somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রাক রামাদান ভাবনা: ইসলামের দৃষ্টিতে বৃক্ষ রোপন

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০০৭ রাত ৯:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অসীম রহমত, বরকত ও নাজাতের মাস রামাদান প্রায় সমাগত। বিশ্বের মুসলিম সমাজ রামাদানের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ইসলামকে কেবল আনুষ্ঠানিকতার মাঝে না রেখে সামাজিক উন্নয়নেও প্রয়োগ করবো এমন বাসনা মনে রাখছি। পৃথিবীকে বসবাসের উপযোগি রাখার জন্য বৃক্ষের ভুমিকা ব্যাপক। ইসলামে এ ব্যাপারে স্পষ্ট দিক নির্দেশনা রয়েছে।

আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টি অপূর্ব সৌন্দর্য জীবের মধ্যে গাছ একটি জীব। গাছ এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ জীব, যা ছাড়া বেঁচে থাকার কোন উপায় নেই। গাছ থেকে পাওয়া অক্সিজেন আমাদের জীবন ধারণের জন্য এক অপরিহার্য। গাছ যেমন প্রকৃতির সৌন্দর্য বিরাজ করছে তেমনি আবার পরিবেশ সংরক্ষণেরও প্রতীক। আল্লাহতায়ালা “আশরাফুল মাখলুকাত” বা সৃষ্টির সেরা জীবরূপে মানুষ সৃষ্টি করে ভূ-পৃষ্ঠের প্রয়োজনীয় জীবনোপকরণ হিসেবে ফলবান বৃক্ষ রাজি ও সবুজ বনভূমি দ্বারা একে সুশোভিত করেছে। আবার গাছ দ্বারা ভূ-মণ্ডল ও পরিবেশ প্রকৃতির ভারসাম্য ও সংরক্ষণ করা হয়েছে।


চৌদ্দশত বছর পূর্বেই আল্লাহতায়ালা ওহি নাযিল করে রাসূল (সাঃ)-এর মাধ্যমে গোটা জাতিকে জানিয়ে দিলেন গাছের গুরুত্ব সম্পর্কে। এই মর্মে পবিত্র কুরআনে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন, “আমি ভূমিতে বিস্তৃত করেছি ও তাতে পর্বতমালা স্থাপন করেছি এবং তাতে নয়নাভিরাম সর্বপ্রকার উদ্ভিদ উদগত করেছি। আর আমি আকাশ থেকে কল্যাণময় বৃষ্টি বর্ষণ করি এবং এর দ্বারা উদ্যান ও পরিপক্ষ শস্যরাজি উদগত করি” (সূরা কাফ আয়াত-৭ ও ৯)

আল্লাহতায়ালা মানুষের জন্য গাছ অথবা গাছের বীজ সৃষ্টি করেছেন। মানুষ সেই বীজ বপন করে চারা গাছ উৎপাদন করে। মানুষ যেহেতু বৃক্ষরোপণ করে রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে গাছকে বড় করে তোলে, তাই গাছের ওপর মানুষের সীমিত ভোগাধিকার জন্মে। কারও জমিতে বা বনভূমিতে বৃক্ষ জন্মালে সেই গাছপালা থেকে সবাই যাবতীয় সুবিধা নিতে পারবে এবং যে কোনো প্রয়োজনে গাছ ব্যবহার করতে পারবে। কিন্তু একান্ত প্রয়োজন ছাড়া ইসলাম কাউকে অকারণে ফলবান বৃক্ষ নিধন বা কর্তনের অনুমতি দেয় না। কারণ এতে অন্যরা গাছের নিয়ামত লাভে বঞ্চিত হবে। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুরআনে বলে দিয়েছেন­ তিনিই আল্লাহতায়ালা নানা প্রকার লতাগুল্ম ও বাগান সৃষ্টি করেছেন। খেঁজুর বীতি সৃষ্টি করেছেন। শস্য উৎপাদন করেছেন। তা থেকে নানা প্রকার খাদ্য সংগৃহিত হয়। যাইতুন ও ডালিম বৃক্ষ সৃষ্টি করেছেন। এদের মধ্যে বাহ্যিক সাদৃশ্য থাকলেও স্বাদ বিভিন্ন এগুলোর ফল খাও যখন ফলবান হয় এবং ফসল কাটার সময় আল্লাহর হক আদায় কর আর সীমা অতিক্রম করোনা। কারণ সীমা অতিক্রমকারীদেরকে আল্লাহ পছন্দ করেন না। ( সূরা আনআম- আয়াত ঃ ১৪১) হাদিস শরীফে এর গুরুত্ব দিয়ে রাসূল (সাঃ) বলেছেন­ যে ব্যক্তি অকারণে একটি কুলগাছ কাটবে আল্লাহ তাকে অধোমুখে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে।

রাসূল (সাঃ) গাছ সংরক্ষণের উপর বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি মক্কা মোকাররমা ও মদীনার বিশেষ এলাকাকে সংরক্ষিত বলে ঘোষণা করেছিলেন। ঐ সব এলাকার গাছ কাটা এবং সেখানে বন্য পশু-পাখি শিকার করা আজও নিষিদ্ধ। ইসলামে বৃক্ষরোপণ ও ফসল ফলানোর উৎসাহিত হওয়ার জন্য রাসূল (সাঃ) বৃক্ষ রোপণকে সদকায়ে জারিয়া বা অবিরত ফলরূপে আখ্যায়িত করেছেন। হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূল (সাঃ) বলেছেন­ যখনই কোন মুসলিম গাছ লাগায় বা শস্য বুনে এবং এ থেকে মানুষ, পশু-পাখি তাদের আহার্য গ্রহণ করে তখন তার পক্ষে একটি সদকা (দান) হিসেবে পরিগণিত হয়। ( মুসলিম শরীফ দ্বিতীয় খণ্ড- পৃষ্ঠা-১৫)

