সভ্যতার অগ্রগতিতে মানুষের তথ্য ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করিবার জন্য সংবাদপত্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করিতেছে, সন্দেহ নাই। কিন্তু সচেতন পাঠক মাত্রই জানেন, সংবাদপত্রই আবার মানুষকে বিভ্রান্ত করে প্রায়শই।
এ দেশের প্রাচীন দৈনিক ইত্তেফাক এই গত ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহিংস ঘটনার সংবাদ কী ভাবে প্রকাশ করিয়াছিলো পাঠকের মনে আছে নিশ্চয়ই। পরদিন অধিকাংশ দৈনিকে ইহা শীর্ষ সংবাদ হইলেও ইত্তেফাকে ইহা প্রথম বা দ্বিতীয় শীর্ষ সংবদও করে নাই। ইহার একজন মালিক সরকারের গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টা, বোধকরি ইহার নেপথ্যে এই স্বার্থটি কাজ করিতেছে।
আগেই বলিয়াছি, সংবাদপত্র মানুষকে বিভ্রান্ত করে প্রায়শই। বাবরি মসজিদকে কেন্দ্র করিয়া ভারতে রায়ট শুরু হইলে এ দেশে প্রথমে ইহার তেমন কোনো প্রভাব পরে নাই। মৌলবাদীরা দেখিলো, এইখানে কিছু একটা না করিলে ইসলামী জোশ আসিবে না; তাহা হইলে জিহাদ হইবে কী উপায়। তাহারা বাছিয়া লইলো দৈনিক ইনকিলাব।
দিনের পর দিন এই মৌলবাদী চক্রের কাগজটিতে মূদ্রিত হইতে লাগিলো একের পর এক উস্কানীমূলক সংবাদ। একই পথ ধরিলো জামাতের দৈনিক সংগ্রাম ও ফ্রিডম পার্টির দৈনিক মিল্লাত একই পথ ধরিলো। রাতারাতি পত্রিকার কাটতি বাড়িতে লাগিলো। পুরনো ঢাকাসহ এখানে সেখানে হামলা হইতে লাগিলো হিন্দুদের উপর, মন্দির - প্রতিমা ভাঙচুরও চলিলো। খোদ পল্টনের মরনচাঁদ মিষ্টান্ন ভান্ডার পুলিশের সামনেই লুঠপাঠ হইলো। ইহার দুর্ভাগ্যজনক শিকার যাহারা হইলেন, তাহারা হয়তো জীবনে বাবরী মসজিদের নামও শুনেন নাই। হায় রে অভাগা দেশে!
ড. আহমদ শরীফকে মুরতাদ ঘোষণা, তসলিমা নাসরিনের ফাঁসি দাবি, কাদেয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা, গোলাম আজমের বিরুদ্ধে গণআদালতকে অবৈধ ঘোষণা - ইত্যাদি ইসু্যতে এই সব দৈনিকের ভূমিকা কী ছিলো, সচেতন পাঠক মাত্রই জানেন।
আরো একটু পিছনে ফিরিয়া যাই। ১৯৭৩ কী ১৯৭৪ সাল হইবে। সর্বহারা পার্টির নেতা সিরাজ সিকদারকে লইয়া বঙ্গবন্ধু বিপাকে আছেন। ইত্তেফাক সংবাদ ছাপিলো, সর্বহারা পার্টির অন্তরকলহে নাকি সিরাজ সিকদার নিহত হইয়াছেন।
সিরাজ সিকদার পার্টির মুখপত্র 'স্ফুলিঙ্গ' নামক পত্রিকায় নিজেই ছড়া লিখিয়া ইহার জবাব দিলেন:
সব খবরের মাঝে থাকে
একটি করে মিথ্যেফাঁক,
সিআইএ গুজব রটায়
খবর ছাপে ইত্তেফাক!
তাই বলি, সংবাদপত্র বাইবেল বা অন্য কোনো কোনো ঐশী গ্রন্থ নহে। আর ভাতের বদলে সংবাদপত্রের সকল সংবাদ গিলিয়া পেট ভড়াইবেন, সচেতন পাঠক এতোটা বোকাও নহেন।
পুনশ্চ: বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক, 'একাত্তরের ঘাতক ও দালালরা কে কোথায়' অমরগ্রণ্থের অন্যতম লেখক, মৌলবাদ-জামাত বিরোধী যোদ্ধা শাহরিয়ার কবিরকে এই লেখাটি উৎসর্গ করা হইলো।।
সংবাদপত্র বাইবেল নহে
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
৫২টি মন্তব্য ০টি উত্তর
পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন
আলোচিত ব্লগ
মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়
১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷
চলুন গল্পটা শুনে আসি৷
বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন
ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই
রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন
কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।
ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন
সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!
~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন
রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো
রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন