somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দালালির নমুনা: সেনা প্রধানকে রাষ্ট্রপতি চান নাঈমুল ইসলাম খান

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৭ সন্ধ্যা ৬:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম আলোর দালালি নিয়ে দেখলাম এই ব্লগের অনেকেই সোচ্চার। আজ পড়লাম আমাদের সময়ের সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খানের একটা লেখা। সেখানে তিনি মইন উ আহমেদকে প্রেসিডেন্ট হতে বলেছেন। তিনি প্রেসিডেন্টা না হলে নাকি বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটবে না। এটা কি দালালি না????
নাঈমুল ইসলাম খান:
একটি নতুন ধারার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় উত্তরণের চলমান ‘সংস্কার’ প্রয়াস ডিসেম্বর ২০০৮ সালে একটি সফল জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে আমার বিবেচনায় কেবল একটি সূচনা সম্পন্ন করবে। এই সংস্কার প্রাথমিক পরিণতি লাভ করবে পরবর্তী সরকারের ৫ বছর মেয়াদে। ঐ সরকারের সময়কালে দুর্নীতি ও সন্ত্রাসবিরোধী চলমান পদপে একইভাবে অব্যাহত রাখলেই তা সম্ভব। ২০১৪ থেকে পরবর্তী যে-সংসদ ও সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে তার ওপরই চলমান সংস্কার প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার গুরুদায়িত্ব এবং ধারাবাহিকতা বজায় রাখার বাধ্যবাধকতা বর্তাবে।
চলমান সংস্কার প্রক্রিয়াকে শান্তিপূর্ণ উপায়ে এবং সাধারণ মানুষের জন্য স্বস্তিকর রাখার প্রত্যয় থেকে কিছু প্রস্তাব উপস্থাপন করছি।
১) মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরে বাংলা ফজলুল হক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমদ, বঙ্গবীর এম আতাউল গণি ওসমানী এবং শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এর সঙ্গে-সঙ্গে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া এই ১০ জনকে বাংলাদেশের শীর্ষ ১০ জাতীয় নেতা ঘোষণা করে দলীয় রাজনীতির সংশিষ্টতা থেকে তাদের মুক্ত করে ফেলতে পারলে ভালো হবে।
২) যদি ১০ জনকে একই সমান্তরালে জাতীয় নেতা ঘোষণা করার েেত্র কোনও সমস্যা থাকে সেেেত্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শহীদ জিয়াউর রহমানের সঙ্গে সঙ্গে বেগম খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনাকেও একটি বিশেষ মর্যাদা প্রদান করতে হবে, যার ফলে তারা দু’জনেই নির্দিষ্ট দলীয় রাজনীতির ঘেরাটোপ থেকে মুক্ত হয়ে যাবেন।
৩) একটি সাংবিধানিক রিভিউ কমিশন নিয়োগ করে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে কিছু যুক্তিসঙ্গত ভারসাম্য আনার (তবে পাকিস্তানের মতো রাষ্ট্রপতিকে স্বেচ্ছাচারী মতা প্রদান করে নয়) প্রস্তাব তৈরি করতে হবে। সংবিধানের অনুবাদের ভুলত্র“টিগুলো শুধরানো ছাড়াও এতে ব্যাপক পরিবর্তন আনা যেতে পারে। বাংলাদেশের উন্নয়ন-আকাক্সা ও যুগের সঙ্গে তাল মেলানোর সাংবিধানিক সুযোগ সৃষ্টি করতে কমিশনের নবগঠিত সংসদে বিস্তারিত আলাপ-আলোচনা ও বিতর্কশেষে তার প্রথম অধিবেশনেই গৃহীত হতে পারে। প্রয়োজনে সংবিধানের এই পরিবর্তনের বৈধতা পোক্ত করার জন্য একটি গণভোটেরও আয়োজন করা যেতে পারে।
৪) পাবলিক সার্ভিস কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং নির্বাচন কমিশনে ইতোমধ্যে যে-সংস্কার সাধিত হয়েছে এবং সামনের দিনসগুলোতে আর যা-যা পরিবর্তন আনা হবে এবং এই ২টি প্রতিষ্ঠান এ পর্যন্ত যত পদপে নিয়েছে এবং রাজনৈতিক অঙ্গনে যে-সংস্কার ও নতুন সংগঠনের কলরব শুনতে পাওয়া যাচ্ছে, তাতে আগামী জাতীয় নির্বাচনে কোনও বড় দলের পওে সংখ্যাগরিষ্ঠতার কাছাকাছি ফললাভ সম্ভব হবে না। সুতরাং আমরা ধারণা করতে পারি, অদূর ভবিষ্যতে দেশে একটি কোয়ালিশন বা জোট সরকার আসছে।
কোয়ালিশন বা জোট সরকার কখনও কখনও দুর্বল হয় বলে বলা হয়। কিš' বাংলাদেশের পরিবর্তিত পরিপ্রেেিত সেই আশঙ্কা কম এবং তারপরও যে দুূর্বলতা আমরা প্রত্য করব তার একটা উপকারী এবং সহায়ক সামর্থ্যের দিকও রয়েছে, যা জাতীয় ল্য অর্জনে ইতিবাচক অবদানই রাখতে পারে।
৫) বাংলাদেশের বর্তমান রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের স্বাভাবিক মেয়াদ শেষ হচ্ছে আজ। কিš' তিনি আগামী সংসদ নির্বাচন এবং তার পরবর্তীতে একজন নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত না-হওয়া পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন নিশ্চয়ই। আমাদের বর্তমান সংবিধানে রাষ্ট্রপতির জন্য এই অতিরিক্ত সময়ের বৈধতা স্বীকৃত।
৬) বর্তমান সরকারকে সর্বেেত্র স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার বাধ্যবাধকতা ও সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করতে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ চালিয়ে যেতে হবে। দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের পাশাপাশি এটিও অত্যন্ত জরুরি। রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, আমলা, পুলিশ ইত্যাদির পাশাপাশি মিডিয়া ও এনজিও সেক্টরও একটা গুরুত্বপূর্ণ ত্রে, যেখান থেকে দুর্নীতি দূর করা ও স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা অতীব জরুরি।
৭) শত প্ররোচনা ও পারিপার্শ্বিক বাস্তবতা সত্ত্বেও সশস্ত্র বাহিনীর রাষ্ট্রীয়মতা গ্রহণ না করা অর্থাৎ সামরিক আইন জারি না করার সিদ্ধান্ত অত্যন্ত প্রশংসার দাবি রাখে এবং এই সিদ্ধান্তে অবিচল থাকাই সর্বাবস্থায় ইতিবাচক হবে। সেনাপ্রধান জেনারেল মইন উ আহমদ এ বিষয়ে বরাবরই সকলকে আশ্বস্ত করেছেন এবং আমার বিশ্বাস, তিনি সামনের সময়গুলোতেও তার এই প্রতিশ্র“তির পুরাবৃত্তি করেই যাবেন।
৮) সেনাপ্রধান জেনারেল মইন উ আহমদ একাধিকবার বলেছেন, রাজনীতিতে যোগ দেয়ার কোনো পরিকল্পনা তার নেই, তার রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ নেই। সেনাপ্রধান হিসেবে অবসরে যাওয়ার পর তিনি সমাজকল্যাণমূলক কাজে মনোনিবেশ করার, বিশেষ করে ভাগ্যাহত শিশুদের জন্যে কিছু কাজ করার চেষ্টা করবেন বলে তার ইচ্ছা রয়েছেÑ একথাও প্রকাশ করেছেন। অবসরে ‘শান্তির পথে’ এ শিরোনামে একটি বই লিখবেন, তা-ও জানিয়েছেন আমাদের।
আমি তার ব্যক্তিগত পরিকল্পনার প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেই, যদি কেউ কিছু মনে না করেন, একটি প্রস্তাব রাখতে চাইÑ যেটি তার দলীয় রাজনীতি না-করার আকাক্সা, সমাজ হিতৈষী কাজের ইচ্ছা এবং বই লেখার পরিকল্পনাÑ কোনওটিরই ব্যত্যয় ঘটাবে নাÑ তিনি যদি আগামী সংসদ নির্বাচনের এবং সেনাবাহিনী থেকে অবসরের পর একজন অরাজনৈতিক রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেন। বরং তাহলে বর্তমান সংস্কার আন্দোলন সফল করার এবং নতুন ধারার গণতন্ত্র ও সরকার প্রতিষ্ঠা সহজতর হবে। এটা এখন পরিস্থিতির দাবি।
জেনারেল মইন হয়তো সমালোচনার কথা বলবেন কিš' রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নিতে রাজি হলে হাতেগোনা কতিপয় সমালোচকের কথায় তিনি যতটুকু বিরক্তবোধ করবেনÑ বাংলাদেশ তারচেয়ে বহুগুণ বেশি উপকৃত হবে, অনিশ্চয়তার হাত থেকে উদ্ধার পাবে। এসব দিকও তাকে বিবেচনা করে দেখতে হবে। হাসিনা-খালেদার অবর্তমানে আমাদের একজন নেতা চাই। একজন আকর্ষণীয়, আগ্রহ-উদ্দীপক, প্রেরণাদায়ী, যুগোপযোগী ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতা চাইÑ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। এর জন্য যত বেশি সময় অপো তত বেশি আমাদের জাতীয় অপচয় আর অনিশ্চয়তা।
৯) আমরা সকলেই জানি, জাতীয় নিরাপত্তা এখন কেবলমাত্র সীমান্তরার নিরাপত্তা নয়। জাতীয় নিরাপত্তার ব্যাঞ্জনা এখন অনেক বিস্তৃত। দেশের কৃষি উৎপাদন, খাদ্য মজুদ, রফতানি বাণিজ্য, বন্দর, দুর্ভি, মহামারী, প্রাকৃতিক দুূর্যোগ, জঙ্গিবাদ, চোরাকারবারী ইত্যাদি যে-কোনও একটি কিংবা একাধিক সঙ্কট এক সঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে। এজন্য সরকারের বিভিন্ন কাজে জাতীয় নিরাপত্তার বিষয় সার্বণিক ও সর্বাÍক বিচার বিশেষণ করার জন্য একটি জাগ্রত, সক্রিয় ও নিবেদিত জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল জরুরি প্রয়োজন। এই নিরাপত্তা কাউন্সিলে সশস্ত্র বাহিনীকে নিয়ামক ভূুমিকায় রেখে সংশিষ্ট সকলের অংশগ্রহণে একটি ডায়নামিক জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলও এখন সময়ের দাবি। এটি গঠন করতে আর সময়পেণের কোনও যুক্তি আছে বলে আমরা মনে করি না।
১০) জেনারেল মইন উ আহমদ যদি রাষ্ট্রপতি হতে কিছুতেই রাজি না হন, তাহলে বর্তমান পরিস্থিতি থেকে সহজ উত্তরণ এবং সংস্কার প্রয়াসে বড় সফলতা পাওয়া দুরূহ হতে পারে। চলমান সংস্কারে পূর্ণ বিশ্বাসী ও সকল মহলে গ্রহণযোগ্য ও কার্যকর রাষ্ট্রপ্রধানের সন্ধানে আমাদের বিশেষ যতœবান হতে হবে।
৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জলদস্যুরা কি ফেরেশতা যে ফিরে এসে তাদের এত গুণগান গাওয়া হচ্ছে?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭


জলদস্যুরা নামাজি, তাই তারা মুক্তিপণের টাকা ফেরত দিয়েছে? শিরোনাম দেখে এমনটা মনে হতেই পারে। কিন্তু আসল খবর যে সেটা না, তা ভেতরেই লেখা আছে; যার লিংক নিচে দেওয়া হলো।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯



একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×