাতাস বইবে, শীতল হবে হৃদয়
ঘুম ঘুম চোখে পাবে অভয়।
তোমার আলপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনারই মেরেছে এমপি আনারকে।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২২ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


ঝিনাইদহ-৪ আসনের সরকারদলীয় এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ছিল তারই ছোটবেলার বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনার আক্তারুজ্জামান শাহীন!

এই হত্যার পরিকল্পনা করে তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল আরেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×