অন্য হাদীসে হযরত জাবের (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূল (সাঃ) বলেছেন­ গাছ হতে যা চুরি হয়ে যায় তাও তার পক্ষে একটি সদকা হিসেবে পরিগণিত হয়। (মুসলিম)

অন্যত্র নবী করিম (সাঃ) এরশাদ করেছেন, যখন কোন মানুষ মৃত্যু বরণ করে তার সব আমলের দরজা ব হয়ে যায়, শুধু তিনটি আমল ব্যতীত। আর তা হচ্ছে
১. যদি সে কোনো সদকায়ে জারিয়া রেখে যায়।
২. এমন জ্ঞান রেখে যায় যা দ্বারা মানুষ উপকৃত হয়।
৩. কোন সৎ সন্তান রেখে যায় যা তার জন্য মাগফিরাতের দোয়া করে।
এতে সদকায়ে জারিয়া হিসেবে বৃক্ষ রোপণই সবচেয়ে বেশি উপকারী। ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গির সাথে বর্তমান পরিবেশ বিজ্ঞানীরা একমত হয়েছেন যে, গাছ আমাদের ও সৃষ্টি কুলের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আমরা কার্বনডাই অক্সাইড ছাড়ি গাছ থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করি।


ইসলামের নবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) সৃষ্টির সবকিছুর উপর সমানভাবে মায়া-মমতা প্রদর্শন করেছেন। গাছের প্রতি মায়া ছিল তার অফুরন্ত। নবী (সাঃ) বলেছেন, বৃক্ষের সঙ্গে আমাদের আন্তরিকভাবে ব্যবহার করা উচিত গাছের পাতা ছিড়লে গাছ ব্যথা পায়না আসলে তা নয় কারণ গাছের জীবন আছে এবং পাতা ছিঁড়লে কষ্ট পায়। নবীজী বলেছেন তোমরা অকারণে বৃক্ষ ছেদন অথবা কর্তন করবে না রাসূল (সাঃ) নিজ হাতে বৃক্ষরোপণ ও পরিচর্যা করেছেন। তাই বৃক্ষরোপণের প্রতি অত্যদিক গুরুত্বারোপ করে রাসূল (সাঃ) বলেছেন যদি কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার মুহূর্তে তোমাদের কারও হাতে একটি চারা গাছ থাকে তাহলে সে যেন সেই বিপদ সংকুল মহূর্তেও তা রোপণ করে যায় (আদাবুল মুফরাদ)। আল্লাহ তায়ালার হুকুম, রাসূল (সাঃ)-এর বাণী ও ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে বৃক্ষরোপণের গুরুত্ব ও তাৎপর্য জনগণের সামনে তুলে ধরে সবুজায়ন আন্দোলনের প্রসার, টেকসই উন্নয়ন ও পরিবেশ সুরক্ষায় ব্যাপকভাবে জনসচেতনতা সৃষ্টি বৃক্ষরোপণের ক্ষেত্রে অধিকতর কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

সকাল ব্লগার ভাই-বোনদের অনুরোধ করবো এ রামাদানে অহেতূক কেনাকাটা না করে বরং পরিবেশ রক্ষায় সবাই একটু সচেতন হই। গাছ লাগাই।
১৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গাজার যুদ্ধ কতদিন চলবে?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৮ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার আগে মহাবিপদে ছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু৷ এক বছর ধরে ইসরায়েলিরা তার পদত্যাগের দাবিতে তীব্র বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন৷ আন্দোলনে তার সরকারের অবস্থা টালমাটাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্যামুয়েল ব্যাকেট এর ‘এন্ডগেম’ | Endgame By Samuel Beckett নিয়ে বাংলা ভাষায় আলোচনা

লিখেছেন জাহিদ অনিক, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৮



এন্ডগেম/ইন্ডগেইম/এন্ডগেইম- যে নামেই ডাকা হোক না কেনও, মূলত একটাই নাটক স্যামুয়েল ব্যাকেটের Endgame. একদম আক্ষরিক অনুবাদ করলে বাংলা অর্থ হয়- শেষ খেলা। এটি একটা এক অঙ্কের নাটক; অর্থাৎ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রায় ১০ বছর পর হাতে নিলাম কলম

লিখেছেন হিমচরি, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১

জুলাই ২০১৪ সালে লাস্ট ব্লগ লিখেছিলাম!
প্রায় ১০ বছর পর আজ আপনাদের মাঝে আবার যোগ দিলাম। খুব মিস করেছি, এই সামুকে!! ইতিমধ্যে অনেক চড়াই উৎরায় পার হয়েছে! আশা করি, সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

পজ থেকে প্লে : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

লিখেছেন বন্ধু শুভ, ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:১৫


.
একটা বালক সর্বদা স্বপ্ন দেখতো সুন্দর একটা পৃথিবীর। একজন মানুষের জন্য একটা পৃথিবী কতটুকু? উত্তর হচ্ছে পুরো পৃথিবী; কিন্তু যতটা জুড়ে তার সরব উপস্থিতি ততটা- নির্দিষ্ট করে বললে। তো, বালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামে ভুল থাকলে মেজাজ ঠিক থাকে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৫


বেইলি রোডে এক রেস্তোরাঁয় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে একজন একটা পোস্ট দিয়েছিলেন; পোস্টের শিরোনামঃ চুরান্ত অব্যবস্থাপনার কারনে সৃষ্ট অগ্নিকান্ডকে দূর্ঘটনা বলা যায় না। ভালোভাবে দেখুন চারটা বানান ভুল। যিনি পোস্ট দিয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×